মিসরে ৬৮৩ জনের ফাঁসি
এক পুলিশ হত্যা ও থানায় হামলার অভিযোগ; দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ব্রাদারহুড শীর্ষনেতা বাদি; একসাথে এত মৃত্যুদণ্ডের নজির ইতিহাসে নেই
ইত্তেফাক ডেস্ক
গতকাল একই আদালত পৃথক মামলায় গত মাসে ৫২৯ জনকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পুনর্বিবেচনার শুনানির পর ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি ৪৯২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। গত ১৪ আগস্ট দক্ষিণাঞ্চলীয় মিনিয়া প্রদেশে পুলিশ হত্যা ও হত্যা প্রচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার আসামীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ওইদিন কায়রোয় ক্ষমতাচ্যুত ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির কয়েকশ' সমর্থককে পুলিশ হত্যা করে।
থানায় হামলা ও একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় এই গণমৃত্যুদন্ডের রায়ে ব্রাদারহুডের আইনজীবীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও। দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জের ধরে ২০১৩ সালে এই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। বাদাইসহ অন্যদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মিসরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ মুফতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে তার মতামতের গ্রহণের আইনি কোন বাধ্যবাধকতা নেই এবং আদালত চাইলে তা উপেক্ষা করতে পারে।
মিসরের ইতিহাসে সর্ববৃহত্ এই বিচারকার্যের ঘটনা মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মাঝে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। তারা মনে করে, সেনা সমর্থিত সরকার এবং ইসলাম ধর্মীয় মৌলবাদবিরোধী বিচারকেরা বন্দিদের প্রতি অনমনীয় হয়ে উঠছেন। মিসরীয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে। যদিও সংগঠনটি তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
গতকাল আদালত তার রায়ে ব্রাদারহুডের যুব শাখাকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মূলত এই শাখার শক্ত ভূমিকার কারণে ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের পতন হয়েছিল। আদালত জানায়, এই গ্রুপটির কারণে বহির্বিশ্বে মিসরের 'ভাবমুর্তি' খারাপ হচ্ছে। রায়ের পর এক নারী আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের জানান, যাদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে তার পরিবারেরই কেবল পাঁচজন সদস্য রয়েছে! তিনি ক্ষোভে শোকে নিজের মুখ চাপড়াতে চাপড়াতে মাতম করতে থাকেন।
ব্রাদারহুড শীর্ষনেতা বাদির বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগে মামলা হয়েছে। এটাই তার বিরুদ্ধে প্রথম রায়। দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিরও বিচার চলছে পৃথক আদালতে। গতকাল যে ৬৮৩ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ৫০ জনের মতো আটক আছে। যারা ধরা পড়েনি তারা যদি আত্মসমর্পণ করে পুনর্বিচারের আবেদন করেন তবে তা মঞ্জুর করা হবে বলে আদালত জানায়।
আসামিদের আইনজীবীরা সর্বশেষ শুনানিতে হাজির হননি। তারা বলেন, বিচারের নামে যা হচ্ছে তা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, সাক্ষী হিসেবে যাদের আনা হয়েছে তাদের জবানবন্দিতেই স্পষ্ট যে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। পুরো বিচারপ্রক্রিয়াকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছেন তারা। একারনে শুনানিতে হাজির হওয়া আর না হওয়া একই কথা।
No comments:
Post a Comment