Monday, April 28, 2014

কালবৈশাখীতে হত ২১ ০ বোরো, ভুট্টাসহ মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ০ ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত

কালবৈশাখীতে হত ২১
০ বোরো, ভুট্টাসহ মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
০ ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত
-----------
জনকণ্ঠ ডেস্ক
-----------
সারাদেশের ওপর দিয়ে রবিবার রাতে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে ২১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দু’শতাধিক লোক। এর মধ্যে নেত্রকোনায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও গাছপালার নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের চারজনসহ ৯, নওগাঁয় বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি, বিদ্যুতস্পৃষ্ট ও গাছের ডাল ভেঙে শিশুসহ চারজন, সুনামগঞ্জে ঘর ভেঙে ও দেয়াল চাপা পড়ে চারজন, লালমনিরহাটে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করতে গিয়ে এক বিদ্যুতকর্মী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বজ্রপাতে এক জেলে, সিলেটে কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়ে এক বৃদ্ধা এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক কাঠমিস্ত্রি নিহত হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ে উঠতি বোরো ধান, ভুট্টাসহ মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঝড়ো বাতাসের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে এক ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বজ্রপাতে তিন বাড়ি পুড়ে যায়। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় ঝড়ে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং ভেঙেপড়ে বহু গাছপালা। সান্তাহারে বিদ্যুতের তার ছিড়ে বিভিন্ন এলাকা প্রায় ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকে। নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড়ে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে এবং তার ছিড়ে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ময়মনসিংহের ভালুকায় বোরো ফসল, বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছপালাসহ ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
নেত্রকোনায় টর্নেডোর ছোবল
নেত্রকোনায় রবিবার রাতে টর্নেডোয় একই পরিবারের নিহত চারজন হচ্ছে কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নের বিষমপুর গ্রামের আব্দুল মোত্তালিবের স্ত্রী আফরোজা বেগম (৩৫), তার তিন ছেলে পারভেজ (৯), রানা (৫) ও রনি (২)। এ সময় মোত্তালিব নিজেও গুরুতর আহত হন। নিহত অন্যরা হচ্ছে কলমাকান্দার পোগলা ইউনিয়নের রাণীগাঁও গ্রামের ইমান আলীর স্ত্রী হাবুলের নেছা (৪৪), নয়ানগর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে মামুন (১৪), মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের জয়নাল উদ্দিনের মেয়ে সোমা আক্তার (৯), বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের গাবরকান্দা গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে এনামুল হক (১৪) ও সদর উপজেলার বর্ণি গ্রামের ফজর আলী (৭০)। আহতদের মধ্যে মোহনগঞ্জের ২৩ ও কলমাকান্দার ৩০ জনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং মোহনগঞ্জের পশুখালী গ্রামের রিপা নামে দুই মাসের এক শিশুকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিবার রাত ১১টার দিকে প্রচণ্ড বেগে টর্নেডো শুরু হয়। পৌনে এক ঘণ্টা স্থায়ী ঝড়ে কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি, সদর, বড়খাপন, পোগলা, নাজিরপুর, লেংগুড়া, খারনৈ, রংছাতি, বারহাট্টা উপজেলার বাউশি, আসমা, চিরাম, সিংধা, সদর, আটপাড়ার তেলিগাতি, নেত্রকোনা সদরের ঠাকুরাকোনা, সিংহেরবাংলা, মৌগাতি, রৌহা, মোহনগঞ্জের তেতুলিয়া, বড়তলী-বানিহারী, বড়কাশিয়া-বিরামপুর, মাঘান-সিয়াধার, সমাজ-সহিলদেও, সোয়াইর ও গাগলাজোড় ইউনিয়নের বহু গ্রাম ল-ভ- হয়ে যায়। ঝড়ো বাতাসে অনেক কৃষকের উঠতি পাকা বোরো ধান মাটির সঙ্গে মিশে যায়। বারহাট্টার হারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, আটপাড়ার কান্দি এএমএসআর ইনস্টিটিউট, কলমাকান্দার পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিষ্ণুপুর আলিয়া মাদ্রাসা, রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয়, সনুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনগঞ্জ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠাসহসহ বহু মসজিদ ও মন্দির বিধ্বস্ত হয়। অসংখ্য গাছপালা বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় ঝড়ের পর থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত নেত্রকোনা শহরসহ সবকটি উপজেলায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল।
জেলা প্রশাসক ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরী সহায়তা হিসেবে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ২শ’ বান্ডিল ঢেউটিন ও ৩শ’ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত আরও ১০ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন, ২৫ লাখ টাকা এবং ১ হাজার মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
নওগাঁয় শিশুসহ নিহত ৪
রবিবার রাতে নওগাঁ সদর, ধামইরহাট, পতœীতলা ও বদলগাছী উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি, বিদ্যুতস্পৃষ্ট ও গাছের ডাল পড়ে শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছে। রবিবার রাতে ও সোমবার সকালে এ মর্মন্তুদ ঘটনাগুলো ঘটে। নিহতরা হলো নওগাঁ শহরের চকবিরাম মহল্লার আবু ইসা (২৫), পতœীতলা উপজেলার শীতল গ্রামের মাহমুদুল হক (২৮), নওগাঁ সদর উপজেলার রজাকপুর গ্রামের আব্দুর রহমান (৩০) ও বদলগাছী উপজেলার সোয়াশা গ্রামের পিয়াস (৩) নামে এক শিশু।
রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়, শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। এ সময় শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চকবিরাম এলাকায় ঘরের ছাউনি উড়ে আবু ইসা ঘটনাস্থলেই মারা যান। ধামইরহাটের আগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়নের গঙ্গা-যমুনা গ্রামে শ্যালোমেশিন পাহারা দিতে যায় ভগ্নিপতি শাহজাহান আলী (৩০) ও শ্যালক মাহমুদুল হক (২৮)। হঠাৎ ওই স্থানে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে মাহমুদুল হক মারা যান। আহত অবস্থায় শাহজাহান আলীকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মৃত মাহমুদুল হক জেলার পতœীতলা উপজেলার শীতল শুকানকুড়ি গ্রামের হাইমুদ্দিনের পুত্র।
একই সময় বদলগাছী উপজেলার সোয়াশা গ্রামের পিয়াস নামে এক শিশুর ওপর গাছের ডাল পড়ে মারা যায়। সোমবার সকালে ঘরের বৈদ্যুতিক সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে আব্দুর রহমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরের চালা উড়ে যায় ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে।
সুনামগঞ্জে নিহত ৪
ধর্মপাশা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে ঘর ও দেয়াল চাপা পড়ে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলো ধর্মপাশা উপজেলার সুকাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মৃত মোঃ লাল মিয়ার ছেলে কাছু মিয়া (৪০), মোঃ শফিকুল ইসলামের মেয়ে বীথি বেগম (১০), মৃত শান্তু মিয়ার ছেলে সামছু মিয়া (৬০) ও মধ্যনগর থানার জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত জমির আলীর ছেলে দুদু মিয়া (৬৫)। এ ছাড়া পাঁচ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত এবং গাছপালা ও ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রবিবার রাত সাড়ে ১২টায় কালবৈশাখী ঝড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের টাইলা গ্রাম, দুর্গাপুর, ঠাকুরভোগ পাথারিয়া ইউনিয়নের কান্দিগাঁও, তালুকগাঁও, গণিগঞ্জ ও নোয়াখালী, দিরাই উপজেলার উত্তর সুরিয়ারপাড়, হাতিয়া, কুলজ্ঞ, তেতৈয়া, জালিয়া, তারাপাশা, জগদল, জগন্নাথপুর উপজেলার নারিকেল তলা, ইছগাঁও, বাঘ ময়না, রাণীগঞ্জ, আলমপুর, পাইলগাঁও, কোবাজপুর, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট, একতার বাজার, জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী, বেহলী, লম্বাবাগ, সেলিমগঞ্জ, কামলাবাজ, ফেনারবাক, লক্ষ্মীপুর এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হাছনগর, বুড়িস্থল, বিটগঞ্জ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলী জমি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের গনিগঞ্জ এলাকার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত কৃষক হারুন মিয়া ও গৃহিণী ফারজানা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, গত কয়েক বছরে এ ধরনের কালবৈশাখীর ঝড় দেখেননি। তারা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেন।
লালমনিরহাটে বিদ্যুতকর্মীর মৃত্যু
দমকা হাওয়া ও কালবৈশাখী ঝড়ে লালমনিরহাটে বিদ্যুত বিপর্যয় ঘটেছে। বিদ্যুত সরবরাহের কাজ করতে গিয়ে লাইনম্যানের সহকারী মোস্তাফিজুর (২০) বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। জেলা শহর ৮ ঘণ্টা বিদ্যুতবিহীন ছিল। ২৪ ঘণ্টা পড়েও ৪টি উপজেলায় বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
লালমনিরহাট বিদ্যুত অফিস সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাত ৮টায় লালমনিরহাট জেলা শহর ও ৫টি উপজেলার অধিকাংশ এলাকা দিয়ে হঠাৎ দমকা হাওয়া ও কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। এতে বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের ওপর বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে তার ছিড়ে যায়। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে যায়। ঝড়ের পড়ে বিদ্যুত সংযোগ দিলে বার বার ট্রিপ (সেকেন্ডের মধ্যে বার বার বিদ্যুত চলে যায়)। পরে বিদ্যুত সরবরাহ করতে বিদ্যুতকর্মীরা মাঠে নেমে পড়ে। লালমনিরহাট শহরে প্রায় ৮ ঘণ্টা পর সোমবার ভোর ৪টায় বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত হয়। তবে ঝড়ের ২৪ ঘণ্টা পরেও পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ হয়নি। মাঠে বিদ্যুত সরবরাহ করছে কর্মীরা কাজ করছে। তবে এ বিদ্যুত সরবরাহের কাজ করতে গিয়ে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের বৈরাতি গ্রামে বিদ্যুত অফিসের লাইনম্যানের সাহায্যকারী মোঃ মোস্তাফিজার রহমান (২০) নামের এক কর্মী বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। এ সময় সে ১১ হাজার ভোল্টের লাইনে ভেঙ্গেপড়া গাছের ডাল সরানোর কাজ করছিল। দুর্ঘটনায় নিহত বিদ্যুত অফসের কর্মী মোস্তাফিজার ৪ মাস আগে চাকরিতে যোগদান করেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রামে বলে জানা গেছে।
সিলেটে বৃদ্ধার মৃত্যু
কালবৈশাখীর তা-বে রবিবার মধ্যরাতে ল-ভ- হয়েছে সিলেট নগরী। নগরী ও প্রত্যন্ত এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও উপড়ে পড়ে বহু গাছপালা। কানাইঘাটে কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত আলফাতুন্নেছা (৫৫) উপজেলার গুরুতপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর স্ত্রী। এ ছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে লাইন ছিটকে পড়ায় বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে পুরো সিলেট নগরী। বিদ্যুতের খাম্বা ও গাছপালা পড়ে নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্যোগী হয়ে এসব গাছ পালা ও খাম্বা রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলেন। কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে সিলেট নগরীর আম্বরখানা, তালতলা, সুবিদবাজার, দক্ষিণ সুরমা, সিলেটের কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে প্রায় সহস্রাধিক কাঁচা বাড়িঘর ও বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বোরো ফসলের।
গোয়ালন্দে বজ্রপাতে জেলের মৃত্যু
সোমবার সকালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পদ্মা নদীর এলাকায় মাছ ধরা নৌকায় বজ্রপাতে ফরিদ শেখ (৩০) নামে এক জেলে নিহত হয়েছে। এ সময় নৌকার অপর জেলে নিহতের ছোট ভাই মোঃ ফরহাদ শেখ (২৫) গুরুতর আহত হয়। তাদের বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত জুলহাস শেখ।
ঝড়ো বাতাসের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সোমবার ভোর পৌনে ৬টা থেকে পৌনে ৭টা পর্যন্ত ফেরি ও লঞ্চসহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় নদীপারের অপেক্ষায় আটকাপড়ে শতাধিক বিভিন্ন যানবাহন। আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে গেলে সকাল পৌনে ৭টার দিকে পুনরায় ফেরি ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়।
মির্জাপুরে শ্রমিক নিহত
মির্জাপুরে ঝড়ে রাজিব (১৪) নামে এক কাঠ মিস্ত্রি শ্রমিক নিহত হয়েছে। রবিবার রাত এগারোটার দিকে মির্জাপুর সদরের বাওয়ার কুমারজানি বাইপাস এলাকায় ঝড়ে টিনের চাল ও ইট পড়ে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। তার বাড়ি পাবনার সুজানগর গ্রামে।

দুপচাঁচিয়ায় বজ্রপাতে ৩ বাড়ি পুড়ে ছাই
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ঝালঘড়িয়া শাহপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে ৩টি বাড়ি পুড়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫ লাখ টাকার। রবিবার রাত দশটার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। আধাঘণ্টা পরই আকস্মিক বজ্রপাতে জাহাঙ্গীর আলমের মাটির বাড়ির দোতলায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পার্শ্ববর্তী রফিকুল ইসলাম ও তবিবর রহমানের বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ৩টি বাড়ির ঘরের টিনের ছাউনি, বাঁশের দোতলা, একটি ফ্রিজ, ৩টি টেলিভিশন, আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড়সহ অধিকাংশ মালামাল পুড়ে যায়।
এ ছাড়া বগুড়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর ঝড়ে উঠতি বোরো ফসলসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ে কিছু এলাকায় গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে।

নীলফামারীতে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
কালবৈশাখী ঝড়ে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নে সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। এ ছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যুতের ৩৩ কেভি সরবরাহ লাইনের খুঁটি উপড়ে পড়া এবং গাছ পড়ে সরবরাহ লাইনের তার ছিড়ে যাওয়ায় জলঢাকা, ডোমার, ডিমলা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারেনি বিদ্যুত বিভাগ।

সান্তাহারে ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন
রবিবার রাতে বগুড়ার সান্তাহার ও আশপাশ এলাকার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। রাত ৯টা ৪০ মিনিট থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত বয়ে যাওয়া ঝড়ে কোন প্রাণহানি না ঘটলেও শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি, শত শত ফলদ ও বনজ গাছ এবং ইরি-বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে বিদ্যুতের তার ছিড়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুত বিছিন্ন ছিল সান্তাহারের বিভিন্ন এলাকা।

No comments:

Post a Comment