ভোটযুদ্ধেও বিন্দাস বাপ্পিদা
'বোম্বাই সে আয়া' শ্রীরামপুর৷ মোদীর আশীর্বাদ নিয়ে৷ নির্বাচনের আঁচ কী ভাবে পোহাচ্ছেন লোকসভার রণাঙ্গনে 'এন্ট্রি' নেওয়া বাপ্পি লাহিড়ি? বিজেপির তারকা প্রার্থীর নয়া রোজনামচা লিখছেন ভাস্বতী ঘোষ
নে মারি এন্ট্রিয়া রে, দিলমে বাজি ঘন্টিয়া রে..৷
'গুন্ডে' ছবির এই গানের বাংলা গেয়েছিলেন তিনি৷ তখন কে জানত কিছুদিনের মধ্যেই ভোটের ময়দানে এমন ভাবে 'এন্ট্রি' নেবেন বাপ্পি লাহিড়ি৷
হঠাত্ নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে রাজনীতিতে এলেন৷ তার পরই গন্তব্য সোজা শ্রীরামপুর৷ ভায়া কলকাতা৷
সকাল দশটার মধ্যে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ছেন৷ ফিরতে রাত এগারোটা৷ লাগাতার চলছে প্রচার৷ মুম্বইয়ে বসবাস বন্ধ এই একমাস৷
তবে কি শ্রীরামপুরে বাস? না৷ প্রচার সেরে এই শহরেই ফিরতে ভালোবাসেন তিনি৷ কিন্ত্ত বাড়ি নেই শহরে৷ তা হলে?
বাইপাস সংলগ্ন এক হোটেলেই এই মুহূর্তে বাপ্পি লাহিড়ির আস্তানা৷ সকাল থেকে রিসেপশনে ভিড়৷ রয়েছে ক্যামেরা নিয়ে হোটেলের ঘরে যাওয়ারও বিশেষ অনুমতি৷ এককথায় বাপ্পি লাহিড়ির জন্য নিয়ম আলাদা৷
সকালে উঠে প্রচারের জন্য তৈরি হতে না হতেই হাজির বিজেপির কেউ৷ শুরু আলোচনা৷ সে দিন প্রচারে যাবেন কোথায় কোথায়, তার বিবরণ জেনে নেন৷ তত ক্ষণে তৈরি হয়ে নিয়েছেন তাঁর সহকারীরা৷ সঙ্গে থাকেন একদল বাউন্সার৷ যেখানেই যান না কেন৷
এরই মাঝে সামলাচ্ছেন সাংবাদিকদের৷ হোটেলের ডেরায় ঢুকেই বাপ্পি লাহিড়ির ড্রয়িংরুম৷ সেই টেবিলে যাবতীয় সংবাদপত্র৷ কোন সংবাদপত্রে তাঁর সম্পর্কে কী লেখা হচ্ছে, সেটা দিনের শুরুতেই মাথায় নিয়ে নেন৷ পছন্দ হলে বলেন, 'আপনার কাগজে আজ দেখলাম, খুব সুন্দর কভারেজ এসেছে৷'
এমনই ব্যস্ত ড্রয়িংরুমে সবচেয়ে আকর্ষণীয় কর্নারটি৷ না, ইন্টিরিয়র ডিজাইনার কোনও চোখ-ধাঁধানো আয়োজন করেননি৷ সেই কর্নারেই বাঁধানো ফ্রেমে নরেন্দ্র মোদী এবং বাপ্পি লাহিড়ি৷ একসঙ্গে৷ সহযোদ্ধা রূপে৷
বলাই বাহুল্য, এটা এই মুহূর্তে বাপ্পি লাহিড়ির সবচেয়ে প্রিয় ছবি৷ মাঝেসাঝে বসেন ছবির পাশে৷ তখনই বোঝা যায়, মোদীজিকে সঙ্গী করে, শ্রীরামপুরকে ভারতের (নাকি পশ্চিমবঙ্গের ) মানচিত্রে টেনে তোলার লক্ষ্যে স্থির তিনি৷
খাওয়া -দাওয়া
চোহারা চমক! তা আছে বিজেপির এই প্রার্থীর৷ 'হেলদি' চেহারা যাকে বলে৷ সেই চেহারায় চাকচিক্য জুড়তে নিজেকে মুড়ে ফেলেন সোনায়৷ ঘর থেকে দুই পা ফেললেও গায়ে ভর্তি সোনার গয়না৷ এদিকে লাগাতার ভোট প্রচার৷ তবে কি কোনও বিশেষ সাপ্লিমেন্ট? বাপ্পি লাহিড়ি বলছেন, 'খাওয়াদাওয়া নিয়ে কোনও চাপ নেই৷ চা পেলেই আমি খুশি৷ আমি টোটালি নন-অ্যাডিকটেড লোক৷ ড্রিঙ্ক করি না, সিগারেট খাই না, পান খাই না, তামাকও খাই না৷ এখন তো কাজে নেমে খাওয়াই ভুলে গিয়েছি৷' সে কী! শুনেই বলছেন, 'তবে জলটা খাচ্ছি৷'
তারকার সর্বক্ষণের সঙ্গী অমিত সান্যাল জানাচ্ছেন, 'সকালে ভোট প্রচারে বেরোনোর জন্য স্নানে যাওয়ার আগেই সেরে নেন ব্রেকফাস্ট৷ কর্নফ্লেক্স থাকে৷ সঙ্গে ফল৷ সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা হোটেলের বাইরে৷ মাঝে দু'ঘণ্টার মতো বিরতি, লাঞ্চের জন্য৷ সেই সময় শুধুই ভাত-ডাল৷ নন ভেজ তো থাকছেই না৷ ডিনার অবশ্য হোটেলে ফিরে৷ ডিনারে খুব সামান্য নন ভেজ থাকে এক-দু'দিন৷'
ফিটনেস ফান্ডা
সারা বছর গলার ফিটনেসের দিকেই নজর দিতে হয়৷ বছরভর মিউজিক রেকর্ডিং তো আছেই৷ এখন অবশ্য রেওয়াজ শিকেয় উঠেছে৷ কিন্ত্ত আওয়াজখানা যাতে আমজনতার কানে হানা দেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক 'বাপ্পিদা'৷ তাঁর সহযোগী বলছেন, 'গান গাওয়া যে বন্ধ তা নয়৷ জিপের উপর যখন উনি দাঁড়িয়ে, তখন ভক্তরা গানের অনুরোধ করছেন, একেবারে নাছোড়বান্দা৷ তখনই দু'কলি গাইছেন উনি৷'
আর মাসখানেক ধরে এমন পরিশ্রমে কাবু না হয়ে টানটান থাকছেন কী ভাবে? বাপ্পি বলছেন, 'কলকাতায় মাসখানেক আছি৷ প্রচারে যখন যাচ্ছি, গরম যথেষ্ট৷ এক্সট্রিম ক্লাইমেট৷ কিন্ত্ত যখন গানের শো করতে দুবাই বা মিডল ইস্টে যাই, তখন সেখানে প্রায় ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা৷ শীতকালে আমেরিকায় যাই, খুবই ঠান্ডা থাকে সেখানে৷ আমি সব কিছু প্রুফ৷ পার্ট অফ দ্য গেম৷ গরম নিয়ে ভাবলে তো লড়া যাবে না৷'
কী আছে ওয়ার্ডরোবে
সোনার গয়না৷ সোনার চেন, তার সঙ্গে বিশাল লকেট৷ বাপ্পি লাহিড়ি বলছেন, 'আমার লক্ষ্মী মা, গণপতি, সবই আমার সঙ্গে রয়েছে৷'
আর এই গরমে ড্রেস কোড পাল্টালেন নাকি? উত্তর এল , 'গরমের সময় পাঞ্জাবি পরছি৷ কমলা রঙের পাঞ্জাবি বেশি করে রয়েছে৷ সঙ্গে নীল, সবুজও৷'
অনেক বেশি সতর্ক
বিজেপি প্রার্থী৷ পশ্চিমবঙ্গে মোদীর যে তারকা বাহিনী, তার মধ্যে দু'জনের দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধী পক্ষ৷ এক জন বাবুল সুপ্রিয়৷ অন্য জন জাদুকর পি সি সরকার৷ সেই তুলনায় সঙ্গীত পরিচালক-গায়ক বাপ্পি অনেক বেশি সতর্ক৷
প্রার্থী আসলে শুরুতেই ঠিক করে নিয়েছেন, মন্তব্য করবেন সামলে৷ বাপ্পি নিজে বলছেন, 'আমার অনেক এক্সপেরিয়েন্স আছে৷ সব দলের হয়েই প্রচার করেছি৷ আমি জানি, কখন কোনটা বলতে হয়৷ কিন্ত্ত যে কথা বলা উচিত, মেপে বলা উচিত৷' সব দল মানে আপনি কংগ্রেসের হয়েও প্রচার করেছেন, রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর হয়েও? শুনেই বাপ্পির উত্তর, 'আমি কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেছি, টিএমসি-র হয়েও, অ্যাজ অ্যান আর্টিস্ট৷ কিন্ত এখন আামি বিজেপির এক জন বিরাট কর্ম (একটু থেমে), কর্মসেবা লোক৷'
যখন প্রচার শুরু করলেন, তখন তাঁকে অনুসরণ করত বেশ কিছু গাড়ি৷ তার উপর চারপাশে উপচে পড়া ভিড়৷ বিরোধী দলের অভিযোগ ছিল, এ ভাবে গাড়ি নিয়ে প্রচার করার অনুমতি তারকার ছিল না৷ ফলে যানবাহন চলাচল থমকে যায় এবং সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ৷ কিন্ত্ত বাপ্পি লাহিড়ি শান্ত গলাতেই বলছেন, 'এটা তো মানুষের ভালোবাসা৷ মানুষ বাপ্পি লাহিড়িকে তাঁদের ভালোবাসা জানাতেই ভিড় করেছিল৷'
প্রচারে বেরিয়ে 'বাপি বাড়ি যা' ধরনেরও কিছু মন্তব্যের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি৷ কিন্ত্ত মাথা ঠান্ডা৷ সেই মন্তব্যের পাল্টা কোনও গরমাগরম মন্তব্য করে ফেলেননি এই তারকা প্রার্থী৷
বাকি ক'দিন এমন শান্ত ঢঙে টেনে দিতে পারলে, বড়সড় কোনও বিতর্কে না জড়িয়েই নির্বাচনী অভিযান শেষ করতে পারেন৷
তবে হ্যাঁ, সম্পত্তির ঘোষণায় যা জানিয়েছেন সম্প্রতি, (যে তাঁর ৭৫৪ গ্রাম সোনা আছে), তা নিয়ে অনেকেই হেসে কুটোপাটি৷ তবে বাপ্পির দাবি, 'আমার অনেক কিছুই তো মিসেস লাহিড়ি তৈরি করে দিয়েছেন!'
শান্ত ঢঙে কথা বললেও কিছু মন্তব্যে নিজেকে নিয়ে মজে থাকার মেজাজ প্রকট৷ মজার ব্যাপার হল এতে সমালোচনার বদলে ভালোবাসাও কুড়তে পারেন তিনি৷ কারণ দেশজুড়ে আমজনতা গা-সওয়া এটাই যে, বাপ্পি লাহিড়ি স্বয়ং বলবেন, 'আমি ব্লিং ব্লিং বাপ্পি লাহিড়ি৷'
তেমনটা না শুনলেই যেন মন ভরে না তাঁর ভক্তদের৷ সে কারণেই বাপ্পি লাহিড়ি ভোটভিক্ষায় নেমে বলছেন, 'শ্রীরামপুরের দর্শক, মানে জনতা যে ভাবে বাপ্পি লাহিড়িকে গ্রহণ করেছে, আমি যদি সত্যি ওনাদের প্রমিস নিভাতে পারি, আমি অনেক দিন টিকে থাকতে পারব শ্রীরামপুরে৷'
জিতলে কী করবেন
বাপ্পি লাহিড়ি বলছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে শ্রীরামপুর জায়গাটি কিছুটা নীচের দিকে আছে৷ এটা নিশ্চিত যে দিল্লিতে বিজেপি আসছে৷ আর আমায় যদি কেন্দ্রে শ্রীরামপুরের প্রতিনিধি করে পাঠায়, আমি ভালোই করব৷ শ্রীরামপুরে মুজিক (বাপ্পি লাহিড়ি মিউজিক শব্দটি বরাবরই উচ্চারণ করেন বিশেষ ঢঙে ) অ্যাকাডেমি তৈরি করব৷ যে সব মন্দির আছে, যেমন রাধাবল্লভ টেম্পল আছে, জগন্নাথ বাড়ি আছে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এসেছিলেন দোলতলাতে, ছত্র দোলতলাতে, সেই সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখলে অনেক ট্যুরিস্ট দেখতে আসবেন শ্রীরামপুরকে৷'
যে সব প্রার্থী জিতবেন বলে নিশ্চিত
'বিরোধী দলের প্রার্থীদের সঙ্গে আমার কোনও ব্যাপার নেই ', এটাই মনে করেন বাপ্পি লাহিড়ি৷ দেব বা মুনমুন সেন, যার নাম করেই তাঁকে জিজ্ঞেস করা হোক না কেন, কারও সম্পর্কেই কোনও বিদ্বেষ নেই তাঁর মনে৷ তবে দু'জন প্রার্থীর জয় নিয়ে এই মুহূর্তে নিশ্চিত এই তারকা৷ তাই নিজের মুখেই বলছেন, 'বাপ্পি লাহিড়িকে মানুষ ভালোবাসা দিচ্ছেন৷ আর মোদীজির জয় হবে৷'
নে মারি এন্ট্রিয়া রে, দিলমে বাজি ঘন্টিয়া রে..৷
'গুন্ডে' ছবির এই গানের বাংলা গেয়েছিলেন তিনি৷ তখন কে জানত কিছুদিনের মধ্যেই ভোটের ময়দানে এমন ভাবে 'এন্ট্রি' নেবেন বাপ্পি লাহিড়ি৷
হঠাত্ নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে রাজনীতিতে এলেন৷ তার পরই গন্তব্য সোজা শ্রীরামপুর৷ ভায়া কলকাতা৷
সকাল দশটার মধ্যে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ছেন৷ ফিরতে রাত এগারোটা৷ লাগাতার চলছে প্রচার৷ মুম্বইয়ে বসবাস বন্ধ এই একমাস৷
তবে কি শ্রীরামপুরে বাস? না৷ প্রচার সেরে এই শহরেই ফিরতে ভালোবাসেন তিনি৷ কিন্ত্ত বাড়ি নেই শহরে৷ তা হলে?
বাইপাস সংলগ্ন এক হোটেলেই এই মুহূর্তে বাপ্পি লাহিড়ির আস্তানা৷ সকাল থেকে রিসেপশনে ভিড়৷ রয়েছে ক্যামেরা নিয়ে হোটেলের ঘরে যাওয়ারও বিশেষ অনুমতি৷ এককথায় বাপ্পি লাহিড়ির জন্য নিয়ম আলাদা৷
সকালে উঠে প্রচারের জন্য তৈরি হতে না হতেই হাজির বিজেপির কেউ৷ শুরু আলোচনা৷ সে দিন প্রচারে যাবেন কোথায় কোথায়, তার বিবরণ জেনে নেন৷ তত ক্ষণে তৈরি হয়ে নিয়েছেন তাঁর সহকারীরা৷ সঙ্গে থাকেন একদল বাউন্সার৷ যেখানেই যান না কেন৷
এরই মাঝে সামলাচ্ছেন সাংবাদিকদের৷ হোটেলের ডেরায় ঢুকেই বাপ্পি লাহিড়ির ড্রয়িংরুম৷ সেই টেবিলে যাবতীয় সংবাদপত্র৷ কোন সংবাদপত্রে তাঁর সম্পর্কে কী লেখা হচ্ছে, সেটা দিনের শুরুতেই মাথায় নিয়ে নেন৷ পছন্দ হলে বলেন, 'আপনার কাগজে আজ দেখলাম, খুব সুন্দর কভারেজ এসেছে৷'
এমনই ব্যস্ত ড্রয়িংরুমে সবচেয়ে আকর্ষণীয় কর্নারটি৷ না, ইন্টিরিয়র ডিজাইনার কোনও চোখ-ধাঁধানো আয়োজন করেননি৷ সেই কর্নারেই বাঁধানো ফ্রেমে নরেন্দ্র মোদী এবং বাপ্পি লাহিড়ি৷ একসঙ্গে৷ সহযোদ্ধা রূপে৷
বলাই বাহুল্য, এটা এই মুহূর্তে বাপ্পি লাহিড়ির সবচেয়ে প্রিয় ছবি৷ মাঝেসাঝে বসেন ছবির পাশে৷ তখনই বোঝা যায়, মোদীজিকে সঙ্গী করে, শ্রীরামপুরকে ভারতের (নাকি পশ্চিমবঙ্গের ) মানচিত্রে টেনে তোলার লক্ষ্যে স্থির তিনি৷
খাওয়া -দাওয়া
চোহারা চমক! তা আছে বিজেপির এই প্রার্থীর৷ 'হেলদি' চেহারা যাকে বলে৷ সেই চেহারায় চাকচিক্য জুড়তে নিজেকে মুড়ে ফেলেন সোনায়৷ ঘর থেকে দুই পা ফেললেও গায়ে ভর্তি সোনার গয়না৷ এদিকে লাগাতার ভোট প্রচার৷ তবে কি কোনও বিশেষ সাপ্লিমেন্ট? বাপ্পি লাহিড়ি বলছেন, 'খাওয়াদাওয়া নিয়ে কোনও চাপ নেই৷ চা পেলেই আমি খুশি৷ আমি টোটালি নন-অ্যাডিকটেড লোক৷ ড্রিঙ্ক করি না, সিগারেট খাই না, পান খাই না, তামাকও খাই না৷ এখন তো কাজে নেমে খাওয়াই ভুলে গিয়েছি৷' সে কী! শুনেই বলছেন, 'তবে জলটা খাচ্ছি৷'
তারকার সর্বক্ষণের সঙ্গী অমিত সান্যাল জানাচ্ছেন, 'সকালে ভোট প্রচারে বেরোনোর জন্য স্নানে যাওয়ার আগেই সেরে নেন ব্রেকফাস্ট৷ কর্নফ্লেক্স থাকে৷ সঙ্গে ফল৷ সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা হোটেলের বাইরে৷ মাঝে দু'ঘণ্টার মতো বিরতি, লাঞ্চের জন্য৷ সেই সময় শুধুই ভাত-ডাল৷ নন ভেজ তো থাকছেই না৷ ডিনার অবশ্য হোটেলে ফিরে৷ ডিনারে খুব সামান্য নন ভেজ থাকে এক-দু'দিন৷'
ফিটনেস ফান্ডা
সারা বছর গলার ফিটনেসের দিকেই নজর দিতে হয়৷ বছরভর মিউজিক রেকর্ডিং তো আছেই৷ এখন অবশ্য রেওয়াজ শিকেয় উঠেছে৷ কিন্ত্ত আওয়াজখানা যাতে আমজনতার কানে হানা দেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক 'বাপ্পিদা'৷ তাঁর সহযোগী বলছেন, 'গান গাওয়া যে বন্ধ তা নয়৷ জিপের উপর যখন উনি দাঁড়িয়ে, তখন ভক্তরা গানের অনুরোধ করছেন, একেবারে নাছোড়বান্দা৷ তখনই দু'কলি গাইছেন উনি৷'
আর মাসখানেক ধরে এমন পরিশ্রমে কাবু না হয়ে টানটান থাকছেন কী ভাবে? বাপ্পি বলছেন, 'কলকাতায় মাসখানেক আছি৷ প্রচারে যখন যাচ্ছি, গরম যথেষ্ট৷ এক্সট্রিম ক্লাইমেট৷ কিন্ত্ত যখন গানের শো করতে দুবাই বা মিডল ইস্টে যাই, তখন সেখানে প্রায় ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা৷ শীতকালে আমেরিকায় যাই, খুবই ঠান্ডা থাকে সেখানে৷ আমি সব কিছু প্রুফ৷ পার্ট অফ দ্য গেম৷ গরম নিয়ে ভাবলে তো লড়া যাবে না৷'
কী আছে ওয়ার্ডরোবে
সোনার গয়না৷ সোনার চেন, তার সঙ্গে বিশাল লকেট৷ বাপ্পি লাহিড়ি বলছেন, 'আমার লক্ষ্মী মা, গণপতি, সবই আমার সঙ্গে রয়েছে৷'
আর এই গরমে ড্রেস কোড পাল্টালেন নাকি? উত্তর এল , 'গরমের সময় পাঞ্জাবি পরছি৷ কমলা রঙের পাঞ্জাবি বেশি করে রয়েছে৷ সঙ্গে নীল, সবুজও৷'
অনেক বেশি সতর্ক
বিজেপি প্রার্থী৷ পশ্চিমবঙ্গে মোদীর যে তারকা বাহিনী, তার মধ্যে দু'জনের দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধী পক্ষ৷ এক জন বাবুল সুপ্রিয়৷ অন্য জন জাদুকর পি সি সরকার৷ সেই তুলনায় সঙ্গীত পরিচালক-গায়ক বাপ্পি অনেক বেশি সতর্ক৷
প্রার্থী আসলে শুরুতেই ঠিক করে নিয়েছেন, মন্তব্য করবেন সামলে৷ বাপ্পি নিজে বলছেন, 'আমার অনেক এক্সপেরিয়েন্স আছে৷ সব দলের হয়েই প্রচার করেছি৷ আমি জানি, কখন কোনটা বলতে হয়৷ কিন্ত্ত যে কথা বলা উচিত, মেপে বলা উচিত৷' সব দল মানে আপনি কংগ্রেসের হয়েও প্রচার করেছেন, রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর হয়েও? শুনেই বাপ্পির উত্তর, 'আমি কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করেছি, টিএমসি-র হয়েও, অ্যাজ অ্যান আর্টিস্ট৷ কিন্ত এখন আামি বিজেপির এক জন বিরাট কর্ম (একটু থেমে), কর্মসেবা লোক৷'
যখন প্রচার শুরু করলেন, তখন তাঁকে অনুসরণ করত বেশ কিছু গাড়ি৷ তার উপর চারপাশে উপচে পড়া ভিড়৷ বিরোধী দলের অভিযোগ ছিল, এ ভাবে গাড়ি নিয়ে প্রচার করার অনুমতি তারকার ছিল না৷ ফলে যানবাহন চলাচল থমকে যায় এবং সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ৷ কিন্ত্ত বাপ্পি লাহিড়ি শান্ত গলাতেই বলছেন, 'এটা তো মানুষের ভালোবাসা৷ মানুষ বাপ্পি লাহিড়িকে তাঁদের ভালোবাসা জানাতেই ভিড় করেছিল৷'
প্রচারে বেরিয়ে 'বাপি বাড়ি যা' ধরনেরও কিছু মন্তব্যের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি৷ কিন্ত্ত মাথা ঠান্ডা৷ সেই মন্তব্যের পাল্টা কোনও গরমাগরম মন্তব্য করে ফেলেননি এই তারকা প্রার্থী৷
বাকি ক'দিন এমন শান্ত ঢঙে টেনে দিতে পারলে, বড়সড় কোনও বিতর্কে না জড়িয়েই নির্বাচনী অভিযান শেষ করতে পারেন৷
তবে হ্যাঁ, সম্পত্তির ঘোষণায় যা জানিয়েছেন সম্প্রতি, (যে তাঁর ৭৫৪ গ্রাম সোনা আছে), তা নিয়ে অনেকেই হেসে কুটোপাটি৷ তবে বাপ্পির দাবি, 'আমার অনেক কিছুই তো মিসেস লাহিড়ি তৈরি করে দিয়েছেন!'
শান্ত ঢঙে কথা বললেও কিছু মন্তব্যে নিজেকে নিয়ে মজে থাকার মেজাজ প্রকট৷ মজার ব্যাপার হল এতে সমালোচনার বদলে ভালোবাসাও কুড়তে পারেন তিনি৷ কারণ দেশজুড়ে আমজনতা গা-সওয়া এটাই যে, বাপ্পি লাহিড়ি স্বয়ং বলবেন, 'আমি ব্লিং ব্লিং বাপ্পি লাহিড়ি৷'
তেমনটা না শুনলেই যেন মন ভরে না তাঁর ভক্তদের৷ সে কারণেই বাপ্পি লাহিড়ি ভোটভিক্ষায় নেমে বলছেন, 'শ্রীরামপুরের দর্শক, মানে জনতা যে ভাবে বাপ্পি লাহিড়িকে গ্রহণ করেছে, আমি যদি সত্যি ওনাদের প্রমিস নিভাতে পারি, আমি অনেক দিন টিকে থাকতে পারব শ্রীরামপুরে৷'
জিতলে কী করবেন
বাপ্পি লাহিড়ি বলছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে শ্রীরামপুর জায়গাটি কিছুটা নীচের দিকে আছে৷ এটা নিশ্চিত যে দিল্লিতে বিজেপি আসছে৷ আর আমায় যদি কেন্দ্রে শ্রীরামপুরের প্রতিনিধি করে পাঠায়, আমি ভালোই করব৷ শ্রীরামপুরে মুজিক (বাপ্পি লাহিড়ি মিউজিক শব্দটি বরাবরই উচ্চারণ করেন বিশেষ ঢঙে ) অ্যাকাডেমি তৈরি করব৷ যে সব মন্দির আছে, যেমন রাধাবল্লভ টেম্পল আছে, জগন্নাথ বাড়ি আছে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এসেছিলেন দোলতলাতে, ছত্র দোলতলাতে, সেই সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখলে অনেক ট্যুরিস্ট দেখতে আসবেন শ্রীরামপুরকে৷'
যে সব প্রার্থী জিতবেন বলে নিশ্চিত
'বিরোধী দলের প্রার্থীদের সঙ্গে আমার কোনও ব্যাপার নেই ', এটাই মনে করেন বাপ্পি লাহিড়ি৷ দেব বা মুনমুন সেন, যার নাম করেই তাঁকে জিজ্ঞেস করা হোক না কেন, কারও সম্পর্কেই কোনও বিদ্বেষ নেই তাঁর মনে৷ তবে দু'জন প্রার্থীর জয় নিয়ে এই মুহূর্তে নিশ্চিত এই তারকা৷ তাই নিজের মুখেই বলছেন, 'বাপ্পি লাহিড়িকে মানুষ ভালোবাসা দিচ্ছেন৷ আর মোদীজির জয় হবে৷'
http://eisamay.indiatimes.com/election-news/bappi-lahirys-daily-rourtine-during-election-campaign/articleshow/34284352.cms
No comments:
Post a Comment