মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ১৪ শিশুর মৃত্যুতে ক্ষোভ
বহরমপুর: সদ্যোজাতের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ৷ অভিযোগ উঠছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট ১৪টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে এখানে৷ শিশুমৃত্যুর হার কমাতে যে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) তৈরি করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে, সেখানেই এই লাগাতার শিশুমৃত্যু৷ যদিও মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ বা এসএনসিইউ-এর প্রধান চিকিত্সক কেউই স্বীকার করতে চাইছেন না যে হাসপাতালের কোনও গাফিলতি ছিল৷ অতিরিক্ত গরম, অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আনা ইত্যাদিকেই দায়ী করছেন তাঁরা৷ একই মত রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদেরও৷ কিন্ত্ত এই ঘটনায় জেলায় জেলায় রুগ্ণ শিশুদের সুচিকিত্সার জন্য বহু লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি এই এসএনসিইউগুলির প্রয়োজনীয়তা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে শিশুমৃত্যু ঠেকাতে তৈরি করা হয় সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)৷ গত ২৬ এপ্রিল, শনিবার এখানে চারটি শিশু মারা যায় যাদের বয়স এক থেকে পাঁচ দিন৷ রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা যায় আরও পাঁচ শিশু৷ ওই দিন রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মারা যায় আরও পাঁচটি৷ ফলে প্রসূতিদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়৷ মুকুন্দপুরের কোহিনুর বিবি তাঁর ন'দিনের সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন কান্নায়৷ বলেন, 'ভালো চিকিত্সা হবে বলেই মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এসেছিলাম৷ কিন্ত্ত কী হল? সেই তো চলেই গেল৷' রানিতলার নাসিমা বিবি, হরিহরপাড়ার হাসিবা বিবির অবস্থাও একই৷
কিন্ত্ত এ ঘটনাকে 'অস্বাভাবিক' আখ্যা দিতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর রিপোর্ট রাখা হয় রাত বারোটা থেকে পরেরদিন রাত বারোটা পর্যন্ত৷ এই নিরিখে কোনও দিনই মৃত্যু পাঁচের ওপরে ওঠেনি৷ কাজেই অস্বাভাবিক ঘটনা বলা যায় না৷ শিশুগুলি যে মারা গিয়েছে সেটা ঠিক৷ কিন্ত্ত বেশিরভাগকেই বাড়িতে বা অন্যত্র প্রসব হওয়ার পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আনা হয়েছিল৷ ওজন খুবই কম ছিল৷ তার উপর প্রচণ্ড গরম৷ সবমিলিয়েই এ রকম ঘটেছে৷' এসএনসিইউ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিত্সক ভোলানাথ আইচও সে কথারই প্রতিধ্বনি করে বলেন, 'বাড়িতে প্রসবের বিরুদ্ধে মায়েদের সচেতন করতে না-পারলে শিশুমৃত্যু কমানো যাবে না৷ এখানে সীমিত পরিকাঠামোতেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি৷' স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারাও বলছেন একই কথা৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, 'সরকারি ভাবে এ রকম খবর আমরা পাইনি৷ যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তা হলে তদন্ত হবে৷' শিশুমৃত্যু রোধে গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'রাত ১২টা থেকে পরের দিন রাত ১২টার মধ্যে পাঁচটির বেশি শিশু মারা গেলে স্বাস্থ্য ভবনে অ্যালার্ট আসার কথা৷ কিন্ত্ত এমন সতর্কবার্তা আসেনি৷ আমার মনে হয় সময়ের নিরিখে সংখ্যার হিসেবে গরমিল হচ্ছে৷ খোঁজ নিচ্ছি৷' তিনি জানান, সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে এসএনসিইউ-এর বেডের সংখ্যা তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে৷ ফলে মুমূর্ষু সদ্যোজাতের ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে৷ তাই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস ত্রিদিববাবুর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, 'শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চারটি এবং শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পাঁচটি শিশু মারা গিয়েছে৷' স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, সোমবারও পাঁচটি শিশু মারা গিয়েছে৷ ফলে কোনও ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টেই শিশু মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ ছাড়ায়নি৷ তাই একে 'অস্বাভাবিক' বলতে নারাজ স্বাস্থ্যকর্তারা৷
বহরমপুর: সদ্যোজাতের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ৷ অভিযোগ উঠছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট ১৪টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে এখানে৷ শিশুমৃত্যুর হার কমাতে যে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) তৈরি করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে, সেখানেই এই লাগাতার শিশুমৃত্যু৷ যদিও মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ বা এসএনসিইউ-এর প্রধান চিকিত্সক কেউই স্বীকার করতে চাইছেন না যে হাসপাতালের কোনও গাফিলতি ছিল৷ অতিরিক্ত গরম, অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আনা ইত্যাদিকেই দায়ী করছেন তাঁরা৷ একই মত রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদেরও৷ কিন্ত্ত এই ঘটনায় জেলায় জেলায় রুগ্ণ শিশুদের সুচিকিত্সার জন্য বহু লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি এই এসএনসিইউগুলির প্রয়োজনীয়তা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে শিশুমৃত্যু ঠেকাতে তৈরি করা হয় সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)৷ গত ২৬ এপ্রিল, শনিবার এখানে চারটি শিশু মারা যায় যাদের বয়স এক থেকে পাঁচ দিন৷ রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা যায় আরও পাঁচ শিশু৷ ওই দিন রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মারা যায় আরও পাঁচটি৷ ফলে প্রসূতিদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়৷ মুকুন্দপুরের কোহিনুর বিবি তাঁর ন'দিনের সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন কান্নায়৷ বলেন, 'ভালো চিকিত্সা হবে বলেই মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এসেছিলাম৷ কিন্ত্ত কী হল? সেই তো চলেই গেল৷' রানিতলার নাসিমা বিবি, হরিহরপাড়ার হাসিবা বিবির অবস্থাও একই৷
কিন্ত্ত এ ঘটনাকে 'অস্বাভাবিক' আখ্যা দিতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর রিপোর্ট রাখা হয় রাত বারোটা থেকে পরেরদিন রাত বারোটা পর্যন্ত৷ এই নিরিখে কোনও দিনই মৃত্যু পাঁচের ওপরে ওঠেনি৷ কাজেই অস্বাভাবিক ঘটনা বলা যায় না৷ শিশুগুলি যে মারা গিয়েছে সেটা ঠিক৷ কিন্ত্ত বেশিরভাগকেই বাড়িতে বা অন্যত্র প্রসব হওয়ার পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আনা হয়েছিল৷ ওজন খুবই কম ছিল৷ তার উপর প্রচণ্ড গরম৷ সবমিলিয়েই এ রকম ঘটেছে৷' এসএনসিইউ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিত্সক ভোলানাথ আইচও সে কথারই প্রতিধ্বনি করে বলেন, 'বাড়িতে প্রসবের বিরুদ্ধে মায়েদের সচেতন করতে না-পারলে শিশুমৃত্যু কমানো যাবে না৷ এখানে সীমিত পরিকাঠামোতেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি৷' স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারাও বলছেন একই কথা৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, 'সরকারি ভাবে এ রকম খবর আমরা পাইনি৷ যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তা হলে তদন্ত হবে৷' শিশুমৃত্যু রোধে গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'রাত ১২টা থেকে পরের দিন রাত ১২টার মধ্যে পাঁচটির বেশি শিশু মারা গেলে স্বাস্থ্য ভবনে অ্যালার্ট আসার কথা৷ কিন্ত্ত এমন সতর্কবার্তা আসেনি৷ আমার মনে হয় সময়ের নিরিখে সংখ্যার হিসেবে গরমিল হচ্ছে৷ খোঁজ নিচ্ছি৷' তিনি জানান, সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে এসএনসিইউ-এর বেডের সংখ্যা তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে৷ ফলে মুমূর্ষু সদ্যোজাতের ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে৷ তাই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস ত্রিদিববাবুর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, 'শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চারটি এবং শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পাঁচটি শিশু মারা গিয়েছে৷' স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, সোমবারও পাঁচটি শিশু মারা গিয়েছে৷ ফলে কোনও ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টেই শিশু মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ ছাড়ায়নি৷ তাই একে 'অস্বাভাবিক' বলতে নারাজ স্বাস্থ্যকর্তারা৷
No comments:
Post a Comment