Tuesday, April 1, 2014

রোগিণীর মারে ঘায়েল ডাক্তার

রোগিণীর মারে ঘায়েল ডাক্তার

এই সময়: কিশোর ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন ত্রিশোর্ধ্ব মহিলা৷ সপ্তাহের প্রথম দিন সকালে সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে প্রবল ভিড় দেখে আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি তিনি৷ প্রথমে গালিগালাজ, তার পর স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কি এবং শেষে সটান মেরে বসলেন ডাক্তারবাবুকেই৷ সকলকে চমকে দিয়ে, স্বয়ং চিকিত্‍সকের গলা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া স্টেথো দিয়েই সজোরে আঘাত করলেন ডাক্তারবাবুর মাথায়৷ 

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন আউটডোরে ঘটা এই ঘটনায় অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয় রুবানা বিবি নামের ওই মহিলাকে৷ ফেটে যাওয়া মাথায় তিনটি সেলাই নিয়ে আপাতত ওই হাসপাতালেই চিকিত্‍সাধীন আহত চিকিত্‍সক, মেডিসিন বিভাগের প্রধান দেবু মুখার্জি৷ অভিযুক্ত মহিলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের বাসিন্দা৷ তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করায় ওই মহিলা যদিও এ দিনই জামিন পেয়ে গিয়েছেন৷ ন্যাশনালের উপাধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, 'ঘটনাটি বিক্ষিপ্ত হলেও, আমরা সকলে স্তম্ভিত৷ ওঁর বাঁধানো হাঙ্গামায় যাতে অন্যদের অসুবিধা না-হয়, সে জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ রুবানা বিবিকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও, ওঁর অসুস্থ ছেলের যথাযথ চিকিত্‍সায় কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি মেডিসিন আউটডোরে৷' 

যদিও এ দিনের ঘটনায় বড় হয়ে দেখা দিয়েছে পরিকাঠামো উন্নয়নের অভাবে অতিরিক্ত ভিড়ের সমস্যাটিও৷ চিকিত্‍সকের গায়ে হাত তোলার ঘটনার প্রতিবাদ করেও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে শূন্যপদ পূরণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন চিকিত্‍সকদের একটা বড় অংশ৷ সরকারি চিকিত্‍সকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিত্‍ চক্রবর্তী বলেন, 'এমন সিনিয়ার ডাক্তারবাবুর গায়ে হাত তোলা চরম নিন্দনীয়৷ চিকিত্‍সকের সুরক্ষার ব্যাপারে প্রশাসনকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে৷' কিন্ত্ত রোজ রোজ রোগী অসন্তোষের ঘটনা কেনই বা ঘটবে সরকারি হাসপাতালে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি৷ 'রোগী কিংবা তাঁদের পরিজন কেন ধৈর্য হারান? উত্তরটা যে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়, তা তো সকলেই জানে৷ এই ব্যাপারটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে সরকারকে৷ কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো ও পরিকাঠামো উন্নয়ন না-হলে এমন অনভিপ্রেত ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো মুশকিল,' মন্তব্য সত্যজিতবাবুর৷ 

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন ন্যাশনালের রামমোহন ব্লকের একতলায়? প্রত্যক্ষদর্শী এক রোগীর কথায়, 'বেলা তখন সাড়ে ১১টা হবে৷ আউটডোরে প্রবল ভিড়৷ এক মহিলা লাইনের অনেক পিছনে দাঁড়িয়েও অনেক ক্ষণ ধরে চিত্‍কার-চেঁচামেচি করছিলেন, ওঁর ছেলেকে আগে ডাক্তার দেখাবেন বলে৷ কিন্ত্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য রোগীরা কেউ-ই ওঁকে আগে ছাড়তে রাজি না-হওয়ায়, সকলকেই উনি গালিগালাজ করছিলেন৷ হাসপাতালের স্টাফরা ওঁকে শান্ত করতে গেলে, ওঁদের সঙ্গে মহিলার প্রায় ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়৷' উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, অভিযুক্ত মহিলা কারও কথাই শুনতে চাইছিলেন না৷ গালমন্দ করার পাশাপাশি কর্মীদের গায়েও হাত তুলছিলেন৷ তখনই বিভাগীয় প্রধান দেবুবাবু কর্মীদের বলেন, ওঁর আউটডোরে যেন নিয়ে আসা হয় মহিলাকে৷ 

আহত দেবুবাবুর কথায়, 'কী হয়েছে, কেন উনি এমন করছেন, সে কথাটাই ওঁকে একটু ধমকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম৷ উনি তখনও এলোপাথাড়ি হাত ছুড়ছিলেন৷ বুঝতেই পারিনি, আচমকা আমার গলা থেকে স্টেথো টেনে নিয়ে ভারী দিকটা (ডায়াফ্রামের অংশটি) দিয়ে আমার মাথাতেই বাড়ি মেরে দেবেন উনি৷ দীর্ঘ ৩৫ বছরের কেরিয়ারে এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম৷' আকস্মিকতা কাটিয়ে একটু ধাতস্থ হওয়ার পর তিনি প্রথমে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেও, মহিলার অসহায়তার কথা চিন্তা করেই পুলিশকে পরে অনুরোধ করেন রুবানাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য৷ পুলিশি ব্যাখ্যা হল, কর্তব্যরত সরকারি চিকিত্‍সকের নিগ্রহ জামিন-অযোগ্য অপরাধ হলেও, দেবুবাবুর অনুরোধেই তারা জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে৷ 

No comments:

Post a Comment