বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গঠিত হল স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ -
See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/03/02/73776#sthash.5QHGMMfK.wutako5M.dpuf
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ হঠাৎ করেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে গোটা দেশের মানুষ। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সারা দেশে। ঢাকা শহরের সব এলাকা থেকে লাখো মানুষ বাঁশের লাঠি হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছুটে আসে দিলকুশার পূর্বাণী হোটেলের দিকে। এ হোটেলেই পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সংসদীয় দলের বৈঠক চলছিল। লাখো মানুষের গগনবিদারী স্লোগান ও দাবির মুখে বৈঠক মুলতবি রেখে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জনতার এই অনির্ধারিত মহাসমাবেশে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে ইয়াহিয়া খানের জাতীয় অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সর্বত্র তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ২ মার্চ আজকের দিনে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বঙ্গবন্ধু ৩ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৪ দিন সফল হরতালের পর তিনি ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার মহাসমাবেশে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও ঘোষণা দেন। এদিন বিকালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে উভয় সংগঠনের সমন্বয়ে গঠন করেন ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। গাঢ় সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তে বাংলাদেশের সোনালী মানচিত্র আঁকা পতাকা দেখে উপস্থিত ছাত্র-জনতা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে সমগ্র এলাকা। রাতেই সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে (ইকবাল হল) সাবেক ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ ৮ ছাত্রনেতা দীর্ঘ শলাপরামর্শ করে বঙ্গবন্ধুর উপদেশ মতো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও স্বাধীনতার প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেন। এই ৮ নেতা রাতেই এসব বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাদের পরিকল্পনার কথাও জানান এবং বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। আজকের দিনে কি কি করতে হবে, দেশব্যাপী আহূত ৪ দিনের হরতালে দলের নেতারা কে কোথায় কি দায়িত্ব পালন করবেন, হরতাল সফল করার জন্য ঢাকার কোথায় কে কি করবেন- এসবই চূড়ান্ত করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রনেতারা যে যার মতো দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে চলে যান। ২ মার্চ একদিকে হরতালের প্রস্তুতি, অপরদিকে ব্যাপক গণজোয়ার। বাঁধভাঙা স্রোতের মতো মানুষ চারিদিক থেকে ছুটে আসতে থাকে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের ধানমণ্ডির বাড়িতে।
উত্তাল একাত্তরের নানা ঘটনা, আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে চলে আসে একক নেতৃত্ব। তার দূরদর্শিতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে সমগ্র জাতি ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বাংলার অবিসংবাদিত এই নেতার নজিরবিহীন ত্যাগ, জেল-জুলুম এবং দৃঢ় মনোবল পাকিস্তান সরকারকে ভেতরে ভেতরে ভাবিয়ে তোলে ও দুর্বল করে দেয়। সত্তরের ৭ ডিসেম্বরের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টির মধ্যে ২৯৯টি আসনে বিজয়ী হওয়ায় পাকিস্তানজুড়ে এ নির্বাচনের ধাক্কা লাগে। মুসলিম লীগের ভরাডুবি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সামান্য আসন সেখানকার উর্দুভাষী পাঠান-বেলুচদের সন্তুষ্ট করতেও ব্যর্থ হয়। খোদ পাক সরকারের মধ্যেও ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজতে থাকে। এমনই এক বিক্ষুব্ধ ও উত্তাল পরিস্থিতিতে ১৩ ফেব্র“য়ারি এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন ঢাকায়। একই সঙ্গে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এসএম আহসানকে অপসারণ করে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব আলী খানকে গভর্নর নিযুক্ত করেন। তীব্র আন্দোলন শুরু হয় ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি নিয়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচির এক সভায় ভাষণে প্রস্তাব করেন, প্রয়োজনে পাকিস্তানের দুই প্রদেশে দু’জন প্রধানমন্ত্রী হবেন। ১৬ ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে অবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জোর দাবি জানান। এমনই এক পরিস্থিতিতে একাত্তরের ১৪ আগস্ট প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এবং গণমানুষের একমাত্র নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শেখ মুজিবই পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ, যার কথা সে দেশের মানুষের কাছে শুধু আইনই নয়, সে কথা পালন করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও তারা পিছপা হন না।
See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/03/02/73776#sthash.5QHGMMfK.wutako5M.dpuf
রফিকুল ইসলাম রতন
প্রকাশ : ০২ মার্চ, ২০১৪
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ হঠাৎ করেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে গোটা দেশের মানুষ। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সারা দেশে। ঢাকা শহরের সব এলাকা থেকে লাখো মানুষ বাঁশের লাঠি হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছুটে আসে দিলকুশার পূর্বাণী হোটেলের দিকে। এ হোটেলেই পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সংসদীয় দলের বৈঠক চলছিল। লাখো মানুষের গগনবিদারী স্লোগান ও দাবির মুখে বৈঠক মুলতবি রেখে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জনতার এই অনির্ধারিত মহাসমাবেশে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে ইয়াহিয়া খানের জাতীয় অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সর্বত্র তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ২ মার্চ আজকের দিনে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বঙ্গবন্ধু ৩ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৪ দিন সফল হরতালের পর তিনি ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার মহাসমাবেশে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও ঘোষণা দেন। এদিন বিকালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে উভয় সংগঠনের সমন্বয়ে গঠন করেন ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। গাঢ় সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তে বাংলাদেশের সোনালী মানচিত্র আঁকা পতাকা দেখে উপস্থিত ছাত্র-জনতা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে সমগ্র এলাকা। রাতেই সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে (ইকবাল হল) সাবেক ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ ৮ ছাত্রনেতা দীর্ঘ শলাপরামর্শ করে বঙ্গবন্ধুর উপদেশ মতো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও স্বাধীনতার প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেন। এই ৮ নেতা রাতেই এসব বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাদের পরিকল্পনার কথাও জানান এবং বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। আজকের দিনে কি কি করতে হবে, দেশব্যাপী আহূত ৪ দিনের হরতালে দলের নেতারা কে কোথায় কি দায়িত্ব পালন করবেন, হরতাল সফল করার জন্য ঢাকার কোথায় কে কি করবেন- এসবই চূড়ান্ত করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রনেতারা যে যার মতো দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে চলে যান। ২ মার্চ একদিকে হরতালের প্রস্তুতি, অপরদিকে ব্যাপক গণজোয়ার। বাঁধভাঙা স্রোতের মতো মানুষ চারিদিক থেকে ছুটে আসতে থাকে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের ধানমণ্ডির বাড়িতে।
উত্তাল একাত্তরের নানা ঘটনা, আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে চলে আসে একক নেতৃত্ব। তার দূরদর্শিতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে সমগ্র জাতি ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বাংলার অবিসংবাদিত এই নেতার নজিরবিহীন ত্যাগ, জেল-জুলুম এবং দৃঢ় মনোবল পাকিস্তান সরকারকে ভেতরে ভেতরে ভাবিয়ে তোলে ও দুর্বল করে দেয়। সত্তরের ৭ ডিসেম্বরের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টির মধ্যে ২৯৯টি আসনে বিজয়ী হওয়ায় পাকিস্তানজুড়ে এ নির্বাচনের ধাক্কা লাগে। মুসলিম লীগের ভরাডুবি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সামান্য আসন সেখানকার উর্দুভাষী পাঠান-বেলুচদের সন্তুষ্ট করতেও ব্যর্থ হয়। খোদ পাক সরকারের মধ্যেও ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজতে থাকে। এমনই এক বিক্ষুব্ধ ও উত্তাল পরিস্থিতিতে ১৩ ফেব্র“য়ারি এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন ঢাকায়। একই সঙ্গে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এসএম আহসানকে অপসারণ করে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব আলী খানকে গভর্নর নিযুক্ত করেন। তীব্র আন্দোলন শুরু হয় ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি নিয়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচির এক সভায় ভাষণে প্রস্তাব করেন, প্রয়োজনে পাকিস্তানের দুই প্রদেশে দু’জন প্রধানমন্ত্রী হবেন। ১৬ ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে অবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জোর দাবি জানান। এমনই এক পরিস্থিতিতে একাত্তরের ১৪ আগস্ট প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এবং গণমানুষের একমাত্র নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শেখ মুজিবই পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ, যার কথা সে দেশের মানুষের কাছে শুধু আইনই নয়, সে কথা পালন করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও তারা পিছপা হন না।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/03/02/73776#sthash.5QHGMMfK.wutako5M.dpuf
No comments:
Post a Comment