ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় ওদের
ভয়াল ২১ আগস্ট
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘সেই মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। পঙ্গুত্বের জীবন যে কী কষ্টের, কী যে ভয়াবহ- সে কথা পঙ্গু না হলে জানা যায় না। আমার সুন্দর জীবনটা হারিয়ে গেছে। জোড়াতালি দেয়া হাত-পা নিয়ে বেঁচে আছি। গ্রেনেডের ঘাতক স্পিøন্টারের সঙ্গেই আমাদের নিত্য বসবাস। বিভীষিকাময় সেই ভয়াল দিনটির কথা মনে হলে এখনও মৃত্যু যেন হাতছানি দেয়। বিভীষিকাময় ঘটনাটির নারকীয় স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় সবসময়। তখন জীবনযন্ত্রণা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আরও শক্ত করে। মাথা, বুক, দুই পা, ফুসফুস, পেট-সর্বাঙ্গে বিঁধে আছে অসংখ্য ঘাতক স্পিøন্টার। শরীরের যেখানেই হাত দেই সেখানেই ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টার। সব সময় মাথাসহ সারা শরীরের তীব্র যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাই। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের দিন কাটছে।
মঙ্গলবার জনকণ্ঠের কাছে এভাবেই আবেগজড়িত কণ্ঠে দশ বছর ধরে সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা ২১ আগস্টের গ্রেনেডের স্পিøন্টারের তীব্র যন্ত্রণায় পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকার কথা জানালেন মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমানে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসী।
দশ বছর ধরেই তাঁর ভরসা হুইল চেয়ার, স্ট্রেচার কিংবা লাঠি। প্রতিনিয়ত ভয়াল স্পিøন্টারের যন্ত্রণায় দগ্ধ হলেও মনোবল ও সাহস আগেও হারাননি, এখনও অটুট আছে তাঁর। ক্র্যাচ ও লাঠির ওপর ভর করেই সংসদসহ দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন প্রায় প্রতিদিনই। জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকা নাসিমা ফেরদৌসী তাঁকে এমপি করে মূল্যায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যেমন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, ঠিক তেমনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূলনায়ক ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দৃঢ়কণ্ঠেই।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বেশূন্য করতে পরিচালিত এই ভয়াল গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি দেখতে দেখতে ১০টি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বীভৎসা ও ভয়াল স্মৃতি এতটুকু ম্লান হয়নি সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা স্পিøন্টারের তীব্র যন্ত্রণায় পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকা আওয়ামী লীগের শ’ শ’ নেতাকর্মীর। সেই মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজও তাঁদের তাড়া করে। তাঁরা জীবিত থেকেও যেন মৃত। প্রত্যেকের শরীরেই বীভৎস ক্ষতের চিহ্ন। বরং জীবনযন্ত্রণা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে তাদের আরও শক্ত করে। স্পিøন্টারের বিষক্রিয়ায় শরীরেও দেখা দিয়েছে নানা উপসর্গ। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনও বেঁচে আছেন আহত নেতাকর্মীরা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী নিহত এবং পাঁচ শতাধিকরও বেশি নেতাকর্মী আহত হন। এই নারকীয় বীভৎস্য হামলার ঘটনার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও এর বিচার হয়নি, শাস্তি পায়নি নরপিশাচ ঘাতকরা।
১০ বছর আগে ২১ আগস্টের সেই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আহত অধিকাংশ নেতাকর্মীর অনুভূতি প্রায় একই রকম। সময়ের সঙ্গে কষ্টের তীব্রতা এতটুকুও কমেনি তাঁদের। এই ভয়াবহ রাজনৈতিক জিঘাংসার শিকার অনেকেই আজ পঙ্গু। কেউ চলৎশক্তিহীন। কেউ হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। অনেকে প্যারালাইস হয়ে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন, অনেকের জীবনেই এখন ক্রাচই চলাফেরার নিত্যসঙ্গী। অনেকেরই শরীরে রয়ে গেছে অসংখ্য স্পিøন্টারের অস্তিত্ব। অনেকেরই শরীরে দগদগে ক্ষতের চিহ্ন জানান দিচ্ছে সেই ভয়াল দিনের মরণছোবলের বীভৎসতা। পেঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকা আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে গত ছয়টি বছর ধরে তাঁদের দুঃসহ জীবনযাপনের করুণ অবস্থার বর্ণনা দেন।
নাসিমা ফেরদৌসী আরও বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) তাঁর মতো অসংখ্য আহত মানুষের জন্য অনেক করেছেন, অনেক দিয়েছেন। এখনও করে যাচ্ছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অবদানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমার মতো কাউকে কাউকে জাতীয় সংসদের এমপি পর্যন্ত করেছেন। সে জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন তাঁরা। তবে একটাই দুঃখ এখনও এ ভয়াল হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। আমরা চাই ঘাতক এবং হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
নাসিমা ফেরদৌসীর মতো অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়েই দলীয় কর্মকা-ে সরব রয়েছেন। রাজপথের সাহসী মহিলা নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদা তারেক দিপ্তীও ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। দেশ-বিদেশে চিকিৎসার পর এখনও তাঁর হাত-পাসহ দেহের সর্বাঙ্গে দু শ’রও বেশি স্পিøন্টার বিঁধে রয়েছে। এই স্পিøন্টারের কারণেই শরীরজুড়ে অসহ্য যন্ত্রণার পাশাপাশি সারাদেহে জ্বালাপোড়া করে, ডানপায়ের আঙ্গুলগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য আহতদের মতো দিপ্তীর শরীরে থাকা স্পিøন্টারগুলো রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।
দিপ্তী তাঁর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান, ঘাতক গ্রেনেডের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়েই আমার দিন কাটছে। তবে যতই যন্ত্রণা হোক, সমস্যা হোক- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। তবে ২১ আগস্টের ঘাতকদের বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে ভবিষ্যতে আর কোন অপশক্তি এমন ঘটনা ঘটানোর সাহসও না পায়।
নাসিমা-দিপ্তী-রুমা-পারভীনদের মতো আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ ও প্রবীণ নেতারাও দেশে ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টার নিয়েও রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এখনও সর্বাঙ্গে বিঁধে আছে ২৬টিরও বেশি স্পিøন্টার। হিংস্র শ্বাপদের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে প্রাণটা বাঁচলেও মরণঘাতী গ্রেনেডের স্পিøন্টারের যন্ত্রণাদগ্ধ অভিশাপ নিয়েই চলছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথসহ বেশ ক’জন নেতা-মন্ত্রী ও এমপির দেহেও বিঁধে অসংখ্য ঘাতক স্পিøন্টার। আমৃত্যু তাঁদের মতো সকল নেতাকর্মীকেই এই জীবনযন্ত্রণা ভোগ করেই পথ চলতে হবে। শুধু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাকেই গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে যন্ত্রণাদগ্ধ রাজনৈতিক জীবন চালাতে হচ্ছে। গ্রেনেডের যন্ত্রণা নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রবীণ নেতা আবদুর রাজ্জাক ও ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে।
জীবনযন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকলেও ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আহত নেতাকর্মীরা এখন ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করতে ঘাতকরা গ্রেনেড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই দলটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। গ্রেনেডের আঘাতে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে, ছন্দপতন ঘটিয়েছে স্বাভাবিক জীবনের- তাদেরই সবারই এখন প্রত্যাশা- বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও চলছে। এখন দ্রুতবিচারের মাধ্যমে ২১ আগস্টের ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
ভয়াল গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে গেলেও স্পিøন্টার তাঁদের পিছু ছাড়েনি। দীর্ঘ ১০টি বছর পেরিয়ে গেলেও এসব মানুষের দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি। আমৃত্যু এমন জীবনযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, এটা ভেবেই অসহায়-বেদনার্ত আহাজারি প্রতিটি আহতদের মাঝে। কারও চোখ নেই, কেউ কানে শোনেন না। কেউ হাত-পা বাঁকা করে সব সময় চলাফেরা করছেন, শরীর সোজা করে এখনও শুতে পারেন না অনেকেই। এমনকি তাঁদের দেহে একটু স্পর্শ করলেই ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ওঠেন।
মঙ্গলবার জনকণ্ঠের কাছে এভাবেই আবেগজড়িত কণ্ঠে দশ বছর ধরে সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা ২১ আগস্টের গ্রেনেডের স্পিøন্টারের তীব্র যন্ত্রণায় পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকার কথা জানালেন মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমানে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসী।
দশ বছর ধরেই তাঁর ভরসা হুইল চেয়ার, স্ট্রেচার কিংবা লাঠি। প্রতিনিয়ত ভয়াল স্পিøন্টারের যন্ত্রণায় দগ্ধ হলেও মনোবল ও সাহস আগেও হারাননি, এখনও অটুট আছে তাঁর। ক্র্যাচ ও লাঠির ওপর ভর করেই সংসদসহ দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন প্রায় প্রতিদিনই। জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকা নাসিমা ফেরদৌসী তাঁকে এমপি করে মূল্যায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি যেমন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, ঠিক তেমনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূলনায়ক ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দৃঢ়কণ্ঠেই।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বেশূন্য করতে পরিচালিত এই ভয়াল গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি দেখতে দেখতে ১০টি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বীভৎসা ও ভয়াল স্মৃতি এতটুকু ম্লান হয়নি সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা স্পিøন্টারের তীব্র যন্ত্রণায় পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকা আওয়ামী লীগের শ’ শ’ নেতাকর্মীর। সেই মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজও তাঁদের তাড়া করে। তাঁরা জীবিত থেকেও যেন মৃত। প্রত্যেকের শরীরেই বীভৎস ক্ষতের চিহ্ন। বরং জীবনযন্ত্রণা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে তাদের আরও শক্ত করে। স্পিøন্টারের বিষক্রিয়ায় শরীরেও দেখা দিয়েছে নানা উপসর্গ। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনও বেঁচে আছেন আহত নেতাকর্মীরা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী নিহত এবং পাঁচ শতাধিকরও বেশি নেতাকর্মী আহত হন। এই নারকীয় বীভৎস্য হামলার ঘটনার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও এর বিচার হয়নি, শাস্তি পায়নি নরপিশাচ ঘাতকরা।
১০ বছর আগে ২১ আগস্টের সেই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আহত অধিকাংশ নেতাকর্মীর অনুভূতি প্রায় একই রকম। সময়ের সঙ্গে কষ্টের তীব্রতা এতটুকুও কমেনি তাঁদের। এই ভয়াবহ রাজনৈতিক জিঘাংসার শিকার অনেকেই আজ পঙ্গু। কেউ চলৎশক্তিহীন। কেউ হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। অনেকে প্যারালাইস হয়ে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন, অনেকের জীবনেই এখন ক্রাচই চলাফেরার নিত্যসঙ্গী। অনেকেরই শরীরে রয়ে গেছে অসংখ্য স্পিøন্টারের অস্তিত্ব। অনেকেরই শরীরে দগদগে ক্ষতের চিহ্ন জানান দিচ্ছে সেই ভয়াল দিনের মরণছোবলের বীভৎসতা। পেঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকা আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে গত ছয়টি বছর ধরে তাঁদের দুঃসহ জীবনযাপনের করুণ অবস্থার বর্ণনা দেন।
নাসিমা ফেরদৌসী আরও বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) তাঁর মতো অসংখ্য আহত মানুষের জন্য অনেক করেছেন, অনেক দিয়েছেন। এখনও করে যাচ্ছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অবদানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমার মতো কাউকে কাউকে জাতীয় সংসদের এমপি পর্যন্ত করেছেন। সে জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন তাঁরা। তবে একটাই দুঃখ এখনও এ ভয়াল হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। আমরা চাই ঘাতক এবং হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
নাসিমা ফেরদৌসীর মতো অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়েই দলীয় কর্মকা-ে সরব রয়েছেন। রাজপথের সাহসী মহিলা নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সাহিদা তারেক দিপ্তীও ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন। দেশ-বিদেশে চিকিৎসার পর এখনও তাঁর হাত-পাসহ দেহের সর্বাঙ্গে দু শ’রও বেশি স্পিøন্টার বিঁধে রয়েছে। এই স্পিøন্টারের কারণেই শরীরজুড়ে অসহ্য যন্ত্রণার পাশাপাশি সারাদেহে জ্বালাপোড়া করে, ডানপায়ের আঙ্গুলগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য আহতদের মতো দিপ্তীর শরীরে থাকা স্পিøন্টারগুলো রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।
দিপ্তী তাঁর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানান, ঘাতক গ্রেনেডের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়েই আমার দিন কাটছে। তবে যতই যন্ত্রণা হোক, সমস্যা হোক- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। তবে ২১ আগস্টের ঘাতকদের বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে ভবিষ্যতে আর কোন অপশক্তি এমন ঘটনা ঘটানোর সাহসও না পায়।
নাসিমা-দিপ্তী-রুমা-পারভীনদের মতো আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ ও প্রবীণ নেতারাও দেশে ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টার নিয়েও রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এখনও সর্বাঙ্গে বিঁধে আছে ২৬টিরও বেশি স্পিøন্টার। হিংস্র শ্বাপদের ভয়ঙ্কর ছোবল থেকে প্রাণটা বাঁচলেও মরণঘাতী গ্রেনেডের স্পিøন্টারের যন্ত্রণাদগ্ধ অভিশাপ নিয়েই চলছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথসহ বেশ ক’জন নেতা-মন্ত্রী ও এমপির দেহেও বিঁধে অসংখ্য ঘাতক স্পিøন্টার। আমৃত্যু তাঁদের মতো সকল নেতাকর্মীকেই এই জীবনযন্ত্রণা ভোগ করেই পথ চলতে হবে। শুধু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাকেই গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে যন্ত্রণাদগ্ধ রাজনৈতিক জীবন চালাতে হচ্ছে। গ্রেনেডের যন্ত্রণা নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রবীণ নেতা আবদুর রাজ্জাক ও ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে।
জীবনযন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকলেও ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আহত নেতাকর্মীরা এখন ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করতে ঘাতকরা গ্রেনেড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই দলটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। গ্রেনেডের আঘাতে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে, ছন্দপতন ঘটিয়েছে স্বাভাবিক জীবনের- তাদেরই সবারই এখন প্রত্যাশা- বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও চলছে। এখন দ্রুতবিচারের মাধ্যমে ২১ আগস্টের ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
ভয়াল গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে গেলেও স্পিøন্টার তাঁদের পিছু ছাড়েনি। দীর্ঘ ১০টি বছর পেরিয়ে গেলেও এসব মানুষের দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়েনি। আমৃত্যু এমন জীবনযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে, এটা ভেবেই অসহায়-বেদনার্ত আহাজারি প্রতিটি আহতদের মাঝে। কারও চোখ নেই, কেউ কানে শোনেন না। কেউ হাত-পা বাঁকা করে সব সময় চলাফেরা করছেন, শরীর সোজা করে এখনও শুতে পারেন না অনেকেই। এমনকি তাঁদের দেহে একটু স্পর্শ করলেই ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ওঠেন।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/
No comments:
Post a Comment