মুজিবের চোখ বাঁধা ১০৫ দিন
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ২০ আগস্ট, ২০১৪
নিখোঁজের ১০৫ দিন পর ফিরে আসা যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য মুজিবুর রহমান মুজিবের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি গুলশানের ইউনাইটেড হাপসাতালের একটি কেবিনে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের দাগ ও ক্ষত দেখা গেছে। রক্তে হিমাগ্লোবিন কমে গেছে। ডায়াবেটিস ও থায়রয়েডের সমস্যা বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে তাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। জেলার একজন সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল তাকে সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ও গুলশান থানা পুলিশ হাসপাতাল ও আশপাশে অবস্থান করছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলে আজই তাকে সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। অপহরণের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ও আদালতে জবানবন্দি নেবে।
এদিকে তার গাড়িচালক রেজাউল হক সোহেলকেও একই সঙ্গে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনিও ছাড়া পেয়ে গুলশানের মুজিবের শ্যালকের বাসায় যান। সেখান থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে রওনা দেন। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি বাড়ি পৌঁছাননি। ফলে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। মুজিবুর রহমানের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি কি অপহরণ না আÍগোপন এ নিয়ে সিলেটে চলছে নানা গুঞ্জন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে মুজিবুর রহমান নিজেই আÍগোপনে ছিলেন। যদিও তার খোঁজে সুনামগঞ্জে গিয়েছিলেন নাইজেল এলিসের নেতৃত্বে ব্রিটিশ গোয়েন্দা পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের খেওয়ালিপাড়া গ্রামের আসদ আলীর ছেলে মুজিব। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে লন্ডন প্রবাসী এবং যুক্তরাজ্য যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি দেশে এসে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। সংসদ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালাতে থাকেন। আন্দোলন করেন নিখোঁজ হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবিতে। ৪ মে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে সুনামগঞ্জ শহীদ মিনারে এক অনশন শেষে সিলেট ফেরার পথে টুকেরবাজার এলাকা থেকে মুজিব অপহৃত হন। সোমবার সকালে টঙ্গীর কাছে চোখ বাঁধা ও বোরকা পরা অবস্থায় তাকে নামিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে তিনি গুলশানে তার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেনের বাসায় যান। চিকিৎসার জন্য সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ যুগান্তরকে জানিয়েছেন, মুজিবুর রহমান অনেকটা সুস্থ। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাকে ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ নেয়া হবে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে।
সোমবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সাংবাদিকরা হাসপাতালে যান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন সাংবাদিককে তার কাছে যেতে দেয়নি। এক আত্মীয়ের মোবাইল ফোনে মুজিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, পুলিশের পোশাক পরা কয়েক ব্যক্তি ৪ মে তাকে অপহরণের পর চেতনানাশক স্প্রে করে অজ্ঞান করে। জ্ঞান ফেরার পর তাকে ছোট একটি কক্ষে বন্দি রাখা হয়। টানা সাড়ে তিন মাস তিনি ওই কক্ষে বন্দি ছিলেন। খাওয়ার সময়ও তার চোখ বেঁধে রাখা হতো। শুধু বাথরুমে যাওয়ার সময় চোখ খুলে দেয়া হতো। অপহরণকারীরা বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে ভদ্রলোকের মতো কথা বলতেন এবং তার কাছে ১২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তার কাছে যুক্তরাজ্য বিএনপির কর্মকাণ্ড ও তারেক রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইত। অপহরণকারীরা সোমবার ভোরে মুজিব ও তার গাড়িচালক সোহেলকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে টঙ্গীর কাছে বেশকিছু পথ ঘুরে একটি নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায়। তিনি জায়গাটি চিনতে পারছিলেন না। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দেখতে পেয়ে চালকের কাছ থেকে জানতে পারেন ওই এলাকাটি টঙ্গীর কাছে। সিএনজিচালক প্রথমে তাকে নিতে রাজি না হয়ে চলে যান। পরে সে গাড়ি ঘুরিয়ে ৮০ টাকা ভাড়ায় তাকে আবদুল্লাপুর ব্রিজের কাছে পৌঁছে দেন। সেখান তেকে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে গুলশানের ১২৬ নম্বর সড়কে তার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ারের বাসায় পৌঁছান। গাড়িচালক সোহেল ছাড়া পাওয়ার পর সিলেট চলে গেছেন। অপহরণকারীরাই মুজিবকে বাসায় যাওয়ার ভাড়ার টাকাও দিয়ে দিয়েছে। গোয়েন্দা পরিবেষ্টিত থাকায় তিনি সাংবাদিকদের ঘটনার বিস্তারিত জানাতে পারেননি। মুজিব আরও জানান, তিনি ভালো আছেন। নিজের জন্য দোয়া চেয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, তার সামনে একজন অফিসার আছেন। তাই এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারছেন না।
তার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, ৪ মে অনশন কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে পুলিশ তার গাড়ি থামায়। চালকের লাইসেন্স ভুয়া বলে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা কয়েক যুবক গাড়িটি আটক করে। ওই যুবকরা তাকে বলে, ‘আপনাকে আমরা বাসায় পৌঁছে দেব। গাড়িটি থানায় নিতে হবে। আপনি আমাদের সঙ্গে আসুন।’ ওই মাইক্রোবাসে তাকে তোলার পর তার নাকের সামনে চেতনানাশক স্প্রে করে দেয়। এরপর তিনি জ্ঞান হারান। কারা অপহরণ করেছে এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আনোয়ার বলেন, তার ধারণা তাকে পুলিশ নয়, আরও এলিট কোনো বাহিনীর লোকজন সেটা র্যাবও হতে পারে উঠিয়ে নিয়েছিল।
এক কক্ষেই থাকার দাবি : মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ৩ মাস ১২ দিন ছোট্ট একটি কক্ষেই বন্দি ছিলেন বলে তার আত্মীয়দের জানিয়েছেন। ওই সময় তিনি অজ্ঞান থাকায় অপহরণের স্থল থেকে সেটি কত দূরে অনুমান করতে পারেননি। গত দুই দিনে তিনি রাজনৈতিক সহকর্মী ও আত্মীয়দের জানিয়েছেন, সোমবার ভোর ৩টার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ওই কক্ষ থেকে বের করে একটি সিঁড়ি দিয়ে তাকে নামানো হয়। একটি ফ্লোর নামার পর কিছুদূর হাঁটিয়ে নিয়ে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। মাইক্রোবাসটি কয়েক ঘণ্টা চলার পর তাকে চোখ বেঁধে টঙ্গীর কাছে নামিয়ে দেয়। অপরহরণকারীরা নামিয়ে দেয়ার ১০ মিনিট পর চোখ খোলার নির্দেশ দেয়। এর আগে চোখ খুললে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে তিনি দেখেন বোরকা পরিহিত অবস্থায়।
ওই কক্ষ থেকে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আজান শোনা যেত বলে রাজনৈতিক সহকর্মীদের জানান মুজিব। যে কক্ষে মুজিব ছিলেন সেটির পাশেই লাগোয়া টয়লেট ছিল। তিনি ফ্লোরেই ঘুমাতেন। সেখানে বালিশ ও কম্বল ছিল। তা ছাড়া বসার জন্য একটি চেয়ারও রাখা ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময় নেতাগোছের এক ব্যক্তি ওই চেয়ারে বসত। যাকে অন্যরা স্যার বলে সম্বোধন করত। টয়লেটে যাওয়ার সময় তার চোখ খুলে দেয়া হতো। অন্ধকার রুমে মাঝেমধ্যে একজন যুবককে দেখতেন। সপ্তাহে একবার গোসল ও দুই তিন দিন পর দাঁত ব্রাশ করার সুযোগ দেয়া হতো।
অল্প খাবার দেয়া হতো : বন্দি অবস্থায় মুজিবকে কোনো দিন এক বেলা কোনো দিন তিন বেলা খাবার দেয়া হতো। খাবারের মধ্যে সকালে পাউরুটি কিংবা পরটা, দুপুরে ভাত, ডাল ও সবজি আর রাতে কখনও রুটি কখনও ভাত। কোনো কোনো দিন একবেলা খাবার দেয়া হতো তাকে। ঈদের দিন তাকে মুরগির মাংসসহ ভালো খাবার ও সেমাই দেয়া হয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদ : তুলে নেয়ার পরপরই তারেক রহমান ও বিএনপি সম্পর্কে মুজিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে মুজিবুর রহমানের বরাত দিয়ে তার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে তার কি ধরনের সম্পর্ক, তারেক রহমানের কাছে কারা কারা যান- এসব বিষয়ে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে। তথ্য আদায়ের জন্য তাকে রাবারের লাঠি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে পরিবারের। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে ক্রসফায়ারে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অপর এক আত্মীয় জানিয়েছেন।
শারীরিক অবস্থা : ইউনাইটেড হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ থেকে জানা গেছে, মুজিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থা খুবই দুর্বল। তার রক্তে হিমাগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেছে। ডায়াবেটিস, থায়রয়েডের সমস্যা ও রক্তচাপ বেড়েছে। তার হাতে গুরুতর জখমসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত রয়েছে। অপহরণের পর তাকে দফায় দফায় নির্যাতন ও দীর্ঘদিন ধরে চোখ বেঁধে রাখা এবং হাতকড়া পরিয়ে রাখার কারণে এসব ক্ষত হয়েছে বলে মুজিবের স্বজনরা জানিয়েছেন।
বিদেশী চাপে মুক্তি! : মুজিবুর রহমানের আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, মূলত বিদেশী চাপে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ওই অপহরণের ঘটনায় সিলেট ও লন্ডনে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনার পরপরই মুজিবের লন্ডনে থাকা স্ত্রী ও সন্তানরা তার খোঁজ জানার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা কামনা করেন। এ কারণে অপহরণের শুরু থেকে ব্রিটিশ সরকার ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা কথা বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক বন্ধু ও আত্মীয়রা জানান, সম্ভবত ব্রিটিশ সরকারের চাপে অপহরণকারীরা মুজিবুর রহমানকে ছেড়ে দিয়েছে।
১২ কোটি টাকার রহস্য : মুজিবের কাছে অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসাবে ১২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটা দিতে অস্বীকার করেছেন বলে তার শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন। মুজিবের লন্ডন প্রবাসী ছেলে রিপনের কাছে বাংলাদেশ থেকে ফোন করে একবার ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, অপহরণকারীরা মুক্তিপণের জন্য মুজিবুর রহমানকে নির্যাতন করলেও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য, তার শ্যালক, রাজনৈকি বন্ধু বা অন্য কারও কাছে মুক্তিপণ চায়নি। এছাড়া তার কাছে চাওয়া হয়েছে ১২ কোটি টাকা কিন্তু ছেলের কাছে ১০ কোটি। বিষয়টি নিয়েও রহস্যের জন্ম দিয়েছে। পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নিখোঁজ থাকা অবস্থায় তাদের সঙ্গে মুজিবের কথা হয়নি বা তিনি কখনও ফোন করার সুযোগ পাননি।
ঘুমানোর সময়ও হ্যান্ডকাফ : রাতে ঘুমানোর সময়ও মুজিবুরের হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে রাখা হতো। কোনো কোনো দিন অন্ধকার কক্ষে চোখ খুলে দিত। কিন্তু দিন-রাতের অধিকাংশ সময় তার চোখ গামচা দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। কোনো কোনো দিন টয়লেটে যাওয়ার সময় বাদে টানা ২৪ ঘণ্টা চোখ বেঁধে রাখা হতো বলে আত্মীয়দের জানিয়েছেন মুজিবুর রহমান।
রহস্যজনক অন্তর্ধান : সিলেট ব্যুরো থেকে রেজওয়ান আহমেদ জানান, মুজিব নিখোঁজের কয়েকদিন পরেই ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের উদ্ধার অভিযান থামিয়ে দেয়। তাদের পরিষ্কার বক্তব্য, মুজিবের অন্তর্ধানের বিষয়টি রহস্যজনক। তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী মাফিয়া চক্রের জড়িত থাকার খবরও গণমাধ্যমে আসে। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ওই সময় যুগান্তরকে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, মুজিব অপহৃত হননি। তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মগোপনে থেকে তিনি পাকিস্তানভিত্তিক একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে মাদকের চালানের ডিল করছেন। তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে দাবি করে তিনি বলেন, শিগগিরই তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে। মুজিবের অতীতের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারণ ইতিপূর্বে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা চেষ্টার মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় ব্রিটিশ পুলিশ তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বডি ট্র্যাকার যুক্ত করেছিল। মুজিব নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৬ মাস আগে সিলেটে আসেন পাকিস্তানি তিন নাগরিক। ব্যবসায়িক লেন-দেন সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তানি ওই নাগরিকরা সিলেটে মুজিবের কাছে গিয়েছিলেন। মুজিবের সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। ওই তিনজনের দলটির নেতৃত্বে ছিলেন জনৈক ‘খান ভাই’। মুজিব ওই পাকিস্তানি নাগরিকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত মুজিবের রহস্যঘেরা ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সঙ্গে নাটকীয় ‘উদ্ধারের’ যোগসূত্র মেলানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। তাকে ‘ফিরিয়ে দেয়া’ হয়েছে নাকি তার ‘ফিরে আসা’- হয়েছে এমন প্রশ্নও উঠেছে।
আজ সিলেট নেয়া হবে : যুগান্তরের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি হাবীব সারোয়ার আজাদ সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ হারুন অর রশীদের বরাত দিয়ে জানান, মুজিবের শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন নিজেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন মুজিব এবং সোহেল দুজনেই উদ্ধার হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলেই তাৎক্ষণিকভাবে মুজিবকে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ-কালের মধ্যে সুনামগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন পর প্রবাসী এ বিএনপি নেতার উদ্ধার হওয়ার খবরে তারা হাসপাতালে যান। সেখানে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের সঙ্গে গুলশান থানা পুলিশের ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার হেমায়েত উদ্দিন জানান, তারা ইউনাইটেড হাসপাতালে অবস্থান করছেন। মুজিব এখন পুলিশ হেফাজতে আছেন। হাসপাতালের ছাড়পত্র পাওয়ার পরপরই তাকে সুমানগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে।
সোহেল কোথায় : যুগান্তরের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি হাবীব সারোয়ার আজাদ আরও জানান, নিখোঁজ হওয়ার প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর ছাড়া পেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি মুজিবুর রহমানের গাড়িচালক রেজাউল হক সোহেল। পরিবারের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়নি। সোহেলের বাবা ওয়াহিদুল হক যুগান্তরকে জানান, সোমবার টেলিভিশনে মুজিবুর ও সোহেলের খোঁজ পাওয়ার সংবাদ শুনেছেন তিনি। এরপর তিনি মুজিবুরের ভাতিজা আবুল হোসেনের কাছে ফোন করেও নিশ্চিত হয়েছেন। তখন আবুল হোসেন তাকে জানান, সোহেলকে সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সোহেল বাড়ি ফেরেননি। মুজিবুরের শ্যালক ব্যারিস্টার আনোয়ারের দাবি, বাসায় যাওয়ার পর সোহেলকে এক হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি আনোয়ার।
হাসপাতালে বিএনপি নেতারা : সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম সাজু জানান, বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার রাতে মুজিবুর রহমানকে দেখতে যান। তিনি মুজিবুর রহমানকে পুলিশি বেষ্টনী রাখার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও অপহরণের রহস্য উন্মোচন করতে হবে। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা আলাদাভাবে মুজিবুর রহমানকে দেখার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে দেখতে গেছেন।
No comments:
Post a Comment