Monday, August 18, 2014

মন্ত্রী বলে কথা! ॥ অনেক মন্ত্রী সরকারী বাড়িতে থাকছেন, ছাড়েননি ন্যামফ্ল্যাট ০ নতুন অনেক এমপির ভাগ্যে জুটছে না প্রাপ্য ফ্ল্যাট ০ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ

মন্ত্রী বলে কথা! ॥ অনেক মন্ত্রী সরকারী বাড়িতে থাকছেন, ছাড়েননি ন্যামফ্ল্যাট
০ নতুন অনেক এমপির ভাগ্যে জুটছে না প্রাপ্য ফ্ল্যাট
০ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ
সংসদ রিপোর্টার ॥ মন্ত্রী বলে কথা! তাই মন্ত্রী হিসেবে সরকারী বাড়ির পাশাপাশি সংসদ সদস্য হিসেবে ন্যাম ফ্ল্যাটও নিজ দখলে রেখেছেন। আর এ কারণে নতুন এমপিদের ভাগ্যে জুটছে না তাঁর প্রাপ্য একটি ফ্ল্যাট। বাধ্য হয়ে এবারই মফস্বলের নতুন অনেক এমপিই বাসা ভাড়া করে তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ নিয়ে নতুন এমপিদের অসংখ্য অভিযোগ ও ক্ষোভের বিষয়টি সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত পৌঁছায়। সর্বশেষ সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সব এমপির ফ্ল্যাট নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এ পর্যন্ত দশম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া অন্তত সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে তাঁর নামে বরাদ্দকৃত ন্যাম ফ্ল্যাট ছেড়ে দেয়ার জন্য মৌখিকভাবে এবং কয়েক দফা নোটিসও প্রদান করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এ নিয়ে সংসদ কমিটিতে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ কমিটির তৃতীয় বৈঠকে মন্ত্রী-এমপিদের বাসা বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা বৈঠকেও কমিটির অনেক সদস্য এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৈঠক শেষে সংসদ কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রী হিসেবে সরকারী বাসা থাকার পরও যারা ন্যাম ফ্ল্যাটের বাসা দখলে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁদের কাছে সর্বশেষ নোটিস দেয়া হবে। এর আগেও মৌখিকভাবে এবং নোটিসের মাধ্যমে তাঁদের বাসা ছাড়তে বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁরা কেউ বাসা ছাড়েননি। তিনি বলেন, অনেক মন্ত্রীই তাঁদের বাসার আসবাবপত্র গোছানো হয়নি বলে ন্যাম ভবনের বাসা ছাড়তে পারেননি বলে জানিয়েছেন। পুরানোরা বাসা না ছাড়ায় নতুন এমপিদের নামে বরাদ্দও দিতে পারছি না।
নবম সংসদের এমপি-মন্ত্রীদের নামে বরাদ্দকৃত বাসা বাতিল করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে চীফ হুইপ বলেন, বরাদ্দ বাতিলের প্রশ্ন আসবে কেন? নবম সংসদ যখন শেষ হয়েছে তখন আপনা-আপনি বরাদ্দ বাতিল হয়ে গেছে। দশম সংসদ গঠিত হয়েছে। এখন যারা বাসার জন্য আবেদন করবেন বা যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হবে তারাই থাকতে পারবেন। এটা সোজা হিসাব।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানায়, দশম সংসদ গঠন হওয়ার পর সংসদ কমিটির প্রথম বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, সংসদ সদস্য ভবন (ন্যাম ফ্ল্যাট) এবার মন্ত্রীদের বরাদ্দ দেয়া হবে না। একই সঙ্গে সংসদ সদস্যদের ফ্ল্যাটে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা, ভাই-বোন ছাড়া বাইরের কেউ থাকতে পারবেন না। তবে যদি কোন মন্ত্রী থাকেন, তাঁকে অবশ্যই মন্ত্রী হিসেবে সরকারীভাবে যে বাড়িভাড়া পান, তা তিনি পরিশোধ করবেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে সংসদ কমিটির এসব সিদ্ধান্ত মানছেন না মন্ত্রীরা। অনেক মন্ত্রীই তাঁদের মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বাড়িতে থাকছেন, আবার ন্যাম ফ্ল্যাটও দখলে রেখেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নবম সংসদেই মন্ত্রী হয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। মন্ত্রী হওয়ার পর মন্ত্রীপাড়ার বাসায় থাকেন তিনি। কিন্তু ন্যাম ফ্ল্যাট ৪-এর ৪০৭ নম্বর ফ্ল্যাটটি তিনি এখনও ছাড়েননি। এমপি হিসেবে বরাদ্দকৃত ওই ফ্ল্যাটে তাঁর ড্রাইভার, গানম্যানসহ এলাকার লোকজন থাকে। দশম সংসদে ভূমিমন্ত্রী হয়েছেন শামসুর রহমান শরিফ। মন্ত্রী হয়ে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পরিবারসহ মন্ত্রীপাড়ায় থাকলেও ন্যাম ফ্ল্যাটের ৪-এর ৪০৩ নম্বর বাসাটি রেখে দিয়েছেন।
এছাড়া স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ৪-এর ৪০২ নম্বর ফ্ল্যাটটিতে এলাকার নেতারা থাকেন। উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব মন্ত্রী হয়ে পরিবার নিয়ে উঠেছেন মন্ত্রীপাড়ায়। কিন্তু তার নামে বরাদ্দ ৬-এর ৯০৩ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসাটিও দখলে রেখেছেন। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী সাইদুল হক, প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) নজরুল ইসলামও মন্ত্রী হওয়ার পর ন্যাম ফ্ল্যাটের বাসা এখনও ছাড়েননি।
সূত্র জানায়, সংসদ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সাত মন্ত্রী ছাড়াও নবম সংসদের যেসব সংসদ সদস্য এখনও ন্যাম ফ্লাটের বাসা দখলে রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত নোটিস দেয়া হবে। এছাড়া বৈঠকে সংসদের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়। এতে সম্প্রতি ভুয়া মেজর গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে কমিটিতে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়। তাছাড়া সংসদে প্রবেশে নজরদারি বাড়ানোর ওপরও জোর দেয় সংসদ কমিটি।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ ও নাখালপাড়াস্থ সংসদ-সদস্য ভবন এবং শেরে বাংলা নগর সদস্য ভবনের অফিস কক্ষের নিরাপত্তাসহ সংসদ ভবন এলকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নিরাপত্তার ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরীকে আহবায়ক এবং সাগুফতা ইয়াসমিন, পঞ্চানন বিশ্বাস, শেখ হাফিজুর রহমান ও নূরুল ইসলাম ওমরকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি সোসাইটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া সংসদ-সদস্য ভবনের অব্যবহৃত আসবাবপত্রগুলোকে যত্রতত্র ফেলে না রেখে নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণের জন্য নাখালপাড়াস্থ সংসদ-সদস্য ভবন এলাকায় আলাদা একটি স্থাপনা তৈরীর পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈঠকে কমিটি’র সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, উপাধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস শহীদ, নূর-ই-আলম চৌধুরী, সাগুফতা ইয়াসমিন, পঞ্চানন বিশ্বাস ও ফজলে হোসেন বাদশা অংশগ্রহণ করেন।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment