Monday, August 18, 2014

৪০ বছরে বিদেশে পাচার ॥ ৩ হাজার কোটি ডলার! কালো টাকার সন্ধানে ২ ০ স্বল্পোন্নত রফতানিকারক দশ দেশের ভেতর বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ টাকা পাচার হয় ০ সুইস ব্যাংকে রয়েছে বাংলাদেশের ১৭৭ কোটি ৯৪ লাখ ফ্রাঁ

৪০ বছরে বিদেশে পাচার ॥ ৩ হাজার কোটি ডলার!
কালো টাকার সন্ধানে ২
০ স্বল্পোন্নত রফতানিকারক দশ দেশের ভেতর বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ টাকা পাচার হয়
০ সুইস ব্যাংকে রয়েছে বাংলাদেশের ১৭৭ কোটি ৯৪ লাখ ফ্রাঁ
কাওসার রহমান ॥ বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে বাংলাদেশ থেকে সর্বনিম্ন ৮০ কোটি ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১৮৯ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচ্ছে। এ মুদ্রা পাচারের অন্যতম কৌশল হচ্ছে আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে প্রকৃত পণ্য মূল্যের অবমূল্যায়ন ও অতিমূল্যায়ন। ৫৮.২ শতাংশ অর্থই পাচার হচ্ছে এ কৌশলে। অবশিষ্ট ৪৭.৮ শতাংশ মুদ্রা পাচার হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। আর এ মুদ্রা পাচারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে টাকা পাচারের একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে রেমিটেন্স। একটি চক্র বিদেশে থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংগ্রহ করে তা বিদেশেই রেখে দিচ্ছে। আর এদেশে আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ টাকায় দায় শোধ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক জরিপ থেকে দেখা যায়, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না। ওই অর্থ পাচার হয়ে বিদেশের কোন ব্যাংকে জমা রাখা হচ্ছে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে পাচার হচ্ছে ৮০ কোটি ডলার। যা বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় দুই লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। গত ৪০ বছর ধরে এই অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।
মুদ্রা পাচার বিষয়ে ‘ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম এইট লো ইনকাম এবং লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিজ : বাংলাদেশ, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, গিনি, নেপাল, সিয়েরালিয়েন, তাঞ্জানিয়া এ্যান্ড জাম্বিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মাথাপিছু মুদ্রা পাচারের পরিমাণ প্রায় ২০৫ কোটি ডলার। বর্তমান মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৯০ ডলার। এ হিসাবে ওই অর্থ পাচার না হলে মাথাপিছু আয় দাঁড়াত এক হাজার ৩৯৫ ডলার। আর পাচার হওয়া মুদ্রার পরিমাণ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের চেয়ে বেশি। অথচ যদি এই অর্থ পাচার রোধ করা যেত তাহলে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের কাছাকাছি থাকত।
ইউএনডিপির অপর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৮ বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। ‘ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম দ্যা লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রিজ : ১৯৯০-২০০৮’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর গড়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে ১৮৯ কোটি ডলার। এ সময়ে প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের প্রতি ডলারের ৬০ সেন্টই পাচার হয়েছে।
‘ট্রেড মিসপ্রাইসিং’-ই হচ্ছে এই অবৈধ অর্থ উৎপাদন ও পাচারের প্রধান উৎস। আর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারী আমদানির ক্ষেত্রেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন ও পাচার করে থাকে।
এই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এই মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর শীর্ষ দশ রফতানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। বাংলাদেশের মুদ্রা পাচারের পরিমাণ তিন হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এঙ্গোলা। এদেশের পাচারের পরিমাণ তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা লেসোথোর মুদ্রা পাচারের পরিমাণ এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। এই শীর্ষ দশ রফতানিকারকের অপর দেশগুলো হলো- চাদ, ইয়েমেন, নেপাল, উগান্ডা, মিয়ানমার, ইথিওপিয়া ও জাম্বিয়া।
ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ : ২০০২-২০১১’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশ করা হয়। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে ২০০১-২০১০ সময়কালে কি পরিমাণ টাকা পাচার করা হয়েছে তার একটি ধারণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে ওই প্রতিবেদনটি আরও আপডেট করে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। ২০১০ সালে পাচার করা হয়েছিল ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ১৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। ওই এক বছরে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
২০১৪ সালের সরকারী অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশের বাইরে পাচার করা কালো টাকার পরিমাণ হলো ৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাচারকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৬৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার কালো টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।
অর্থ পাচার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এই অঙ্ক আরও অনেক বড়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে গত এক দশকেই (২০০১-১১) প্রতিবছর গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার করে পাচার হয়েছে। সে হিসাবে ১০ বছরেই পাচার হয়েছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের যে হিসাব তার সঙ্গে তুলনা করলে ইউএনডিপি যে আকার দিয়েছে তা অনেক ছোট। গত এক দশকে পাচার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
তবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেশি নয় বলে জাহিদ হোসেন জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার হচ্ছে তা জিডিপির এক শতাংশের নিচে। তবে কম বলে এই অর্থ পাচার হতে দেয়া যাবে না। এটা বন্ধ করতে হবে। কারণ অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ।
অর্থ পাচারের মূল কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অতিমূল্যায়ন, অবমূল্যায়ন, বাণিজ্য ভারসাম্যে দুর্বলতা, অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে দায়ী করেছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, অনেকেরই টাকা আছে। তবে দেশে টাকা রাখতে তারা ভরসা পান না। আবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকেই অবৈধ আয় করেন। এসব অর্থ রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কালো টাকা হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। এজন্য চলে যায়।
এ বিষয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তিন কারণে বিদেশে টাকা পাচার হতে পারে। প্রথমত, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কিছু লোক বিদেশে টাকা নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগে মন্দার কারণে ব্যবসায়ীদের টাকা এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা পাচার হতে পারে। কারণ যাই হোক টাকা পাচার হওয়া দেশের জন্য সুখবর নয়।
তিনি বলেন, টাকা পাচারে সরকারের দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। টাকা ফিরিয়ে আনা এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এটর্নি জেনারেলের অফিসকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর ড. মইনুল হোসেন বলেন, সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশীদের ব্যাপারে যে তথ্য বেরিয়েছে, এটি পুঁজি পাচারের ক্ষুদ্রতম একটি অংশ। দেশে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আমলারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা যে পাচার করছে এটা তার প্রমাণ।
তিনি বলেন, এ যাত্রায় শুধু সুইস ব্যাংকের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্রে টাকা পাচারের তথ্য আসেনি। এই অবৈধ কালো টাকার মাধ্যমে কানাডার বেগমপাড়া গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, টাকা পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীরব ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সব সময় নিজেদের গা বাঁচিয়ে কথা বলে। টাকা না পাচার হলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে চার থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলো কী ভাবে? রাজনৈতিক অস্থিরতার অজুহাতে দুর্নীতিবাজরা দেশে টাকা রাখছে না। দেশের দুর্যোগের সময় তারা যাতে আরও ভাল থাকতে পারেন সে জন্য দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে রাখছেন।
বাইরের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও কালো টাকার দৌরাত্ম্য শ্লথ হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এখন আর কালো টাকা রাখা যায় না। আগে ব্যাংকগুলোতে কালো টাকা রাখা যেত। বিয়ারার সার্টিফিকেট অব ডিপোজিটের (বিসিডি) নামের একটি সঞ্চয়ী প্রকল্পের আওতায় রাখা হতো এই টাকা। এর আওতায় টাকা রাখলে কোন নাম-ঠিকানা থাকত না। গ্রাহকদের শুধু একটি নম্বর দেয়া হতো। গ্রাহক মেয়াদ শেষে ওই নম্বর দেখিয়ে মুনাফাসহ টাকা নিয়ে যেত। ২০০২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এটি তুলে দেয়া হয়। এখন আর বিয়ারার সার্টিফিকেটের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে কোন কালো টাকা রাখা যায় না। ব্যাংকের অন্যান্য হিসাবে টাকা রাখলেও তার উৎস জানাতে হয়।
সরকারী সঞ্চয়পত্রে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ খুব সীমিত আকারে থাকলেও এখানে কালো টাকার মালিককে শনাক্ত করার সুযোগ রয়েছে। কেননা এখন সঞ্চয়পত্র কিনতে ছবি লাগে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হয়। বড় অঙ্কের বিনিয়োগের লেনদেনে করতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকে টাকা ঢুকলেই তার উৎস জানাতে হবে। এ ছাড়া অন্য আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। কয়েকটি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে টাকার উৎস জানাতে হয়। এর মধ্যে পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে।
এ কারণেই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার বাড়ছে। দেখা গেছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে অন্য দেশের আমানত কমলেও বেড়ছে বাংলাদেশের। বর্তমানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কালো টাকার আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭ কোটি ৯৪ লাখ ফ্র্যা। যা বর্তমান মূল্যে (প্রতি সুইস ফ্র্যা ৮৭.১৪ টাকা) প্রায় ১৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। আর গত এক বছরে বাংলাদেশীদের আমানত বেড়েছে ৬২ শতাংশ।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক ২০০২ সাল থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। আর ১২ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালেই বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বেশি আমানত দাঁড়িয়েছে সুইস ব্যাংকে। এ বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানত ছিল ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যা, স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। আগের বছর ২০১২ সালে ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যা বা ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা আমানত ছিল। অর্থাৎ গত এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানত বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা দাঁড়ায় ৬২ শতাংশে।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশীদের আমানত ছিল যথাক্রমে- ২০০২ সালে ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যা। ২০০৪ সালে ৪ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যা, ২০০৫ সালে ৯ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যা, ২০০৬ সালে ১২ কোটি ৪০ লাখ ফ্র্যা, ২০০৭ সালে ২৪ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যা, ২০০৮ সালে ১০ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যা, ২০০৯ সালে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যা, ২০১০ সালে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যা এবং ২০১১ সালে ১৫ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যা।
সুইস ব্যাংকগুলো থেকে তথ্য নেয়ার জন্য ভারত যেমন উদ্যোগ নিয়েছে, তেমনি উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এ লক্ষ্যে দেশটির সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তবে এ কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফল হওয়ার বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে সে দেশের সরকার কোন ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সুইস ব্যাংক থেকে তথ্য আনার ক্ষেত্রেও কোন সহযোগিতা পাবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের লোকজন সুইস ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখে। কারণ সেখানে টাকা রাখা নিরাপদ। সুইস ব্যাংক থেকে টাকার তথ্য আনা খুব একটা সহজসাধ্য কাজ নয়। টাকা ফেরত আনা তো আরও কঠিন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমা রাখার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক নেই বলে এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়া একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি।
যুগ যুগ ধরে বিশ্বের ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য বিখ্যাত সুইজারল্যান্ড। ৮০ লাখ মানুষের এ দেশটিতে ব্যাংক আছে ২৮৩টি। বিশ্বের বড় বড় ধনীরা অর্থ পাচার করে দেশটিতে জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ করতে বাধ্য হয় দেশটি। ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করা হয়। ওই সময় থেকেই সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক পাচার করা টাকার তথ্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা ২০০২ সাল থেকে দেশওয়ারি কোন দেশের কত টাকা জমা আছে তার প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
তবে এখন পর্যন্ত দেশ হিসাবে কোন দেশের কত টাকা সুইস ব্যাংকে জমা আছে তা প্রকাশ করলেও, কাদের কত টাকা জমা আছে সে ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করে আসছে দেশটি। যদিও হিসাব প্রকাশ করার পর থেকে সুইস ব্যাংকে আমানতের প্রবণতাও কমছে।
তবে গ্লোবাল ব্যাংকিংয়ের হাব হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে কোন দেশের কাদের কত টাকা জমা আছে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করার জন্য। এ কারণে সুইস ব্যাংকিংয়ে গোপনীয়তার নীতিতে পরিবর্তন আসছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে সুইজারল্যান্ড ধনাঢ্য গ্রাহকদের তথ্য উন্মোচিত করার লক্ষ্যে এ বছর একটি চুক্তি করতে অপর ৬০ দেশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও এখানকার ব্যাংকিং সংগঠনের সদস্যরা বলছেন চুক্তি হলেও তাদের ব্যবসা স্বাভাবিকভাবে চলবে। যদিও সুইস কর্তৃপক্ষ বিদেশী সরকারসমূহের অনুরোধে সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছে।
দেশটির ব্যাংকিং ইতিহাস হচ্ছে, সুইস কর্তৃপক্ষ ১৯৩৪ সাল থেকে ব্যাংকিং যে আইন প্রণয়ন করেছেন, তাতে গ্রাহকদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন রীতিমতো অপরাধ হিসেবে গণ্য। এক্ষেত্রে ব্যাংকারদের ধর্মযাজক বা আইনজীবীদের মতো নিষ্ঠাসহকারে গোপনীয়তা অবলম্বনের রেওয়াজ রয়েছে। যেসব ব্যাংকার বিদেশী কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের গোপনীয় তথ্যদানে সহযোগিতা করেন, তাঁদের প্রচলিত পেশাগত ‘নীরবতা’ লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে এই কঠোর গোপনীয়তার কারণেই সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো বিশ্বব্যাপী ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে এত প্রিয় ও আস্থাভাজন।
কিছু কিছু ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এ্যাকাউন্টধারীরা নাম উল্লেখ করা থাকে না। নির্দিষ্ট কিছু কোড শব্দ ব্যবহার করে সেই এ্যাকাউন্টের লেনদেন করা হয়ে থাকে। এতে করে এ্যাকাউন্টধারীরা অনেকটা নীরবে, নিরাপদে ইচ্ছামতো লেনদেন করতে পারেন। মূলত গরিব দেশ থেকে কালো টাকা পাচার করে বিদেশী ব্যাংকগুলোতে ভরে রাখা হয়। বিদেশী ব্যাংকগুলো কখনাই এ্যাকাউন্ট মালিকদের নাম প্রকাশ করে না। শুধু খুব বিপদে না পড়লে কালো টাকা বিদেশী ব্যাংকে দিনের পর দিন পড়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্যে ব্যত্যয় ঘটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক বিদেশ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মারিও টিয়র ই-মেইলে জানিয়েছেন, অবৈধ বিষয়ে তথ্য দিয়ে অন্য কোন রাষ্ট্রকে সহায়তা করার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি তাদের নেই। তাছাড়া সুইজারল্যান্ডের আইনেও এরকম কোন বিষয় উল্লেখ নেই।
অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, নানাভাবে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। পণ্য আমদানির নামে ঋণপত্রের মাধ্যমে। কম দামে কম পণ্য এনে দেনা শোধ করা হচ্ছে বেশি দাম ও বেশি পণ্য দেখিয়ে। রফতানি পণ্যের একটি অংশের মূল্য দেশে আসছে না। ওই টাকাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। নগদ ডলার বা স্বর্ণের মাধ্যমেও দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ, লেখাপড়ার খরচ এসব মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে। সর্বপরি পাচার হচ্ছে রেমিটেন্সের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী বলেন, বিশ্বায়নে টিকে থাকতে হলে উদারীকরণ প্রয়োজন। কিন্তু দ্রুত উদারীকরণ করতে গেলে স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফা লাভের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে বেড়ে যায় কালো টাকার পারিমাণ। এ সময়ে ওভার ইনভয়েস বা আন্ডার ইনভয়েসের পরিমাণও বেড়ে যায়। এর মাধ্যমে বেড়ে যায় টাকা পাচারের পরিমাণ।
তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির চেয়ে উদার অর্থনীতিতে পুঁজি পাচারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অধ্যাপক আখলাকুর রহমান অর্থ পাচারের ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেন। তাতে তিনি দেখিয়েছেন, চোরাই পণ্য যতটা ধরা পড়ে, তার ২০ গুণ অর্থ পাচার হয়। তার হিসাব ধরলে, এখন জিডিপির অন্তত ২০ শতাংশ অর্থ প্রতিবছর দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে অবশ্যই চোরচালানকৃত পণ্য রয়েছে। এটা অবাধ বাণিজ্য উদারীকরণের ফসল।
ড. মাহবুব আলীর মতে, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে বাণিজ্য উদারীকরণ করা প্রয়োজন ছিল। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ উদারীকরণের জন্য আমাদের চাপ দেয়। কিন্তু এই দুই আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকারান্তরে কালো টাকা সৃষ্টি ও পাচারকেই উৎসাহিত করছে বলে তিনি মনে করেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ : ২০০২-২০১১’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশ করা হয়। এতে বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে ২০০১-২০১০ সময়কালে কি পরিমাণ টাকা পাচার করা হয়েছে তার একটি ধারণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে ওই প্রতিবেদনটি আরও আপডেট করে নতুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০১১ সালে দেশ থেকে ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। ২০১০ সালে পাচার করা হয়েছিল ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ১৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। ওই এক বছরে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে থেকে আরও দেখা যায়, ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে। বিশ্বের ১৫০টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
এতে দেখা যায়, আলোচ্য সময়কালে গড়ে প্রতিবছর ১৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ১২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয়েছে। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আলোচ্য ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে এই ২০১১ সালে। এর আগে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছিল ২০০৬ সালে, যার পরিমাণ ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার (২১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা)। তারপরের অবস্থান ২০০৭ সালের, যার পরিমাণ ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার (২০ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা)। জিএফআই বলছে, আলোচ্য সময়কালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত ৬ লাখ কোটি ডলার অবৈধ পথে বেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০১১ সালেই বেরিয়েছে ৯৪ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার, যা কি না আগের বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈধ ও অবৈধ অর্থ পাচার হয়েছে মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং পাচারকৃত দেশে বেশি মুনাফার সুযোগ থাকার কারণে। সরকারী সম্পত্তি তছরুপ, চুরি, দুর্নীতি ও বাণিজ্যে মিথ্যা মূল্য দেখানোর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার হচ্ছে। এসব অর্থ কখনই দেশে ফিরে আসে না বলে এতে বলা হয়েছে।
অর্থ পাচারের মূল উপায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের (বাণিজ্য ভারসাম্য) দুর্বলতা, রফতানিতে কম মূল্য দেখানো, আমদানিতে বেশি মূল্য দেখানো, অবৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা। বাণিজ্যের পরিসংখ্যান সংগ্রহে দুর্বলতা, যা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের উপাত্তকে প্রভাবিত করে। ৫৮ শতাংশ পাচার আমদানি রফতানিতে অবমূল্যায়ন ও অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
নিজস্ব অনুসন্ধ্যানেও দেখা গেছে, অনেক রফতানিকারকই রফতানির অর্থ দেশে ফেরত আনেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাবে দেখা যায়, প্রায় আড়াই শ’ কোটি ডলারের রফতানি অর্থ বিদেশে পড়ে আছে। এসব অর্থ দেশে আনার কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কোন মামলাও হচ্ছে না।
মিথ্যা ঘোষণা, গোপনে অবৈধ বিনিয়োগ ও ঋণপত্র খোলার মাধ্যমে দেশ থেকে মুদ্রা পাচারের প্রায় ৪শ’ মামলা সিআইডি তদন্ত করছে। গত এক বছরে এ ধরনের ১৪০টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও সিআইডি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা ঘোষণার পাশাপাশি জালিয়াতি করে মুদ্রা পাচারের ঘটনাও আমরা তদন্ত করছি। দেশ থেকে শুধু আমদানি-রফতানির মাধ্যমেই মুদ্রা পাচার হচ্ছে না, নগদ বৈদেশিক মুদ্রাও দেশ থেকে পাচারের প্রবণতা বেড়েছে। গত এক বছরে আমরা ১৪০টি তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রফতানিতে মূল্য কম দেখিয়ে আর আমদানিতে বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার হয়ে থাকে। এ ছাড়া রফতানি অর্থ যথাসময়ে দেশে ফেরত না এনে অনেক ক্ষেত্রে বাইরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় এটা বড় অপরাধ। এজন্য দুদকের দিকে তাকিয়ে না থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, রফতানিকারকরা যথাসময়ে অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করেন। তবে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে পণ্যমূল্য পরিশোধে ঢিলেমি করে। এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না। তবে যোগসাজশের মাধ্যমে যে অর্থ পাচার হয় না তা নয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব দুদকের। টাকা পাচারের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নড়েচড়ে বসা উচিত। আমরা দুদককে তথ্য দিচ্ছি। আশা করি দুদক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় টাকা পাচার হচ্ছে না। এজন্য আমরা ধরতে পারছি না। তবে এলসি খোলার পর সে অনুযায়ী পণ্য দেশে আসল কিনা তা আমরা এখন পরীক্ষা করে দেখছি।
তবে টাকা পাচারের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে বলে তিনি জানান।
অর্থ পাচার রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি করছে- এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বলেন, অর্থ পাচার রোধে যা যা করণীয় আমরা ধীরে ধীরে তা করছি। দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন হয়েছে। আমরা এই আইনের মাধ্যমে কাজ করছি। দেশের ব্যাংকসমূহ এখন আধুনিকায়ন হয়েছে। আগে যারা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতেন এখন তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন করছেন। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত রোড শো’ করেছি। এ ছাড়াও আমরা বিদেশে অবস্থানকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের জন্য উৎসাহী করেছি। আমাদের এই উৎসাহমূলক কার্যক্রমের প্রতি উৎসাহী হয়ে অধিকাংশ প্রবাসী এখন হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠায়।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, টাকা পাচার ধরার ক্ষেত্রে আমাদের বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। যদিও এ পর্যন্ত আমরা একটিই মাত্র টাকা পাচার ধরতে পেরেছি। এটা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র কোকোর পাচার করা টাকা আমরা দেশে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ মার্কিন সেই ইউনিটের প্রতি। যারা আমাদের হয়ে এ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
টাকা পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের লোকজন বেশ ওস্তাদ কিভাবে কি করতে হয়? আমাদের দেশে যেমন ভাল লোক আছে, তেমনি মন্দ লোকও দুর্লভ নয়।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html

No comments:

Post a Comment