Tuesday, August 19, 2014

মমতার আমন্ত্রণে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী আসছেন কলকাতায়

মমতার আমন্ত্রণে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী আসছেন কলকাতায়

কিংশুক প্রামাণিক,

সিঙ্গাপুর,, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

 সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ঠিক করলেন বাংলায় শিল্পায়নের অভিমুখ৷ খুলে দিলেন বিনিয়োগের দরজা৷ উজ্জ্বল করলেন বাণিজ্য-ভবিষ্যত্৷ 
মুগ্ধ লি সিয়েন লুং৷ মুখ্যমন্ত্রীর সারল্য, কথাবার্তা, আন্তরিক উপহার জিতে নিয়েছে সিঙ্গাপুর রাষ্ট্রপ্রধানের মন৷ বৈঠক এতটাই ফলপ্রসূ হয়েছে যে লি সিয়েন মমতার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে কলকাতায় আসার ব্যাপারে সম্মতিও জানিয়ে দিয়েছেন৷ 
মঙ্গলবার অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে লি সিয়েন-মমতা বৈঠক শুরু হয়৷ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় মুখ্যমন্ত্রী লি সিয়েনের হাতে তুলে দেন নানা উপহার৷ দার্জিলিং চা, উত্তর দিনাজপুরের ব্যাগ, ডোকরা শিল্প, বাঁশের কাজ করা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি, তন্তুজের বালাপোশ৷ বাংলা থেকে লিখে আনা একটি শুভেচ্ছাবার্তাও ছিল উপহারের ঝুলিতে৷ মমতার উপহার, সারল্যে, কথাবার্তায় মুগ্ধ লি সিয়েন৷ জানান, কলকাতার সঙ্গে তাঁর পরিবারের অনেকদিনের সম্পর্ক৷ তাঁর নিজেরও নেতাজির কর্মভূমিকে দেখার প্রবল আগ্রহ রয়েছে৷ 
এমন বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেই শুরু হয় বাংলায় বিনিয়োগ নিয়ে কথাবার্তা৷ এদিনের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া সিঙ্গাপুর-বাংলা যৌথ বাণিজ্যকেন্দ্র ও বাংলার ফিনান্সিয়াল হাবে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিক আলোচনা হয়৷ প্রতিটি আলোচনার ফলই অত্যন্ত ‘পজিটিভ' বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, দু'-দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিকাশে যৌথ  বাণিজ্যকেন্দ্র কাজ করবে৷ আঠারো মাসের মধ্যে এর গঠনপ্রক্রিয়া শেষ করা হবে৷ এরপরই বাংলার বিনিয়োগ-বান্ধব পরিস্হিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েনকে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জানান, শিল্প-স্হাপনে জমি কোনও সমস্যা হবে না বাংলায়৷ সরকার ল্যান্ড-ব্যাঙ্ক করেছে৷ পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ পাহাড়, জঙ্গল, নদী, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, সমুদ্র সবই রয়েছে বাংলায়৷ রয়েছে সস্তার শ্রম, লগ্ণির উপযুক্ত পরিবেশ৷ এরপর সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বাংলায় কোন কোন বিদেশি বহুজাতিক সংস্হা লগ্ণি করেছে? জাপানি লগ্ণি আছে কী না৷ জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলায় জাপানি লগ্ণি হয়েছে৷ মিত্সুবিশি তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ করছে৷ মমতা এদিন লি সিয়েনকে বাংলার ল্যান্ড ব্যাঙ্ক, জমি নীতি নিয়ে অবহিত করেন৷ বলেন, গোয়ালপোখরে ১ হাজার একর জমি আছে৷ সিঙ্গাপুর একাই সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে৷ ফিনান্সিয়াল হাব, বাংলার প্রস্তাবিত উপনগরীগুলিতেও লগ্ণি করতে পারে সিঙ্গাপুর৷ লি সিয়েনের সঙ্গে এদিন অণ্ডালের বিমাননগরী নিয়ে কথা হয় মমতার৷         বিমানবন্দরের রানওয়ের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চান৷ মমতা তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি নিজে এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন৷ 
বৈঠকে উপস্হিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিজয় ঠাকুর সিং ও রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য দফতরের আধিকারিকরা৷  মমতা এদিন ‘লুক ইস্ট পলিসি'-র কথা তুলে ধরে বাংলা-সিঙ্গাপুর সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন৷ অনুরোধ জানান, সিঙ্গাপুরে নেতাজির স্মৃতিধন্য আইএনএ-স্মারক স্তম্ভের এলাকাটি বাড়ানোর৷ পরে মমতা জানান, বৈঠকের ফল অত্যন্ত পজিটিভ৷ কলকাতা নিয়ে লি সিয়েনের প্রবল আগ্রহ রয়েছে৷ কলকাতার হেরিটেজ বিল্ডিং, নেতাজি, বঙ্গীয় ইতিহাস-সংস্কৃতি সব কিছুরই খোঁজ রাখেন তিনি৷ বিনিয়োগ নিয়েও অনেক কথা হয়েছে৷ এদিনের বৈঠকে বারবার মমতার ‘লাইফস্টাইল' নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন লি সিয়েন৷ শোনেন মমতার রাজনৈতিক লড়াইয়ের গল্প৷ মমতা জানান, বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে৷ তাই বিগত ১৫ বছরে তিনি রাজ্যেই আটকে ছিলেন৷ বিদেশে যেতে পারেননি৷ সিঙ্গাপুরই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর৷
সোমবার ভোরে সিঙ্গাপুরে পা রাখেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রথম দিনই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সংস্হা জিআইসি-র সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেন বাংলার শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ সন্ধ্যায় রাজ্যের বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একদফা আলোচনা সেরে নেবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তিত ভাবমূর্তি তুলে ধরে লগ্ণি আনা যায়, তা নিয়ে সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, আর এস আগরওয়াল, কুরুশ গ্রাণ্টদের সঙ্গে কথা হবে তাঁর৷ রাতে চাঙ্গি কর্তৃপক্ষের ডিনারে আমন্ত্রিত রাজ্যের প্রতিনিধিরা৷ সেখানেও বিনিয়োগ নিয়ে একপ্রস্হ আলোচনা হবে৷ বুধবার সাংগ্রি লা হোটেলে সিঙ্গাপুরের সমস্ত সেরা বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতিদের সম্মেলনে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের কথা তুলে ধরবেন তিনি৷
http://allbanglanewspapers.com/sambad-protidin/   

No comments:

Post a Comment