রাশিয়া কি যুদ্ধে নেমে পড়ল! এনামুল হক
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে মালয়েশীয় যাত্রী বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর পাশ্চাত্যের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়াও এসব দেশ থেকে খাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর ফলে রুশরা পাশ্চাত্য থেকে আমদানি করা কার্যত সকল খাদ্যসামগ্রী থেকে বঞ্চিত হবে। অর্থাৎ রুশরা যেসব খাবার গ্রহণ করে থাকে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন তারা পাবে না। প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে পাশ্চাত্য থেকে রাশিয়ার খাদ্য আমদানির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা অনেক বেশি তাৎপর্যবহ ঘটনা বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের চোখে এটা ক্রিমিয়া দখলের চেয়েও বড় ঘটনা। রাশিয়ার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ পথসন্ধি। রাশিয়া এখন কার্যত পুরোপুরিভাবে ও সত্যিকার অর্থে যুদ্ধে নেমে গেছে।
পাশ্চাত্যের খাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার ফলে অবশ্য রুশদের মাসুল দিতে হচ্ছে। খাদ্যের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। সুপার মার্কেটগুলোতে খাদ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে অচিরেই তা আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে মাছ ও ফলের দাম। যাদের বয়স ত্রিশ বছরের বেশি এ ধরনের খাদ্য ঘাটতির স্মৃতি তাদের মনে এখনও জাগরুক। তবে রাষ্ট্রের প্রচারযন্ত্র জনগণের সামনে যে দুর্ভোগ নেমে আসতে যাচ্ছে সেটাকে সোভিয়েত অর্থনীতির ব্যর্থতার স্মৃতির সঙ্গে নয় বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংগ্রামের স্মৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, জনগণ যেন তাদের লোকসান বা ক্ষয়ক্ষতিকে যুদ্ধের জন্য বীরত্বপূর্ণ ত্যাগস্বীকার হিসেবে ভাবেন। রুশদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যাঁরা বর্তমান যুদ্ধোদ্যোগকে সমর্থন করেন তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রচার প্রচারণা সফল হতে পারে। অন্তত স্বল্প মেয়াদের জন্যও হতে পারে।
যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রাশিয়া শুধু বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, অভ্যন্তরীণ শত্রুর বিরুদ্ধেও করেছে। গত মার্চ মাসে পার্লামেন্টে প্রদত্ত ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্রিমিয়া দখলের ঘোষণা দিতে গিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধা পঞ্চম বাহিনী বা জাতীয় বেইমানদের কথাও উল্লেখ করেছেন। রাশিয়ার কাফে সোসাইটি অর্থাৎ এলিট সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলকে সবচেয়ে বেশি সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন পুতিন। এই গ্রুপটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একটা অস্বস্তিকর অস্ত্রবিরতি বজায় রেখে চলেছিলেন তিনি। কিন্তু পাশ্চাত্যের খাদ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তিনি সেই অস্বস্তিকর অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে দিয়েছেন।
পুতিনের সক্ষমতার প্রথম দশকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বদৌলতে রাশিয়ায় নজিরবিহীন সমৃদ্ধির এক অধ্যায় আসে। ঘটনাচক্রে রাশিয়ার হাতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ প্রাপ্তি ঘটায় পুতিন নিজের ক্ষমতাকে দ্রুত সংহত করার এবং রাশিয়ায় নিজের কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়ে যান। একদিকে তিনি যখন মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিচ্ছিলেন অন্যদিকে তখন রাশিয়ার শিক্ষিত ও নতুন বড়লোক বনে যাওয়া শ্রেণীগুলো ভাল খাদ্য ও দামী মদের মধ্যে আলাদা আনন্দের স্বাদ খুঁজে পায়। তারা ক্রমবর্ধমান আনন্দময় পরিবেশে এসব সুস্বাদু খাদ্য উপভোগের সুযোগ প্রাপ্তির বিনিময়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকে। এদের জন্য পাশ্চাত্যের সুস্বাদু খাদ্য প্রথমেই আসেনি। প্রথমে এসেছে সুন্দর সুন্দর আরামদায়ক রেস্তোরাঁ। তারপর এসেছে খাদ্য। মস্কোয় অসংখ্য সুরম্য ও সুসজ্জিত রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠে। রুশদের অনেকে এই রেস্তোরাঁ কালচারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। পুতিনের ঘোষিত পাশ্চাত্য খাদ্য আমদানির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কাফে কালচারে অভ্যস্ত শ্রেণীটির ওপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। রাশিয়ার রেস্তোরাঁগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে ইতালির মোজারেলা, অস্ট্রেলিয়ার রিব আই, ফিনল্যান্ডের ইয়োগাট এমনকি আমেরিকার সস্তা ড্রামস্টিক। পনির প্রেমিকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে তাদের প্রিয় পাশ্চাত্য দেশগুলোর পনির নেই বলে।
রাশিয়ার খাদ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা অভ্যন্তরীণ বাজারে দারুণ আঘাত হানবে এটা যেমন সত্য তেমনি এও সত্য যে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আমেরিকার প্রোটিন শিল্প বেশ মার খাবে। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার বাজার খানিকটা লাভের মুখ দেখবে। আমদানি নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার খাদ্য ঘাটতি যতটা হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা হবে না। তবে খাদ্যমূল্য কিছুটা বেড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে খাদ্য আমদানি বন্দ হওয়ায় এসব খাদ্য এখন অন্যান্য দেশ থেকে আনা হবে। যেমন মাংস লাতিন আমেরিকা থেকে, মাছ এশিয়া থেকে এবং ফল, শাকসবজি ও অন্যান্য পণ্য তুরস্ক, চীন এবং সিআইএস-এর অন্যান্য দেশ থেকে। পাশ্চাত্যের আমদানি খাদ্যের ওপর নির্ভর করে রাশিয়ায় যে সব খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠছিল সেগুলো এখন মার খাবে। তবে রাশিয়ার সাধারণ ভোক্তারা এতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেইসব পয়সাওয়ালা লোকজন যাদের বিদেশী খাবার না হলে চলে না।
পাশ্চাত্যের খাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার ফলে অবশ্য রুশদের মাসুল দিতে হচ্ছে। খাদ্যের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। সুপার মার্কেটগুলোতে খাদ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে অচিরেই তা আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে মাছ ও ফলের দাম। যাদের বয়স ত্রিশ বছরের বেশি এ ধরনের খাদ্য ঘাটতির স্মৃতি তাদের মনে এখনও জাগরুক। তবে রাষ্ট্রের প্রচারযন্ত্র জনগণের সামনে যে দুর্ভোগ নেমে আসতে যাচ্ছে সেটাকে সোভিয়েত অর্থনীতির ব্যর্থতার স্মৃতির সঙ্গে নয় বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংগ্রামের স্মৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, জনগণ যেন তাদের লোকসান বা ক্ষয়ক্ষতিকে যুদ্ধের জন্য বীরত্বপূর্ণ ত্যাগস্বীকার হিসেবে ভাবেন। রুশদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যাঁরা বর্তমান যুদ্ধোদ্যোগকে সমর্থন করেন তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রচার প্রচারণা সফল হতে পারে। অন্তত স্বল্প মেয়াদের জন্যও হতে পারে।
যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রাশিয়া শুধু বাইরের শত্রুর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, অভ্যন্তরীণ শত্রুর বিরুদ্ধেও করেছে। গত মার্চ মাসে পার্লামেন্টে প্রদত্ত ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্রিমিয়া দখলের ঘোষণা দিতে গিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধা পঞ্চম বাহিনী বা জাতীয় বেইমানদের কথাও উল্লেখ করেছেন। রাশিয়ার কাফে সোসাইটি অর্থাৎ এলিট সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলকে সবচেয়ে বেশি সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন পুতিন। এই গ্রুপটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একটা অস্বস্তিকর অস্ত্রবিরতি বজায় রেখে চলেছিলেন তিনি। কিন্তু পাশ্চাত্যের খাদ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তিনি সেই অস্বস্তিকর অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে দিয়েছেন।
পুতিনের সক্ষমতার প্রথম দশকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বদৌলতে রাশিয়ায় নজিরবিহীন সমৃদ্ধির এক অধ্যায় আসে। ঘটনাচক্রে রাশিয়ার হাতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ প্রাপ্তি ঘটায় পুতিন নিজের ক্ষমতাকে দ্রুত সংহত করার এবং রাশিয়ায় নিজের কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়ে যান। একদিকে তিনি যখন মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিচ্ছিলেন অন্যদিকে তখন রাশিয়ার শিক্ষিত ও নতুন বড়লোক বনে যাওয়া শ্রেণীগুলো ভাল খাদ্য ও দামী মদের মধ্যে আলাদা আনন্দের স্বাদ খুঁজে পায়। তারা ক্রমবর্ধমান আনন্দময় পরিবেশে এসব সুস্বাদু খাদ্য উপভোগের সুযোগ প্রাপ্তির বিনিময়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকে। এদের জন্য পাশ্চাত্যের সুস্বাদু খাদ্য প্রথমেই আসেনি। প্রথমে এসেছে সুন্দর সুন্দর আরামদায়ক রেস্তোরাঁ। তারপর এসেছে খাদ্য। মস্কোয় অসংখ্য সুরম্য ও সুসজ্জিত রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠে। রুশদের অনেকে এই রেস্তোরাঁ কালচারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। পুতিনের ঘোষিত পাশ্চাত্য খাদ্য আমদানির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কাফে কালচারে অভ্যস্ত শ্রেণীটির ওপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। রাশিয়ার রেস্তোরাঁগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে ইতালির মোজারেলা, অস্ট্রেলিয়ার রিব আই, ফিনল্যান্ডের ইয়োগাট এমনকি আমেরিকার সস্তা ড্রামস্টিক। পনির প্রেমিকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে তাদের প্রিয় পাশ্চাত্য দেশগুলোর পনির নেই বলে।
রাশিয়ার খাদ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা অভ্যন্তরীণ বাজারে দারুণ আঘাত হানবে এটা যেমন সত্য তেমনি এও সত্য যে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আমেরিকার প্রোটিন শিল্প বেশ মার খাবে। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার বাজার খানিকটা লাভের মুখ দেখবে। আমদানি নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার খাদ্য ঘাটতি যতটা হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা হবে না। তবে খাদ্যমূল্য কিছুটা বেড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে খাদ্য আমদানি বন্দ হওয়ায় এসব খাদ্য এখন অন্যান্য দেশ থেকে আনা হবে। যেমন মাংস লাতিন আমেরিকা থেকে, মাছ এশিয়া থেকে এবং ফল, শাকসবজি ও অন্যান্য পণ্য তুরস্ক, চীন এবং সিআইএস-এর অন্যান্য দেশ থেকে। পাশ্চাত্যের আমদানি খাদ্যের ওপর নির্ভর করে রাশিয়ায় যে সব খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠছিল সেগুলো এখন মার খাবে। তবে রাশিয়ার সাধারণ ভোক্তারা এতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেইসব পয়সাওয়ালা লোকজন যাদের বিদেশী খাবার না হলে চলে না।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/
No comments:
Post a Comment