Monday, August 18, 2014

ফার্গুসনে কার্ফু বলবত, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন সহিংসতা অব্যাহত

ফার্গুসনে কার্ফু বলবত, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন
সহিংসতা অব্যাহত
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন নিহতের ঘটনায় দেশটির মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস কাউন্টির ফার্গুসন শহরে দ্বিতীয় রাতের মতো কার্ফু বলবত রয়েছে। পাশাপাশি চলমান সহিংসতা নিরসনে শহরটিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজ্য গবর্নর জে নিক্সন স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খবর বিবিসি, এএফপি ও সিএনএন অনলাইনের।
স্থানীয় সময় রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত এ কার্ফু চলবে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতেরও একই সময়ের জন্য কার্ফু ঘোষণা করেন মিসোরির গবর্নর জে নিক্সন। ওদিকে রবিবারও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি এবং পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করেও গুলির ঘটনা ঘটেছে। ফার্গুসনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন বিষয়ে স্থানীয় সময় রবিবার এক বিবৃতিতে মিসৌরি গবর্নর জে নিক্সন বলেন, ফার্গুসনে চলমান ঘটনায় জানমালের নিরাপত্তা এবং সহিংসতা নিরসনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ন্যাশনাল গার্ডের এই নারী এবং পুরুষ সদস্যরা ফার্গুসনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন।
ওদিকে রবিবার রাতেও বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস, ককটেল এবং গুলির ঘটনা ঘটেছে। ফার্গুসনে চলমান এই বিক্ষোভে মোট দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে এদের পুলিশ গুলি করেনি বলে সোমবার সকালে জানিয়েছেন স্থানীয় টহল পুলিশের ক্যাপ্টেন রন জনসন। ওদিকে ঘটনায় সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে মাইকেল ব্রাউনের পরিবার।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট রাস্তায় ১৮ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে ফার্গুসনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বর্ণবাদী আচরণ আশঙ্কায় কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত ফার্গুসনের বাসিন্দারা সপ্তাহজুড়ে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। যে পুলিশ সদস্য ব্রাউনকে গুলি করেছিলেন তার নাম ড্যারেন উইলসন। আর এই নামটি প্রকাশের পর শুক্রবার সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পাশাপাশি দোকানপাটে লুটপাট শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জরুরী অবস্থা জারির ঘোষণা দেন স্থানীয় গবর্নর নিক্সন। এদিকে আগের রাতের কার্ফু হলে রবিবার সকাল হতেই স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। এর আগে কার্ফু শুরুর পর শনিবার মধ্যরাতেও বিক্ষোভকারীরা সেন্ট লুইস শহরতলির রাস্তায় অবস্থান করার সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কার্ফু শুরুর পর একটি রেস্টুরেন্ট থেকে ডাক পেয়ে সেখানে গিয়ে পুলিশ প্রায় দেড় শ’ লোককে দেখতে পায়। সেখানে রেস্টুরেন্টটিতে ঝামেলা করছিলেন তারা। এসব লোকজনকে হটাতে স্মোক বোমা ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। এখান থেকে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। রেস্টুরেন্টটির দিকে পুলিশ এগুতে শুরু করলে ভেতর থেকে এক ব্যক্তি পিস্তল হাতে রাস্তায় বের হয়ে আসে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পিস্তলধারী দৌড়ে পালিয়ে যায়।
একই এলাকায় বিচ্ছিন্ন আর একটি ঘটনায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হলে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের অপর একটি গাড়ি লক্ষ্য করেও কেউ একজন গুলি ছোড়ে, তবে সেটি গাড়িতে লেগেছে কিনা তা জানা যায়নি। এদিকে যতদ্রুত সম্ভব নিহত ব্রাউনের মরদেহের ময়নাতদন্ত ফেডারেল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন এ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার। এর আগে ব্রাউনের মৃত্যুর পরদিনই সেন্ট লুইসের ডাক্তারী পরীক্ষা সংক্রান্ত অফিস একটি ময়নাতদন্ত করে। এ পরীক্ষার পর পুলিশ জানিয়েছিল, ব্রাউনকে গুলি করা হয়েছিল। তবে কয়টি গুলি করা হয়েছিল এ ব্যাপারে তারা কিছু জানায়নি। রবিবার নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নিহতের পরিবারের উদ্যোগে করা প্রাথমিক ব্যক্তিগত ময়নাতদন্তে ব্রাউনকে অন্তত ছয়বার গুলি করা হয়েছে বলে দেখা গেছে।

No comments:

Post a Comment