আজহারুলের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শুরু
যুদ্ধাপরাধী বিচার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হয়েছে। আজ আবার তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ যুক্তিতর্ক শুরু করবে। অন্যদিকে একই মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোঃ কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক আজকের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এদিকে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকসহ চারজনকে আগামী ২৬ অক্টোবরের মধ্যে আদালত অবমাননার রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ আদেশগুলো প্রদান করেছে।
এবার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। যুক্তিতর্ক আজ পর্যন্ত মুলতবি করেছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনে যুক্তি উপস্থাপন করেন চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। সেখানে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিয্দ্ধুকালীন সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের বর্ণনা তুলে ধরেন।
এ মামলায় আজহারের বিরুদ্ধে ছয় ভাগে ছয় প্রসিকিউটর যুক্তি ও আইনী পয়েন্ট উপস্থাপন করবেন। প্রথম অংশে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম যুক্তি উপস্থাপন করেন। মঙ্গলবার প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল দ্বিতীয় অংশ উপস্থাপন করবেন। এর পর প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন, প্রসিকিউটর সুলতান মোহাম্মদ সিমন ও প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। এই প্রথম কোন মামলা যেখানে আসামির বিরুদ্ধে ছয়ভাগে যুক্তিতর্ক উপস্থান করা হবে বলে জানা গেছে।
চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু যুক্তিতর্কে বলেন, একাত্তর সালের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য সকল আন্তর্জাতিক অপরাধের এই ঐতিহাসিক বিচার ১৯৭১ সালের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইনে বাংলাদেশের মাটিতেই ৪৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইনে ১০ ধারার ঢ়ৎড়পবফঁৎব ড়ভ ঃৎরধষ এর উপধারা ( এ) (বি) (সি) (এফ) (জি) এবং (এইচ) এর প্রতিটি ধারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই অনুসরণে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল যথাযথভাবে প্রসিকিউশন এবং ডিফেন্সকে সমান সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করে সোমবার থেকে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১০(আই) ধারায় উভয় পক্ষের summing up এর মধ্য দিয়ে এ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১০(২) ধারায় shall delever its judgment and pronounce its verdict পর্বে প্রবেশ করবে।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম যুক্তিতর্কে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ৯ মাসে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবহিনী এবং এ দেশীয় দালাল ও সহযোগী বাহিনী জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ যে লোমহর্ষক, নৃশংস, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে সে সব অপকর্মকে আজ ধিক্কার জানাতে চাই। কেননা, এসব অপকর্ম এতটাই সুনির্দিষ্ট, সুপরিকল্পিত, ভয়াবহ, বিস্তৃত এবং এতই জঘন্য যে বিশ্বমানবতাবিরোধী ও এর পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা ভাবীকালের জন্য বাঁচিয়ে রাখা যায় না। এর উপেক্ষা করার অর্থই হলো ভাবীকালের জন্য মানববিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে আহ্বান করা, যা আজকের দিনের বিশ্ব সভ্যতার কাছে পরিপূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য ও ঘৃণিত বটে।
তিনি যুক্তিতর্কে আরও বলেন, সুদীর্ঘ চার দশক পরে আজকের দিনে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এ কথা বলতে হয় একাত্তরে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে নিরীহ, মানব ইতিহাসের নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বাঙালী জাতির ওপর যে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় তা আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। রক্তই যদি স্বাধীনতার মূল্য হয়ে থাকে, তবে বলতে হয় বাঙালী জাতি তার প্রিয় স্বাধীনতার জন্য তাদের প্রাণের বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে ৩০ লাখ বাঙালী শহীদ হন, ২ থেকে ৪ লাখ মা-বোন ধর্ষিত ও নির্যাতিত হন। এক কোটি বাঙালী দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, লাখ লাখ বাঙালী দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন, যা দখলদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী বাহিনীসমূহের কৃত সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনেরই ফল। আসামি এটিএম আজহারুল ইসলাম এসব অপরাধ সংঘটনকারী সহযোগী বাহিনী সমূহের মধ্যে বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংঘ, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে এ পর্যন্ত এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৮ সাক্ষী তাঁদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। প্রসিকিউশন পক্ষ সপ্তম সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে বৈরী ঘোষণা করেছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরু্েদ্ধ সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম। এর আগে ১২ নবেম্বর এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, গুরুতর জখম ও অগ্নিসংযোগের ৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতেও (উর্ধতন নেতৃত্বের দায়) অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। ২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এটিএম আজহারুল ইসলামকে।
সৈয়দ মোঃ কায়সার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ও কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোঃ কায়সারের পক্ষে যুক্ততর্ক অব্যাহত রয়েছে। আজকের মধ্যে কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম।
সোমবার সৈয়দ কায়সারের আইনজীবী এস এম সাজাহান ১৫ অভিযোগ পর্যন্ত যুক্তিতর্ক করেছেন। এ সময় অপর আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল উপস্থিত ছিলেন। যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল আসামি পক্ষের আইনজীবীকে আজকের মধ্যে তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে।
২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। কায়সারকে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দু’টিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২১ মে বিকেল পৌনে চারটায় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। পরদিন ২২ মে কায়সারের জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে তিনি শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন।
দৈনিক সংগ্রাম ॥ দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকসহ চারজনকে আগামী ২৬ অক্টোবরের মধ্যে আদালত অবমাননার রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১। সোমবার সংশ্লিষ্ট চারজনের উপস্থিতিতে আদালত এই আদেশ দেয়। শুনানিতে পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ, রংপুর প্রতিনিধি মোঃ নূরুজ্জামান, স্থানীয় সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকরামুল হক দুলুর পক্ষে শুনানি করেন তাদের আইনজীবী এম আই মশিউজ্জামান।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান নিজেই নিজের পক্ষে শুনানি করবেন বলে জানান আদলতকে।
বিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য দেয়া এবং সেই বক্তব্য প্রকাশ করায় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ আগস্ট রুল জারি করে ট্রাইব্যুনাল। পত্রিকাটি ’৭১ সালে আজহার নামে কোন রাজাকার কমান্ডারের নাম শুনিনি’ এবং ‘১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত রংপুর কারমাইকেল কলেজে আজহার নামে কোন ছাত্র নেতা ছিলেন না’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। এতে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকরামুল হক দুলু এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান সরকার রাঙ্গার উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনটি আজহারের আইনজীবী তার পক্ষে দলিল হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। এতে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নজরে আসে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে।
এবার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। যুক্তিতর্ক আজ পর্যন্ত মুলতবি করেছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনে যুক্তি উপস্থাপন করেন চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। সেখানে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিয্দ্ধুকালীন সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের বর্ণনা তুলে ধরেন।
এ মামলায় আজহারের বিরুদ্ধে ছয় ভাগে ছয় প্রসিকিউটর যুক্তি ও আইনী পয়েন্ট উপস্থাপন করবেন। প্রথম অংশে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম যুক্তি উপস্থাপন করেন। মঙ্গলবার প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল দ্বিতীয় অংশ উপস্থাপন করবেন। এর পর প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন, প্রসিকিউটর সুলতান মোহাম্মদ সিমন ও প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। এই প্রথম কোন মামলা যেখানে আসামির বিরুদ্ধে ছয়ভাগে যুক্তিতর্ক উপস্থান করা হবে বলে জানা গেছে।
চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু যুক্তিতর্কে বলেন, একাত্তর সালের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য সকল আন্তর্জাতিক অপরাধের এই ঐতিহাসিক বিচার ১৯৭১ সালের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইনে বাংলাদেশের মাটিতেই ৪৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইনে ১০ ধারার ঢ়ৎড়পবফঁৎব ড়ভ ঃৎরধষ এর উপধারা ( এ) (বি) (সি) (এফ) (জি) এবং (এইচ) এর প্রতিটি ধারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই অনুসরণে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল যথাযথভাবে প্রসিকিউশন এবং ডিফেন্সকে সমান সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করে সোমবার থেকে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১০(আই) ধারায় উভয় পক্ষের summing up এর মধ্য দিয়ে এ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১০(২) ধারায় shall delever its judgment and pronounce its verdict পর্বে প্রবেশ করবে।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম যুক্তিতর্কে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ৯ মাসে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবহিনী এবং এ দেশীয় দালাল ও সহযোগী বাহিনী জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ যে লোমহর্ষক, নৃশংস, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে সে সব অপকর্মকে আজ ধিক্কার জানাতে চাই। কেননা, এসব অপকর্ম এতটাই সুনির্দিষ্ট, সুপরিকল্পিত, ভয়াবহ, বিস্তৃত এবং এতই জঘন্য যে বিশ্বমানবতাবিরোধী ও এর পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা ভাবীকালের জন্য বাঁচিয়ে রাখা যায় না। এর উপেক্ষা করার অর্থই হলো ভাবীকালের জন্য মানববিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে আহ্বান করা, যা আজকের দিনের বিশ্ব সভ্যতার কাছে পরিপূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য ও ঘৃণিত বটে।
তিনি যুক্তিতর্কে আরও বলেন, সুদীর্ঘ চার দশক পরে আজকের দিনে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এ কথা বলতে হয় একাত্তরে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে নিরীহ, মানব ইতিহাসের নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বাঙালী জাতির ওপর যে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় তা আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। রক্তই যদি স্বাধীনতার মূল্য হয়ে থাকে, তবে বলতে হয় বাঙালী জাতি তার প্রিয় স্বাধীনতার জন্য তাদের প্রাণের বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মূল্য দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে ৩০ লাখ বাঙালী শহীদ হন, ২ থেকে ৪ লাখ মা-বোন ধর্ষিত ও নির্যাতিত হন। এক কোটি বাঙালী দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, লাখ লাখ বাঙালী দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন, যা দখলদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী বাহিনীসমূহের কৃত সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনেরই ফল। আসামি এটিএম আজহারুল ইসলাম এসব অপরাধ সংঘটনকারী সহযোগী বাহিনী সমূহের মধ্যে বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংঘ, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে এ পর্যন্ত এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৮ সাক্ষী তাঁদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। প্রসিকিউশন পক্ষ সপ্তম সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে বৈরী ঘোষণা করেছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরু্েদ্ধ সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম। এর আগে ১২ নবেম্বর এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, গুরুতর জখম ও অগ্নিসংযোগের ৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতেও (উর্ধতন নেতৃত্বের দায়) অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি। ২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এটিএম আজহারুল ইসলামকে।
সৈয়দ মোঃ কায়সার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ও কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোঃ কায়সারের পক্ষে যুক্ততর্ক অব্যাহত রয়েছে। আজকের মধ্যে কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম।
সোমবার সৈয়দ কায়সারের আইনজীবী এস এম সাজাহান ১৫ অভিযোগ পর্যন্ত যুক্তিতর্ক করেছেন। এ সময় অপর আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল উপস্থিত ছিলেন। যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল আসামি পক্ষের আইনজীবীকে আজকের মধ্যে তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে।
২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। কায়সারকে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দু’টিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২১ মে বিকেল পৌনে চারটায় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। পরদিন ২২ মে কায়সারের জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে তিনি শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন।
দৈনিক সংগ্রাম ॥ দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকসহ চারজনকে আগামী ২৬ অক্টোবরের মধ্যে আদালত অবমাননার রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১। সোমবার সংশ্লিষ্ট চারজনের উপস্থিতিতে আদালত এই আদেশ দেয়। শুনানিতে পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ, রংপুর প্রতিনিধি মোঃ নূরুজ্জামান, স্থানীয় সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকরামুল হক দুলুর পক্ষে শুনানি করেন তাদের আইনজীবী এম আই মশিউজ্জামান।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান নিজেই নিজের পক্ষে শুনানি করবেন বলে জানান আদলতকে।
বিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য দেয়া এবং সেই বক্তব্য প্রকাশ করায় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ আগস্ট রুল জারি করে ট্রাইব্যুনাল। পত্রিকাটি ’৭১ সালে আজহার নামে কোন রাজাকার কমান্ডারের নাম শুনিনি’ এবং ‘১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত রংপুর কারমাইকেল কলেজে আজহার নামে কোন ছাত্র নেতা ছিলেন না’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। এতে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকরামুল হক দুলু এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুর রহমান সরকার রাঙ্গার উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনটি আজহারের আইনজীবী তার পক্ষে দলিল হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। এতে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নজরে আসে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment