আর নয় বাল্য বিয়ে, নয় স্বামী কিংবা অন্যের মুখাপেক্ষী
নির্যাতিত নারীদের নতুন ঠিকানা ‘আলোকিত ভুবন’
মানিক সরকার মানিক
শেফালি আকতার, আফসানা মিমি, সেলিনা আকতার, আলেমা খাতুনসহ আরও অনেকেই। এদের প্রত্যেকেরই বয়স ১২ থেকে ১৮। এরা প্রত্যেকেই বাল্যবিয়ের শিকার এবং কেউ কেউ একটি করে সন্তানেরও জননী। যেন ইস্পাতের পোড়া আগুনে দগ্ধ এদের সবার জীবন। যৌতুক আর নানা কারণেই স্বামী আর শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে কেউ কেউ নিকট বা দূর অতীতে আত্মহত্যারও চেষ্টা চালিয়েছে বার কয়েক। কিন্তু না! আজ আর নেই তাদের সেই দুর্বিষহ জীবন। এখন তারা খুঁজে পেয়েছে নতুন জীবনের ঠিকানা- ‘আলোকিত ভূবন।’ সম্প্রতি সেই আলোকিত ভুবনেই বর্ণনা করলেন তাদের সেই পোড় খাওয়া জীবন কাহিনী। বললেন, আর স্বামীর ওপর নির্ভরতা নয়, নিজেই গড়ব নিজের জীবন। আসছি শূন্য হাতে আর ফিরে যাব ভরা হাতে। বেসরকারী সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশের পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৭ম ব্যাচের ৩০ শিশু-কিশোরীর প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে তাদের সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণাদি বিতরণ অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তারা তাদের অনুভূতির কথা তুলে ধরে। এ সময় সেখানে উপস্থিত অতিথি আর সুধীজনরাও আটকে রাখতে পারেনি তাদের চোখের জল।
নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার খাটিবিয়া ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের শেফালি আকতার। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি মাত্র বারো বছর বয়সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয় তার। স্বামীর ঘরে যেতে সে রাতেই বাবা মারা যায়। আবার ফিরে আসে। তিনদিন পর আবার স্বামীর ঘর। কদিন সংসার করার পরই স্বামীর পক্ষ থেকে দাবি ওঠে ১০ হাজার টাকা যৌতুকের। বাবা নেই, স্বামী হারাবার শোকে কাতর দরিদ্র মা-কেউ জানাতে পারে না স্বামীর দাবিকৃত যৌতুকের বিষয়টি। একপর্যায়ে শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শেফালি জানায়, এমন গালিগালাজ করত এবং শরীরের এমন স্থানে আঘাত করত যা কাউকে বলা এবং দেখানো যেত না। নির্যাতনের কারণে কয়েক দফা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সে। পরে আর সইতে না পেরে চলে আসে মায়ের বাসায়। কদিন পরই পড়শি এক ভাইয়ের মুখে শুনতে পায় ইউনিয়ন ফেডারেশনের কথা। তাদের মাধ্যমেই চলে আসে আরডিআরএস পরিচালিত পুনর্বাসন কেন্দ্র আলোকিত ভূবনে।
একই কথা জানালেন পঞ্চগড়ের বিরল থানার শিংগুন গ্রামের আফসানা মিমি। তারও বিয়ে হয়েছিল ১৩ বছর ৩ মাস বয়সে। সেও যৌতুক এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে চলে আসে বাবার বাসায়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সেলিনা আকতার জানালেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী জুয়া খেলায় অভ্যস্ত ছিল। একদিন খেত তো দুইদিন নেই। সারাদিন জুয়া আর জুয়া। আপত্তি জানালে তার ওপর নির্যাতন। স্ত্রী এবং সন্তানকে খাওয়াতে না পারলেও আরেকটি বিয়ে করে স্বামী। এর পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তিন দফা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সে। একপর্যায়ে ফিরে আসে বাবার বাসায়। সেখান থেকেই যুক্ত হয় আলোকিত ভুবনে। শেফালি, আফসানা, সেলিনা, আলেমারা জানায়, আলোকিত ভুবনে আসার পর কর্তৃপক্ষ তাদের ধর্মীয় ও সচেতনতামূলক, আইনী শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নমূলক যেমন দর্জি, হাতের কাজ, চটের ব্যাগ, উলের ম্যাট, এমব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, রান্না, পার্লারের কাজ, বেতের ব্যাগ, মোমবাতি, কাগজের প্যাকেট, সুতলির পাপোস, ভ্যাকসিনেসন ইত্যাদি বিষয়ে ৬ মাস থাকা-খাওয়া ফ্রিতে প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষিত হয় তারা। সেদিন ছিল ৭ম ব্যাচের ৩০ আবাসী নারীর প্রশিক্ষণ শেষে কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠান। আরডিআরএসের বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় একটি করে সেলাই মেশিন, ১০ গজ কাপড়, একটি ভ্রমণ ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের সুই সুতা, কাঁচি, স্কেল, সেলাই ফ্রেম, সাইন বোর্ড, পার্লারের উপকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণসহ ৯ হাজার ৩০৭ টাকার মালামালসহ নগদ ১ হাজার টাকা। এসব দিয়েই তারা শুরু করবে তাদের নতুন জীবনের জয়যাত্রা।
শেফালি আকতার, আফসানা মিমি, সেলিনা আকতার, আলেমা খাতুনসহ আরও অনেকেই। এদের প্রত্যেকেরই বয়স ১২ থেকে ১৮। এরা প্রত্যেকেই বাল্যবিয়ের শিকার এবং কেউ কেউ একটি করে সন্তানেরও জননী। যেন ইস্পাতের পোড়া আগুনে দগ্ধ এদের সবার জীবন। যৌতুক আর নানা কারণেই স্বামী আর শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে কেউ কেউ নিকট বা দূর অতীতে আত্মহত্যারও চেষ্টা চালিয়েছে বার কয়েক। কিন্তু না! আজ আর নেই তাদের সেই দুর্বিষহ জীবন। এখন তারা খুঁজে পেয়েছে নতুন জীবনের ঠিকানা- ‘আলোকিত ভূবন।’ সম্প্রতি সেই আলোকিত ভুবনেই বর্ণনা করলেন তাদের সেই পোড় খাওয়া জীবন কাহিনী। বললেন, আর স্বামীর ওপর নির্ভরতা নয়, নিজেই গড়ব নিজের জীবন। আসছি শূন্য হাতে আর ফিরে যাব ভরা হাতে। বেসরকারী সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশের পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৭ম ব্যাচের ৩০ শিশু-কিশোরীর প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে তাদের সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণাদি বিতরণ অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তারা তাদের অনুভূতির কথা তুলে ধরে। এ সময় সেখানে উপস্থিত অতিথি আর সুধীজনরাও আটকে রাখতে পারেনি তাদের চোখের জল।
নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার খাটিবিয়া ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের শেফালি আকতার। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি মাত্র বারো বছর বয়সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয় তার। স্বামীর ঘরে যেতে সে রাতেই বাবা মারা যায়। আবার ফিরে আসে। তিনদিন পর আবার স্বামীর ঘর। কদিন সংসার করার পরই স্বামীর পক্ষ থেকে দাবি ওঠে ১০ হাজার টাকা যৌতুকের। বাবা নেই, স্বামী হারাবার শোকে কাতর দরিদ্র মা-কেউ জানাতে পারে না স্বামীর দাবিকৃত যৌতুকের বিষয়টি। একপর্যায়ে শুরু হয় অমানসিক নির্যাতন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে শেফালি জানায়, এমন গালিগালাজ করত এবং শরীরের এমন স্থানে আঘাত করত যা কাউকে বলা এবং দেখানো যেত না। নির্যাতনের কারণে কয়েক দফা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সে। পরে আর সইতে না পেরে চলে আসে মায়ের বাসায়। কদিন পরই পড়শি এক ভাইয়ের মুখে শুনতে পায় ইউনিয়ন ফেডারেশনের কথা। তাদের মাধ্যমেই চলে আসে আরডিআরএস পরিচালিত পুনর্বাসন কেন্দ্র আলোকিত ভূবনে।
একই কথা জানালেন পঞ্চগড়ের বিরল থানার শিংগুন গ্রামের আফসানা মিমি। তারও বিয়ে হয়েছিল ১৩ বছর ৩ মাস বয়সে। সেও যৌতুক এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে চলে আসে বাবার বাসায়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সেলিনা আকতার জানালেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী জুয়া খেলায় অভ্যস্ত ছিল। একদিন খেত তো দুইদিন নেই। সারাদিন জুয়া আর জুয়া। আপত্তি জানালে তার ওপর নির্যাতন। স্ত্রী এবং সন্তানকে খাওয়াতে না পারলেও আরেকটি বিয়ে করে স্বামী। এর পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তিন দফা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সে। একপর্যায়ে ফিরে আসে বাবার বাসায়। সেখান থেকেই যুক্ত হয় আলোকিত ভুবনে। শেফালি, আফসানা, সেলিনা, আলেমারা জানায়, আলোকিত ভুবনে আসার পর কর্তৃপক্ষ তাদের ধর্মীয় ও সচেতনতামূলক, আইনী শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নমূলক যেমন দর্জি, হাতের কাজ, চটের ব্যাগ, উলের ম্যাট, এমব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, রান্না, পার্লারের কাজ, বেতের ব্যাগ, মোমবাতি, কাগজের প্যাকেট, সুতলির পাপোস, ভ্যাকসিনেসন ইত্যাদি বিষয়ে ৬ মাস থাকা-খাওয়া ফ্রিতে প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষিত হয় তারা। সেদিন ছিল ৭ম ব্যাচের ৩০ আবাসী নারীর প্রশিক্ষণ শেষে কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠান। আরডিআরএসের বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় একটি করে সেলাই মেশিন, ১০ গজ কাপড়, একটি ভ্রমণ ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের সুই সুতা, কাঁচি, স্কেল, সেলাই ফ্রেম, সাইন বোর্ড, পার্লারের উপকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণসহ ৯ হাজার ৩০৭ টাকার মালামালসহ নগদ ১ হাজার টাকা। এসব দিয়েই তারা শুরু করবে তাদের নতুন জীবনের জয়যাত্রা।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment