Saturday, August 23, 2014

**** হরিচাঁদ ঠাকুর কি বৈদিক অবতার না কি মুলনিবাসী মহামানব, জ্ঞানাবতার ? 2) আমরা কি বৈদিক মতুয়া না কি অবৈদিক মতুয়া ? 3) মতুয়া ধর্ম কি বৈদিক হিন্দু ধর্মের একটা শাখা নাকি সতন্ত্র ধর্ম ?

**** হরিচাঁদ ঠাকুর কি বৈদিক অবতার না কি মুলনিবাসী মহামানব, জ্ঞানাবতার ?
2) আমরা কি বৈদিক মতুয়া না কি অবৈদিক মতুয়া ?
3) মতুয়া ধর্ম কি বৈদিক হিন্দু ধর্মের একটা শাখা নাকি সতন্ত্র ধর্ম ?
4) বৈদিক হিন্দু ধর্মের যে সব অবতার সমস্ত মানব জাতির জন্য কাজ করে যান নাই, যারা চতুর্বর্ণ ব্যাবস্থার সমাপ্তি ঘটিয়ে সাম্যবাদী সমাজের গঠনের পরিবর্তে চতুর্বর্ণ ব্যাবস্থাকে দৃঢ় করে গেছেন সেই সব অবতার দের কি ভগবান মনে করা যেতে পারে ? নাকি "যে যাহারে উদ্ধার করে সেই তার ঈশ্বর । " ?
আমাদের এক মতুয়া প্রান ভাই এই প্রশ্ন গুলি করেছেন।কিন্তু কেউ এর সদুত্তর দেননি বলে নিজে হতাশ হচ্ছি।তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত জানতে চেষ্টা করছি।
ফেসবুক বিস্তারিত আলোচনা করার জায়গা নয়, তাই সংক্ষেপে বলতে চেষ্টা করবো।
সব গুলো প্রশ্নের উত্তর এক সাথে দিতে চেষ্টা করছি।
মতুয়াদের মধ্যে শতকরা 90 জন হরিচাঁদ ঠাকুর গুরুচাঁদ ঠাকুর কে বৈদিক অবতার বলে মেনে করেন।বাকি দশ শতাংশের কিছু মতুয়া অবৈদিক মহামানব ভাবেন এবং কিছু মতুয়া হ্যাঁ বা না এই দুই এর টানাপোড়েনে রয়েছেন।
যে নব্বই শতাংশ মতুয়ারা হরি গুরুচাঁদ কে বৈদিক অবতার বলে যানেন বা মানেন কিন্তু মুখে বলেন মতুয়া ধর্ম অবৈদিক ধর্ম অথচ আচার আচরণে ও লেখার মধ্যে বৈদিকতা টেনে নিয়ে আসেন তাদের মধ্যে একটা অন্ধবিশ্বাসের শিকড় তাদের বিশ্বাস কে মজবুত করছে।তারা মনে করেন, বৈদিক হিন্দু ধর্মের অবতার না হলে নুতন ধর্মের প্রতিষ্ঠা করা যায় না ।
আমি এর আগেও কয়েকবার এবিষয়ে বলেছি যে, "বৈদিক অবতার না হলেও নুতন ধর্মের প্রতিষ্ঠা করা যায় । " তার উদাহরণ আমাদের কাছে আছে । যেমন :- সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ, গুরু নানক, হজরত মুহাম্মদ, যিশু খৃষ্ট. ....।এঁরা কেউই বৈদিক অবতার ছিলেন না ।কিন্তু সার পৃথিবীতে নব্বই শতাংশ মানুষ সেই অবৈদিক মহাজ্ঞানী মহামানব দের ধর্মই পালন করে চলেছ।
এদিকে আমার নব্বই শতাংশ মতুয়া দের যদি প্রশ্ন করা হয়, " মতুয়া ধর্ম কি কোন সতন্ত্র ধর্ম নাকি বৈদিক হিন্দু ধর্মের শাখা?
তারা বিন্দু মাত্র সময় ব্যয় না করে জোর গলায় বলবেন, "মতুয়া ধর্ম অবৈদিক এবং সতন্ত্র ধর্ম।" যুক্তি দেখবেন হরিচাঁদ ঠাকুর বলেছেন-
"কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই ।
বেদবিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই ।"
সেই কারণে মতুয়া ধর্ম অবৈদিক ধর্ম।
কিন্তু তারাই আবার হরিচাঁদ ঠাকুর কে বৈদিক অবতার বিষ্ণু, রাম, কৃষ্ণ, শ্রী চৈতন্য এর অবতার প্রমাণ করতে নানান যুক্তি তর্ক দিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেন না।নানান বৈদিক শাস্ত্র ঘেটে উদাহরণ বের করছেন।বলছেন অমুক গ্রন্থে , অমুক অবতারে অমুক জায়গায় শ্রীহরি বলেছেন, আমি অমুক জায়গায় অমুক নামে অবতারিত হব ।
হায়রে আহাম্মক মতুয়াগন বৈদিক অবৈদিকতার পার্থক্যই বুঝতে পারল না।
এই নব্বই শতাংশ মতুয়ারা যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, শ্রীমৎ তারক গোঁসাই হরিলীলামৃতে অমুক জায়গায় এই লিখেছেন সেই লিখেছেন।তিনি কি ভুল লিখেছেন ?
ভুল লিখেছেন কি ঠিক লিখেছেন সেকথা আমি বলছি না । আমি বলতে চাই শ্রীমৎ তারক গোঁসাই হরিলীলামৃত দুধে জলে মিশিয়ে লিখেছেন।কিন্তু তাঁর (হরিলীলামৃত )এর রশ পান করতে হলে নিজেকে রাজহংস হতে হবে।এখানে লালন ফকিরের একটা গানের কলি মনে পড়ে গেল,
" সামান্যে কি তার মর্ম জানা যায়, ....................., দুধে জলে মিলাইলে ভাগ করে খায় রাজহংস হলে"।
তাই মতুয়াদের রাজহংস হতে হবে, নইলে বৈদিক অবৈদিকতার চক্করে পড়ে সব মাটি করে বসে থাকবেন।মতুয়া ধর্ম বৈদিক হিন্দু ধর্মের শাখা বা পন্থা হয়েই রয়ে যাবে। যেমন করে ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম কে বৈদিক হিন্দু ধর্মের একটা শাখায় পরিনত করার জন্য অষ্টম শতাব্দীতে তৎকালীন শংকরাচার্য কুমারীল ভট্ট গৌতম বুদ্ধকে ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতার ঘোষনা করেছিলেন।যার আসল উদ্দেশ্য ছিল বুদ্ধ ধর্মের ব্রাহ্মণী করন করা এবং সে কাজে তিনি যথেষ্ট সফলতা অর্জন করতে পেরেছিলেন, যার ফলে ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব নষ্ট হয়েছে, বৈদিক হিন্দু ধর্ম রমরমিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের উদ্দেশ্য সফল করছে।কিন্তু ভারতের বাইরে বৌদ্ধ ধর্ম তাঁর স্বমহীমায় সাম্যবাদ প্রচার করে চলছে।আর বৌদ্ধ ধর্মের জন্মস্থান ভারতবর্ষে সাম্যবাদ বিরোধী জাত পাত উচ-নিচ ভেদাভেদ সৃষ্টি কারী ব্রাহ্মণ্যবাদী বৈদিক হিন্দু ধর্মের অশান্তির পীঠস্থান হয়ে আছে।
যেমন করে শংকরাচার্য কুমারীল ভট্ট বৌদ্ধ ধর্মের ব্রাম্মণীকরন করে ভারতবর্ষে থেকে বৌদ্ধ ধর্ম ধংস করতে চেয়েছিলেন ।তেমনি মতুয়া ধর্মকে ধংস করতে কোন শংকরাচার্যের দরকার নেই, মতুয়াদের মধ্যেই অসংখ্য কুমারীল ভট্ট বিরাজ করছেন যারা হরিচাঁদ ঠাকুর কে বৈদিক অবতার প্রমাণ করতে দিন রাত এক করে ফেলছেন।তারা বুঝতে পারছেন না যে এটা করে সতন্ত্র মতুয়া ধর্মের জন্য কত বড় ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছেন ।তারা নিজের জ্ঞানে বা অজ্ঞানতার বশে মতুয়া ধর্মের মৃত্যু ডেকে আনছে।
আর যদি হরিচাঁদ ঠাকুর বৈদিক অবতার না হন তবে গুরুচাঁদ ঠাকুর কোন মতেই শিবের অবতার হতে পারেন না।
তাই বলি বৈদিক পন্থী মতুয়ারা সাবধান ! হরিচাঁদ ঠাকুর কে বৈদিক অবতার প্রমাণ করতে গিয়ে মতুয়া ধর্মের ধংসের পথ প্রশস্ত কোরবেন না।
যে সব বৈদিক হিন্দু ধর্মের অবতারগন সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারেন নি, মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি কারী চতুর্বর্ণ ব্যাবস্থার সমাপ্তি ঘটানোর পরিবর্তে চতুর্বর্ণ ব্যাবস্থার ভিত মজবুত করেছেন, ধর্মের নামে অধর্ম স্থাপন করেছেন সেই সব অবতার আমাদের ভগবান বা ঈশ্বর হতে পারে না।
তাই হয়তো গুরুচাঁদ ঠাকুর বলেছেন –
“ বিশ্ব ভরে এই নীতি দেখি পরস্পর ।
যে যারে উদ্ধার করে সেই তার ঈশ্বর । "
আর এই কারণেই হরিচাঁদ গুরুচাঁদ আমাদের ভগবান, আমাদের ঈশ্বর।
কারন তাঁনারাই আমাদের উদ্ধার কর্তা।ধর্মদাতা ,ত্রাণকর্তা, পতিত পাবন।তাঁরা বৈদিক অবতার নন।পরম পিতা পরমেশ্বর এর সন্তান।সেই পরমেশ্বর এর তুলনা কোন বৈদিক হিন্দু ধর্মের ভগবান বা অবতার এর সাথে হয় না।বৈদিক শাস্ত্র দ্বারা তাঁর রূপ বর্ণনা করা যায় না।তাঁর স্বরূপ কল্পনা করা যায় না।তিনি সুপ্রিম, তিনি সর্ব শক্তিমান।
সর্ব শেষে বলি, মতুয়া ধর্ম জাত পাত বিরোধী ধর্ম,মানব প্রেমের ধর্ম, বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ধর্ম ৷ এ ধর্ম পালনের জন্য পৃথিবীর সকল মানুষকে জানাই আহ্বান ৷ মানুষের উপর বিশ্বাস ভক্তি রেখে ঈশ্বরের সৃষ্ট সকল জীবের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে মাতা-পিতা, স্ত্রী - সন্তান, পরিবার বর্গের সকলের প্রতি সমান ভাব-ভালবাসা এবং দায়িত্ব বোধের সঙ্গে সৎ চরিত্রবান হয়ে শিক্ষার মাধ্যমে মেরুদন্ড সোজা করে খাঁটি মানুষে পরিণত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এই " মতুয়া ধর্ম " ৷
তাই আবার বলি, সাবধানে কলম চালাবেন । নতুবা মতুয়া ধর্ম কোন কুল কিনারা পাবে না, এখানে গুরুচাঁদ ঠাকুর এর বানী দিয়ে লেখা শেষ করব,
" গুরুচাঁদ বলে তারে শোন বাপ শশী ।
এ জাতি তুলিতে পারে একমাত্র মসি ।
মসি চালনায় যদি হয়ে যায় ভুল ।
এ জাতি কোন দিনও পাইবে না কূল।"
সংক্ষেপে অনেক কথা বলতে চেষ্টা করেছি, জানিনা কতটুকু বলতে পেরেছি।
জয় হরিচাঁদ জয় গুরুচাঁদ জয় হরিবল … … … … … …
LikeLike ·  · 

No comments:

Post a Comment