Saturday, August 23, 2014

।। গুরুচাঁদের প্রত্যক্ষ শিক্ষা ।। --- ----- -- মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ।


।। গুরুচাঁদের প্রত্যক্ষ শিক্ষা ।।
--- ----- -- মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ।
গাড়লগাতি গ্রামের হারান বিশ্বস ছিল একজন প্রসিদ্ধ সুপারি ব্যবসায়ী।সে বড় নৌকা বোঝাই করিয়া বরিশাল হইতে খোসাওয়ালা সুপারী আনিয়া বাড়ির উঠানে লাট করিয়া রাখিত ।লোকজন দ্বারা সেই সকল সুপারীর খোসা ছাড়াইয়া রং করিত এবং শুকাইয়া বস্তাবন্দী করিয়া রাখিত।এই হারান বিশ্বাস ছিল গুরুচাঁদ ঠাকুর এর একজন ভক্ত।ঠাকুর তাহার বাড়িতে একাধিকবার জাগরণী সভাও করিয়াছেন।তাহার মস্তবড় উঠানে শামিয়ানা খাঁটাইয়া সভার আয়োজন করা হইত।একদা তাহার বাটিতে জাগরণী সভার আয়োজন করা হইলে গুরুচাঁদ ঠাকুর যথাসময়ে আসিয়া পৌঁছাইলেন ।উঠানের এক পার্শ্বে ছিল রাশীকৃত সুপারী।তাহার পার্শ্বেই একখানা কাষ্ঠনির্মিত আরামকেদারায় তাঁহার বসিবার ব্যবস্থা করা হইলে তিনি সেখানে আসিয়া উপবেশন করিলেন।এমত সময়ে দুই জন ভেকধারী বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী ভিক্ষার নিমিত্ত সেখানে উপস্থিত হইয়া 'হরেকৃষ্ণ ' বলিতে বলিতে গৃহের সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইল।তাহারা উঠানে শামিয়ানা টাঙানো দেখিয়া ভাবিল, নিশ্চয়ই কোন অনুষ্ঠান বাড়িতে আসিয়া পড়িয়াছে।তাই অধিক ভিক্ষার আশায় ঝোলা হইতে করতাল বাহির করিয়া বাজাইবার প্রস্তুতি লইতেই গুরুচাঁদ ঠাকুর উচ্চ কণ্ঠে হাঁক দিলেন, " থামো! "তাহারা চকিতে তাঁহার দিকে ফিরিয়া তাকাইলে তিনি স্বাভাবিক কণ্ঠে কহিলেন, " বেশ তো ছিলে, আবার করতাল বের করলে কেন ?"
ঠাকুরের কথা শুনিয়া বৈষ্ণব বৈষ্ণবী পরস্পর চোখাচোখি করিয়া কি যেন ইঙ্গিত করিল।তাহারা ঠাকুরের পোষাক আশাক দেখিয়া বিশেষ কেহ মনে করিয়া তাঁহার সম্মুখে আসিয়া দণ্ডায়মান হইল এবং বৈষ্ণব কহিল, " কর্তা, বাড়িতে কোন শুভ কাজ হতিছে বুঝে কিছু বেশি পাবার জন্যি নাম করতি চাইছেলাম ।"
ঠাকুর হাসিয়া কহিলেন, " আচ্ছা, সারাদিন ঘুরে তোমরা কত পাও ?"
এইবার বৈষ্ণবী উত্তর করিল, কী আর পাই কর্তা, ওই দ্যাড়-দুইশ্যার চাইল আর এক-আধ সিকি পয়সা ছাড়া আর কিছু না।তার জন্যি আবার কত সময় কত মন্দ কথা শুনতি হয়।"
ঠাকুর কহিলেন, " কী যেন বলছিলে তোমরা ? এই বাড়ি থেকে কিছু বেশি পেতে চাও তাই না ?"
বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী একসঙ্গে উত্তর করিল, "যদি কর্তার কৃপা হয় ! "
ঠাকুর হাসিয়া কহিলেন, " তোমরা তো খাস তালুকের লোক।তোমরা কারো কৃপার দান কেন নেবে ? তোমাদের উচিত প্রাপ্য হিসাবে এই বাড়ি থেকে চার সের চাল নিয়ে যেতে পার ।"
বৈষ্ণবী হাসিমুখে এক পা আগাইয়া আসিয়া কহিল, " তা হলি ব্যবস্থাডা করে দ্যান কর্তা ।"
ঠাকুর স্বাভাবিক ভাবে কহিলেন, " তোমরা দুইজনে বসে সুপারীর খোসা ছাড়াও, সন্ধ্যার আগে চার সের চাল আর এক সিকি পয়সা নিয়ে ফিরে যেও।"
ঠাকুরের কথা শুনিয়া তাহাদের মুখশ্রী ফ্যাকাশে হইয়া গেল।এইবার বৈষ্ণবী ক্রোধ ভরে কহিল, " আমরা গোবিন্দের দাসী, মানবের দাসত্ব আমরা করি না।"
সঙ্গে সঙ্গে বৈষ্ণব কহিল, " আমরা শ্রীকৃষ্ণের কার্য ভিন্ন আর কারো কার্য করি না।গুরুদেব আমাদের এই নির্দেশ দেছেন ।আমাদের কার্য করতে বলা মানে আমাদের রীতিমত অপমান করা ।"
ঠাকুর পূর্বের মতই প্রশান্ত মুখে কহিলেন, " হাত দিয়ে ভিক্ষা নিতে তোমাদের অপমান হয় না, তাই না ? অপমান হয় হাত দিয়ে কাজ করে ন্যায্য পারিশ্রমিক নিতে, তাই তো ? এবার তাহলে তোমরা এসো।আমরাও সুস্থ সবল পরশ্রমভোজীদের ভিক্ষা দিই না।আর কোন দিন এদিকে ভিক্ষা করতে এসো না। যাও ।"
এমত সময়ে হারান বিশ্বাসের স্ত্রী একখানি থালায় করিয়া একসের চাউল এবং তাহার উপরে এক আনা পয়সা ও গোটাকতক বেগুন রাখিয়া সেখানে আসিয়া দাঁড়াইতেই ঠাকুর কহিলেন, " ওগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাও মা ।"
তিনি উপস্থিত ভক্তদের দিকে তাকাইয়া কহিলেন, " তোমরা সকলে শুনে রাখো, ভেকধারী বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের তো নয়ই, কোন ধর্মীয় ভাব নিয়ে কেউ হাত পাতলে একটি কপর্দকও ভিক্ষা দেবে না।সকলে মনে রেখ, এটা আমার নির্দেশ।"
------ জয় হরিচাঁদ, জয় গুরুচাঁদ, জয় হরিবল … … … … … …
LikeLike ·  · 

No comments:

Post a Comment