জোর করে খাওয়ানোর নলটা আর নেই নাকে। আশপাশে নেই পুলিশ। হাসপাতালের দরজা দিয়ে সাদা পোশাকের শীর্ণ চেহারাটা বেরোতেই এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। তার পরেই অনুগামীদের আনন্দ-গর্জনে ভাসলেন ইরম শর্মিলা চানু। সাত বছর জেল হেফাজতে হাসপাতালে থাকার পর আজ মুক্তি পেলেন মণিপুরের এই মানবাধিকার কর্মী। এবং তার অব্যবহিত পরেই জানিয়ে দিলেন, লড়াই চলবে।
চলবে অনশন আন্দোলন।
ইম্ফলের জেলা ও দায়রা আদালত গত কালই মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়ার অধিকার ছিল পূর্ব ইম্ফলের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নতুনেশ্বরী দেবীর হাতে। দু’মাস আগে তিনিই চানুর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে চার্জ গঠন করতে বলেছিলেন। এ দিন বিকেলে চানুর মুক্তির নির্দেশ দেন তিনি। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিলেন অনুগামীরা। আদালতের রায়ের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। বিকেল সাড়ে ৫টায় হাসপাতালের জেল হেফাজত থেকে বেরিয়ে আসেন চানু। সেখানে তখন জনারণ্য।
হাসপাতালের কাছেই অনুগামীদের আন্দোলন মঞ্চে ধীর পদক্ষেপে উঠলেন চানু। মুক্তির স্বাদ পেয়ে তাঁর চোখেও জল। নিজেকে কিছুটা সামলে বললেন, “কাঁদছি বলে আমাকে দুর্বল ভাববেন না। আমি আবেগপ্রবণ। ঈশ্বরের ইচ্ছা, জনতার ভালবাসায় মুক্তি পেলাম। খোলা আকাশ-বাতাস উপভোগ করছি। তবে লড়াই যেমন চলছিল, তেমনই চলবে।” বছর চল্লিশের লড়াকু চরিত্রটি বললেন, “যে দিন অমানবিক আইন প্রত্যাহার করা হবে, সে দিনই জিতব আমরা। ‘আফস্পা’ অনেককে অনাথ, বিধবা করেছে। এই আইনের অবসান ছাড়া ন্যায় বিচার হবে না।” আফস্পা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতেও ফিরবেন না চানু। ওই মঞ্চেই তাঁর অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন।
২০১২ সালের ৩১ মে মেয়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল সখীদেবীর। এ দিনও কিন্তু দেখা হল না। চানুর ভাই ইরম সিংহজিৎ ফোনে বললেন, “মা বাড়িতেই রয়েছেন। ওঁদের দু’জনেরই প্রতিজ্ঞা, আফস্পা প্রত্যাহারের দাবি পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত দেখা করবেন না।” তবে তাঁর আশঙ্কা, ফের অনশনে বসলে হয়তো হাসপাতালেই ফিরতে হবে চানুকে। নলের মাধ্যমে খাওয়ানো না গেলে তাঁকে বাঁচানো দুষ্কর হবে।
আজ চানু অবশ্য আশা প্রকাশ করেন যে, আফস্পা প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিবাচক পদক্ষেপ করবেন। তিনি বলেন, “মোদী এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। আশা করি, অহিংসার রাস্তাতেই চলবেন।” চানুর ‘সেনাপতি’ বাবলুর বক্তব্য, “রাজ্যগুলিকে নিয়ে আলোচনা শুরু করা হোক। তবেই সমাধানসূত্র বের হতে পারে।” এ দিন ইম্ফলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাইখংবাম বলেন, “আমরা চানুকে জেলে রাখতে চাই না। তাঁকে বাঁচাতেই চাই। কারণ তাঁর প্রাণ মূল্যবান। আদালতের রায় হাতে পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
২০০০ সালের ২ নভেম্বর মালোম গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে জঙ্গি সন্দেহে ১০ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রতিবাদে বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ৫ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেন চানু। আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে ৩ দিন পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর মাঝেমধ্যে ছাড়া পেয়েছেন। ফের গ্রেফতার হয়েছেন। ২০০৬ সালে দিল্লির যন্তরমন্তরের সামনে প্রতিবাদ জানানোর সময়ে তাঁকে হাসপাতালে ‘বন্দি’ করা হয়। ২০০৭ সালে ইম্ফলে ফেরার পর থেকে জওহরলাল নেহরু হাসপাতালের সিকিওরিটি ওয়ার্ডই ছিল ঠিকানা।
এত দিনে সেই ঠিকানা-বদল হল।

http://www.anandabazar.com/national/will-continue-hunger-strike-said-sharmila-chanu-1.61372