ইমপিচ করবে সংসদ
০ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলো ‘সংবিধান আইন (ষোড়শ সংশোধন) ২০১৪’
০ ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের ইমপিচ করার এ ক্ষমতা ছিল
০ জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানবলে ১৯৭৮ সালে এটা বাতিল করে তথাকথিত সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেন
০ ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের ইমপিচ করার এ ক্ষমতা ছিল
০ জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানবলে ১৯৭৮ সালে এটা বাতিল করে তথাকথিত সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেন
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিচারপতিদের অভিশংসনের (ইমপিচ) ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪’র খসড়ায় ভেটিংসাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জন্যই সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না। বিএনপি জানিয়েছে, এই সংশোধনীর ফলে একদলীয় শাসন কায়েম হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রেরিত সারসংক্ষেপে সংবিধান সংশোধনের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭২ সালে গণপরিষদ কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের কোন বিচারককে প্রমাণিত অসদাচরণ ও অসামর্থ্যরে কারণে সংসদ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রেজ্যুলেশন গ্রহণপূর্বক অপসারণ করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আদেশের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক মর্মে বিধান ছিল। মূল সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ-এই তিনটি অঙ্গের জবাবদিহিতা সংসদের নিকট ন্যস্ত ছিল। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবলমাত্র এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। এর ধারবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীকে এবং মন্ত্রিপরিষদের অপরাপর সদস্যের ব্যক্তিগত এবং যৌথ দায়িত্বশীলতা সংসদের নিকট নিহিত রয়েছে। আস্থাভোটে হেরে গেলে প্রধানমন্ত্রীসহ সমুদয় মন্ত্রিপরিষদ (কেবিনেট) পদত্যাগ করার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সাংবিধানিকভাবে নির্বাহী ক্ষমতা ধরে রাখার একমাত্র উপায়। সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রিবর্গের অবশ্যই সংসদের নিকট জবাবদিহিতা রয়েছে। এটি প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদেরও সংসদের নিকট জবাবদিহিতার বাইরে রাখা হয়নি, কারণ সংসদ সদস্যগণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। অতএব, সুপ্রীমকোর্টের বিচারকগণকেও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদের নিকট জবাবদিহিতার আইনগত ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, ১৯৭৫ সালপরবর্তী জনপ্রতিনিধিত্বহীন অসাংবিধানিক সামরিক সরকার মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সামরিক আইন ফরমানবলে ১৯৭৮ সালে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত বিধান পরিবর্তন করে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অপর দুই প্রবীণ বিচারকের সমন্বয়ে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান করা হয়, যা পঞ্চম ও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমেও বহাল রাখা হয়েছে। সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বা কোন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির যদি এই মর্মে বোঝার কারণ থাকে যে, কোন বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বা গুরুতর অসদাচরণের কারণে দোষী সাব্যস্ত, সে ক্ষেত্রে কাউন্সিল বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, সামরিক আইন ফরমানবলে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের অপসারণসংক্রান্ত সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান সংসদ এবং জনগণের ক্ষমতাকে খর্ব করেছে, যা সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের চেতনার ব্যত্যয়। এতে সংবিধানের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে এবং নির্বাহী বিভাগের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট প্রচলিত আইন না থাকা সত্ত্বেও অযাচিত হস্তক্ষেপ করে চলেছে এবং প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; এটি ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী। সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্ট সংসদের প্রসিডিং চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিট মামলায় সংসদের প্রসিডিংয়ে স্পীকারের দেয়া রুলিং বেআইনী মর্মে আখ্যায়িত করে সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদে সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৭৮(১) অনুসারে সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করার জন্য ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্প্রবর্তন করে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে যদি প্রমাণিত হয় বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণ তদন্তপূর্বক দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রেজুলেশন পাস করে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তা চূড়ান্ত করার বিধানের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সারসংক্ষেপে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে-এ সকল দেশকে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের হাতে রাখা হয়েছে।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধিকতর সংশোধনের জন্য প্রস্তুত করা বিলে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শিরোনামে চারটি অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হবে। এগুলো- ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত বিচারক নিজ পদে বহাল থাকবেন; প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে দেয়া রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া কোন বিচারককে অপসারণ করা যাবে না; এই অনুচ্ছেদের ২ নম্বর দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে; কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে পদত্যাগ করতে পারবেন।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে আইন কমিশন গত ২৬ জুন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করে। এতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের বিষয়ে বর্তমান সংবিধান সংশোধন করে বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা হয়- ‘প্রমাণিত ও অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের গত সরকারের মেয়াদে। ২০১২ সালে তৎকালীন স্পীকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েক সংসদ সদস্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তবে বিএনপির অবস্থান এর বিপরীতে।
বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জন্যই বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া উচিত বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি মনে করেন, সংসদের হাতে এই ক্ষমতা দিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হবে না।
বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই সংশোধনীর দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না, বরং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণ যে সুফল লাভ করবে সেটাই এই সংশোধনীর মারফত আরও পাকাপোক্ত হবে।” রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা ও স্পীকারকে অপসারণের ক্ষমতা সংবিধানে সংসদের হাতে দেয়ার তথ্যও এ প্রসঙ্গে তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সব ক্ষমতাই যখন সংসদের ওপর ন্যস্ত, আর জনগণের পরেই সংসদের ক্ষমতা। বিচার বিভাগ স্বাধীন, এ ব্যাপারে আমাদের কোন সংশয় নাই।” “কিন্তু এই বিচার বিভাগের এ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ও ট্রান্সপারেন্সির জন্য ইমপিচমেন্টের একটা প্রভিশন সংসদের থাকা উচিৎ।” আগামী ১ সেপ্টেম্পর থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনেই এ সংক্রান্ত বিলটি পাস হবে বলে জানান মন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, বিল পাস হলে তিন মাসের মধ্যেই আইন করা হবে। কোন্ পদ্ধতিতে একজন বিচারককে অপসারণ করা যাবে তার বিশদ ব্যাখা থাকবে ওই আইনে। “সকল পক্ষই যাতে সুস্পষ্টভাবে তাদের বক্তব্য বলতে পারেন এবং কোন পক্ষের যাতে ডিফেন্স অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয় সে বিষয়টি আইনে থাকবে।”
অভিযোগকারী ও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ- সবার অধিকারই আইনে রক্ষা করা হবে বলে জানান জনাব আনিসুল।
বিচারপতিদের অপসারণের পুরো প্রক্রিয়া কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত না জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে গবেষণা করে আইনে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা রাখা হবে।” ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন।
পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তবে বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতা পোক্ত করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না বলেই মনে করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। সোমবার দুপুরে আইন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খায়রুল হক বলেন, “গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইংল্যান্ডে এই ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত গণতন্ত্রের সব দেশেই এটা আছে। ভারতেও এটা আছে।”
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের অবস্থা উন্নত দেশগুলোর মতো না হওয়ার পরও বিচারক অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দেয়া ঠিক হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সংসদকে এই ক্ষমতা দেয়ার সময় ওই সব দেশের অবস্থাও আমাদের মতোই ছিল।”
বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবিধান সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করা হয়।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
এই ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দিলে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে মন্তব্য করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের দেশে বাহাত্তরের সংবিধানেও এটা ছিল। কিন্তু কাউকে অভিশংসন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রেরিত সারসংক্ষেপে সংবিধান সংশোধনের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭২ সালে গণপরিষদ কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের কোন বিচারককে প্রমাণিত অসদাচরণ ও অসামর্থ্যরে কারণে সংসদ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রেজ্যুলেশন গ্রহণপূর্বক অপসারণ করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আদেশের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক মর্মে বিধান ছিল। মূল সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ-এই তিনটি অঙ্গের জবাবদিহিতা সংসদের নিকট ন্যস্ত ছিল। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবলমাত্র এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। এর ধারবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীকে এবং মন্ত্রিপরিষদের অপরাপর সদস্যের ব্যক্তিগত এবং যৌথ দায়িত্বশীলতা সংসদের নিকট নিহিত রয়েছে। আস্থাভোটে হেরে গেলে প্রধানমন্ত্রীসহ সমুদয় মন্ত্রিপরিষদ (কেবিনেট) পদত্যাগ করার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সাংবিধানিকভাবে নির্বাহী ক্ষমতা ধরে রাখার একমাত্র উপায়। সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রিবর্গের অবশ্যই সংসদের নিকট জবাবদিহিতা রয়েছে। এটি প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদেরও সংসদের নিকট জবাবদিহিতার বাইরে রাখা হয়নি, কারণ সংসদ সদস্যগণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। অতএব, সুপ্রীমকোর্টের বিচারকগণকেও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদের নিকট জবাবদিহিতার আইনগত ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, ১৯৭৫ সালপরবর্তী জনপ্রতিনিধিত্বহীন অসাংবিধানিক সামরিক সরকার মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সামরিক আইন ফরমানবলে ১৯৭৮ সালে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত বিধান পরিবর্তন করে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অপর দুই প্রবীণ বিচারকের সমন্বয়ে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান করা হয়, যা পঞ্চম ও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমেও বহাল রাখা হয়েছে। সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বা কোন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির যদি এই মর্মে বোঝার কারণ থাকে যে, কোন বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বা গুরুতর অসদাচরণের কারণে দোষী সাব্যস্ত, সে ক্ষেত্রে কাউন্সিল বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, সামরিক আইন ফরমানবলে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের অপসারণসংক্রান্ত সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান সংসদ এবং জনগণের ক্ষমতাকে খর্ব করেছে, যা সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের চেতনার ব্যত্যয়। এতে সংবিধানের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে এবং নির্বাহী বিভাগের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট প্রচলিত আইন না থাকা সত্ত্বেও অযাচিত হস্তক্ষেপ করে চলেছে এবং প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; এটি ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী। সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্ট সংসদের প্রসিডিং চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিট মামলায় সংসদের প্রসিডিংয়ে স্পীকারের দেয়া রুলিং বেআইনী মর্মে আখ্যায়িত করে সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদে সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৭৮(১) অনুসারে সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করার জন্য ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্প্রবর্তন করে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে যদি প্রমাণিত হয় বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণ তদন্তপূর্বক দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রেজুলেশন পাস করে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তা চূড়ান্ত করার বিধানের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সারসংক্ষেপে ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে-এ সকল দেশকে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের হাতে রাখা হয়েছে।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধিকতর সংশোধনের জন্য প্রস্তুত করা বিলে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শিরোনামে চারটি অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হবে। এগুলো- ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত বিচারক নিজ পদে বহাল থাকবেন; প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে দেয়া রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া কোন বিচারককে অপসারণ করা যাবে না; এই অনুচ্ছেদের ২ নম্বর দফার অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে; কোন বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে পদত্যাগ করতে পারবেন।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে আইন কমিশন গত ২৬ জুন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করে। এতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের বিষয়ে বর্তমান সংবিধান সংশোধন করে বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা হয়- ‘প্রমাণিত ও অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের গত সরকারের মেয়াদে। ২০১২ সালে তৎকালীন স্পীকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েক সংসদ সদস্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তবে বিএনপির অবস্থান এর বিপরীতে।
বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার জন্যই বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া উচিত বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি মনে করেন, সংসদের হাতে এই ক্ষমতা দিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হবে না।
বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই সংশোধনীর দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না, বরং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণ যে সুফল লাভ করবে সেটাই এই সংশোধনীর মারফত আরও পাকাপোক্ত হবে।” রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা ও স্পীকারকে অপসারণের ক্ষমতা সংবিধানে সংসদের হাতে দেয়ার তথ্যও এ প্রসঙ্গে তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সব ক্ষমতাই যখন সংসদের ওপর ন্যস্ত, আর জনগণের পরেই সংসদের ক্ষমতা। বিচার বিভাগ স্বাধীন, এ ব্যাপারে আমাদের কোন সংশয় নাই।” “কিন্তু এই বিচার বিভাগের এ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ও ট্রান্সপারেন্সির জন্য ইমপিচমেন্টের একটা প্রভিশন সংসদের থাকা উচিৎ।” আগামী ১ সেপ্টেম্পর থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনেই এ সংক্রান্ত বিলটি পাস হবে বলে জানান মন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, বিল পাস হলে তিন মাসের মধ্যেই আইন করা হবে। কোন্ পদ্ধতিতে একজন বিচারককে অপসারণ করা যাবে তার বিশদ ব্যাখা থাকবে ওই আইনে। “সকল পক্ষই যাতে সুস্পষ্টভাবে তাদের বক্তব্য বলতে পারেন এবং কোন পক্ষের যাতে ডিফেন্স অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয় সে বিষয়টি আইনে থাকবে।”
অভিযোগকারী ও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ- সবার অধিকারই আইনে রক্ষা করা হবে বলে জানান জনাব আনিসুল।
বিচারপতিদের অপসারণের পুরো প্রক্রিয়া কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত না জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে গবেষণা করে আইনে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা রাখা হবে।” ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন।
পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তবে বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতা পোক্ত করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দিলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে না বলেই মনে করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। সোমবার দুপুরে আইন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
খায়রুল হক বলেন, “গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইংল্যান্ডে এই ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত গণতন্ত্রের সব দেশেই এটা আছে। ভারতেও এটা আছে।”
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের অবস্থা উন্নত দেশগুলোর মতো না হওয়ার পরও বিচারক অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদকে দেয়া ঠিক হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সংসদকে এই ক্ষমতা দেয়ার সময় ওই সব দেশের অবস্থাও আমাদের মতোই ছিল।”
বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবিধান সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করা হয়।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। পরে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় ‘সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
এই ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দিলে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে মন্তব্য করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের দেশে বাহাত্তরের সংবিধানেও এটা ছিল। কিন্তু কাউকে অভিশংসন করা হয়নি।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment