শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ॥ জাতির বিনম্র শ্রদ্ধা
০ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার অঙ্গীকার
০ পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর ছাড়াও একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দ্রুত শেষ করে রায় কার্যকর দাবি
০ পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর ছাড়াও একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দ্রুত শেষ করে রায় কার্যকর দাবি
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সেদিনের মতো শুক্রবারের আকাশও ছিল মেঘাচ্ছন্ন। মাঝে মধ্যেই জাতির কান্না হয়ে ঝরছিল। শোকাচ্ছন্ন নীরবতায় যেন থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ। ৩৯ বছর হয়ে গেল, এখনও মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ভোলেনি কৃতজ্ঞ বাঙালী। বরং নতুন করেই নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে বাঙালী জাতি শুক্রবার ৩৯ বছর আগের ভয়াল এক রাতের শোকাবহ স্মৃতি স্মরণ করেছে। যিনি জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, লাখো শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা। শুনিয়েছিলেন সেই অমর বাণী- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
জাতীয় শোক দিবসে শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় বাঙালী জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করল জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর, শোককে শক্তিতে পরিণত করে ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার পালিত হয়েছে স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু ব্যক্তি নামে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি একটি আদর্শ। তাঁর আদর্শের আলো ছড়িয়ে পড়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মৃত্যুঞ্জয়ী। তাই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে যে হত্যা করা সম্ভব নয় তা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে পঁচাত্তরের ঘাতকচক্র ও তাদের দোসরদের জানিয়ে দিল কৃতজ্ঞ জাতি।
গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র শোকার্ত লাখো মানুষের কণ্ঠে ছিল একই দাবি ও স্লোগান- ‘কে বলেছে মুজিব নাই, মুজিব আছে সারা বাংলায়, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর কর, যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার চাই, মুজিবের বাংলায় জামায়াত-শিবির-রাজাকারের ঠাঁই নাই।’ একইসঙ্গে শোকের নানা অনুষ্ঠানেই নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক এই হত্যাযজ্ঞের দিনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার মিথ্যা জন্মদিনে কেক কেটে উল্লাস প্রকাশের বিরুদ্ধে ধিক্কার-নিন্দা প্রকাশ ছিল সবার মুখে মুখে।
দিনভর বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক সেই কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান, কবিতা আর দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়েছে রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশের পথে-প্রান্তরে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে সোচ্চার কণ্ঠে স্লোগান তুলেছে উগ্র সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের। সর্বত্রই শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছে মানুষ। জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকীতে রাজপথ থেকে অলি-গলি দেশের সর্বত্রই বঙ্গবন্ধুর ছবি, শোক জানিয়ে বিভিন্ন কালো ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে যেন ঢেকে গিয়েছিল। ১৫ আগস্ট একটি দিনের জন্য যেন শোকস্তব্ধ হয়ে উঠেছিল গোটাদেশ।
স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা-দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধুর বাসভবন আর টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর মাজারস্থল হয়ে উঠেছিল শোকার্ত লাখো মানুষের মিলন-মোহনা। দিনভর কৃতজ্ঞ বাঙালীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠেছিল ধানম-ির ৩২ নম্বর জাতির জনকের প্রতিকৃতি, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিসৌধ এবং বনানী গোরস্তানে ১৫ আগস্টের শহীদদের সমাধিস্থল। শুধু রাজনৈতিক দল বা সংগঠনই নয়, সারাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ, সংগঠন এবার বিস্তারিত কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করেছে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে। একই সঙ্গে ধিক্কার-নিন্দা জানিয়েছে স্বাধীনতার শত্রু, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক চক্র এবং তাদের দোসরদের।
জাতীয় শোক দিবসে শুক্রবার গোটা দেশই যেন ভেসেছে শোকের সাগরে। দিনব্যাপী সর্বত্র মাইকে প্রচারিত হচ্ছিল কোরান তেলাওয়াত এবং ফাঁকে ফাঁকে অবিরাম দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গান- ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা..., একটি বাংলাদেশ সাড়ে সাত কোটি জনতা..., শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনী..., জয় বাংলার জয় হবে হবে হবে নিশ্চয়... প্রভৃতি গান। এছাড়া এবার জাতীয় শোক দিবসের দলীয় আয়োজনকে বহুগুণে ছাপিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের অংশগ্রহণ। সারাদেশের প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায়, সড়কের পাশ দিয়ে যেতে চোখে পড়েছে খানিক পরপরই কালো ব্যানার, কালো পতাকা উড়িয়ে মিলাদ মাহফিল, দোয়াখায়ের ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণপর্ব।
রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের জন্য শুক্রবার ছিল সরকারী ছুটির দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ছিল। বিদেশের মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলোচনাসভা, জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ্ ও নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। বাদ জুম্মা সারাদেশে সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠানসমূহ সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এছাড়া পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
শুক্রবার শোকাবহ ১৫ আগস্টে দিনব্যাপী বাঙালী জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় চোখের জল আর হৃদয়ের ভালবাসায় স্মরণ করেছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদকে। সকাল সাড়ে ৬টায় দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবুদল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ দুটি স্থানে প্রধানমন্ত্রী সূরা ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সব হারানোর বেদনার্ত অশ্রু সবাইকে আবেগতাড়িত করে।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর দিনভর ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ও বিশিষ্টজনসহ সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল। দিনভর কৃতজ্ঞ বাঙালীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠেছিল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর জাতির পিতার প্রতিকৃতি।
মা-ভাইয়ের সমাধিপাশে শোকবিহ্বল প্রধানমন্ত্রী ॥ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বনানীর কবরস্থানের সারি বাঁধা ১৮টি কবর। এসব কবর আর কারোর নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নরপিশাচ ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নিহত বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শিশুপুত্র রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। ৩৯ বছর আগে ঘাতকদের বন্দুকের নলের মুখে স্বজনদের চোখের জলে শেষ বিদায়টুকু দিতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা।
শুক্রবার সকালে মা-ভাইদের কবরে গিয়ে চোখের জল থামিয়ে রাখতে পারেননি একসঙ্গে সব স্বজনহারা শোকবিহ্বল বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় স্বজনদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত ও ফাতেহা পাঠ করেন। জাতির পিতার এই কন্যা নিজ হাতে মুঠো মুঠো ভালবাসার ফুল ছড়িয়ে দেন প্রিয় স্বজনদের কবরে। নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গেলে সেখানে এক অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই সেখানে চলছিল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় কোরানখানি ও দোয়া মাহফিল। শোকাচ্ছন্ন শেখ হাসিনা মা-ভাইসহ সারিবদ্ধ ১৮টি কবরে ফুল ছিটিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণ করেন। ১৫ আগস্টের শহীদদের পাশাপাশি একইস্থানে সমাধিস্থ জাতীয় তিন নেতার মাজারেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একে একে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং সশস্ত্রবাহিনীর প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতার প্রতি সামরিক অভিবাদন জানান। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন এবং এ সময় করুণ সুরে বিউগল বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন।
ধানমণ্ডিতে সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল ॥ স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে নেমেছিল শ্রদ্ধা জানাতে আসা লাখো মানুষের ঢল। সকাল ৬টার মধ্যেই ভরে ওঠে পুরো ৩২ নম্বর সড়ক। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। কালো ব্যানার হাতে ও বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝেও জোরালো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধুর পালাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকলকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর একে একে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে রাত ১২টা এক মিনিটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে আসেন এবং ফুল দিয়ে জাতির পিতাকে স্মরণ করেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক যে আলোকচিত্রের আয়োজন করে তা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। বাদ আছর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চৌদ্দ দলের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পার্টি (জেপি) সেক্টর কামান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ফিল্ম আর্কাইভ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বন অধিদফতর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, মহিলা শ্রমিক লীগ, তরুণ লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতি লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, গণপূর্ত শ্রমিক লীগ, মোটরচালক লীগ, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক প্রভৃতি ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, ছিন্নমূল হকার্স লীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, ঢাকাস্থ টুঙ্গিপাড়া সমিতি, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্মৃতি পরিষদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, সাধনা সংসদ, আওয়ামী শিশু-কিশোর যুব জোট, নির্মাণ শ্রমিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, জননেত্রী পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ, বিসিএস পাবলিক ওয়ার্কার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, টেলিযোগাযোগ শ্রমিক ইউনিয়ন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা নৌবন্দর ঘাট শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ শান্তি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম, স্বাধীনতা ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ, বৃহত্তর ফরিদপুর চাকরিজীবী কল্যাণ সমিতি, গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি, নৌকার নতুন প্রজন্ম, আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদ, খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, ডিপ্লোমা নার্সেস এ্যাসোসিয়েশন, সেন্টার ফর মেডিক্যাল এডুকেশন, বঙ্গরতœ ফাউন্ডেশন, চিলড্রেন্স ভয়েস, সনাতন আইনজীবী কল্যাণ পরিষদ, সাধনা সংসদ, প্রশিকা, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আবদুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু ফেডারেশন, টিএ্যান্ডটি শ্রমিক ফেডারেল ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মহানগর পূজা কমিটি উদ্যোগে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে ‘সাংবাদিক সমাজ’-এর উদ্যোগে সর্বধর্ম প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এ প্রর্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থনা সভায় কোরান থেকে পাঠ করেন মওলানা জিয়াউল হাসান, গীতা পাঠ করেন ইঞ্জিনিয়ার মানস মিত্র, ত্রিপিটক পাঠ করেন শ্রীমৎ কল্যাণ জ্যোতি থেরো এবং বাইবেল থেকে পাঠ করেন নটর ডেম কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ফাদার বেনজামিন ডি কস্টা। প্রার্থনা সভা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ছাড়াও আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রশাসক ইব্রাহিম হোসেন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মনজুর হোসেন, আনছার আলী খান, যুগ্ম সচিব আকতার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুনসহ উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। পরে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন করপোরেশনের প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার সচিব।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গণফোরাম তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে। নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, আহম শফিক উল্লাহ, এ্যাডভোকেট সগীর আনোয়ার প্রমুখ। বক্তারা দণ্ডপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার সমালোচনা করেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সদর দফতরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর প্রতিষ্ঠান, ইউনিটসমূহে বিশেষ মোনাজাত, বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর আলোচনা ও প্রামাণ্য চিত্র ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ প্রদর্শণীর আয়োজন করে। সদর দফতরের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ পিএসসি, জি।
জাতীয় শোক দিবসে শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় বাঙালী জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করল জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর, শোককে শক্তিতে পরিণত করে ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক-জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার পালিত হয়েছে স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু ব্যক্তি নামে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি একটি আদর্শ। তাঁর আদর্শের আলো ছড়িয়ে পড়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মৃত্যুঞ্জয়ী। তাই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে যে হত্যা করা সম্ভব নয় তা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে পঁচাত্তরের ঘাতকচক্র ও তাদের দোসরদের জানিয়ে দিল কৃতজ্ঞ জাতি।
গভীর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র শোকার্ত লাখো মানুষের কণ্ঠে ছিল একই দাবি ও স্লোগান- ‘কে বলেছে মুজিব নাই, মুজিব আছে সারা বাংলায়, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর কর, যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার চাই, মুজিবের বাংলায় জামায়াত-শিবির-রাজাকারের ঠাঁই নাই।’ একইসঙ্গে শোকের নানা অনুষ্ঠানেই নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক এই হত্যাযজ্ঞের দিনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার মিথ্যা জন্মদিনে কেক কেটে উল্লাস প্রকাশের বিরুদ্ধে ধিক্কার-নিন্দা প্রকাশ ছিল সবার মুখে মুখে।
দিনভর বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ঐতিহাসিক সেই কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান, কবিতা আর দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়েছে রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশের পথে-প্রান্তরে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে সোচ্চার কণ্ঠে স্লোগান তুলেছে উগ্র সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের। সর্বত্রই শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছে মানুষ। জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকীতে রাজপথ থেকে অলি-গলি দেশের সর্বত্রই বঙ্গবন্ধুর ছবি, শোক জানিয়ে বিভিন্ন কালো ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে যেন ঢেকে গিয়েছিল। ১৫ আগস্ট একটি দিনের জন্য যেন শোকস্তব্ধ হয়ে উঠেছিল গোটাদেশ।
স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা-দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধুর বাসভবন আর টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর মাজারস্থল হয়ে উঠেছিল শোকার্ত লাখো মানুষের মিলন-মোহনা। দিনভর কৃতজ্ঞ বাঙালীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠেছিল ধানম-ির ৩২ নম্বর জাতির জনকের প্রতিকৃতি, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিসৌধ এবং বনানী গোরস্তানে ১৫ আগস্টের শহীদদের সমাধিস্থল। শুধু রাজনৈতিক দল বা সংগঠনই নয়, সারাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ, সংগঠন এবার বিস্তারিত কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করেছে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে। একই সঙ্গে ধিক্কার-নিন্দা জানিয়েছে স্বাধীনতার শত্রু, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক চক্র এবং তাদের দোসরদের।
জাতীয় শোক দিবসে শুক্রবার গোটা দেশই যেন ভেসেছে শোকের সাগরে। দিনব্যাপী সর্বত্র মাইকে প্রচারিত হচ্ছিল কোরান তেলাওয়াত এবং ফাঁকে ফাঁকে অবিরাম দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গান- ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা..., একটি বাংলাদেশ সাড়ে সাত কোটি জনতা..., শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনী..., জয় বাংলার জয় হবে হবে হবে নিশ্চয়... প্রভৃতি গান। এছাড়া এবার জাতীয় শোক দিবসের দলীয় আয়োজনকে বহুগুণে ছাপিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের অংশগ্রহণ। সারাদেশের প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায়, সড়কের পাশ দিয়ে যেতে চোখে পড়েছে খানিক পরপরই কালো ব্যানার, কালো পতাকা উড়িয়ে মিলাদ মাহফিল, দোয়াখায়ের ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণপর্ব।
রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের জন্য শুক্রবার ছিল সরকারী ছুটির দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ছিল। বিদেশের মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলোচনাসভা, জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ্ ও নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। বাদ জুম্মা সারাদেশে সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠানসমূহ সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এছাড়া পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
শুক্রবার শোকাবহ ১৫ আগস্টে দিনব্যাপী বাঙালী জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় চোখের জল আর হৃদয়ের ভালবাসায় স্মরণ করেছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদকে। সকাল সাড়ে ৬টায় দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবুদল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ দুটি স্থানে প্রধানমন্ত্রী সূরা ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সব হারানোর বেদনার্ত অশ্রু সবাইকে আবেগতাড়িত করে।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর দিনভর ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ও বিশিষ্টজনসহ সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল। দিনভর কৃতজ্ঞ বাঙালীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠেছিল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর জাতির পিতার প্রতিকৃতি।
মা-ভাইয়ের সমাধিপাশে শোকবিহ্বল প্রধানমন্ত্রী ॥ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বনানীর কবরস্থানের সারি বাঁধা ১৮টি কবর। এসব কবর আর কারোর নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নরপিশাচ ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নিহত বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শিশুপুত্র রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। ৩৯ বছর আগে ঘাতকদের বন্দুকের নলের মুখে স্বজনদের চোখের জলে শেষ বিদায়টুকু দিতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা।
শুক্রবার সকালে মা-ভাইদের কবরে গিয়ে চোখের জল থামিয়ে রাখতে পারেননি একসঙ্গে সব স্বজনহারা শোকবিহ্বল বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় স্বজনদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত ও ফাতেহা পাঠ করেন। জাতির পিতার এই কন্যা নিজ হাতে মুঠো মুঠো ভালবাসার ফুল ছড়িয়ে দেন প্রিয় স্বজনদের কবরে। নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গেলে সেখানে এক অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই সেখানে চলছিল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় কোরানখানি ও দোয়া মাহফিল। শোকাচ্ছন্ন শেখ হাসিনা মা-ভাইসহ সারিবদ্ধ ১৮টি কবরে ফুল ছিটিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণ করেন। ১৫ আগস্টের শহীদদের পাশাপাশি একইস্থানে সমাধিস্থ জাতীয় তিন নেতার মাজারেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একে একে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং সশস্ত্রবাহিনীর প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতার প্রতি সামরিক অভিবাদন জানান। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন এবং এ সময় করুণ সুরে বিউগল বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন।
ধানমণ্ডিতে সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল ॥ স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে নেমেছিল শ্রদ্ধা জানাতে আসা লাখো মানুষের ঢল। সকাল ৬টার মধ্যেই ভরে ওঠে পুরো ৩২ নম্বর সড়ক। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। কালো ব্যানার হাতে ও বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝেও জোরালো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধুর পালাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকলকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর একে একে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে রাত ১২টা এক মিনিটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে আসেন এবং ফুল দিয়ে জাতির পিতাকে স্মরণ করেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক যে আলোকচিত্রের আয়োজন করে তা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। বাদ আছর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চৌদ্দ দলের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পার্টি (জেপি) সেক্টর কামান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ফিল্ম আর্কাইভ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বন অধিদফতর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, মহিলা শ্রমিক লীগ, তরুণ লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতি লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, গণপূর্ত শ্রমিক লীগ, মোটরচালক লীগ, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক প্রভৃতি ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, ছিন্নমূল হকার্স লীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, ঢাকাস্থ টুঙ্গিপাড়া সমিতি, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্মৃতি পরিষদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, সাধনা সংসদ, আওয়ামী শিশু-কিশোর যুব জোট, নির্মাণ শ্রমিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, জননেত্রী পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ, বিসিএস পাবলিক ওয়ার্কার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, টেলিযোগাযোগ শ্রমিক ইউনিয়ন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা নৌবন্দর ঘাট শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ শান্তি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম, স্বাধীনতা ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ, বৃহত্তর ফরিদপুর চাকরিজীবী কল্যাণ সমিতি, গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি, নৌকার নতুন প্রজন্ম, আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদ, খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, ডিপ্লোমা নার্সেস এ্যাসোসিয়েশন, সেন্টার ফর মেডিক্যাল এডুকেশন, বঙ্গরতœ ফাউন্ডেশন, চিলড্রেন্স ভয়েস, সনাতন আইনজীবী কল্যাণ পরিষদ, সাধনা সংসদ, প্রশিকা, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আবদুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু ফেডারেশন, টিএ্যান্ডটি শ্রমিক ফেডারেল ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মহানগর পূজা কমিটি উদ্যোগে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে ‘সাংবাদিক সমাজ’-এর উদ্যোগে সর্বধর্ম প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এ প্রর্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থনা সভায় কোরান থেকে পাঠ করেন মওলানা জিয়াউল হাসান, গীতা পাঠ করেন ইঞ্জিনিয়ার মানস মিত্র, ত্রিপিটক পাঠ করেন শ্রীমৎ কল্যাণ জ্যোতি থেরো এবং বাইবেল থেকে পাঠ করেন নটর ডেম কলেজের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ফাদার বেনজামিন ডি কস্টা। প্রার্থনা সভা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ছাড়াও আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রশাসক ইব্রাহিম হোসেন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মনজুর হোসেন, আনছার আলী খান, যুগ্ম সচিব আকতার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুনসহ উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। পরে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন করপোরেশনের প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার সচিব।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গণফোরাম তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে। নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, আহম শফিক উল্লাহ, এ্যাডভোকেট সগীর আনোয়ার প্রমুখ। বক্তারা দণ্ডপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার সমালোচনা করেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সদর দফতরসহ সকল রিজিয়ন, সেক্টর প্রতিষ্ঠান, ইউনিটসমূহে বিশেষ মোনাজাত, বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর আলোচনা ও প্রামাণ্য চিত্র ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ প্রদর্শণীর আয়োজন করে। সদর দফতরের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ পিএসসি, জি।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/
No comments:
Post a Comment