Friday, March 28, 2014

টুকলি আটকে নিগ্রহের শিকার শিক্ষিকারা

টুকলি আটকে নিগ্রহের শিকার শিক্ষিকারা
teacher
চিত্রদীপ চক্রবর্তী

শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে আঠা দিয়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল কাগজের টুকরো৷

অর্থনীতির নানা জটিল প্রশ্নের সমাধান লেখা ছিল তাতে৷ শাড়ির ভাঁজ থেকে সে সব সাদা খাতায় তুলতে গিয়েই ধরা পড়ে যায় শিক্ষিকা-পরিদর্শকদের চোখে৷ বাধা দেন তাঁরা৷ ফল হল মারাত্মক!

ট্রেনে করে ওই শিক্ষিকারা বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের উপর চড়াও হয় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছাত্রীরা৷ মাথায় জল ঢেলে দেওয়া হয় শিক্ষিকাদের৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার তালদি সুরবালা শিক্ষায়তন ফর গার্লস স্কুলে বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার পর এ সব কাণ্ড ঘটিয়েছে ছাত্রীরা৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা লিপি ভট্টাচার্য সোনারপুর রেল পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷

স্কুলসূত্রে খবর, নকল ধরার প্রতিবাদে তালদি সুরবালা স্কুলে প্রথমে একদফা তাণ্ডব চালায় ওই ছাত্রীরা৷ কিন্ত্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনে৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবজ্যোতি বড়াল বলেন, 'ঘটনার কথা প্রধান শিক্ষিকা আমাদের জানিয়েছেন৷ যে স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, পরীক্ষা শেষ হলে আমরা তাদের সঙ্গেও কথা বলব৷ পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হবে৷'

পরীক্ষা চলার সময় ঠিক কী ঘটেছিল স্কুলে? জানা গিয়েছে, তালদির সুরবালা স্কুলে ঘুটিয়ারি শরিফের হরিহর মহাবিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছিল৷ মঙ্গলবার অর্থনীতির পরীক্ষার সময় শিক্ষিকারা দেখেন, ছাত্রীদের শাড়ির ভিতর থেকে একাধিক ছোট কাগজে লেখা উত্তর বেরিয়ে আসছে৷ চটপট তা উঠেও যাচ্ছে খাতায়৷ প্রথমে সতর্ক করলেও ছাত্রীরা বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেনি৷ উল্টে, এতক্ষণ যা চোরাগোপ্তা ছিল, তা পাল্টে যায় গণ-টোকাটুকিতে৷ এ বার খাতা কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হলে ওই ছাত্রীরা ক্লাসঘরের দরজা বন্ধ করে ভিতরে টেবিল-চেয়ার উল্টে দেয়৷ ছিঁড়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন চার্টও৷

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেখে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ডাকেন৷ পুলিশ এসে শিক্ষিকাদের ক্লাসরুম থেকে উদ্ধার করে ছাত্রীদের বাইরে পাঠিয়ে দেয়৷ প্রধান শিক্ষিকা লিপিদেবীর অভিযোগ, 'গত বছরও স্কুলে ভাঙচুর হয়েছিল৷ আমরা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম যাতে এ বছর হরিহর স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্র আমাদের এখানে না দেওয়া হয়৷ সংসদের পক্ষ থেকে তেমন প্রতিশ্রুতিও পেয়েছিলাম৷ কিন্ত্ত এ বছর ফের ওই স্কুলের ছাত্রীদের পরীক্ষাকেন্দ্র এখানেই দেওয়া হয়েছে৷ ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা আর আপত্তি করিনি৷'

এর পর কী হল?

শিক্ষিকাদের অভিযোগ, দুপুর দুটোর সময় পরীক্ষা শেষ হলে তাঁরা আপ ক্যানিং লোকালে বাড়ি ফিরছিলেন৷ ট্রেনে ওই পরীক্ষার্থীরাও মহিলা কামরায় ওঠে৷ ভরা ট্রেনে শুরু হয় শিক্ষিকাদের মারধর৷ তার পর জল ঢেলে দেওয়া হয় মাথায়৷ ট্রেনের অন্য মহিলা যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগে ছাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পড়ে৷ এই ঘটনায় আহত হন শিক্ষিকা সঙ্গীতা মুখোপাধ্যায়৷ বুধবার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিষয়টি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে জানানোর পাশাপাশি সোনারপুর রেল পুলিশের কাছেও অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে৷
http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/harrassament-of-teachers-by-students/articleshow/32836095.cms?

No comments:

Post a Comment