Saturday, March 29, 2014

ভেঙে পড়ল সুপার হারকিউলিস, মৃত ৫

ভেঙে পড়ল সুপার হারকিউলিস, মৃত ৫

plane
এই সময়, জয়পুর ও নয়াদিল্লি: চম্বল নদীর ওপারেই দাউদাউ করে জ্বলছে বায়ুসেনার ভেঙে পড়া বিমান৷ কিন্ত্ত কোনও নৌকো নেই৷ তাই অসহায় ভাবে এ পারে দাঁড়িয়েই সে দৃশ্য দেখতে হল মধ্যপ্রদেশের রঘুনাথপুরের পুলিশকে!

শুক্রবার নিয়মমাফিক উড়ানের সময়েই গোয়ালিয়রের কাছে ভেঙে পড়ে বায়ুসেনার নয়া সুপার হারকিউলিস (সি-১৩০-জে) বিমান৷ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৫ জন বিমানকর্মী৷ ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারত এই অত্যাধুনিক বিমানটি কেনে৷ সামরিক উড়ানে বিশেষ পারদর্শী হারকিউলিসে কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷

রাজস্থানের করৌলি জেলার নিমুচ গ্রামে বিমানটি ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে রঘুনাথপুর থানার পুলিশকে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের চম্বল রেঞ্জের আইজি ডি সি সাগর৷ কিন্ত্ত নদী পেরিয়ে তারা সেখানে পৌঁছতে পারেনি৷ লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাদের হাতে৷ তবে চম্বল নদীতে সাঁতার কেটে জ্বলন্ত বিমানের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মধ্যপ্রদেশের শেওপুর জেলার পিপরানি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা৷ তা করতে গিয়ে নদীতে ডুবে প্রাণ হারান কালা সিয়ারাম নামে এক গ্রামবাসী৷ বাকিরা অবশ্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুড়ে যাওয়া কয়েকটি দেহ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি৷ দিল্লিতে বায়ুসেনার এক মুখপাত্র বলেন, 'প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত মিশনেই সকাল ১০টা নাগাদ আগ্রা থেকে সি-১৩০-জে বিমানটি যাত্রা শুরু করে৷ গোয়ালিয়র বিমানঘাঁটির ৭২ মাইল (১১৫) কিলোমিটার পশ্চিমে সকাল ১১টা নাগাদ সেটি ভেঙে পড়ে৷ এই দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কোর্ট অফ এনকোয়্যারি গঠন করা হয়েছে৷' খবর মিলতেই হেলিকপ্টারে চেপে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বায়ুসেনার প্রধান কার্যালয়গুলির শীর্ষ আধিকারিকরা৷

প্রাথমিক অনুমান, সংশ্লিষ্ট বিমানকর্মীদের 'অদক্ষতা' বা ওড়ার সময় বিমানটিতে আগুন লেগে যাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ নিহতদের মধ্যে প্রশান্ত যোশী ও রাজি নায়ার নামে দু'জন উইং কম্যান্ডার, আশিস যাদব ও কৌশিক মিশ্র নামে দু'জন স্কোয়াড্রন লিডার এবং ওয়্যার্যান্ট অফিসার কৃষ্ণপাল সিং (ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার) রয়েছেন৷ বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে৷ সেটি খতিয়ে দেখে দুর্ঘটনার নির্দিষ্ট কারণ জানার চেষ্টা চলছে৷

ছ'টি সুপার হারকিউলিস বিমান কিনতে চেয়ে বছর তিনেক আগে আমেরিকার সঙ্গে ৬ হাজার কোটির চুক্তিতে সই করে ভারত৷ বিমানগুলিতে একাধিক ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন: অনেক নিচু দিয়ে নিখুঁত ভাবে ওড়ার ক্ষমতা, ইনফ্রারেড শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ১৯ হাজার কিলোগ্রাম ভার বহন ক্ষমতা, ঘণ্টায় ৬৭২ কিলোমিটার দূরত্ব পেরনো, এক নাগাড়ে ৩৩৩২ কিলোমিটার ওড়ার ক্ষমতা৷ চারটি রোলস রয়েস ইঞ্জিন একে শক্তি জোগায়৷

বিশেষ অভিযানে এবং দূর জায়গায় বাহিনী ও রসদ পৌঁছনোর জন্য এই বিমান দারুণ কার্যকরী৷ গত বছরে উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে উদ্ধারকাজে সুপার হারকিউলিস বিমান ব্যবহার করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা৷ গত বছরের এপ্রিলে লাদাখে চিন সীমান্তবর্তী দৌলত বেগ ওল্ডিতে ভারতীয় ঘাঁটিতে এই বিমান পাঠিয়ে চিনকে কড়া বার্তা দিয়েছিল ভারত সরকার৷ ইঙ্গিত দিয়েছিল, সীমান্তে কোনও সামরিক সঙ্কট দেখা দিলে ভারতীয় সেনাবাহিনী সুপার হারকিউলিসের 'যথাযথ' ব্যবহার করতে পারে৷ নিখোঁজ মালয়েশিয়ান বিমান এম এইচ-৩৭০-এর খোঁজেও সি-১৩০ -জে বিমানকে ব্যবহার করা হয়েছে৷

এ নিয়ে গোটা বিশ্বে তৃতীয় সি-১৩০ -জে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হল৷ ২০০৯ সালে ইতালির বায়ুসেনার একটি সি-১৩০-জে বিমান প্রশিক্ষণ চলাকালীন ভেঙে পড়ে৷ ২০১২-য় নরওয়ে বায়ুসেনার সুপার হারকিউলিস বিমান পর্বতের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয়ে যায়৷

No comments:

Post a Comment