মোদীর মিথ্যে
By Amitava Gupta ..
সপ্তাহতিনেক আগের একটা লেখায় কথা দিয়েছিলাম, নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক সাফল্য যে আসলে বিজ্ঞাপনী প্রচার বই কিছু নয়, সেটা যুক্তি এবং তথ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব। তার পর সবরমতী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। আমার এই ব্লগ যাঁরা পড়েন, অনুমান করছি তাঁদের অনেকেই আনন্দবাজার পত্রিকারও নিয়মিত পাঠক। কাজেই, অনেকের হয়তো চোখে পড়েছে, মোদী এবং ইউপিএ, উভয়ের অর্থনৈতিক ‘সাফল্য’ নিয়ে গত কিছু দিনে কয়েকটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদ মৈত্রীশ ঘটকের সঙ্গে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম। মৈত্রীশ এবং সঞ্চারী রায় আরও একটি লেখা লিখেছিলেন। দুটো লেখাই পরিসংখ্যান নিয়ে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, যোজনা কমিশন এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো সর্বজনমান্য প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে আমরা পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছিলাম। যে কেউই সেই পরিসংখ্যান জোগাড় করে বিশ্লেষণের কাজ করে দেখতে পারেন। কাজেই, আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় থাকলে নিজেরা হিসেব কষে দেখে নিতে পারেন।
এ বার, সেই বিশ্লেষণ থেকে কী পাওয়া গেল, সেটা জানাই। দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে ম্যাজিক দেখিয়েছেন বলে যে প্রচার চব্বিশ ঘণ্টা চলছে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। গুজরাত অর্থনৈতিক ভাবে দেশের অন্যতম অগ্রসর রাজ্য, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে মোদীর কৃতিত্ব অতি সামান্য। তিনি ক্ষমতায় আসার ঢের আগে থেকেই, সেই ১৯৮০-র দশক থেকে, গুজরাতে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। তিনি বড় জোর সেটুকু ধরে রাখতে পেরেছেন। তাঁর আমলে যে আলাদা করে কোনও উন্নতি হয়নি, পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট। ১৯৯০-এর দশকে গুজরাতের মাথা পিছু আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৮ শতাংশ, জাতীয় গড় ছিল ৩.৭ শতাংশ। একুশ শতকের প্রথম দশকে এই হারদুটি হয়েছে যথাক্রমে ৬.৯ শতাংশ ও ৫.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় তার পরের দশকে, অর্থাৎ গুজরাতে মোদীর শাসনকালে, গুজরাতে গোটা দেশের গড়ের চেয়ে আয়বৃদ্ধি হয়েছিল সামান্য বেশি হারে ১.১ শতাংশ বেশির পরিবর্তে ১.৩ শতাংশ বেশি।
মহারাষ্ট্রের কথা ধরা যাক। ২০০০-এর দশকে আয়বৃদ্ধির অঙ্কে দেশে প্রথম স্থানে আছে রাজ্যটি। ১৯৯০-এর দশকে এই রাজ্যের আয়বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫ শতাংশ, এবং পরের দশকে তা হয়েছে ৬.৭ শতাংশ। জাতীয় গড়ের চেয়ে মহারাষ্ট্রের আয়বৃদ্ধির হারের ফারাক ০.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.১ শতাংশ। সবচেয়ে ভাল করেছে বিহার। ১৯৯০-এর দশকে সেখানে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের চেয়ে ২.৭ শতাংশ কম ছিল। ২০০০-এর দশকে তা জাতীয় আয়ের চেয়ে ১.৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। কাজেই, অর্থনীতির মোড় ঘোরানোর কৃতিত্ব যদি কারও প্রাপ্য হয়, তিনি নীতীশ কুমার, নরেন্দ্র মোদী নন।
মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে গুজরাতের দুর্দশা নিয়ে এত কথা ইতিমধ্যেই হয়েছে যে সেই প্রসঙ্গে আর যাচ্ছি না। মোদীভক্তরাও সেই পরিসংখ্যান জানেন এবং মানেন। এত দিন তাঁদের গলার জোরের মূল উৎস ছিল আর্থিক বৃদ্ধির হার। সেখানেও মোদীর বিশেষ কৃতিত্ব নেই, দেখাই যাচ্ছে।
একটা বহু পুরনো কথা আছে : অল্প দিনের জন্য অনেক লোককে বোকা বানানো যায়, অনেক দিনের জন্য অল্প লোককে বোকা বানানো যায়, কিন্তু অনেক দিন ধরে অনেক লোককে বোকা বানানো অসম্ভব। মোদী সেই চেষ্টাই করছিলেন। দেখা যাচ্ছে, অ্যাপকো ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিভিন্ন পেটোয়া কর্পোরেট হয়ে পোষা ব্লগার, সব অস্ত্র প্রয়োগ করেও দেশের মানুষকে টানা বোকা বানাতে পারলেন না তিনি।
---http://my.anandabazar.com/content/%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A6%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87#.UzQOqZGLCOc.twitter
By Amitava Gupta ..
সপ্তাহতিনেক আগের একটা লেখায় কথা দিয়েছিলাম, নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক সাফল্য যে আসলে বিজ্ঞাপনী প্রচার বই কিছু নয়, সেটা যুক্তি এবং তথ্য দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব। তার পর সবরমতী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। আমার এই ব্লগ যাঁরা পড়েন, অনুমান করছি তাঁদের অনেকেই আনন্দবাজার পত্রিকারও নিয়মিত পাঠক। কাজেই, অনেকের হয়তো চোখে পড়েছে, মোদী এবং ইউপিএ, উভয়ের অর্থনৈতিক ‘সাফল্য’ নিয়ে গত কিছু দিনে কয়েকটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদ মৈত্রীশ ঘটকের সঙ্গে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম। মৈত্রীশ এবং সঞ্চারী রায় আরও একটি লেখা লিখেছিলেন। দুটো লেখাই পরিসংখ্যান নিয়ে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, যোজনা কমিশন এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো সর্বজনমান্য প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে আমরা পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছিলাম। যে কেউই সেই পরিসংখ্যান জোগাড় করে বিশ্লেষণের কাজ করে দেখতে পারেন। কাজেই, আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় থাকলে নিজেরা হিসেব কষে দেখে নিতে পারেন।
এ বার, সেই বিশ্লেষণ থেকে কী পাওয়া গেল, সেটা জানাই। দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে ম্যাজিক দেখিয়েছেন বলে যে প্রচার চব্বিশ ঘণ্টা চলছে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। গুজরাত অর্থনৈতিক ভাবে দেশের অন্যতম অগ্রসর রাজ্য, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে মোদীর কৃতিত্ব অতি সামান্য। তিনি ক্ষমতায় আসার ঢের আগে থেকেই, সেই ১৯৮০-র দশক থেকে, গুজরাতে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। তিনি বড় জোর সেটুকু ধরে রাখতে পেরেছেন। তাঁর আমলে যে আলাদা করে কোনও উন্নতি হয়নি, পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট। ১৯৯০-এর দশকে গুজরাতের মাথা পিছু আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৮ শতাংশ, জাতীয় গড় ছিল ৩.৭ শতাংশ। একুশ শতকের প্রথম দশকে এই হারদুটি হয়েছে যথাক্রমে ৬.৯ শতাংশ ও ৫.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় তার পরের দশকে, অর্থাৎ গুজরাতে মোদীর শাসনকালে, গুজরাতে গোটা দেশের গড়ের চেয়ে আয়বৃদ্ধি হয়েছিল সামান্য বেশি হারে ১.১ শতাংশ বেশির পরিবর্তে ১.৩ শতাংশ বেশি।
মহারাষ্ট্রের কথা ধরা যাক। ২০০০-এর দশকে আয়বৃদ্ধির অঙ্কে দেশে প্রথম স্থানে আছে রাজ্যটি। ১৯৯০-এর দশকে এই রাজ্যের আয়বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫ শতাংশ, এবং পরের দশকে তা হয়েছে ৬.৭ শতাংশ। জাতীয় গড়ের চেয়ে মহারাষ্ট্রের আয়বৃদ্ধির হারের ফারাক ০.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.১ শতাংশ। সবচেয়ে ভাল করেছে বিহার। ১৯৯০-এর দশকে সেখানে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের চেয়ে ২.৭ শতাংশ কম ছিল। ২০০০-এর দশকে তা জাতীয় আয়ের চেয়ে ১.৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। কাজেই, অর্থনীতির মোড় ঘোরানোর কৃতিত্ব যদি কারও প্রাপ্য হয়, তিনি নীতীশ কুমার, নরেন্দ্র মোদী নন।
মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে গুজরাতের দুর্দশা নিয়ে এত কথা ইতিমধ্যেই হয়েছে যে সেই প্রসঙ্গে আর যাচ্ছি না। মোদীভক্তরাও সেই পরিসংখ্যান জানেন এবং মানেন। এত দিন তাঁদের গলার জোরের মূল উৎস ছিল আর্থিক বৃদ্ধির হার। সেখানেও মোদীর বিশেষ কৃতিত্ব নেই, দেখাই যাচ্ছে।
একটা বহু পুরনো কথা আছে : অল্প দিনের জন্য অনেক লোককে বোকা বানানো যায়, অনেক দিনের জন্য অল্প লোককে বোকা বানানো যায়, কিন্তু অনেক দিন ধরে অনেক লোককে বোকা বানানো অসম্ভব। মোদী সেই চেষ্টাই করছিলেন। দেখা যাচ্ছে, অ্যাপকো ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিভিন্ন পেটোয়া কর্পোরেট হয়ে পোষা ব্লগার, সব অস্ত্র প্রয়োগ করেও দেশের মানুষকে টানা বোকা বানাতে পারলেন না তিনি।
---http://my.anandabazar.com/content/%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A6%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87#.UzQOqZGLCOc.twitter
No comments:
Post a Comment