Friday, March 28, 2014

মানবাধিকার কমিশনে নেই চেয়ারপার্সন, নিরুত্তাপ রাজ্য

মানবাধিকার কমিশনে নেই চেয়ারপার্সন, নিরুত্তাপ রাজ্য
অশোক গঙ্গোপাধ্যায়কে বিদায় নিতে বাধ্য করার পর রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে কি একেবারে 'নিষ্ক্রিয়' করে ফেলারই পরিকল্পনা করছে সরকার? এমন প্রশ্ন এখন বিভিন্ন মহলেই৷ চেয়ারপার্সন হিসাবে অশোকবাবুর আমলে কমিশনের একের পর এক সুপারিশে তুমুল বিড়ম্বনায় পড়েছিল রাজ্য সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই কমিশনের চেয়ারপার্সন করে এনেছিল৷ কিন্ত্ত পদে পদেই তাঁর সঙ্গে বিরোধ হয়েছে সরকারের৷ অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্য চৌধুরী, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর থেকে কামদুনির ধর্ষণের মতো বিভিন্ন ঘটনায় কমিশনের পরের পর সুপারিশ কার্যকর না করে উপেক্ষা করে গিয়েছে রাজ্য৷ কমিশন প্রধান প্রকাশ্যেই সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ এর পরেই ইন্টার্নকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে অশোকবাবুর বিরুদ্ধে সরব হয় সরকার এবং শাসকদল৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী অশোকবাবুর অপসারণ চেয়ে চিঠি দেন রাষ্ট্রপতিকে৷ অশোকবাবু পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস৷ নতুন করে আর কাউকেই চেয়ারপার্সন পদে আনা হয়নি৷ উল্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুচ্ছ অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কমিশনের সদস্য করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি, শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে৷ যেখানে কমিশনের চেয়ারপার্সনের সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হওয়া প্রয়োজন, সেখানে বিতর্কিত প্রাক্তন ডিজিকেই কার্যনির্বাহী চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার৷ অন্য একটি সদস্যপদে আবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আইন বিভাগের মুখ্যসচিব মণিশঙ্কর দ্বিবেদীকে৷ ৮ এপ্রিলের আগে যাঁর ওই পদে যোগ দেওয়ার আশা নেই৷ অন্য আর একটি পদও শূন্য৷ এই অবস্থায় কমিশনে দায়ের অভিযোগের শুনানি লাটে উঠেছে৷ ইতিমধ্যে আবার কমিশনের দপ্তর আলিপুরের ভবানী ভবন-এর চেনা ঠিকানা থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেই সল্টলেকের পূর্তভবনে৷ অথচ, সেখানে পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি৷ অফিসার-কর্মীদের বসার জায়গা হলেও বসানো হয়নি কম্পিউটার-সহ অন্যান্য সরজ্ঞাম৷ ফলে যেটুকু অভিযোগ আসছে, তাও লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা নেই৷ কমিশনের এই স্থবিরতা নিয়ে হেলদোলও নেই সরকারের৷ নবান্ন সূত্রে খবর, সরকারের শীর্ষ-কর্তারা তাঁদের মন-পসন্দ কাউকে না পেলে চেয়ারপার্সন পদ খালি রাখারই পক্ষপাতী৷ বাম আমলে শাসকদলের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়া এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নাম আলোচনায় উঠলেও তা নাকচ করে দিয়েছেন বর্তমান সরকারের মাথারা৷ 
অবস্থা তথৈবচ মহিলা কমিশনেও৷ তৃণমূল সরকারে আসার পরেই এক প্রাক্তন বাম মন্ত্রীর স্ত্রী সুনন্দা মুখোপাধ্যায়কে কমিশনের চেয়ারপার্সন করা হয়েছিল৷ প্রথম দিকে কয়েকটি নারী-নিগ্রহের ঘটনায় কমিশন কিছু নির্দেশও দেয়৷ তবে কোনও ক্ষেত্রেই সরকার বিড়ম্বনায় পড়ে, এমন কোনও নির্দেশ বা সুপারিশ মহিলা কমিশন করেনি৷ গত বছর দেড়েকে মহিলা কমিশনও কার্যত নিধিরামে পর্যবসিত৷ কমিশনের এমনকী নিজস্ব কোনও ল-অফিসারও নেই৷ কর্মীরও তীব্র অভাব৷ সুনন্দাদেবী একান্তে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সরকারের অস্বস্তি বাড়ানোর মতো প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্যে নারাজ৷ বরং আগামী জুনে মেয়াদ শেষের পরেও চেয়ারপার্সন পদে থেকে যেতে তিনি আগ্রহী বলেই সরকারি সূত্রের খবর৷
http://eisamay.indiatimes.com/state/no-chairperson-in-human-rights-commission/articleshow/32830249.cms

No comments:

Post a Comment