Friday, March 28, 2014

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিয়াল্লিশ বছর পূর্ণ করল! ১৯৭১ এর সদ্যজাত আজ কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনের তারুণ্যে ভরপুর! এই তারুণ্যের ঝলক আমরা প্রত্যক্ষ করছি শাহবাগে!

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিয়াল্লিশ বছর পূর্ণ করল! ১৯৭১ এর সদ্যজাত আজ কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনের 

তারুণ্যে ভরপুর! এই তারুণ্যের ঝলক আমরা প্রত্যক্ষ করছি শাহবাগে! 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিয়াল্লিশ বছর পূর্ণ করল! ১৯৭১ এর সদ্যজাত আজ কৈশোর উত্তীর্ণ যৌবনের তারুণ্যে ভরপুর! এই তারুণ্যের ঝলক আমরা প্রত্যক্ষ করছি শাহবাগে! নতুন প্রজন্মের হাতে আন্দোলিত জাতীয় পতাকার উজ্জ্বলতায়! শাহবাগের তরুণ তরুণী মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজাকার মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের দাবিতে সোচ্চার! এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে তবে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্পূর্ণ হয়নি! কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তো এই বিষয়গুলিই মূল উদ্দেশ্য ছিল! ছিল, কিন্তু সবকটি লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি! শুধু তাই নয় সেদিনের পাকপন্থী বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি আজ অনেক বেশি সুসংগঠিত!
বিগত বিয়াল্লিশ বছরে ১৯৭১ এর রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী ইসলামের ছদ্মবেশ ধারণ করে সমাজ জীবনের অনেক গভীরে তাদের শিকড় বিস্তার করেছে! ধর্মভীরু ধর্মপ্রাণ মানুষদের ধর্মীয় আবেগকে মুলধন করে তারা মৌলবাদকে ইসলামের নামে ছড়াতে সক্ষম হয়েছে সফল ভাবে! তাদের সাথে যোগ দিয়েছে কট্টর ইসলামপন্থীরাও! যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নয়! যারা ইসলামী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে! বিশ্বের সমস্ত দেশের নানা জাতির নান ভাষার মুসলিমদের মনে করে স্বজন, কিন্তু অমুসলিম বাঙালিকে কিছুতেই স্বজাতি ভাবতে পারে না! ফলে বাংলাদেশের এই অংশের মধ্যে পাকপন্থী দলগুলির গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্টই! এই বাস্তবতাকে স্বীকার করতেই হবে! ৪২ বছর ধরেই এটা ঘটেছে!
মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের প্রধানতম সমস্যা জনবিস্ফোরন! ৩০ লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন দেশে এই সমস্যাটি যথাযথ ভাবে মোকাবিলা করা হয়নি! যার সরাসরি পরিণতি দারিদ্র্য আর অপুষ্টি এবং পর্যাপ্ত শিক্ষা বিস্তার না হওয়া! ঠিক এই পরিস্থিতিটাই কট্টরপন্থী ধর্মব্যবসায়ীদের পক্ষে অত্যন্ত শুভ! শুভ মৌলবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটানোর পক্ষে! সেই সুযোগটাকেই যথাযথ ভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে জামাত-ঈ-ইসলামী সহ অন্যান্য সহযোগী মৌলবাদী সংগঠনগুলি! এই সংগঠনগুলি মুলত গ্রামাঞ্চলে মফঃস্বলে তাদের সংগঠনের পক্ষে সফল ভাবে প্রচার কার্য সম্পন্ন করে দারিদ্র্যক্লিষ্ট যুবশক্তিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্টই সফল হয়েছে!
ফলত বিগত ৪২ বছরে পাকপন্থী ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি অনক সুসংহত! সুসংগঠিত! এদের মধ্যে জনসমর্থনের বীজ বুনেই জামাত-ঈ-ইসলাম আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপরিহার্য্য বাস্তব! তাদেরকে উপেক্ষা বা অস্বীকার করার আর কোনো উপায় নেই! এবং আরও বড় বাস্তব হল জামাতীরা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে গদীয়ান! ফলে জামাত আজ একটি প্রবল রাজনৈতিক শক্তি! বিশেষত প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সাথে তাদের সুদীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক আঁতাতে তাদের সম্বন্ধে জন সমর্থনের ঢেউটাও অকিঞ্চিতকর নয়! এবং বাংলাদেশ ঘোষিত ইসলামী রাষ্ট্র হওয়ায় এদের শক্তি ১৯৭১ থেকে আজ বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে!
যে লক্ষ্য যে উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশে আজও তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি! হয়নি তার কারণ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক! স্বাধীন দেশে ক্ষমতা দখলের যুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল ও মুজীব বিরোধীগোষ্ঠীই শেষ পর্যন্ত জিতে যাওয়ায় সেই লক্ষ্য থেকে দেশকে সুকৌশলে বের করে আনতে সক্ষম হয় জিয়া ও এরশাদের জামানার সামরিক শাসন! ছাত্রআন্দোলনে এরশাদের পতন হয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও সেই লক্ষ্য আজও অধরাই থেকে গিয়েছে! তার কারণ দুইটি! এক জিয়ার তৈরী ও তার স্ত্রী খালেদার নেতৃত্বাধীন বিএনপি স্বভাবতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী অবস্থানেই থাকবে! এবং যোগ্যতম নেতৃত্বের অভাবে আওয়ামী লীগের বহু দূর্বলতা!
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সামরিক শাসনের আমলে ব্যাপক ভাবে বিকৃতি ঘটিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে ভূষিত হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় কেষ্টবিষ্টু হয়ে গিয়েছে দেশবাসীর চোখের সামনে! লাগামছাড়া দূর্নীতির সুযোগ নিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে বুদ্ধিমান সুযোগসন্ধানীরা! রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে কাজে লাগিয়ে ধনী আরও ধনী হয়েছে! গরীব পৌঁছেচে দারিদ্র্য সীমার নীচে! ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ধনের ভারসাম্য রক্ষার কোনো বন্দোবস্তই নেওয়া হয়নি! ফলে দেশীয় সম্পদের উপর ভোগ দখল কায়েম করেছে মুষ্টিমেয় কয়জন! বাকিরা বুর্জোয়া সমাজের উচ্ছিষ্ট হয়ে যে যেভাবে পারে দিন যাপন করছে!
বিয়াল্লিশ বছরের এই ইতিহাসের বিশেষ কোনো বদল হয়নি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরেও! বরং স্বজনপোষণ ও দূর্নীতির কালোহাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে! এই পরিস্থিতিতে একদল ধর্মের আফিমে বুঁদ হয়ে নিজেকে ভোলাতে চেয়েছে! আর একদল ক্ষোভের আগুনে কলজে পুড়িয়েও বিক্ষোভের আঁচকে অন্তরালে বয়ে বেড়িয়েছে! জাতীয়তাবোধও বিভক্ত হয়ে গিয়েছে! একদল নিজেদের বাঙালি মনে করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেছে! অপরদল ইসলামী জাতীয়তাবাদের সরিক হতে চেয়েছে তাদের জাতিগত ভাষাগত সংস্কৃতিগত বাঙালি ঐতিহ্য বিস্মৃত হয়ে! এরসাথে আরও একটা ঘটনা ঘঠেছে, সেটা হল দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে গোটা দেশ! এইবিভক্তি প্রকটভাবে হিংসার জন্ম দিয়েছে!
এরই প্রেক্ষিতে এবারের স্বধীনতা দিবসের বিশেষ বৈশিষ্ট হল শাহবাগে নতুন প্রজন্মের গণজাগরণ আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতি! বস্তুত এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশ এখন স্পষ্টতই প্রধানত দুভাগ! এক দিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারি নতুন প্রজন্ম! যাদের নেতৃত্বে আধুনিক শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রনী মুক্তচিন্তার প্রবক্তা নতুন প্রজন্মের উজ্জ্বল যুবশক্তি!
অন্যদিকে নিজেদের ইসলামী ঐতিহ্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত ধর্মভীরু জনসাধারণ যাদের নেতৃত্বে বিএনপি ও জামাতের আঁতাত! এই বিভাজনটা আন্দোলনের শুরুতে ততটা ছিল না, যতটা হল, এক রাজীব হায়দার হত্যার পর মিথ্যা অপপ্রচার ও, দুই সুকৌশলে আওয়ামী লীগের শাহবাগ আন্দোলনের সামনে চলে আসায়!
শাহবাগের অরাজনৈতিক মঞ্চের গণজাগরণ আন্দোলনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে (রাজীব হত্যার মধ্যে দিয়ে) আন্দোলনকে নাস্তিকদের ইসলামের প্রতি ষড়যন্ত্র প্রচার করতে জামাতপন্থীরা অনেকটাই সফল! ফলে ধর্মভীরু মুসলীমদের একটা বড় অংশই এই আন্দোলনের বিপ্রতীপে অবস্থান রত! এবং একে ইসলাম বিরোধী আন্দোলন বলে মনে করতে ব্যস্ত!
অন্যদিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে শাহবাগ আন্দোলনকে অত্যন্ত সুকৌশলে ব্যবহার করায়, আওয়ামী লীগ বিরোধী জনগণ স্বভাবতই একে আওয়ামী লীগের দলীয় দূর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে পরবর্তী নির্বাচনে জয়ের প্রকৌশল বলে মনে করছেন! এই দুই কারণে শাহবাগের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দ্বিধা বিভক্ত আজকের বাংলাদেশ!
১৯৭১এ ৩০ লক্ষ্য অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিয়াল্লিশ বছর অতিক্রম করে আজ দ্বিধা বিভক্ত! সেদিনের যুদ্ধোপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে আজ দেশবাসীর একাংশ সহিংস তাণ্ডব করছে প্রকাশ্যে! প্রধান বিরোধীদল রাজনৈতিক মদত দিচ্ছে তাতেই! ইসলাম বিপন্ন এই অপপ্রচারে স্বাধীনতার উদ্দেশ্যকেই খর্ব করতে উদ্যোত ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি! এ কোন বাংলাদেশ! শাহবাগের চত্বরে তো সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর আর এক বাংলাদেশ! ৪২ বছরের এড়িয়ে যাওয়া সংগ্রাম স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছে নতুন প্রজন্মের তরুণ তুর্কিরা! বাংলাকে রাজাকার মুক্ত করতে সমবেত হচ্ছে লাখে লাখে! কন্ঠে তুলে নিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের গান! দিয়েছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ডাক! রাজাকার মুক্ত মৌলবাদ নিশ্চিহ্ন ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার ডাক! আজ বাংলাদেশের ৪৩ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রসঙ্গিকতা তাই ইতিহাসের সন্ধিক্ষণের বিশিষ্টতা অর্জন করেছে! এখন দেখার কোন পথে যায় বাংলাদেশ! ইসলামের অজুহাতে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত ধর্মভীরু মানুষ কি করবেন সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন! তাঁরা কি পাকপন্থী রাজাকারদের হাতে বিকিয়ে দেবেন তাঁদের এত অমূল্য স্বাধীনতা, বাংলাদেশকে মধ্যযুগীয় ইসলামিক শাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলিত করতে? না কি তারাও শাহবাগের পাশে দাঁড়িয়ে নেবেন ২য় মুক্তিযুদ্ধের শপথ? দ্বিধ্বা বিভক্ত বাংলাদেশ কি পারবে ঐক্য ধরে রাখতে? বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জন কঠিনকাজ! কিন্তু তার থেকেও বড়ো কঠিন দেশের অভ্যন্তরে বাসাবাঁধা ঘরশত্রু বিভীষনদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা!
প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই হয়ে যায়! আজও সেই স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা যায়নি! শাহবাগে এই প্রজন্মের এই আন্দোলন দেশবাসীকে সেই স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখাচ্ছে! রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন থেকে, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা থেকে, কট্টর মৌলবাদ থেকে, যুদ্ধোপরাধীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে ৭১ এর চেতনায় আবার বাংলাদেশকে তার গর্বের স্বাধীনতায় পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন! ইতিহাসের দোরগোড়ায় আবার মার্চের ২৬!
- See more at: http://attarsanniddhe.blogspot.in/2013/03/blog-post_24.html#sthash.yz5XIuKa.vJjIrJAD.dpuf

No comments:

Post a Comment