প্রাথমিকে ‘অনুমোদনহীন’ শিক্ষকদের বেতন বন্ধের নির্দেশে সূচনা নয়া জটের
স্নেহাশিস নিয়োগী
ভোটের মুখে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়ে ফের অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার৷ এ বার সেই অস্বস্তির মূলে আবার সরকারেরই এক আধিকারিক৷ স্কুলশিক্ষা কমিশনার স্বয়ং চিঠি দিয়ে রাজ্যের সব বিদ্যালয় পরিদর্শককে (প্রাথমিক) নির্দেশ (মেমো নং ৪০৬-এসসি/পি-৫পি-২পি-১৩) দিয়েছেন, অনুমোদিত প্যানেলের অতিরিক্ত কোনও শিক্ষকের জন্য যেন বেতনের রিক্যুইজিশন না পাঠানো হয়৷ অন্যথায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে৷ ফলে 'অনুমোদনহীন' ওই শিক্ষকদের বেতন পাওয়া এখন ঘোর অনিশ্চিত৷ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এই অবস্থাতেও দায় এড়িয়ে বলছেন, 'আমার কিছু জানা নেই৷'
অভিযোগ উঠেছে, ২০১৪-এর জানুয়ারি মাসে ১৯টি জেলায় প্রাথমিকে নিয়োগপত্র পাওয়া শিক্ষকদের বড় অংশের প্যানেলই নাকি 'অনুমোদনহীন'৷ অর্থাত্ তাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন৷ ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে প্রবল টানাপোড়েন৷ এখন প্রশ্ন, 'অনুমোদনহীন' নিয়োগ হল কী ভাবে? এও কি আর এক কেলেঙ্কারি?
পূর্ব মেদিনীপুরের ডিপিএসসি চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল শিক্ষাসেলের নেতা গোপাল সাহু এর জন্য উল্টে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন৷ তাঁর কথায়, 'ভোটের আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন আটকে দিয়ে স্কুলশিক্ষা কমিশনার রাজ্য সরকারকেই হেয় করতে চাইছেন৷ শিক্ষকদের পরিবর্তে ওই আধিকারিকদের বেতনই বরং আটকে দেওয়া হোক৷' ডিআই এবং ডিপিএসসি চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো স্কুলশিক্ষা কমিশনারের নির্দেশিকায় কিন্ত্ত স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাজ্যে ২০১২ সালে শূন্যপদের ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যোগ্য প্রার্থীদের মেধা-তালিকা তৈরি করে৷ কিন্ত্ত তালিকাভুক্ত সবাইকে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়নি৷ পর্ষদের সুপারিশক্রমে ২০১৪-র জানুয়ারির মেধা-তালিকা অনুমোদনের সময় বেশ কিছু প্রার্থীকে 'উইথহেল্ড, পেনডিং এবং আনঅ্যাবজরবড' বলে উল্লেখ করাও হয়েছিল৷ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বা অনুমোদিত প্যানেলের কোথাও নাম না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হল, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷
যদিও গোপালবাবুর দাবি, গোটা রাজ্যে নয়৷ পাঁচ-ছটি জেলায় এই ধরনের সমস্যা হয়েছে৷ তিনি বলেন, 'আমার জেলায় ১৫০ জনকে 'আনঅ্যাবজরবড' বলে উল্লেখ করে প্যানেল অনুমোদন করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের একটা বড় অংশ স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে নিয়োগের সুযোগ পেয়ে প্রাথমিকের চাকরি ছেড়েছেন৷ অবসরজনিত কারণেও জেলায় ৫০টি পদ শূন্য হয়েছে৷ পাশাপাশি কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর জেরেও শতাধিক পদ খালি৷ তাই সব মিলিয়েই ওই সব পদে টেট উত্তীর্ণ হওয়া 'উইথহেল্ড, পেনডিং এবং আনঅ্যাবজরবড' প্রার্থীদেরও প্রাথমিকে নিয়োগ করা হয়েছে৷' পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ আরও কয়েকটি জেলাতেও একই পন্থা নেওয়া হয়েছে৷ কিন্ত্ত এই 'পন্থা' অবলম্বন কার নির্দেশে--তার সদুত্তর মেলেনি৷
অন্য এক ডিপিএসসি চেয়ারম্যানের অবশ্য দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাঁদের কাছে মেধা-তালিকার কপি ফরওয়ার্ড করেছিল৷ তাতে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের অধীন শিক্ষা কমিশনারের 'অনুমোদনহীন' ও 'আনঅ্যাবজরবড' প্রার্থী সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা ছিল না৷ এ দিকে, প্রার্থীরা ওয়েবসাইটের মেধা-তালিকায় তাঁদের নাম দেখে কাউন্সেলিংয়ের সময় হাজির হয়ে নিজেদের নির্বাচিত ও চাকরির যোগ্য দাবি করে নিয়োগপত্র দিতে বাধ্য করেন৷ এই 'ব্যাখ্যা'ও অবশ্য খুব সন্তোষজনক ঠেকছে না শিক্ষামহলের একাংশের কাছে৷ তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলের লোকজনকে অনুগ্রহ বিলোতেই 'অনুমোদনহীন' প্যানেল থেকেও ঢালাও নিয়োগ হয়েছে৷ যা এই আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও এক কেলেঙ্কারিকেই সামনে আনছে৷
মানিকবাবুর ব্যাখ্যা, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে বলেই স্কুলশিক্ষা কমিশনার বিষয়টি স্থগিত রেখেছেন৷ তাঁর আশ্বাস, 'ভোটের পরেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ জটিলতার কিছু নেই৷' কিন্ত্ত স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের মতে, বিষয়টি সহজে মেটার নয়৷ এই নিয়ে নতুন করে আইনি লড়াইও শুরু হতে চলেছে৷
http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/salary-problem-of-primary-teachers/articleshow/32799135.cms?
স্নেহাশিস নিয়োগী
ভোটের মুখে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়ে ফের অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার৷ এ বার সেই অস্বস্তির মূলে আবার সরকারেরই এক আধিকারিক৷ স্কুলশিক্ষা কমিশনার স্বয়ং চিঠি দিয়ে রাজ্যের সব বিদ্যালয় পরিদর্শককে (প্রাথমিক) নির্দেশ (মেমো নং ৪০৬-এসসি/পি-৫পি-২পি-১৩) দিয়েছেন, অনুমোদিত প্যানেলের অতিরিক্ত কোনও শিক্ষকের জন্য যেন বেতনের রিক্যুইজিশন না পাঠানো হয়৷ অন্যথায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে৷ ফলে 'অনুমোদনহীন' ওই শিক্ষকদের বেতন পাওয়া এখন ঘোর অনিশ্চিত৷ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এই অবস্থাতেও দায় এড়িয়ে বলছেন, 'আমার কিছু জানা নেই৷'
অভিযোগ উঠেছে, ২০১৪-এর জানুয়ারি মাসে ১৯টি জেলায় প্রাথমিকে নিয়োগপত্র পাওয়া শিক্ষকদের বড় অংশের প্যানেলই নাকি 'অনুমোদনহীন'৷ অর্থাত্ তাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন৷ ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে প্রবল টানাপোড়েন৷ এখন প্রশ্ন, 'অনুমোদনহীন' নিয়োগ হল কী ভাবে? এও কি আর এক কেলেঙ্কারি?
পূর্ব মেদিনীপুরের ডিপিএসসি চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল শিক্ষাসেলের নেতা গোপাল সাহু এর জন্য উল্টে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন৷ তাঁর কথায়, 'ভোটের আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন আটকে দিয়ে স্কুলশিক্ষা কমিশনার রাজ্য সরকারকেই হেয় করতে চাইছেন৷ শিক্ষকদের পরিবর্তে ওই আধিকারিকদের বেতনই বরং আটকে দেওয়া হোক৷' ডিআই এবং ডিপিএসসি চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো স্কুলশিক্ষা কমিশনারের নির্দেশিকায় কিন্ত্ত স্পষ্ট বলা হয়েছে, রাজ্যে ২০১২ সালে শূন্যপদের ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যোগ্য প্রার্থীদের মেধা-তালিকা তৈরি করে৷ কিন্ত্ত তালিকাভুক্ত সবাইকে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়নি৷ পর্ষদের সুপারিশক্রমে ২০১৪-র জানুয়ারির মেধা-তালিকা অনুমোদনের সময় বেশ কিছু প্রার্থীকে 'উইথহেল্ড, পেনডিং এবং আনঅ্যাবজরবড' বলে উল্লেখ করাও হয়েছিল৷ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বা অনুমোদিত প্যানেলের কোথাও নাম না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হল, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷
যদিও গোপালবাবুর দাবি, গোটা রাজ্যে নয়৷ পাঁচ-ছটি জেলায় এই ধরনের সমস্যা হয়েছে৷ তিনি বলেন, 'আমার জেলায় ১৫০ জনকে 'আনঅ্যাবজরবড' বলে উল্লেখ করে প্যানেল অনুমোদন করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের একটা বড় অংশ স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে নিয়োগের সুযোগ পেয়ে প্রাথমিকের চাকরি ছেড়েছেন৷ অবসরজনিত কারণেও জেলায় ৫০টি পদ শূন্য হয়েছে৷ পাশাপাশি কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর জেরেও শতাধিক পদ খালি৷ তাই সব মিলিয়েই ওই সব পদে টেট উত্তীর্ণ হওয়া 'উইথহেল্ড, পেনডিং এবং আনঅ্যাবজরবড' প্রার্থীদেরও প্রাথমিকে নিয়োগ করা হয়েছে৷' পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ আরও কয়েকটি জেলাতেও একই পন্থা নেওয়া হয়েছে৷ কিন্ত্ত এই 'পন্থা' অবলম্বন কার নির্দেশে--তার সদুত্তর মেলেনি৷
অন্য এক ডিপিএসসি চেয়ারম্যানের অবশ্য দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাঁদের কাছে মেধা-তালিকার কপি ফরওয়ার্ড করেছিল৷ তাতে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের অধীন শিক্ষা কমিশনারের 'অনুমোদনহীন' ও 'আনঅ্যাবজরবড' প্রার্থী সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা ছিল না৷ এ দিকে, প্রার্থীরা ওয়েবসাইটের মেধা-তালিকায় তাঁদের নাম দেখে কাউন্সেলিংয়ের সময় হাজির হয়ে নিজেদের নির্বাচিত ও চাকরির যোগ্য দাবি করে নিয়োগপত্র দিতে বাধ্য করেন৷ এই 'ব্যাখ্যা'ও অবশ্য খুব সন্তোষজনক ঠেকছে না শিক্ষামহলের একাংশের কাছে৷ তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলের লোকজনকে অনুগ্রহ বিলোতেই 'অনুমোদনহীন' প্যানেল থেকেও ঢালাও নিয়োগ হয়েছে৷ যা এই আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও এক কেলেঙ্কারিকেই সামনে আনছে৷
মানিকবাবুর ব্যাখ্যা, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে বলেই স্কুলশিক্ষা কমিশনার বিষয়টি স্থগিত রেখেছেন৷ তাঁর আশ্বাস, 'ভোটের পরেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ জটিলতার কিছু নেই৷' কিন্ত্ত স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের মতে, বিষয়টি সহজে মেটার নয়৷ এই নিয়ে নতুন করে আইনি লড়াইও শুরু হতে চলেছে৷
http://eisamay.indiatimes.com/city/kolkata/salary-problem-of-primary-teachers/articleshow/32799135.cms?
No comments:
Post a Comment