ঊরুতে ‘আইসপ্যাক’- নেইমারের জন্য প্রার্থনা ব্রাজিলজুড়ে
বিশ্বকাপের মাঠ থেকে
মজিবর রহমান, ব্রাজিল থেকে ॥ মহাদেশীয় বিপক্ষ কলম্বিয়ার নক-আউটের ম্যাচটা শুরু হতে আরও আড়াই দিন বাকি। এই সময়টায় বেসক্যাম্প তেরেসপোলিসে দলটাকে আরও ঝালাই করে নিচ্ছেন সোলারি। নেইমার দ্য সিলভারা হারতে হারতে বেঁচে গেছে চিলি বিরুদ্ধে। আপদ-বালাই এ ম্যাচে দূর হয়ে গেছে বলেই মনে করছেন অস্কার, সিজার, ফ্রেডরা। সত্যিকারের হিসাবটা হচ্ছে আমেরিকার বিপক্ষ কোন দলই ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে হারাতে পারবে না। থিয়াগোদের বিপদের কারণ হতে পারে কেবল ইউরোপীয়রা। কলম্বিয়া হয়ত ডেভিড লুইসদের ঘাম ঝরাবে। কিন্তু ম্যাচ কেড়ে নিতে পারবে না। ব্রাজিল জিতবেই যে করেই হোক-ভাগ্যের বদৌলতে হলেও। যদিও গতকাল ব্রাজিল কোচ লুইস ফিলিপ সোলারিকে বলতে শোনা গেল, ফাইনাল হয়ে যাওয়া ম্যাচগুলোর আগাম ভবিষ্যত গণনা ঠিক নাও হতে পারে। এক একটা ম্যাচ ধরে আমরা এগোচ্ছি। সবই ফাইনালের মেজাজে। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধেও খেলতে হবে আরেকটি ফাইনাল। আসল ফাইনালের আগে কোয়ার্টার ও সেমির লড়াইয়ে জয় ছাড়া বিকল্প নেই আর জয়ের জন্যই তৈরি ব্রাজিল। প্রি-কোয়ার্টারে চিলির বিরুদ্ধে সেন্টার সার্কেল থেকে নেইমার যখন পেনাল্টি স্পটে বল বসানোর জন্য হেঁটে যাচ্ছিলেন, তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছিল মোটামুটি ৪৮ গজ। কিন্তু এ প্রসঙ্গে ব্রাজিলের মহাতারকা বললেন, দূরত্বটা তখনকার মতো তাঁর কাছে মনে হয়েছিল দশ কিলোমিটার। এতটাই কম্পিত ও উদ্বিগ্ন ছিলেন। বাস্তবতা বলছে টিম ব্রাজিলের এখন একই অবস্থা। শঙ্কা-উৎকণ্ঠা সবার মধ্যে। যদিও কলম্বিয়ার বিপক্ষে এতটা বেগ পেতে হবে না বলে জানিয়ে দিলেন নেইমার, ব্রাজিলের ম্যাচে যার দিকে তাকিয়ে থাকে গোটাবিশ্ব। নন্দিত-বন্দিত, যাই বলা হোক কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে নেইমারকেই খেলতে হবে। ব্যাপারটা নিজেও উপলব্ধি করছেন ‘এন জে টেন।’ তবে ঊরুর চোট নিয়ে কতটা ঝলক দেখাতে পারবেন ব্রাজিল তারকা, শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। চিলির বিরুদ্ধে ১২০ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের গোটা সময়টা বিপক্ষ পাহারায় বোতলবন্দী হয়ে পড়েছিলেন নেইমার। মুহূর্তের জন্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কলম্বিয়ানরা একই কৌশল বেছে নিতে পারে, আশঙ্কা ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ী কোচ সোলারির। ফলে হামানদিস্তায় তেরেসপোলিসের গাছ-গাছালির রসের দাওয়াইটাও গুলিয়ে রাখছেন। এ ম্যাচে ‘ট্যাকনিক-ট্যাকটিসে’ ব্যাপক পরিবর্তন আনার মহাপরিকল্পনা। এ প্রসঙ্গে সোলারি বললেন, কৌশলই পারে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। এ ধরনের ম্যাচে স্বাভাবিক ছন্দের খেলা অচল- প্রতিপক্ষ যেই হোক। ১৯৬৬ আর ২০১৪, এর মধ্যে তফাত তেমন নেই। অবিকল একই ছবি। সেবার পেলেকে আটকে, মেরে মেরে বিশ্বকাপের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল বিপক্ষ উরুগুয়াইন ঘাতক ডিফেন্ডারা। এবার যেন নেইমারের জন্য একই ভাগ্যলিপি তৈরির তোড়জোড় চলছে। মেসির সঙ্গে নেইমারের পার্থক্য হলো, যেহেতু নিচে নেমে ডিফেন্স করেন। অনেকটা বেশি জায়গাজুড়ে দৌড়ান। ফলে তাঁকে মারার সুযোগ আসে বেশি। অবাকই লাগছে তার চেহারা যদি হাল্ক, রোনাল্ডোর মতোও হতো, মারটা সহ্য হতো। বিশ্বকাপের জন্য দশ কেজি ওজন বাড়ানো আর পেশী উন্নত করলেও ফুটবলীয় মাপে তাঁকে ‘হ্যাংলাই’ বলবে মানুষ। ম্যাচের বয়স মাত্র ছয় মিনিট, তখনই চিলিয়ানরা তাঁকে যে মারাত্মক ফাউল করে সেটা দেখেই লুইস ফিলিপ সোলারি আতঙ্কিত হয়েছিলেন। অনুশীলন পরবর্তী দুপুরে তেরেসপোলিসের ক্যাম্প স্বীকার করলেন। তিনি পর্তুগালের কোচ থাকার সময় ডাচ্ ডিফেন্ডাররা এমনই মেরেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। ফলে কিছুক্ষণ থাকার পরই মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন রোনাল্ডো। সোলারির কথায়, আমি নেইমারকে তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, পারবে? ও বলেছিল ঠিকই পারব। অতুলনীয় সাহস ছেলেটার। রসিকতা করতে গিয়ে হাস্যোজ্জ্বল সোলারি বললেন, বয়স বাইশ। কিন্তু মাথাটা পঁয়ত্রিশের ওপরে। নেইমারের বন্দনায় এভাবেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন ব্রাজিল কোচ সোলারি। এ ধরনের ব্যথা নিয়ে নেইমার পেনাল্টি মারতে অস্বীকার করলেও কিছু বলার ছিল না। ডানপায়ের ঊরুতে প্রচণ্ড ব্যথা। ‘আইসপ্যাক’ তখনও লাগানো যখন অন্যরা অনুশীলনে। নেইমার সে পর্বে মাঠের বাইরের দর্শক। তবে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে সোলারির একাদশে থাকছেন। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি সময়মতো ঠিকই সেরে উঠব। ব্রাজিলের জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিতেও কার্পণ্য করব না। মাঠের পাশে বসে বলছিলেন নেইমার উপস্থিত নিজ দেশের সাংবাদিকদের। চোট পাওয়া ডান পায়ের তো তখন ফ্লেক্সিবিলিটি থাকার কথা নয় পেনাল্টির মতো সূক্ষ্ম বল প্লেসিংয়ের কাজে। তার ওপর চাপের মুহূর্তে। চিলির এক নম্বর তারকা সানচেজও পর্যন্ত পারলেন না- মিস। কিন্তু নেইমারকে দেখা গেল মানসিকভাবে অন্য ধাতুর। সীমাহীন চাপও নিজের ভেতরকার প্রেসার কুকারে ঠিক সেদ্ধ করে নিতে পারেন আর এ প্রসঙ্গেই সোলারি বলছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিল সান্তোসে শট নিচ্ছে বা বন্ধুর বাড়ির বাগানে। অবশ্য নেইমারও বলছিলেন, আসলেই নার্ভাস লাগছিল। কিন্তু সেটা কন্ট্রোল করতে না পারলে বিপদ। একদিকে ব্যথা অন্যদিকে টেনশন। দু’টোকে মুহূর্তের মধ্যে ঝেড়ে-সাহস করেই মারলাম। এরপর মনে হচ্ছিল ফুটবল জীবনের কঠিনতম দিন কাটিয়ে উঠলাম। তার অভিনেত্রী বান্ধবী আর দু’বোন খেলা দেখছিলেন মাঠে। টাইব্রেকারে নেইমার যখন শট মারছেন, বান্ধবী চোখ বন্ধ করে কেমন প্রার্থনায় ছিলেন সেদিকার ব্রাজিলের সব পত্রিকায় তার ছবি। এবার গোটা ব্রাজিল জাতির প্রার্থনার সময়। নেইমার যেন শুক্রবারের ম্যাচে খেলতে পারেন। মৃত্যুর মুখ থেকে জীবনের প্রত্যাবর্তন- এভাবে চিলি ম্যাচ ব্যাখ্যা করছে ব্রাজিলীয় মিডিয়া। পাশাপাশি কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে নেইমারের জন্য প্রার্থনার আহ্বানও জানানো হচ্ছে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment