Tuesday, July 29, 2014

তৃণমূলি বোমায় জখম সেই পুলিসকর্মী মারাই গেলেন

তৃণমূলি বোমায় জখম সেই পুলিসকর্মী মারাই গেলেন

Aajkaal: the leading bengali daily newspaper from Kolkata


অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়: দুবরাজপুর, ২৮ জুলাই– এক মাস পঁচিশ দিনের লড়াই শেষ৷‌ মৃত্যুর কাছে অবশেষে হার মানলেন বোমার আঘাতে গুরুতর জখম বীরভূমের দুবরাজপুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী৷‌ তৃণমূলিদের ছোঁড়া বোমাতেই তিনি জখম হয়েছিলেন বলে অভিযোগ৷‌ মূল অভিযুক্ত আলিম শেখ পলাতক৷‌ জেলা সি পি এম নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উসকানিমূলক বত্তৃ্কতার জেরেই বোমা মারা হয়েছে৷‌ ৩ জুন থেকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন ওই তরুণ পুলিস অফিসার৷‌ সোমবার সকালে ওই হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়৷‌ সহকর্মীর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে বীরভূমের পুলিসমহলে৷‌ জেলার পুলিসকর্মীরা রীতিমতো চাঁদা দিয়ে সহকর্মীর ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছিলেন৷‌ তাঁদের তরুণ সহকর্মীকে বাঁচানোর সব চেষ্টা এদিন ব্যর্থ হওয়ায় জেলা পুলিসের বহু অফিসার ও সাধারণ পুলিসকর্মী এদিন কান্নায় ভেঙে পড়েন৷‌ ময়নাতদম্তের পর এদিন বিকেলে দুবরাজপুরের মানুষের প্রিয় ‘টাউনবাবু’র দেহ দুবরাজপুর থানায় এসে যখন পৌঁছল, সেখানে তখন বাঁধভাঙা জনজোয়ার৷‌ প্রিয় পুলিস অফিসারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন হাজার হাজার স্হানীয় মানুষ৷‌ এর পর সন্ধেয় সিউড়ি পুলিস লাইনে দেহ আনা হয়৷‌ সেখানে গান স্যালুট দিয়ে মৃত সহকর্মীকে শ্রদ্ধা জানায় বীরভূম জেলা পুলিস৷‌

কী হয়েছিল ৩ জুন? ওই দিন সন্ধেয় দুবরাজপুর থানার আউলিয়া-গোপালপুর গ্রামে সি পি এম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে পুলিসবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্হলে যান দুবরাজপুর থানার এস আই অমিত চক্রবর্তী৷‌ শ’দুয়েক মারমুখী হামলাকারী তখন স্হানীয় সি পি এম নেতা মকতুল হোসেনের বাড়ির দরজা ভাঙছিল বলে অভিযোগ৷‌ অমিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিসবাহিনী এগিয়ে যেতেই হামলাকারীরা পুলিসের ওপর বোমা মারতে শুরু করে৷‌ একটি বোমার জোরালো স‍্প্লিনটার ঢুকে যায় অমিতের পেটে৷‌ বীভৎসভাবে ঘটনাস্হলেই অমিতের পেটের নাড়িভুঁড়ি বাইরে বেরিয়ে আসে৷‌ সেদিন রাতেই তাঁকে দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷‌ প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাঁর জেলার সহকর্মীরা দলে দলে দুর্গাপুরে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসেন৷‌ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরে কোমায় চলে গিয়েছিলেন অমিত৷‌

কারা বোমা মেরেছিল? আউলিয়া-গোপালপুরের আক্রাম্ত গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক৷‌ তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত স্হানীয় দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আলিম শেখের নেতৃত্বেই সেদিন হামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ৷‌ একশো দিনের কাজ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই ওই গ্রামে সি পি এম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অশাম্তি চলছিল৷‌ অভিযোগ, ৩ জুন সন্ধেয় সি পি এমের দুবরাজপুর জোনাল কমিটির নেতা মকতুল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায় স্হানীয় তৃণমূল নেতা আলিম শেখের নেতৃত্বে দুশো-আড়াইশো জনের একটি দল৷‌ জেলা সি পি এম সম্পাদক দিলীপ গাঙ্গুলির অভিযোগ, তাঁরা এস পি-কে জানালে প্রথমে মাত্র ৬ জন পুলিসকর্মীকে ঘটনাস্হলে পাঠানো হয়৷‌ হামলাকারীরা পুলিসকে হটিয়ে দেয়৷‌ এর পর দুবরাজপুর থানার এস আই অমিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বড় পুলিসবাহিনী পাঠানো হয়৷‌ পুলিসকে বোমা মারার এই ঘটনায় পুলিসের পক্ষ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়৷‌ অভিযুক্তদের তালিকায় তৃণমূল নেতা আলিম শেখের নাম যেমন আছে, তেমনই আছে সি পি এম নেতা মকতুল হোসেনের নামও৷‌ আলিম পলাতক৷‌ পুলিস মকতুল-সহ ১২ জনকে এখনও পর্যম্ত গ্রেপ্তার করেছে৷‌ সি পি এম জেলা সম্পাদকের অভিযোগ, আক্রাম্তদেরই পুলিস গ্রেপ্তার করেছে, আর আলিম শেখ-সহ হামলাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে৷‌ তাদের হামলায় গ্রামের সি পি এম কর্মী-সমর্থকরা গ্রামছাড়া৷‌ ১১ জুলাই সন্ত্রস্ত এই গ্রামে আসে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের রাজ্য নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল৷‌ পুলিস অফিসার অমিত চক্রবর্তীকে বোমা মারা প্রসঙ্গে বিমানবাবু সেদিন নাম না করে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতি ইঙ্গিত করেন৷‌ অভিযোগ করেন, তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, পুলিসের ওপর বোমা মারো৷‌ তাই দুবরাজপুরে পুলিস অফিসারকে বোমা মারা হয়েছে৷‌ প্রসঙ্গত, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে, ১৭ জুলাই বোলপুরের কসবা বাস স্ট্যান্ডে এক প্রচারসভায় জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা এবং নির্দলদের সমর্থনে পুলিস এলে তাঁদের বোমা মারার ‘নিদান’ দেন দলের কর্মীদের৷‌

No comments:

Post a Comment