আনন্দ-উৎসবে ঈদ উদযাপন
ঢাকা, ২৮ জুলাই:
প্রকাশ : ২৯ জুলাই, ২০১৪
আনন্দ উৎসবে পালিত হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। আনন্দের বন্যায় ভাসলো সারা দেশ। মঙ্গলবার ঈদের জামাত শেষে চলে কোলাকুলি আর সৌহার্দ্য বিনিময়। রাজধানীর প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায়। এখানে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনসহ মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ এবং বিদেশি কূটনীতিকরা নামাজ আদায় করেন।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। এই আনন্দের আমেজ মূলত রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ছড়াতে থাকে। আর এর পূর্ণতা আসে ঈদ উদযাপনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের মত সারা বিশ্বের মুসলমানরা মেতে উঠে ঈদের আনন্দে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশ ও মুসলিম উম্মার মঙ্গল কামনা করেছেন। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়িত্বশাসিত ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ভবনে কাল জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। দেশের প্রতিটি দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে এবং টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
ঈদের দিন গণভবনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাজনীতিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে এবং বেলা সাড়ে ১১টায় কূটনীতিক ও বিচারপতিদের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে ঈদের শুভেচ্ছাবিনিময় করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদের দিন বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন।
রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। এছাড়া, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পর পর মোট ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় মহানগরীর ৯০টি ওয়ার্ডে মোট ৩৬৬টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রেখেছে। সাদা পোশাকে র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন।
ঈদ মুসলিম বিশ্বের জন্য এক আনন্দঘন উৎসব। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করে শিশু বৃদ্ধ সবাই শামিল হয় ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করেন একে অপরের সঙ্গে। দোয়া ও মোনাজাত করেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনার অঙ্গীকারে।
ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার। রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দিদের জন্য জেলখানায় থাকে বিশেষ খাবারের আয়োজন। সরকারি শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র এবং দুঃস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে থাকে উন্নতমানের খাবার এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগারেও পরিবেশন করা হয় উন্নতমানের খাবার।
দেশবাসীকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বলেন, ‘ মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর খুশি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে সমাগত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন। এ দিন ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দ ভাগভাগি করে নেন। তাই শান্তিপূর্ণ ও সৌহাদ্যপূর্ণ সমাজ গঠনে ঈদুল ফিতরের আবেদন চিরন্তন।’ ঈদুল ফিতরের শিক্ষা আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করুক- এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি। মুসলিম জাহানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে জানাই ঈদ মোবারক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে সকল মানুষকে। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
No comments:
Post a Comment