ঈদের দিনও অনশনে তুবা গ্রুপের শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-07-29 18:18:58.0 BdST Updated: 2014-07-30 00:24:19.0 BdST
বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে ঈদের দিনও কারখানায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীর বাড্ডায় তুবা গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশের খাবার দেয়ার প্রস্তাবও তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এই শ্রমিকদের সঙ্গেই ঈদের দিনটি কাটাতে হচ্ছে তুবা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়ি লাইলী বেগমকে। সোমবার থেকে তাকে একপ্রকার জিম্মি করে রেখেছে শ্রমিকরা।
কারখানার আয়রন সুপারভাইজার মো. খোকন জানান, সোমবার রাত থেকে অনশনে তাদের নয়জন নারী ও তিনজন পুরুষ সহকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কারখানাতেই তাদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া। সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এখন থেকে নড়ছি না।”
লাইলী বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় শ্রমিকদের সঙ্গে রয়েছেন।
কারখানার ফ্লোর বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহায়তাও চেয়েছেন তিনি।
পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আন্দোলনরত শ্রমিকরা অবস্থান করছেন কারখানা ভবনের সপ্তম তলায়। ভেতরে দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়িও আছেন।
“শ্রমিকরা মাঝে মধ্যেই দল বেঁধে নিচে নামছে, আবার উপরে উঠছে। নিচে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। আপাতত কোনো বিশৃঙ্খলা হচ্ছে না।”
ঈদের দিন সকালে স্থানীয় সাংসদ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের খাবার পাঠানোর প্রস্তাব পাঠানো হলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন বলে সহকারী কমিশনার জানান।
অবশ্য ওই কারখানার ‘অপারেটর’ শিল্পী আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ ঠিক বলেনি। আমাদের অনশন ভাঙাতে কেউ আসেনি।”
দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়ী গত রাতে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ঈদের পরে ব্যাংক খুললে ‘একটা কিছু’ করা হবে। তবে শ্রমিকরা তাতে সাড়া দেয়নি বলে নুরুল আলম জানান।
শিল্পী আক্তার জানান, তারা রাস্তার ওপরে ঈদের নামাজ পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ বাধা দিলে বাধ্য হয়ে হোসেন মার্কেটের নিচে ঈদের জামাত পড়েন। ছেলেরা একদিকে, মেয়েরা অন্যদিকে নামাজ পড়েন।
তিনি বলেন, “মোনাজাতের সময় আমাদের লোকজন কান্নাকাটি শুরু করলে এমন পরিস্থিতি হয় যে ইমাম দ্রুত মোনাজাত শেষ করে চলে যান।”
শিল্পী জানান, তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় তারা চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় বাসায়ও ফিরতে পারছেন না।
“বাড়ি ভাড়া না দেওয়ায় বাড়িওয়ালা কুপ্রস্তাব পর্যন্ত দিচ্ছে।”
কুলসুম আক্তার নামের আরেক কর্মী বলেন, তারা এমনই অসহায় যে কারো কাছে যাওয়ারও উপায় নেই।
“দোকানদার, বাড়িওয়ালার কাছে যেতে হলে টাকা নিয়ে যেতে হবে। না হলে কারখানাতেই থাকতে হবে।”
ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই বকেয়া বেতন আর বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছিলেন তুবা গ্রুপের শ্রমিকরা। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও তাতে সমাধান হয়নি।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল থেকে বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকায় তুবা গ্রুপের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন প্রায় ৫শ’ শ্রমিক।
এই গ্রুপের কারখানা তাজরীন ফ্যাশনস দেড় বছর আগে আগুনে পুড়ে শতাধিক নিহত হন। অব্যস্থাপনার মাধ্যমে শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার অভিযোগে কারখানা মালিক দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে কারাগারে।
বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে এর আগে গত বৃহস্পতিবারও রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে তুবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার শ্রমিক।
No comments:
Post a Comment