http://www.
গাজায় গণহত্যা এবং
বৃহত্তর ইসরাইল নির্মানের গ্রান্ড স্ট্রাটেজী
ফিরোজ মাহবুব কামাল
গাজায় গণহত্যা ও পাশ্চাত্যের সমর্থন
ইসরাইলের জন্মই শুধু নয়, অবৈধ এ দেশটির বেঁচে থাকাটিই পুরাপুরি পাশ্চাত্যনির্ভর। পাশ্চাত্যের সমর্থন নিয়েই গাজায় চলমান গণহত্যা আবার প্রমাণ করলো, মানবতা-শূণ্যতা শুধু ইসরাইলীদের একার নয়, সে রোগটি তাদেরও যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশ্বকে। সে মানবতা-শূণ্যতাটির প্রকট অবস্থা আজ পাশ্চাত্য বিশ্বে। বিশাল একপাল হিংস্র ও ক্ষুদার্ত নেকড়ের কবলে পড়েছে গাজার নিরস্ত্র জনগণ। চলমান এ গণহত্যা থামানোর তেমন কোন আন্তরিক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেই। গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দাও নেই। বরং পাশ্চাত্য দেশগুলি থেকে ইসরাইল পাচ্ছে লাগাতর সমর্থণ। তাদের কথা, হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলির নির্মূলে সর্বপ্রকার হামলার অধিকার রয়েছে ইসরাইলের। সে লক্ষ্য নিয়েই ৮ই জুলাই থেকে ইসরাইলীদের নতুন হামলা শুরু হয়। হামলা হচ্ছে ইসরাইলের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে। ২৬ শে জুলাই অবধি এক হাজারের বেশী ফিলিস্তিনীকে তারা হত্যা করেছে। আহত করেছে বহু হাজার। লক্ষাধিক মানুষকে তারা ঘরছাড়া করেছে। আহত ও নিহতদের অধিকাংশই হলো শিশু ও নারী। হামলার শিকার হচ্ছে শুধু ফিলিস্তিনীদের শুধু ঘরবাড়ি ও দোকানপাটই নয়, মিজাইল নিক্ষেপ করা হচ্ছে মসজিদ, হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয় শিবির, জাতিসংঘের ত্রাণদফতরেরও উপরও।
অথচ এ নৃশংসক ইসরাইলী হামলার বিরুদ্ধে প্যারিস নগরীতে মিছিল করা বেআইনী ঘোষণা করেছে ফ্রান্স সরকার। হামাসের মিজাইল ইসলরাইলে গিয়ে পড়ায় তার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীকে বানি পাঠিয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিট ক্যামেরন। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলী হামলার নিন্দায় একটি বাক্যও উচ্চারণ করেননি। কোন উচ্চ বাক্য নাই চীনাদের মুখেও। তেমন নিন্দা বা উচ্চ বাক্য নাই ভারতীয় নেতাদের মুখেও। কারণ চীন ও ভারত এ উভয় দেশেই রয়েছে তাদের নিজ নিজ ফিলিস্তিন। রয়েছে সে অধিকৃত ভূমিতে প্রতিরোধ জিহাদও। ভারতের সে নিজস্ব ফিলিস্তিন হলো কাশ্মির। চীনে সেটি হলো উইগুর মুসলমানদের অধিকৃত ভূমি জিংজিয়াং প্রদেশ। নেকড়ে কি আরেক নেকড়ের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে? মানবতা ও ন্যূনতম একই রূপে নৈতীকতা মারা পড়েছে ইসরাইলে মূল পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। বীভৎস গণহত্যার নিন্দা জানানোর মত নৈতীক সামর্থ পেতে মহামানব হওয়া লাগে না। সে সামর্থটুকু বহু স্কুল ছাত্রেরও থাকে। বহু নিরক্ষর মানুষেরও থাকে। অথচ সে সামর্থ দেখাতে পারেননি নবেল প্রাইজ বিজয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি ও তাঁর সরকার ইসরাইলের চলমান গণহত্যাকে জায়েজ বলছে এ কারণ দেখিয়ে যে,এটি তাদের নিরপত্তা রক্ষার বৈধ অধিকার। নিরাপত্তা রক্ষার দোহাই দিয়ে ইসরাইলী গণহত্যাকে জায়েজ বলা হলেও তারা ফিলিস্তিনীদের নিজ ঘরে স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার দিতে তারা রাজি নয়। ওবামার সাথে সুর মিলিয়ে ইসরাইলী আগ্রাসনের প্রতি নিরংকুশ সমর্থন জানিয়েছে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন।তাদের ভাবনা স্রেফ ইসরাইলের নিরাপত্তা ও সে দেশের মানুষের আনন্দ-উল্লাসকে সুনিশ্চিত করা নিয়ে। লক্ষ্য,স্রেফ নেকড়দের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করা। ফিলিস্তিনীদের বাঁচা-মরা নিয়ে তাদের সামান্যতম ভাবনাও নাই।
লক্ষ্যঃ গাজা থেকে ফিলিস্তিনী নির্মূল
ইসরাইল এখন আর স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাবে না। পাশাপাশি ইহুদী ও ফিলিস্তিনীদের দু’টি ভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা অন্যরা বললেও ইসরাইলের পলিসি নির্ধারকেরা সে কথা মুখে আনে না। কেউ কেউ বললেও বলে স্রেফ বিশ্ববাসীকে ধোকা দেয়ার জন্য। গাজা আজ অবরুদ্ধ। গাজার তীর ঘেঁষে ভূমধ্যসাগর হলেও সেখানে কোন সমুদ্র বন্দর গড়তে দেয়া হয়নি। নাই কোন বিমান বন্দর। নাই কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র। অধিকৃত পশ্চিম তীরের অর্ধেক ভুমি জুড়ে ইহুদী বসতি। এমন অবরুদ্ধ ও অধিকৃত ভূমি নিয়ে কি রাষ্ট্র গড়া যায়? এটি তো অবাস্তব কল্পনা। অথচ সে কল্পনা দিয়ে ফিলিস্তিনীদের ভূলিয়ে রাখা হয়েছে বিগত ৬০ বছর।এখন তাদের স্ট্রাটেজী, গাজা থেকে শুধু হামাসের নির্মূল নয়, সকল ফিলিস্তিনীদের নির্মূল। লক্ষ্যঃ বৃহত্তর ইসরাইল গড়া। তারা ফিলিস্তিনীদের নির্মূল চায় জর্দান নদীর পশ্চিম তীর থেকেও। পশ্চিম তীরে লক্ষ লক্ষ ইহুদীদের বসতি গড়েছে কি সেগুলি ভবিষ্যতের কোন ফিলিস্তিন সরকারের হাতে তুলে দেয়ার স্বার্থে? ফিলিস্তিনীদের ধীরে ধীরে নির্মূলের সনাতন পথ ধরেই আজকের ইসরাইলের শতভাগ গড়া। ফিলিস্তিন ভূমি শেষ হলে তারা জর্দান, সিরিয়া ও লেবাননেও যে হাত দিবে তাতে কি সন্দেহ আছে? আন্তর্জাতিক ইহুদীবাদের বিশাল ইহুদী সাম্রাজ্য গড়ার এটিই তো গ্রান্ড ভিশন। তাতে তারা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পাশ্চাত্যদেশের সর্বাত্মক সামরিক ও আর্থিক সহয়তা পাবে তাতেও কি কোন অবিশ্বাস আছে? যারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের অবৈধ প্রতিষ্ঠাকে স্বীকৃতি দিতে পারে,তারা যে অন্যভূমির উপর পরবর্তি দধলদারিকেও সমর্থন দিবে না -সেটি কি করে ভাবা যায়? গোলান উপত্যাকা এক সময় সিরিয়ার ভূমি ছিল, কোন সময়ই সে ভূমি ফিলিস্তিনের অংশ ছিল না। কিন্তু এখনসেটি ইসরাইলের অংশ।
আজও ইসরাইল ভূমি দখলের সে সনাতন কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সমগ্র বিশ্বে ইসরাইলই একমাত্র দেশ যার সুনির্দিষ্ট কোন সীমানা নেই।সেটি নির্দিষ্ট করেনি লাগাতর ভূগোল বাড়ানোর স্বার্থে। কারণ, সীমান্ত নির্ধারণ করলে তো যুদ্ধ শেষে সে সীমান্তের ভীতরে ফিরে যেতে হয়। প্রতি যুদ্ধেই তারা পাশ্ববর্তী কিছু ভূমি জবর দখল করে নেয়। আর সে অধিকৃত ভূমিতে ইহুদীদের জন্য নতুন বসতি গড়তে থাকে। সে নতুন ইহুদী বসতি গড়াই বিশাল অংকের তহবিল আসে ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসরত ইহুদীদের থেকে। লক্ষ্য স্রেফ লাগাতর ইসরাইলের ভূগোল বাড়ানো। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার শুরুতেই অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে বহু লক্ষ ফিলিস্তিনীদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। সেটি ছিল যু্দ্ধাপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা নিষিদ্ধ। জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুযায়ী ইসরাইল সে ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য। কিন্তু কে বাধ্য করবে কে জাতিসংঘ প্রস্তাব মেনে নিতে? বাধ্য করা দূরে থাক, ইসরাইল সেটি করুক সে ইচ্ছাও তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কোন পাশ্চাত্য দেশের নেতাদের নাই।ফলে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে যারা ঘর ছেড়েছিল তাদের আর ঘরে ফেরা হয়নি। ঘরে ফিরতে পারিনি তারাও যারা ১৯৬৭ সাল ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে ঘর ছেড়েছিল। তাদের পরিত্যাক্ত পৈতীক ভিটায় ঘর বেঁধেছে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে আসা ইহুদীগণ। অপর দিকে যুগ যুগ উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করাই ফিলিস্তিনীদের নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। অথচ তা নিয়ে কারা কোন মাথা ব্যাথা নেই।
শান্তির মূল দূষমন পাশ্চাত্যশক্তি
নেকড়ে যেমন আরেক নেকড়ের গায়ে হাত দেয় না, মার্কিনীরাও তেমনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছু করতে রাজি নয়। তারা বরং কোয়ালিশন গড়েছে ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে। মার্কিন ভেটোর কারণে ইসরাইলের যে কোনরূপ বীভৎস বর্বরতার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবের সামর্থ নাই জাতিসংঘের। বিপদ তাই শুধু ফিলিস্তিনীদের নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীরও। কারণ,বিশ্ব আজ এরূপ বিবেকশূণ্যদের হাতে জিম্মি। তারা যে মূল্যবোধের ধারক সেটি পুরাপুরি মানবতাশূণ্য। এমন মূল্যবোধে কি মানুষের কোনরূপ কল্যান থাকে? আজ যে নৃশংসতা ঘটছে ফিলিস্তানের সাথে আগামীতে সেটি ঘটতে পারে অন্যদের সাথেও। নিকট অতীতে সেটি ঘটে গেল ইরাকী ও আফগানদের সাথে। এমন মূল্যবোধের কারণেই বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে হত্যা করতে এ মোড়ল শক্তিবর্গ কোনরূপ দ্বিধাদ্বন্দে ভোগেনি। তারা আনবিক বোমা ফেলতেও ইতস্ততঃ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো এমন ব্যক্তি ও দলের হাতে আজ অধিকৃত যারা শুধু ইসরাইলী বর্বরতার সমর্থকই নয়, সে বর্বরতার পুরাপুরি অংশীদারও। ইসরাইল আজ আরব ভূমিতে যা কিছু করছে তা গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর যাবত বিশ্বের নানা দুর্বল দেশে বহু বছর যাবত করে আসছে। ফিস্তিনীদের মাথার উপর ইসরাইল আজ বোমা ফিলছে।অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার চেয়ে বহুহাজার গুণ বেশী বোমা ফেলেছে তৃতীয় বিশ্বের অন্যদের মাথায়। আনবিক বোমা ফেলেছে নাগাসাকি ও হিরোশীমাতে। হাজার হাজার টন বোমা ফেলেছে ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাকে। আর আজ শত শত ড্রোন ফেলছে পাকিস্তান, সোমালিয়া, ইয়েমেনসহ বিশ্বের নানা কোনে। ইসরাইলের চেয়েও বড় নেকড়ে হলো তো এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ববাসীর বড় বিপদ হলো,সে হিংস্র নেকড়ের কাছে তাদের আজ শান্তি ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বিশ্বশান্তি আজ যে কতটা বিপন্ন এবং বিশ্ববাসী যে কতটা অসহায় -এরপরও কি সেটি বুঝতে বাঁকি থাকে?
ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের লিগ্যাসী
ইসরাইল নামে কোন দেশ ১৯৪৮ সালের আগে ছিল না। এ অবৈধ দেশটি সৃষ্টি করেছে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ এবং সেটি ১৯১৭ সালে দখলকৃত আরব ভূমিতে। চোর-ডাকাত-খুনিরা যে ঘরে ঢুকে সে ঘরে ধ্বংস ও সর্বনাশা বিপদ ডেকে আনাই তাদের নীতি। তেমন এক অভিন্ন নীতি হলো ঔপনিবেশীক সাম্যাজ্যবাদী দস্যুদেরও। ফলে যে মুসলিম ভূমিতেই তারা প্রবেশ করেছে সে দেশটিতেই তারা ধ্বংস, মৃত্যু ও বিপদের জন্ম দিয়েছে। আরব ভূমিতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের লিগ্যাসী হলো এই ইসরাইল।অধিকৃত আরব ভূমিতে অবৈধ ইসরাইলকে জন্ম দেয়া হয়েছে একটি সুদুর প্রসারি সাম্রাজ্যবাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে। সাম্রাজ্যবাদি শক্তির এটি এক গ্যারিসন স্টেট। সাম্রাজ্যবাদিদের এ প্রকল্পটি তাই শুরু থেকেই পূর্ণ সমর্থণ পেয়ে আসছে সমগ্র পাশ্চাত্য বিশ্ব থেকে। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের পতন ঘটেছে।বিলুপ্ত হয়েছে তাদের বিশ্বজুড়া সাম্রাজ্য। কিন্তু তাদের এরূপ কুকর্মগুলো এখনও দেশে দেশে রক্ত ঝরাচ্ছে। সেটি যেমন কাশ্মিরে, তেমনি ফিলিস্তিনে। আরব ভূমিতে এ অবৈধ ফসলটি এখনও বেঁচে আছে জন্মদাতা ব্রিটেন ও তার মিত্র মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ অন্যান্য আগ্রাসী পাশ্চাত্যশক্তির মদদ নিয়ে। আরব দেহে এটি এক বেদনাদায়ক বিষফোঁড়া। আর দেহে যতদিন বিষফোঁড়া থাকে ততদিন ব্যাথা-বেদনা দেয়াই তার কাজ। আলাপ-আলোচনায় কি বিষফোঁড়ার ব্যথা দূর হয়? যুদ্ধবিরতিতেও কি যাতনা দূর হয়?
ইসরাইলীদের বিশাল স্থল বাহিনী,বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী আছে। অথচ ফিলিস্তিনীদের কিছুই নাই। ফলে ইসরাইলীরা পাচ্ছে ফিলিস্তিনীদের মাথার উপর যত্রতত্র হামলার সাহস। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে পাশ্চাত্য মহলে যদি সামান্যতম আগ্রহ থাকতো তবে ফিলিস্তিনীদের হাতেও তারা অস্ত্র পৌছে দিত। কারণ নেকড়ের হামলা থেকে নিরস্ত্র মানুষের প্রতিরক্ষা দিতে হলে তাদেরও অস্ত্র দিতে হয়। নইলে তারা প্রাণ বাঁচে না। নেকড়ে কখনোই সবলের উপর হামলা করে না, তখন বরং পলায়নের পথ ধরে। ব্যালেন্স অব পাওয়ারই শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। কারণ তাতে ব্যালেন্স অব টেররও পয়দা হয়। অথচ ফিলিস্তিনীদের অস্ত্রহীন তথা প্রতিরক্ষাহীন রাখাই মার্কিনীদের নীতি। ফলে বাড়ছে ফিলিস্তিনীদের অসহায় অবস্থা। সে সুযোগ নিয়ে গত ৭ বছরে ইসরাইল গাজার উপর তিনবার হামলা চালিয়েছে। প্রতিবারই চালিয়েছে নৃশংসতম গনহত্যা। প্রতিটি হামলায় ইসরাইলের পক্ষে বিপুল অস্ত্র ও অর্থের সাথে নিরংকুশ সমর্থন এসেছে পাশ্চাত্য দেশেগুলি থেকে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির যে কতবড় দূষমন সেটি বুঝতে কি কোন প্রমাণ লাগে?
স্বাধীনতা যুদ্ধ কি সন্ত্রাস?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেটব্রিটেন বা ফ্রান্সের উপর যদি বিদেশী শক্তির হামলা হতো এবং প্রতিষ্ঠিত হত তাদের অধিকৃতি,তবে কি সে বিদেশী দখলদারিকে তারা মেনে নিত? সে বিদেশী অধিকৃতির বিরুদ্ধে সাথে সাথে কি যুদ্ধ শুরু করতো না? একজন ব্রিটিশ এমপি সম্প্রতি বলেছেন,“আমি গাজাবাসি হলে হয়তো আমিও মিজাইল ছুড়তাম।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিতে টুইনটাউটারের উপর হামলা ও সে হামলায় প্রায় ৩ হাজার মার্কিনীকে হত্যার বদলা নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দখল করে নিয়েছিল আফগানিস্তান ও ইরাকের ন্যায় দুটি দেশ। সে দেশটিতে তারা ধ্বংস করেছে অসংখ্য নগর-বন্দর, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এবং হত্যা করেছে বহু লক্ষ মানুষ। অথচ ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে শত্রু শক্তির এরূপ হামলা হচ্ছে তো নিয়মিত। সমগ্র ফিলিস্তিন আজ ইসরাইলীদের হাতে অধিকৃত। নিজ ঘরবাড়ি থেকে বলপূর্বক বের করে তাদেরকে উদ্বাস্তু বানানো হয়েছে।ফলে বিগত ৬০-৭০ বছর তারা নানা দেশের পথে পথে ঘুরছে। আজ গুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোও। গণহত্যা চলছে সে উদ্বাস্তু শিবিরেও। কথা হলো, লাগাতর অধিকৃতি ও হামলার মুখে ফিলিস্তিনীরা কি আঙ্গুল চুষবে?
ফিলিস্তিনীদেরকে স্বাধীনতা দেয়া দূরের কথা, ইসরাইল তাদের অধিকৃত ভূমিতে হাজার হাজার গৃহ নির্মান করছে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আগত ইহুদীদের জন্য। অথচ কোন আন্তর্জাতিক আইনই অধিকৃত ভূমিতে আবাসিক পল্লি নির্মাণের অধিকার ইসরাইলকে দেয় না। অপরদিকে সে অবৈধ ইহুদী বস্তিগুলোকে নিরাপত্তা দিতে ফিলিস্তিনীদের ভূমির উপর দিয়ে বিশাল উচ্চতার প্রাচীর নির্মান করা হয়েছে। অবিচার আর কাকে বলে? কিন্তু সে ইসরাইলী অধিকৃতি ও ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে মুক্তির লড়াইকে বৈধতা দিতে রাজি নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সে অধিকৃতি থেকে মুক্তির লড়াইকে বলছে সন্ত্রাস। ইসরাইলী দখলদারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ার কারণে হামাস চিত্রিত হচ্ছে সন্ত্রাসী সংগঠন রূপে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবতা ও মানবসুলভ বিবেক যে কতটা দারুন ভাবে মারা পড়েছে এ হলো তার নমুনা। যুদ্ধবিরতির নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পক্ষ থেকে যা কিছু হচ্ছে তা হলো ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের দখলদারি ও অবরোধকে চিরস্থায়ী করা। শান্তি আলোচনার নামে প্রতি বৈঠকে যা অবিরাম বলা হয় তা হলো ইসরাইলের অধিকৃতির পক্ষে তাদের লাগাতর মিথ্যাচার। আলোচনার নামে এরূপ মিথ্যাচার বিগত ৬০ বছর যেমন চালিয়ে এসেছে। আরো বহুশত বছর চালিয়ে যাওয়ার জন্যও তারা প্রস্তুত। বিগত ৬০ বছরে এমন আলোচনা কোন শান্তি প্রসব করতে পারিনি। বরং বাড়িয়েছে ইসরাইলীদের দখলদারি ও বর্বরতা। বাড়ছে ইহুদী বস্তি। ফলে হামাসের পক্ষে অসম্ভব হচ্ছে শান্তি আলোচনার নামে এমন ষড়যন্ত্রমূলক অধিকৃতি মেনে নেয়া।
আত্মসমর্পিত আরব নেতৃত্ব
আরব নেতৃত্ব যে কতটা বিভক্ত ও আত্মসমর্পিত সেটি প্রতিবারের ন্যায় আবারও নতুন ভাবে প্রমাণিত হল। গত ৮ই জুলাই থেকে গাজার নিরস্ত্র মানুষের উপর চলছে ইসরাইলের বিরামহীন হামলা। হামলা হচ্ছে স্থল, বিমান ও সমুদ্রপথে। বিগত ৩ সপ্তাহ ধরে চলা এ বর্বর গণহত্যা থামাতে ২২টি আরব রাষ্ট্র কিছু করা দূরে থাক, একবারও কোন বৈঠকে মিলিত হতে পারলো না। গাজার মানুষের প্রতিরক্ষায় এক বস্তা আটা বা এক কৌটা দুধও তারা পৌঁছাতে পারেনি। মিশর, জর্দান ও সৌদি শাসকদের ইসরাইলের খুনি নেতাদের সাথে প্রকাশ্যে বা গোপনে বসতে আপত্তি নেই, কিন্তু নানা আপত্তি হামাসের নেতাদের সাথে বসতে। পথের মানুষ অপরিচিত মানুষের ঘরে আগুণ দেখলেও ছুটে যায়। এটিই সাধারণ মানবতা। তাই একটি রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগী হতে বেশী মানবতা লাগে না। সে মানবতাটুকুতেও তাদের যে প্রচন্ড ঘাটতি সে বিষয়টিও তাদের আচরণে প্রকাশ পেল। এ ঘটনাটি সমগ্র বিশ্বের সামনে এসব নেতাদের উলঙ্গ করে ছেড়েছে। কিন্তু যাদের লজ্জা-শরম ও আত্মমর্যাদাবোধ বহু আগেই মৃত্যু-বরণ করেছে তাদের এরূপ উলঙ্গ হওয়াতেই বা কি ক্ষতি?
গাজার পনের লাখ মানুষ আত্মসমর্পন না করলে কি হবে, ২০ কোটি আরবদের ক্ষমতাসীন নেতারা বহু পূর্বেই আত্মসমর্পন করেছে। প্রশ্ন হলো এমন সামর্থহীন,যোগ্যতাহীন ও আত্মসমর্পিত ব্যক্তিদের কি দেশপরিচালনার অধিকার থাকে? যে আরব ভূমির তারা রাজা-বাদশাহ, শেখ, আমির বা রাষ্ট্রপ্রধান,তার একটি ধুলিকনাও কি তাদের সৃষ্টি। আল্লাহর এ ভূমিতে এ অপদার্থরা কি শাসক হওয়ার অধিকার রাখে? শুধু কি আরব ভূমিতে জন্ম নেয়ার কারণে। আরব ভূমিতে তো বহু গরু-ভেড়া, উঠা-গাধা, খচ্চরও জন্ম নেয়। সে কারণে কি এসব গবাদি পশুদের কে শাসক বানানো যায়? শাসক আরবআশাসকহওয়ার দায়বব্ধতা হলো সর্ব সামর্থ দিয়ে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ। এটি মহান আল্লাহর নির্দেশিত ঈমানী দায়বদ্ধতা। কোন শাসকের মধ্যে সে দায়বদ্ধতা না থাকলে তাকে শাসক পদে রাখাই তো অপরাধ। জামায়াতের নামাযে ইমামের মূল দায়ি হলো বিশুদ্ধ নামায পরিচালনা। সে সামর্থটি না থাকলে কাউকে কি ইমাম পদে রাখা যায়? তেমনি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব হলো নিপরাধ মুসলিম নাগরিকদের প্রাণে বাঁচানো। অতীতে মুসলিম শাসকগণ অমুসলিম রাষ্ট্রের জনগণকে প্রাণে বাঁচাতে সে দেশের জালেম সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু দেশে আগমনের মূল কারণ তো ছিল সেটি। অথচ আজ মুসলিম দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলছে লাগাতর গণহত্যা। কিন্তু তা নিয়ে ৫৭ টি মুসলিম দেশে কোন মজলুম মুসলমানদের বাঁচানোর আয়োজন নেই। গবাদি পশুর ব্যস্ততা যেমন পানাহার নিয়ে বাঁচার, তেমনি এসব আরব শাসকদের ব্যস্ততা হলো নিজেদের আরাম-আয়াশ নিয়ে বাঁচার। তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে আকাশচুম্বি টাওয়ার নির্মানে। কাতারের ন্যায় একটি ক্ষুদ্র দেশ নেমেছে বহু হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে ওয়ার্ল্ডকাপ স্টেডিয়াম নির্মানে। দুবাইসহ আরব আমিরাতের নেতারা নেমেছে সমুদ্রের মাঝে কৃত্রিম দ্বীপ ও সে দ্বীপে প্রাসাদ নির্মানে। সৌদি আরব নেমেছে হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে জেনারাল সিসির ন্যায় স্বৈরাচারি শাসকদের শাসনকে দীর্ঘায়ীত করতে। দায়িত্বহীন ও বিবেকহীন এমন শাসকদের নিয়ে কি মুসলিম দেশের কি প্রতিরক্ষা বাড়ে? বাড়ে কি ইজ্জত?
হামাসের বিস্ময়কর কৃতিত্ব
গাজার প্রতিটি গৃহ,প্রতিটি ইমারত ও প্রতিটি সড়ক আজ ইসরাইলীদের টার্গেট। যুদ্ধাক্রান্ত প্রতি দেশে কিছু চিহ্নিত নিরাপদ স্থান থাকে। তেমন স্থানের নিশ্চয়তা দেয় জাতিসংঘ ও হেলালে আহমার বা রেডক্রস। তেমন স্থান গাজায় নেই। নারী ও শিশুরা প্রাণে বাঁচছে না এমনকি জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও। আহত মানুষ বোমার আঘাতে পুনরায় আহত হচ্ছে হাসপাতালে গিয়ে। তোপের মুখে মানুষ প্রতিবেশী দেশে গিয়ে আশ্রয় নিবে সে সুযোগও নেই। গাজার পাশে একমাত্র মুসলিম দেশটি হলো মিশর। অথচ সে দেশটি হামলাকারি ইসরাইলেরই বন্ধু। ইসরাইলী বোমাবর্ষনে আহত কোন গাজাবাসী প্রাণ বাঁচতে যদি মিশর সীমান্তে হাজির হয় তবে তার জন্য মিশর তার সীমান্ত খুলতে রাজি নয়। সীমান্ত দিয়ে এমনকি অতি প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও খাদ্যসামগ্রীও গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না।জেনারেল সিসির সরকার প্রতিনিধিত্ব করছে যেন ইসরাইলী সরকারের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর মিশরকে হাজার মিলিয়নের বেশী সাহায্য দেয়। এ অর্থ দিয়ে মার্কিনীগণ বিবেক কিনে নিয়েছে মিশরের ক্ষমতাসীন সামরিক এ বেসামরিক নেতাদের। দাস যেমন প্রভুর সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলে,তেমনি অবস্থা মিশরের ক্ষমতাসীন নেতাদেরও।গাজার মানুষের প্রতিরক্ষার কিছু সামর্থ পায় পাতাল সুড়ঙ্গ যা দিয়ে। সে সুড়ঙ্গ পথে মিশর সরকারের অগোচরে তারা অস্ত্র নেয়। কিছু খাদ্যসামগ্রীও নেয়। ইসরাইলের ন্যায় মিশর সরকারও ব্যস্ত সে পাতাল সুড়ঙ্গগুলো বন্ধ করা নিয়ে। ইসরাইল ও মিশর -এ উভয় শত্রুদেশ কর্তৃক অবরুদ্ধ হলো গাজার ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠি। অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধ করা দূরে থাক, যুদ্ধের স্বপ্ন দেখাই বিস্ময়কর। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অর্থ, নিরস্ত্র হাতে হিংস্র বাঘের সামনে দাঁড়ানোর মত ব্যাপার। এমন অবস্থায় হামাস যে অসীম বীরত্বের প্রমাণ দিল সেটি বিস্ময়কর।
পাশ্চাত্যের কাছে হামাসের মূল অপরাধ, গাজার জেলখানায় স্রেফ খাদ্যপানীয় নিয়ে তারা খুশি নয়। তারা চায় পূর্ণ স্বাধীনতা। সেজন্য তারা লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছে। আর হামাসের সে প্রতিরোধের লড়াইকে বলা হচ্ছে সন্ত্রাস। হামাসের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও এ যুদ্ধে হামাসের বিনাশ হচ্ছে না। এতেই হামাসের বিজয়। বরং এ হামলার ফলে প্রচন্ড ভাবে বাড়বে তাদের শক্তি। কারণ রক্তের বিণিয়োগ কখনোই ব্যর্থ হয় না। ঈমানদারের সে বিণিয়োগ নামিয়ে আনে আল্লাহর রহমত। অতীতে শহীদের রক্ত কোথাও হারিয়ে গেছে এমন নজির নেই। ব্লাড-ট্রান্সফিউশনের ন্যায় শহীদের রক্ত ঈমানের ট্রান্সফিউশন ঘটায় মুসলিম উম্মাহর জীবনে। তাই যে দেশে শহিদের সংখ্যা যত বেশী সেদেশে ঈমানাদারের সংখ্যাও বেশী। তাই তো মাওলানা মহম্মদ আলী জাওহার বলেছিলেন, “ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হর কারবালা কি বাদ।” অর্থঃ “প্রতি কারবালার পরই ইসলাম জিন্দা হয়”। তাই যেখানে কারবালা নেই সেখানে বিজয়ী ইসলামও নেই। প্রকৃত ঈমানদার গড়ে উঠার উর্বর ক্ষেত্রও নাই।
জিহাদের বল ও বিজয়ের পথ
ইসলামের বড় ইবাদতটি হলো জিহাদ। এ ইবাদত মু’মিনের জীবন থেকে সব চেয় বড় বিনিয়োগ চায়। ফলে ফজিলতও বিশাল। মু’মিনের জীবনে তাকওয়া গভীরতা পায় তো ইবাদতে তার বিনিয়োগের ভিত্তিতে।সে তাকওয়া থেকে বিপ্লব আসে চরিত্রে। অতীতে মুসলমানগণ নৈতীক বিপ্লব, সামরিক বল এবং সে সাথে বিজয় পেয়েছে জিহাদের বদৌলতেই। তাই যেখানে জিহাদ নেই, সেখানে যেমন বিজয় নেই, তেমনি নৈতীক বিপ্লব এবং গৌরবও নেই। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যত রক্তক্ষয়ী জিহাদ হয়েছে তত জিহাদ আর কোন সময়ই হয়নি। তাই সে সময় ঈমান সৃষ্টিতে প্রচন্ড উর্বরতা পেয়েছিল আরব ভূমি। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী সেদিন শহিদ হয়েছিলেন। তাদের রক্তদানে সেদিন প্রচন্ড ভাবে বেড়েছিল মুসলমানের ঈমান ও তাদের সামরিক শক্তি। তাই লাগাতর জিহাদে মুসলিম উম্মাহ শক্তিহীন হয় না, বরং শক্তিশালী হয়। তাতে বাড়ে ঈমানদারের মানুষের সংখ্যা। বাড়ে ন্যায়নীতি ও সভ্যতা। অথচ জাতিয়তাবাদী, বর্ণবাদি বা রাজাবাদশাহর যুদ্ধে বিপুল প্রাণহানী হলেও সেখানে ঈমান বাড়ে না। ন্যায়নীতি এবং সভ্যতাও বাড়ে না। এমন যুদ্ধে মানুষ বরং বেশী সন্ত্রাসী ও পশুচরিত্রের অধিকারি হয়। ফলে একাত্তরে বাঙ্গালীদের জাতিয়তাবাদি যুদ্ধে বিপুল প্রাণহানী হলেও তাতে সুনীতি বাড়েনি। নৈতীক বিপ্লবও আসেনি। বরং বেড়েছে দূর্নীতি ও সন্ত্রাস। বেড়েছে পশুচরিত্র। ফলে দেশটি দূর্নীতে লাগাতর বিশ্ব-শিরোপাও পেয়েছে।
অতীতের তুলনায় আজকের মুসলিম ভূমিতে জিহাদ যেমন দুর্লভ,তেমনি দুর্লভ হয়েছে ঈমানদার মুসলমানের সংখ্যা। দেশে দেশে মুসলিম উম্মাহর জীবনে আজ এক প্রচন্ড ঈমান ও তাকওয়া শূণ্যতা। এরূপ ঈমানশূণ্যতা ও তাকওয়া শূণ্যতার কারণেই বাংলাদেশের ন্যায় প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশে ইসলামের শত্রুশক্তি আজ ক্ষমতাসীন। সেসব দেশে আজ পরাজিত হলো আল্লাহর বিধান -“শরিয়ত”। আফগানিস্তানের মুসলমানেরা বিপুল রক্তের বিণিয়োগ করেছে আফগানিস্তানে। ফলে বেড়েছে ঈমানের প্রচন্ডতা, সে প্রচন্ডতায় পরাজিত হয়েছে এককালের বিশ্বশক্তি সোভিয়েত রাশিয়া। আর আজ সেখানে পরাজিত হতে যাচ্ছে আরেক বিশ্বশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যেভাবে মুসলিম শক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল সে পথই ধরেছে হামাস। আর সে পথেই বিস্ফোরণ ঘটেছে ইসলামি শক্তির। হামাস ইতিমধ্যেই সে শক্তির প্রমাণ রেখেছে। অতীতের যুদ্ধে মিশর, জর্দান ও সিরিয়ার সম্মিলিত বাহিনী ইসরাইলের বিরুদ্ধে ৭ দিনও টিকতে পারেনি। আর হামাসের কয়েক হাজার মোজাহিদ লড়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ২০দিন ধরে। হামাসের ভয়ে ইসরাইলের টাংকগুলো এখনও গাজার অভ্যন্তরে ঢুকতে পারেনি। ঢুকতে গিয়ে তিরিশ জন সৈন্যকে তারা হারিয়েছে। হামাসের রকেট নিক্ষেপ বন্ধ করতে ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করেছিল। কিন্তু সেটিও বন্ধ করতে পারিনি। এটি সত্য, ফিলিস্তিনীদের বহু ক্ষয়ক্ষতি ও রক্তক্ষয় হয়েছে। এ অবধি মৃত্যু হয়েছে এক হাজারের বেশী ফিলিস্তিনীর। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু। বিধস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক বাড়ীঘর, অফিস-আদালত, এমনকি হাসপাতাল। কিন্তু তাতে ইসরাইলের বিজয় জুটেনি। রক্ত আজ বিজয়ী হতে যাচ্ছে ইসরাইলের ট্যাংক-কামান, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও শত শত টন বোমার উপর। বিশ্বের ১২০ কোটি মুসলমান যেখানে দেশে দেশে আত্মসমর্পনের ইতিহাস গড়ছে, গাজার ১৫ লাখ মানুষ সেখানে সৃষ্টি করলো সংগ্রামী সাহসিকতা ও বিজয়ের এক গৌরবজনক ইতিহাস। আজকের মুসলমানদের সামনে গর্ব করার বিষয় সামান্যই। হামাসের কৃতিত্ব, মুসলমানদের উপার্যপরি পরাজয় ও অপমানের মাঝে তারা বিস্ময়কর বীরত্ব দেখাচ্ছে। আগামী দিনের মুসলমানেরা এ নিয়ে বহুকাল গর্ব করতে পারবে। সে সাথে শিক্ষণীয় উৎসাহও পাবে। হামাসের অমর কীর্তি এখানেই। ২৭/০৭/১৪
No comments:
Post a Comment