Tuesday, July 29, 2014

মতিন বৈরাগীর গুচ্ছ কবিতা

মতিন বৈরাগীর গুচ্ছ কবিতা

মতিন বৈরাগী | ৩১ মে ২০১৪ ৮:৩৭ অপরাহ্ন
এক নারী
চারিদিকে এতো রোদ গড়িয়ে ছড়িয়ে ফুটন্ত তরল
তপ্ত হাওয়ার নিশ্বাস গাছগুলো তিরতির নড়ে
ক্লান্তির ডানায় দুটো পাখি এতোক্ষণ পরস্পর খুটছিলো প্রেম
চলেগেছে তারা, একটা পাতার ফাঁকে আননন্দ মুখ ভাসে
বিষণ্ন শিরীষ, স্মৃতিগুলো ঘুরে যায় চোখ একা চেয়ে থাকে
এক নারী ছাদে ছড়ায় কাপড় আলগোছে, দাঁড়ের চিৎকার
ঝির ঝির নড়ে মুখ দূরে, কাছে কেউ নেই আর এক নারী
ওই ছাদে কেন আসে প্রতিদিন, সে কী আসে? আবছায়া মুখ
তবু কেন মনে হয় স্মৃতিগুলো রোদে দেয় আরেক বেলার
বলে না কখনো ঘুমে জাগরণে বয়ে নেয়া ভার এ জীবন
হয়তো লুকিয়ে রাখে শুকনো কাপড় ভাঁজে এক নারী তার
সারাজীবনের প্রিয় মুখখানি আঁকে! কে জানে–কোন আঁখিতারা
চেয়ে চেয়ে সারাবেলা বলে ‘সুরঞ্জনা ওই খানে যেও নাকো তুমি.. ’
সুরঞ্জনাও কী চলে যেতো এমন রোদ্দুরে! কেবল গোপনে!
সে কী দেখে প্রিয়মুখ হাসে ডাকে কাছে,হাসে উদ্দাম পৌরুষ?
ভালোবাসা কতোদূর যায়! সে কী তপ্ত রোদ আউল-ঝাউল
ছাদে সেই নারী আজ একা তবু চেয়ে থাকে আকাশের গায়!
২.০৫.১৪.
২.০৫.১৪.
রাজনীতি
নদীগুলো মরে গেছে
সারাদিন পাখিগুলো উড়তো আকাশে পাখিগুলো মরে গেছে
তূখোড় রোদ্দুর, ঝুরঝুর তৃণগুলো
সময়ের ঘড়ি থেমে গেছে রাজনীতির কাঁটায়।
ঝাউগাছগুলোর সে কী কান্না, বৃক্ষগুলোর
রাত্রির আকাশ চুপি চুপি বলছে– রাজনীতি!
স্মৃতির ভেতরে মানুষের মুখ গলে যাচ্ছে ভাঙা আয়নায়
গ্রামগুলো নেই হেঁটে হেঁটে চলে গেছে, কোথায়! বেঁচে আছে-তারা!
যতোদূর যাই পা’ কামড়ে ধরে কড়কড়ে বালু
এই মরা নদীগুলো নিয়ে কী করবো আমি!
রাত্রির দেয়াল ভেঙে অর্তনাদ আকাশকে ছুঁয়ে দেয়
মেঘেরা হাওয়া হয় একটি তারা খসে পড়ে
আর মরা নদী ভাবে জল এলো বুঝি
নদীর কল্লোল শুনি দূর পথে ওখানে কী সীমান্ত আছে ?
সেও এক রাজনীতি!
মানুষ হারবে?
জমছে হাড়ের পাহাড়, মরা নদী আরো মরে যায়।
২৯.০৪.১৪
কতটা পথ মানুষ এগুলো
বোধ ক্ষয়ে যায়
সবুজের ফাঁকে এক আকাশ মনোরম গোধুলিতে
যেনো জ্বলে রুটির কড়াই
হাওয়ায় নড়ে স্ফিংস মুখ নাক কান ঝরে গেছে
নিমরূদ উঠে বলে : দেখো মানুষের ইতিহাস
কতটা সময় গেলো কিছু কী এগোয় !
সময়ের হাওয়ায় যায় উড়ে মানুষের ভালোবাসা
হরিণীর চোখে অতীত কালের আলো কান্না হয়ে ঝরে
সিংহের ফোঁপানি, সমাধি- দেয়াল ভেঙে জেগে ওঠে স্পার্টাকাস
তরবারি হেঁকে বলে: ইতিহাস তবে কতটা এগুলো?
তিরতির বয় জল বোধের আকাশে মরা রোদ
পুঁজির নগর নুয়ে পড়ে বনিতার ভারে গ্রামগুলো ক্ষয়ে যায়
মানুষের শ্রেণিভেদ বণিকের বুদ্ধি মানুষকে খেয়ে ফেলে
অরণ্য-নেকড়ে ছিঁড়ে খুড়ে খায় নরমাংস হাড়
পচা-গলা রাজনীতি সকল উঠোনে
সলমন হেসে বলে কতো যুগ পরে: মানুষ কী এলো !
ইতিহাস তবে কতোটা সময় পেরুলো?
একটা কুকুর রোজ সড়কের মোড়ে দুপুরেও আড়মোড়া ভাঙে
একটা পোয়াতি বিড়াল সময়ের কাটা গুণে বাচ্চা বিয়োয়
পথের ওপারে অনেক মুখ টুকরি কোদাল
সস্তার শ্রমের হাতিয়ার গড়িয়ে গুড়িয়ে যায় ভোগ-উৎসবে, আর
কতিপয় কুৎসিৎ মুখ ক্ষমতার হুংকার তোলে অশ্লীল- চিৎকারে
তখন কৃষ্ণ অর্জুনকে বলে: যুদ্ধটা চলছে বহুকাল
শেষ হবে পথ, দূর ইতিহাসে মানুষ এগুলে-
নীরবতার কাব্য
কোনো হৈ-চৈ নেই, কোনো কোলাহল–নীরব সময়
সারি সারি কবরগৃহ জোছনা-মাখানো শরীর
আর ছাতিম গাছটায় দু’টো পাখি আর আকাশের চান্দ
যা দেখছে তা’ হলো মানুষের গৌরব হিংসা-লোভ মিশে গেছে মাটিতে
আর মাটি তাকে নিয়ে যায় অন্য রূপান্তরে
সেই হলো এক নিরন্তর কবিতা যা লিখা হয় নীরবে
এইখানে কোনো রাজা নেই রাজদণ্ড নেই
জমকালো নিয়ম-আচার নেই
এক নীরবতা, ডুবিয়ে শরীর বাতাস ঘুমায়
আর চাঁদের আলোয় লিখা হয় কাব্য, শ্রুতিহীন-স্মৃতিহীন-
থাকে নাতো মোসাহেবি, স্তব-স্তুতি, ভোগের কাহিনী
কেবল এক কবিতা যা তারা লিখছে জোছনার কালিতে
তারকার চুমকি বসিয়ে আকাশ নীলের মোহনায়
ঘোষণা করছে সত্য অস্তিত্বের শেষ দৃশ্যাবলী
তুমি যদি পড়, দেখো পড়তে পারো কিনা–
জীবিতরা কখনো পড়ে না
তুমি সত্যকে বুঝতে, চিনতে চাইলে পড়ো ওই কাব্যগুলো
গভীর অনুধ্যান কারণ
কবিতা সত্যই বলে, কবিতা স্বাধীন, কবিতা কখনো স্তুতি গায় না
কেবল সুন্দর আর সুন্দরই সত্য–পাতা ঝরে
কবিতা জীবন– সত্যের নিরবিচ্ছিন্ন প্রকাশ
কবরগুলো অন্ধকারে হারাচ্ছে আর পাখি আর চাঁদ
দৃশ্যমান নেই, তবু তুমি আমি হাঁটছি
সারি সারি কবর সুনসান নীরবতা
বলো মানুষের শেষ অস্তিত্ব কী নীরবতায় অখণ্ড!
দেখো কবরগুলো মিশে গেছে জমিনে সমান
আর অন্ধকারের মৌমাছি
ফিরছে কুলায়
চলো এই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কবিতাগুলোকে পড়ি ছন্দ তাল লয়
আর খুলে যাক সকল কপাট
যা মৃতেরা লিখছে আর সত্য হয়ে আছে আড়ালে
১২.৩.২০১৪.
সব পথ মিশে গেছে
এখানে ঘুমিয়ে আছে এক নদী মরে গেছে তার সব স্মৃতি
বহিছে বাতাস উলুঝুলু খেজুরের ছেঁড়াখোড়া ভাঙা ডালে
আকাশটা নুয়ে শুয়ে ঢালে জল শ্রাবণের অঝোর বর্ষণে
এইখানে খরস্রোতা এক নদী ছিলো আজ আর কিছু নেই-
তবু কতো কিছু ভাসে মাঝিদের দাঁড়ে শিরার লবণ জাগে
মেঘ উড়ে যায় দূরে ঘুরে যায় মন জাগেনা তো কেউ আর
নিসঙ্গ মাটির তলে সেই নদী একা হায় একাকী ঘুমায়
সেতো কেহ নয় আজ, কিছু নয়, বয়ে যায় অলীক ডানায়
একটি কবর থেকে শুরু মানুষের যাত্রা শেষ কবরের
দিকে, সময় ফুরালে কার হাসি রেখে যায় কার কাছে
কে সে হাসে ! চারিপাশে পাখিরা কী গায় ! কোন গান তবে?
না-কি নেকড়ের-সর্দার ছিলো খুব খুশি যে ছিলো প্রতাপপ্রিয়
তাহার শরীরে হাঁটে কীটের উৎসব,গাছের পাতারা ঝরে
মৃত, মরা নদীস্রোত মরে যায় ঝরে যায় অন্য রূপান্তরে
তারপর পথগুলো মিশে থাকে আহা কবরের মোহনায়!
১৮.০৪.১৪.

টিকে থাক কবির লড়াই

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা-কে]
তুমি বললে: এসো কবি বসি কবিতার কথা বলি
বলাবলি করি একথা সেকথা, কথা কথা কথা
তুমি কিছু বলো আমি বলি, লিখি তার কিছু
কবিতা-কলার ছন্দে শেফালি সুবাস গন্ধে
তখন সন্ধ্যার কাল ভেতরের মরা-আলো ক্লান্তিতে জ্বলছে
তখন পানির শব্দ সুর তোলে শুকনো জীবন-কলে
নড়ে যায় হিম ছায়া সাঁঝ-আলো আবছায়া বলো
বাতাস তোমায় নাড়ালো !
আমি দূর পথে রয়েছি একাকী শুনেছি অরণ্যের ডাক
কতটা সময় যায় চুপিচুপি– কতো বনে বাঘ দেয় হাক
একথা সেকথা ভাবনার কথা অনুভুতিগুলো বাতাস নাড়ালো
কী-যে বলি, কথা নেই কথারা কোথায় হারালো!
চঞ্চল দেহের এই ঘর ভেঙে পড়া ডালপালা কান পেতে রয়
বাইরে শৈত্যবাহ আলোটুকু ধীরে লয়ে হয়ে যায় ক্ষয়
তারপর আমাদের কথা, কথা কথা সাহিত্য-কবিতা-সুবাস
নানা কথা কানা কথা নিয়ম রীতির কথা
তুমি বলে গেলে, আমি ও আমরা শুনছি
কবিতার প্রীতিময় দেহে হাত রেখে ভাবনাকে বুনছি
তুমি বললে: কবিতায় চাই বস্তু চাই কল্পনার অলোক প্রিয়তা
চাই শিল্প আনন্দ, চাই অনিত্যের নির্মাণ বস্তুর ভিতর বাহির
চাই স্থির-থির অমেয় আলোর সুর পৃথিবীর
ফিরে দেখি ভাবনার ঘরে যে বিগ্রহ জাগে
তার সাথে কতোটুকু মিল, অমিলের ভাঁজে
কতোটুকু রাগ-আনুরাগ
হাসে দৃশ্যগুলো সবুজ কোমল ঘাসে
তুমি উড়ে যাচ্ছো হাওয়ার মতো
তোমার পাখায় কাব্যের দিগন্ত উড়াল
নড়ে যায় জল–

সেই থেকে তোমাকে মান্য করি কবি রূপে মেনে যাই
কাব্যের অসূয়া বুকে টিকে থাক কবির লড়াই ।
http://arts.bdnews24.com/?p=5923

No comments:

Post a Comment