আজকালের প্রতিবেদন: নজরদারি রাখুন, কিন্তু খবরদারি নয়৷ শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাকর্মী-সহ শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সকল সংগঠনকে এমনটাই নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যে শিক্ষকরা আছেন, তাঁরা মাঝেমধ্যেই নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠনের খবরদারিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন৷ এই প্রশাসকদের আরও ভাল প্রশাসক হয়ে ওঠার জন্য ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্হা করতে চান শিক্ষামন্ত্রী৷ পাশাপাশি তাঁর আরও নির্দেশ, যাঁরা এই মুহূর্তে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া নন, কিন্তু ছাত্র সংগঠনের পদাধিকারী, তাঁরা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকবেন৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে মাথা গলাবেন না৷ কোনও বিষয়ে উপাচার্যের কাছে আসতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে৷ ৫ জনের বেশি প্রতিনিধি নিয়ে আসা যাবে না৷ এটা অবশ্য শুধু ছাত্র নয়, সব সংগঠনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ কারণ পার্থবাবু মনে করেন, এতে বিষয়টির মাধুর্য বজায় থাকে৷ সোমবার শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র তরফে শিক্ষামন্ত্রীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ এই অনুষ্ঠানেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাকর্মী– সব সংগঠনকেই বলছি নজরদারি রাখতে, কিন্তু খবরদারি করবেন না৷ শিক্ষকরা দেখবেন ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে কি না৷ ছাত্ররা ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে থাকবে৷ প্রশাসনে মাথা গলাবে না৷ এটা কেন হল, ওটা কেন হল বলে খবরদারি চলবে না৷ যাঁরা পড়াশোনা করছেন না কিন্তু বাম, অ-বাম ছাত্র সংগঠনগুলির মাথায় আছেন, তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকবেন৷ উপস্হিত শিক্ষকদের উদ্দেশে এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কাজটা দুঃসাহসের৷ কিন্তু ডান্ডা দিয়ে নয়, ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে, বুঝিয়ে এটা করতে হবে৷ ছাত্রদের বোঝাতে হবে, যেখানে পড়াশোনা হয় সেটা পীঠস্হান৷ বিক্ষোভ বা অবস্হানের জায়গা নয়৷ আমরা কি মন্দির-মসজিদকে নোংরা করি? তেমনি শিক্ষার জায়গাকেও সুন্দর রাখতে হবে৷ এদিন এই অনুষ্ঠানে আসার আগে তৃণমূল ভবনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী৷ জানা গেছে, সেখানে তিনি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বকে বলেছেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন, ঘেরাও বন্ধ করতে হবে৷ পড়ুয়া নয় এমন কেউ উপাচার্য বা অধ্যক্ষদের সঙ্গে দেখা করার আগে অনুমতি নিতে হবে৷ ছাত্র নয় এমন কেউ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে যেন আন্দোলন না করেন৷ পাশাপাশি তিনি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যাদের বয়স একটু বেশি, অনেক দিন আগেই পড়াশোনা ছেড়েছেন, তাঁদের কাউকে আর ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে রাখা হবে না৷ এই কারণেই মালদা, নদীয়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগঠনের জেলা সভাপতিদের বদল করা হবে৷ রাজাবাজারে শিক্ষক নিগ্রহকে কেন্দ্র করে কুটা-র অবস্হান, সিন্ডিকেট রুমের সামনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ এবং স্মারকলিপির নামে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ওয়েবকুপা-র হুমকি ও হুঁশিয়ারির পর এভাবে প্রকাশ্যে বিষয়গুলি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর মম্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে শিক্ষকমহল৷ তবে তাঁর নির্দেশ কতটা মান্যতা পাবে, তা নিয়েও সংশয়ে অনেকে৷ কারণ, তিনি যখন এ কথা বলছেন তখন কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডাকে স্বপার্ষদ ঘুরতে দেখা যায়৷ শঙ্কুদেব কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন৷ যদিও শঙ্কুদেবের বক্তব্য, তিনি ছাত্রনেতা, তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন৷ সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে কয়েকটি ঘটনায় শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে৷ তবে তিনি যে শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও ‘রাজনীতি’ চান না, তা এদিন স্পষ্ট করেছেন পার্থবাবু৷ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও ধরা পড়েছে তাঁর বক্তব্যে৷ ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, আলাপ-আলোচনা করতে হবে৷ সরাসরি উপাচার্য কেন, রেজিস্ট্রার আছেন, অন্য আধিকারিকেরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে৷ কলেজের ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে হবে৷ শিক্ষকদের অবস্হান নিয়ে তিনি বলেন, এটা শিক্ষার জায়গা, অবস্হান ক্ষেত্র নয়৷ দাবি থাকতে পারে, কিন্তু দায়িত্ববোধ সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে৷ এরপরই খবরদারি-নজরদারি নিয়ে বলেন, ওয়েবকুপাকে বলেছি নজরদারি রাখতে, খবরদারি নয়৷ কোনও সংগঠনই খবরদারি করতে পারবে না৷ স্মারকলিপি দিতে আসার নিয়ম নিয়ে বলেন, যাঁরা ছাত্র নন, কিন্তু সংগঠনের পদে আছেন, তাঁরা উপাচার্য বা অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আগে বলে আসবেন৷ ৪০-৫০ জন নয়, পাঁচ জনের বেশি প্রতিনিধি আনা যাবে না৷ প্রসঙ্গত, এই সেনেট হলেই প্রায় ২০০-২৫০ শিক্ষক মিলে কলকাতার উপাচার্যকে স্মারকলিপির নামে হুমকি দিয়েছিল ওয়েবকুপা৷ প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যাঁরা আছেন তাঁরা যদি মনে করেন বা প্রশিক্ষণ নিতে চান, তার ব্যবস্হা করা হবে৷ শুধু বি এড পাস করলেই তো হবে না, ভাল প্রশাসক হওয়ার প্রশিক্ষণ শিক্ষকরা কেন নেবেন না? শিক্ষামন্ত্রী এদিন যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম, সময়মতো পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ, কোনও শংসাপত্র হারিয়ে গেলে তা যাতে তাড়াতাড়ি দেওয়া যায় তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দেন৷ এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপাল মিশ্র, রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন ভট্টাচার্য, ওয়েবকুপার সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু, কবি সুবোধ সরকার প্রমুখ৷
|
No comments:
Post a Comment