Saturday, July 26, 2014

বার্লিনে ইসরাইলবিরোধী মিছিল দাউদ হায়দার, বার্লিন থেকে

বার্লিনে ইসরাইলবিরোধী মিছিল
দাউদ হায়দার, বার্লিন থেকে
গত সপ্তাহে প্যারিসে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ ফিলিস্তিনে ইসরাইলের যুদ্ধবিরোধী মিছিল নিয়ে মার্কিনী মিডিয়া এ্যান্টি-সেমিটিক মিছিল বলে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। একই প্রচারণা উত্তর জার্মানির ব্রেমেন শহরের মিছিল নিয়েও। এই প্রচারণায় কোন ভিত্তি নেই। জার্মান সরকারও এ্যান্টি-সেমিটিক মিছিল দ্যাখেনি। পোস্টার দেখেনি। স্লোগানও শোনেনি। কিন্তু দু’টি কাগজ (দৈনিক) দাবি করেছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী মিছিল নয়, এ্যান্টি-সেমিটিক মিছিল। এই নিয়েও প্রচণ্ড জল ঘোলা শুরু হয়। বাধ্য হয়ে জার্মান সরকার নির্দেশ জারি করে, ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শিশু-নারী-সাধারণ মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে মিছিল করতে পারো, এ্যান্টি-সেমিটিক মিছিল নিষিদ্ধ।
শুক্রবার বেলা তিনটে থেকে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত বার্লিনের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক ও বাণিজ্যিক এলাকা কুরফুর্স্টেনদাম (সংক্ষেপে কু দামৎ) একেবারে অচল। যানবাহন সমস্ত বন্ধ। হাজার হাজার মানুষ ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী মিছিলে উত্তাল, স্লোগানে মুখর তুমুল বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে।
মিছিলে আরব বা আফ্রিকার মানুষই নয় শুধু, জার্মানিসহ এশিয়ার জনগণও। বড় বড় পোস্টারে-ফেস্টুনে লেখা ‘উই আর নট এ্যান্টি-সেমিটিক। উই আর এগেইন্স্ট ইসরাইলী ওয়ার।’ এই মিছিল যখন কুদাম (সড়ক) অতিক্রম করছে, সড়কের এক পাশে শ’তিনেক ইসরাইলী ইহুদী ইসরাইলের পতাকা হাতে নিয়ে, মাথায় ইহুদী-ধর্মীয় গোলাকৃত কালো টুপি পরে ফিলিস্তিনি হামাস এবং ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। ইসরাইলী যুদ্ধের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে বিদ্রুপ করছে, চোখে মুখে ভ্যাঙা”েচ্ছ, হাসাহাসি করছে। তিনশ’ ইসরাইলীকে শ’চারেক পুলিশ ঘিরে রেখেছে। যাতে কোন অঘটন না ঘটে।
ইসরাইলী যুদ্ধবিরোধী মিছিলে বহু মানুষের হাতে, পোস্টারে মহাত্মা গান্ধী, চে গুয়েভারা, খোমেইনি, হুগো শ্যাভেজ এমন কি সাদ্দাম হোসেনের ছবিও।
মিছিল শেষে জনসভায় এক বক্তা তারস্বরে বললেন, জার্মান সরকার ইসরাইলকে নিয়মিত অর্থ সাহায্য করছে, ভারি অস্ত্র যোগান দিচ্ছে। বন্ধ করো। জার্মান সরকার ফিলিস্তিন, মুসলিম দেশ, মধ্যপ্রাচ্যবিরোধী। ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে ফিলিস্তিন ধ্বংস করছে। ইসরাইলী মানুষ মারছে। এই অপবাদে জার্মান সরকার কেন কুলুপ এঁটেছে, অজানা। অন্তত এখনও কোন প্রতিবাদ করেনি।
ইসরাইল নিয়ে কখনও কিছু বলবে না। বলার মুখ নেই। কেউ বললেও বিপদ। গ্যুয়েন্টার গ্রাস ইসরাইলের ভয়ঙ্কর বেহায়াপনার বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছিলেন, চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের জোট সরকার মহাক্ষিপ্ত।
ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শত শত মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করছে না চড়াগলায়, ইউরোপের কোন সরকারই। প্যারিস এবং জার্মানির দুই শহর (ব্রেমেন ও বার্লিন) ছাড়া, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত, ইউরোপের কোন শহরেও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়নি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এক জনসভায় (তুরস্কে) ইসরাইলী প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ইউরোপের ভীষণ গোস্বা। সমালোচনায় দিশেহারা। ইসরাইলের যুদ্ধ, নিধন, আগ্রাসন নিয়ে ইউরোপীয় মাতব্বরদের টু শব্দ নেই মুখে, কিন্তু পুতিন, রাশিয়াকে নিয়ে ফেনা তুলছে। হুমকি দিচ্ছে। একটার পর একটা অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করছে। কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম, সবই আমেরিকার অঙ্গুলিহেলন। সাম্প্রতিক সংখ্যা সাপ্তাহিক টাইম, নিউজউইক, দ্য ইকোনমিস্ট দেখুন। ইসরাইলকে নয়, পুতিন এবং রাশিয়াকে কি করে শায়েস্তা করবে, আমেরিকা এবং ইউরোপের এখন পয়লা ধ্যানজ্ঞান। চোখে ঘুম নেই।
ইসরাইলকে মদদ দিচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ। ফিলিস্তিনের গোটা মাটির কবর না ভরা পর্যন্ত কেন ইসরাইল থামবে। মিছিল দেখে ইহুদীরা হাসবে, ব্যঙ্গ করবে, টিটকিরি দেবে। থোড়াই করে তথাকথিত বিশ্ববিবেক। কোথায় বিশ্ববিবেক? গালভারি বিবেকতা, বিশ্ববিবেকতা শব্দ শুধু অভিধানেই। ইসরাইল-আমেরিকা-ইউরোপ বহুকালই বিবেকহীন।

daud.haider21@gmail.com
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment