গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 2014-07-30 20:51:59.0 BdST Updated: 2014-07-30 20:51:59.0 BdST
বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা তোবা গ্রুপের পোশাক শ্রমিকরা নিজেরা অনশন চালিয়ে গেলেও কারখানা মালিকের শাশুড়িকে নিয়মিত খাবার দিয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় হোসেন মার্কেট নামে পরিচিত তোবা গ্রুপের এই ভবনে গত পাঁচ দিন ধরে কার্যত জিম্মি হয়ে আছেন তোবা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়ি লাইলী বেগম।
ঈদের দিনটিও তাকে শ্রমিকদের সঙ্গেই কাটাতে হয়েছে। তার মেয়ে তোবা গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার মিতার বাসা কাছে হলেও একদিনও তিনি মা’কে দেখতে আসেননি।
বুধবার হোসেন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, নবম তলায় কারখানার প্যাকেজিং কক্ষে মেঝের ওপর বসে আছেন ৬৫ বছর বয়সী এই নারী। আর কারখানা ভবনের সাত তলায় ফিনিশিং টেবিলে সারি বেঁধে শুয়ে আছেন অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া পোশাক শ্রমিকরা, তাঁদের হাতে স্যালাইনের সুঁই।
শ্রমিকদের পাহারার মধ্যে তাদের দেয়া খাবারই তিনি খাচ্ছেন। এক নারী শ্রমিকের শাড়ি গায়ে দিয়ে ছোট্ট ওই ঘরে মেঝের ওপরই ঘুমাচ্ছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে লাইলী বলেন, “আমার নামে এ গ্রুপের মালিকানা নেই। তারপরও শ্রমিকদের কথা ভেবে আমি গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর ছুটে আসি। বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলিল আমাকে শ্রমিকদের অবস্থা দেখতে এখানে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, “শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী খালেকের কাছে টাকাও চেয়েছিলাম।কিন্তু টাকা দেয়র কথা বলেও সে দেয়নি।”
এ বিষয়ে তোবা গ্রুপের কারখানা মিতা ডিজাইনের স্যুইং অপারেটর মো. আপন বলেন, “বাড্ডা থানার ওসি ও মালিকের শাশুড়ি সেই দিনই (শুক্রবার) আমাদের বেতন দেবে বলে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এরপর বিক্ষোভ শুরু হলো, লাইলী আন্টিও আর যেতে চাননি।”
কারখানায় লাইলী বেগমের দেখাশোনা করছেন এই গ্রুপেরই বুকশান গার্মেন্টসের স্যুইং বিভাগের কর্মী রুমা, যিনি নিজেও আন্দোলনে যুক্ত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রুমা বলেন, “খালাম্মার জন্য আমরা প্রতিবেলায় খাবারের ব্যবস্থা করছি।উনি পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথাও বলছেন। তার শরীর ভাল আছে। আজ সকালে মুরগীর মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছেন। দুপুরে খেয়েছেন আলু ভর্তা দিয়ে।”
শ্রমিকরা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে নীরব থাকেন লাইলী।
তিনি বলেন, “আমার উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিস আছে। ওরা খাওয়ানোর পর আমাকে নয় তলার খালি জায়গায় হাঁটতে সাহায্য করে।”
মে, জুন ও জুলাই মাসের বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের দাবিতে কয়েকদিন আগে থেকেই বিক্ষোভ করে আসছিলেন তোবা গ্রুপের পাঁচটি কারখানার দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক। বিজিএমইএ বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সমাধান দিতে ব্যর্থ হলে শ্রমিকদের সেই আন্দোলন সোমবার সন্ধ্যা থেকে অনশনে গড়ায়।
“তারা আমাদের বেতন দেবে বলে তিন বার তারিখ দিয়েছে; কিন্তু বেতন হয়নি। যদিও মিতা আপা (দেলোয়ারের স্ত্রী) মেরুল বাড্ডায় একই গ্রুপের তোবা গার্মেন্টসে বেতন ভাতা দিয়েছেন।”
পরিস্থিতি সামাল দিতে ১২ তলা কারখানা ভবনের সামনে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। নিচতলায় মার্কেটের সামনে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন একদল পুলিশ।
বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, “আমরা সাধ্যমতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।বিজিএমইএ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের অনশন ভাঙানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।”
No comments:
Post a Comment