জালে আটকানো হচ্ছে গণমাধ্যম : তৈরি হচ্ছে আইন ও নীতিমালা, নিয়ন্ত্রিত হবে টকশোও
পরোক্ষভাবে জালে আটকানো হচ্ছে গণমাধ্যমকে। সব গণমাধ্যমের জন্য পৃথক পৃথক নীতিমালা করা হচ্ছে। সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশন, রেডিওসহ গণমাধ্যমের সব শাখাকে জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার জন্য করা হচ্ছে ৮টি আইন ও নীতিমালা। ঈদের পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া উপস্থাপিত হবে। অন্যগুলো নিয়ে কাজ চলছে।
সম্প্রচার নীতিমালা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ ‘সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের সুনির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই। তবে এতে টকশো নিয়ন্ত্রণের বিধান রাখা হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে টেলিভিশনের জনপ্রিয় এই আলোচনা অনুষ্ঠান নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই সংবাদকর্মী হতে পারবে না এবং ইচ্ছে করলেই গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে না- এ ধরনের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিধিবিধানও করা হচ্ছে। সরকারের এসব উদ্যোগকে আপাতত ইতিবাচকভাবে দেখলেও আইন বা নীতিমালার বেড়াজালে ফেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেন খর্ব না হয় এমন প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের।
অবশ্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় পূর্ণ বিশ্বাসী।তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গণমাধ্যমের জন্য যে আইন ও বিধানগুলো করা হচ্ছে সেগুলো হলো জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, সংবাদপত্র কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইন, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা, বেসরকারি মালিকানায় টেলিভিশন চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, প্রেস কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা অধ্যাদেশ ১৯৭৯-কে আইনে পরিণতকরণ। এ ছাড়া প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর কিছু ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া এখন চূড়ান্ত। অংশীগণ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভিমতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে। ঈদের পর প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা উপস্থাপিত হবে। সেকারণে ঈদের আগেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে খসড়া চূড়ান্ত করে রেখেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রচার নীতিমালা কার্যকর বাস্তবায়ন ও পরীক্ষণের জন্য একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করার কথা খসড়া কৌশলসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত কমিশন গঠন করা ছাড়া এ নীতিমালা কার্যকর করার অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকলে তথ্য মন্ত্রণালয় সব বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
নীতিমালার খসড়ায় কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কমিশন গঠনের নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি। এ নীতিমালা তৈরিতে যারা অংশী ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম টিআইবি। কমিশন গঠন প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রচার নীতিমালার খসড়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট সময় থাকা উচিত। আর কমিশনকে হতে হবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্যকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। সংবিধান অনুযায়ী গণমাধ্যম ও সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আইন বা নীতিমালার জালে পড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গর্ব হোক সেটা কারও কাম্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নীতিমালার প্রাথমিক খসড়ায় ১.২.৮ নম্বর অনুচ্ছেদে সমাজের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন করে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠায় বেসরকারি গণমাধ্যমের ভূমিকা নিশ্চিত করার কথা ছিল। টিআইবির প্রস্তাব গ্রহণ করে সরকারি গণমাধ্যমকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ খসড়ায় ‘অনুষ্ঠানে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনোভাবেই দেশবিরোধী এবং জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যেমন- রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা, স্বাস্থ্য বার্তা, গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, প্রেস নোট ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান জনস্বার্থে সম্প্রচার/প্রচার করতে হবে’ বলে সর্বশেষ খসড়ার ৩.২.৩ এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নীতিমালার প্রাথমিক খসড়ার ৫.১.৬ অনুচ্ছেদে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ প্রদান করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করে এমন ধরনের অনুষ্ঠান বা বক্তব্য উল্লেখ ছিল। অনুচ্ছেদটিতে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধে’ শব্দমালার সঙ্গে ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা’ যুক্ত করা হয়েছে এবং ৫.১.৭ অনুচ্ছেদ হিসেবে বর্তমান খসড়ায় রাখা হয়েছে। সম্প্রচার নীতিমালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিনটি বিষয়ে প্রস্তাব করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবগুলো হলো, ধর্মীয় বক্তব্যে নারীকে হাস্যকরভাবে অবদমিত/হীনভাবে উপস্থাপন করা যাবে না। যে সব পণ্যে অ্যালকোহল/নেশা জাতীয় দ্রব্য রয়েছে সে সব পণ্যকে বিজ্ঞাপনে ইতিবাচক হিসেবে প্রচার করা যাবে না। গৃহকর্মী হিসেবে ছোট কাজের মেয়েকে নাটকে নেতিবাচক হিসেবে কিংবা হাস্যকরভাবে দেখানো যাবে না এবং কোনো জনপ্রিয় বিনোদন/ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পূর্ব বা অনুষ্ঠান চলাকালে একটানা দীর্ঘক্ষণ বিজ্ঞাপন প্রচার পরিহার করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে তবে তা সম্প্রচার কমিশন গঠন হলে মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রচার লাইসেন্স প্রদান, সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুভূতি, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বক্তব্য এবং বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনের ফাঁকফোকর রাখা হয়েছে। এ সব ফাঁকফোকরে গণমাধ্যম কিছুটা হলেও চাপের মধ্যে থাকবে।প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন যে, পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের ক্ষমতা ডিসিদের হাতে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী পত্রিকার বন্ধের বিধিবিধান নিয়ে আর কোনো বিতর্কের অবকাশ না থাকলেও এ আইনের বেশ কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
১৯৭৩ সালের আইনে পত্রিকার অনলাইন সংস্কারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। এটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পত্রিকার প্রকাশকের মৃত্যু হলে পরিবারের কোনো সদস্য প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রকাশকের পরিবারের কোনো সদস্য প্রকাশকের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে আইন সংশোধন করা হবে। একই সঙ্গে ইচ্ছা হলো আর গণমাধ্যমের মালিক হয়ে যাওয়ার বর্তমান সুয়োগও আর থাকছে না বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ডিক্লারেশনের কপির ফি বাড়ানোসহ ১৯৭৩ সালের আইনে আরও বেশ কিছু ধারায় সংশোধন করা হচ্ছে।সংবাদপত্র কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে সংবাদ কর্মীদের শ্রম আইনের আওতায় রাখা হয়েছে। জানা গেছে, সংবাদ কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা, চাকরিচ্যুতির বিধান এবং সংবাদ মাধ্যমে চাকরির জন্য কিছু শর্তাবলিসহ এ আইনটি প্রণয়নে মন্ত্রী নিজেই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন।
বর্তমান অবস্থায় যে কোনো মানুষ ইচ্ছা করলেই সংবাদকর্মী হতে পারেন তাতে কোনো নীতিমালার বাধ্যবাধকতা নেই। তেমনি মালিক পক্ষ যে কোনো সংবাদ কর্মীকে যে কোনো সময় ইচ্ছামতো চাকরিচ্যুত করতে পারে। কিন্তু এ আইনটি হলে সংবাদ কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য আইন ও নীতিমালাগুলো মূলত সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিদ্যমান আইনে উন্নত করা এবং তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করা।আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন সম্পর্কে সিনিয়র সাংবাদিক ও নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি সুশৃঙ্খল গণমাধ্যম আমাদের সবারই কাম্য। গণমাধ্যমের সব শাখায় একটি সার্বজনীন নীতিমালাও থাকা উচিত। কিন্তু আইন বা নীতিমালার জালে গণমাধ্যমকে চাপে রাখার কোনো প্রকার অপচেষ্টা গণতন্ত্রের জন্য শুভ হবে না।
বর্তমানে জাতীয় সংসদে কার্যকর বিরোধী দল নেই। গণমাধ্যম ফোর্থ স্টেট হিসেবে কিছুটা হলেও ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকায় কোনো প্রকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কালাকানুনের জালে আটকানো যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।আইন ও নীতিমালাগুলো করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে গণমাধ্যমের সব সেক্টরের জন্যই একটি নীতিমালা থাকা উচিত। এর অংশীগণও নীতিমালার প্রয়োজনীতার কথা বলেছে। যত আইন ও নীতিমালা করা হচ্ছে সবই গণমাধ্যমের কল্যাণের জন্য।
আইনে সংবাদ কর্মীদেরকে শ্রম আইনের আওতায় রেখেছে বিগত বিএনপি জোট সরকার। সেখান থেকে বের করে সাংবাদিকদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে সংবাদকর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনটি করার জন্য আমি নিজে উদ্যোগী হয়েছি। তবে আইন ও নীতিমালা যাই হোক না কেন তা সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
সম্প্রচার নীতিমালা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ ‘সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের সুনির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই। তবে এতে টকশো নিয়ন্ত্রণের বিধান রাখা হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে টেলিভিশনের জনপ্রিয় এই আলোচনা অনুষ্ঠান নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই সংবাদকর্মী হতে পারবে না এবং ইচ্ছে করলেই গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে না- এ ধরনের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিধিবিধানও করা হচ্ছে। সরকারের এসব উদ্যোগকে আপাতত ইতিবাচকভাবে দেখলেও আইন বা নীতিমালার বেড়াজালে ফেলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেন খর্ব না হয় এমন প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের।
অবশ্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় পূর্ণ বিশ্বাসী।তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গণমাধ্যমের জন্য যে আইন ও বিধানগুলো করা হচ্ছে সেগুলো হলো জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, সংবাদপত্র কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইন, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা, বেসরকারি মালিকানায় টেলিভিশন চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, প্রেস কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা অধ্যাদেশ ১৯৭৯-কে আইনে পরিণতকরণ। এ ছাড়া প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর কিছু ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া এখন চূড়ান্ত। অংশীগণ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভিমতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে। ঈদের পর প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা উপস্থাপিত হবে। সেকারণে ঈদের আগেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে খসড়া চূড়ান্ত করে রেখেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রচার নীতিমালা কার্যকর বাস্তবায়ন ও পরীক্ষণের জন্য একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করার কথা খসড়া কৌশলসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত কমিশন গঠন করা ছাড়া এ নীতিমালা কার্যকর করার অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকলে তথ্য মন্ত্রণালয় সব বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
নীতিমালার খসড়ায় কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু কমিশন গঠনের নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি। এ নীতিমালা তৈরিতে যারা অংশী ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম টিআইবি। কমিশন গঠন প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রচার নীতিমালার খসড়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট সময় থাকা উচিত। আর কমিশনকে হতে হবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্যকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। সংবিধান অনুযায়ী গণমাধ্যম ও সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। আইন বা নীতিমালার জালে পড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গর্ব হোক সেটা কারও কাম্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নীতিমালার প্রাথমিক খসড়ায় ১.২.৮ নম্বর অনুচ্ছেদে সমাজের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন করে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠায় বেসরকারি গণমাধ্যমের ভূমিকা নিশ্চিত করার কথা ছিল। টিআইবির প্রস্তাব গ্রহণ করে সরকারি গণমাধ্যমকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ খসড়ায় ‘অনুষ্ঠানে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনোভাবেই দেশবিরোধী এবং জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যেমন- রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তা, স্বাস্থ্য বার্তা, গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা, প্রেস নোট ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান জনস্বার্থে সম্প্রচার/প্রচার করতে হবে’ বলে সর্বশেষ খসড়ার ৩.২.৩ এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নীতিমালার প্রাথমিক খসড়ার ৫.১.৬ অনুচ্ছেদে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ প্রদান করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করে এমন ধরনের অনুষ্ঠান বা বক্তব্য উল্লেখ ছিল। অনুচ্ছেদটিতে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধে’ শব্দমালার সঙ্গে ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা’ যুক্ত করা হয়েছে এবং ৫.১.৭ অনুচ্ছেদ হিসেবে বর্তমান খসড়ায় রাখা হয়েছে। সম্প্রচার নীতিমালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিনটি বিষয়ে প্রস্তাব করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবগুলো হলো, ধর্মীয় বক্তব্যে নারীকে হাস্যকরভাবে অবদমিত/হীনভাবে উপস্থাপন করা যাবে না। যে সব পণ্যে অ্যালকোহল/নেশা জাতীয় দ্রব্য রয়েছে সে সব পণ্যকে বিজ্ঞাপনে ইতিবাচক হিসেবে প্রচার করা যাবে না। গৃহকর্মী হিসেবে ছোট কাজের মেয়েকে নাটকে নেতিবাচক হিসেবে কিংবা হাস্যকরভাবে দেখানো যাবে না এবং কোনো জনপ্রিয় বিনোদন/ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পূর্ব বা অনুষ্ঠান চলাকালে একটানা দীর্ঘক্ষণ বিজ্ঞাপন প্রচার পরিহার করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে তবে তা সম্প্রচার কমিশন গঠন হলে মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রচার লাইসেন্স প্রদান, সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুভূতি, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বক্তব্য এবং বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনের ফাঁকফোকর রাখা হয়েছে। এ সব ফাঁকফোকরে গণমাধ্যম কিছুটা হলেও চাপের মধ্যে থাকবে।প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন যে, পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের ক্ষমতা ডিসিদের হাতে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী পত্রিকার বন্ধের বিধিবিধান নিয়ে আর কোনো বিতর্কের অবকাশ না থাকলেও এ আইনের বেশ কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
১৯৭৩ সালের আইনে পত্রিকার অনলাইন সংস্কারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। এটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পত্রিকার প্রকাশকের মৃত্যু হলে পরিবারের কোনো সদস্য প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রকাশকের পরিবারের কোনো সদস্য প্রকাশকের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে আইন সংশোধন করা হবে। একই সঙ্গে ইচ্ছা হলো আর গণমাধ্যমের মালিক হয়ে যাওয়ার বর্তমান সুয়োগও আর থাকছে না বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ডিক্লারেশনের কপির ফি বাড়ানোসহ ১৯৭৩ সালের আইনে আরও বেশ কিছু ধারায় সংশোধন করা হচ্ছে।সংবাদপত্র কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে সংবাদ কর্মীদের শ্রম আইনের আওতায় রাখা হয়েছে। জানা গেছে, সংবাদ কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা, চাকরিচ্যুতির বিধান এবং সংবাদ মাধ্যমে চাকরির জন্য কিছু শর্তাবলিসহ এ আইনটি প্রণয়নে মন্ত্রী নিজেই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন।
বর্তমান অবস্থায় যে কোনো মানুষ ইচ্ছা করলেই সংবাদকর্মী হতে পারেন তাতে কোনো নীতিমালার বাধ্যবাধকতা নেই। তেমনি মালিক পক্ষ যে কোনো সংবাদ কর্মীকে যে কোনো সময় ইচ্ছামতো চাকরিচ্যুত করতে পারে। কিন্তু এ আইনটি হলে সংবাদ কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য আইন ও নীতিমালাগুলো মূলত সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিদ্যমান আইনে উন্নত করা এবং তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করা।আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন সম্পর্কে সিনিয়র সাংবাদিক ও নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি সুশৃঙ্খল গণমাধ্যম আমাদের সবারই কাম্য। গণমাধ্যমের সব শাখায় একটি সার্বজনীন নীতিমালাও থাকা উচিত। কিন্তু আইন বা নীতিমালার জালে গণমাধ্যমকে চাপে রাখার কোনো প্রকার অপচেষ্টা গণতন্ত্রের জন্য শুভ হবে না।
বর্তমানে জাতীয় সংসদে কার্যকর বিরোধী দল নেই। গণমাধ্যম ফোর্থ স্টেট হিসেবে কিছুটা হলেও ভূমিকা পালন করছে। গণমাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকায় কোনো প্রকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কালাকানুনের জালে আটকানো যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।আইন ও নীতিমালাগুলো করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে গণমাধ্যমের সব সেক্টরের জন্যই একটি নীতিমালা থাকা উচিত। এর অংশীগণও নীতিমালার প্রয়োজনীতার কথা বলেছে। যত আইন ও নীতিমালা করা হচ্ছে সবই গণমাধ্যমের কল্যাণের জন্য।
আইনে সংবাদ কর্মীদেরকে শ্রম আইনের আওতায় রেখেছে বিগত বিএনপি জোট সরকার। সেখান থেকে বের করে সাংবাদিকদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে সংবাদকর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনটি করার জন্য আমি নিজে উদ্যোগী হয়েছি। তবে আইন ও নীতিমালা যাই হোক না কেন তা সবার সঙ্গে আলোচনা করে করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
No comments:
Post a Comment