তাপস পালের অশালীন মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে তোলপাড়
গ্রেফতার দাবি
শাসক দলের সংস্কৃতি বজায় রেখে এবার খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের হুমকি দিলেন তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ এবং সম্ভবত ছাপিয়ে গেলেন কুকথার যাবতীয় সীমা-পরিসীমা। বিরোধীদের শুধু গুলি করে মারার হুমকি নয়, তৃণমূলের ছেলেদের দিয়ে তাদের ‘রেপ করিয়ে’ দেয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন তিনি। দাদার এই নয়া কীর্তিতেও পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ অবশ্য সাম্প্রতিক রেওয়াজ মেনে নীরব। অনুব্রত, মনিরুলের মতো তাপসকেও গ্রেফতার করার পথে হাঁটেনি তারা। উল্টো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সচিব বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ তো কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। যদি কেউ এফআইআর করেন, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কী বলেছেন তাপস?
গত ১৫ জুন নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র কৃষ্ণনগরের অন্তর্গত নাকাশিপাড়ার হরনগর গ্রামে নিহত তৃণমূল কর্মী আসাদুল মণ্ডলের স্মরণসভায় যোগ দিতে যান তিনি। ম্যাটাডরে চেপে সেই সভায় আসার পথে দুর্ঘটনায় আহত হন নাকাশিপাড়ার শেষ সীমানা চৌমাহা গ্রামের কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তাই শুনে স্মরণসভা থেকে সটান চৌমাহা গ্রামে চলে যান তাপস। সেখানে উত্তেজিতভাবে তিনি বলেন, ‘আমি প্রচুর মস্তানি করেছি। একটা কেউ বিরোধী যদি মস্তানি করতে আসে, আমাদের ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করে দেব! এই তাপস পাল ছেড়ে কথা বলবে না। তাপস পাল নিজের রিভলভার বের করে গুলি করে মারবে!’ মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা তাপস পালের এই বক্তব্য সোমবারই সংবাদ মাধ্যমের হাতে এসেছে। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন গ্রেফতার করা হবে না এই তৃণমূল সাংসদকে? কেউ এফআইআর করেননি বলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারছে না, প্রশাসনের কর্তার এমন দাবি উড়িয়ে আইনজীবীরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশ নিজের থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারে। আইন তাকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। আর বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেফতার করবে কি না, তা নির্ভর করে প্রশাসনের নিরপেক্ষতার উপরে। তৃণমূল জমানায় যা অবলুপ্তপ্রায়। শাসক দলের মর্জি মেনেই পুলিশ ওঠাবসা করে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েও অধরা থেকে যান অনুব্রত, মনিরুল, তাপস পালেরা। আত্মসমর্পণ করেই বিনা বাধায় জামিন পেয়ে যান দীপালি সাহার মতো বিধায়ক। দিনের পর দিন ফেরার থাকেন উষারানি মণ্ডল। অন্য দিকে মিথ্যে মামলায় তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয় বিরোধী দলের বিমল ভাণ্ডারীকে। মাঝ রাতে তলবের নোটিস পাঠানো হয় প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের বাড়ি। কোনও অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচক নাট্যকর্মী সুমন মুখোপাধ্যায়কে বার বার ডেকে পাঠায় পুলিশ। এক টানা ২৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে থানায়। নিরপেক্ষ অবস্থান নিলে তাপসের ক্ষেত্রে কী করা উচিত ছিল পুলিশের?
প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘সাংসদ যা বলেছেন তা প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া এবং আতঙ্ক ছড়ানো। এ ক্ষেত্রে পুলিশ তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে পারে। দেশের আইনের শাসনকে তিনি যে ভাবে পদদলিত করলেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে গণতন্ত্রের কোনও অর্থ থাকবে না।’
ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য সমর্থন করেছেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এমন কোনও মন্তব্য বা কাজ করেন যাতে আইনশৃঙ্খলা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তা হলে পুলিশ আইনের ২৩ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে তাঁকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রেফতার করার অধিকার পুলিশের আছে। এ ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট জারি করারও প্রয়োজন হয় না।’ পুলিশ এবং প্রশাসন কিন্তু এ প্রসঙ্গে নীরব। তাপস-কাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন।
তৃণমূল কী বলছে?
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের জবাব, ‘এই রকম অসংবেদনশীল মন্তব্য আমাদের দল কখনওই অনুমোদন করে না। স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের নীতি অনুযায়ী যে কোনও ব্যক্তিকেই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাংসদকেও লিখিতভাবে জবাবদিহি করতে হবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
তাপস পালের স্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা
এদিকে তৃণমূল এমপি তাপক পালের স্ত্রী তার স্বামীর অশালীন মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাপক পালের ওই বিতর্কিত মন্তব্যের একদিন পর তার স্ত্রী নন্দিনী পাল বলেন, এ কাহিনীর আরেকটি অধ্যায় রয়েছে। তাপক পালের স্ত্রী বলেন, তাঁর মন্তব্যের জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। তিনি বলেন, এই মন্তব্য সমর্থন করার কোন প্রশ্নই আসে না। নন্দিনী বলেন, তার পক্ষ থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। -আজকাল, টাইমস অব ইন্ডিয়া, টেলিগ্রাম অনলাইন
কী বলেছেন তাপস?
গত ১৫ জুন নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র কৃষ্ণনগরের অন্তর্গত নাকাশিপাড়ার হরনগর গ্রামে নিহত তৃণমূল কর্মী আসাদুল মণ্ডলের স্মরণসভায় যোগ দিতে যান তিনি। ম্যাটাডরে চেপে সেই সভায় আসার পথে দুর্ঘটনায় আহত হন নাকাশিপাড়ার শেষ সীমানা চৌমাহা গ্রামের কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। তাই শুনে স্মরণসভা থেকে সটান চৌমাহা গ্রামে চলে যান তাপস। সেখানে উত্তেজিতভাবে তিনি বলেন, ‘আমি প্রচুর মস্তানি করেছি। একটা কেউ বিরোধী যদি মস্তানি করতে আসে, আমাদের ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করে দেব! এই তাপস পাল ছেড়ে কথা বলবে না। তাপস পাল নিজের রিভলভার বের করে গুলি করে মারবে!’ মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা তাপস পালের এই বক্তব্য সোমবারই সংবাদ মাধ্যমের হাতে এসেছে। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন গ্রেফতার করা হবে না এই তৃণমূল সাংসদকে? কেউ এফআইআর করেননি বলেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারছে না, প্রশাসনের কর্তার এমন দাবি উড়িয়ে আইনজীবীরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশ নিজের থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারে। আইন তাকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। আর বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেফতার করবে কি না, তা নির্ভর করে প্রশাসনের নিরপেক্ষতার উপরে। তৃণমূল জমানায় যা অবলুপ্তপ্রায়। শাসক দলের মর্জি মেনেই পুলিশ ওঠাবসা করে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েও অধরা থেকে যান অনুব্রত, মনিরুল, তাপস পালেরা। আত্মসমর্পণ করেই বিনা বাধায় জামিন পেয়ে যান দীপালি সাহার মতো বিধায়ক। দিনের পর দিন ফেরার থাকেন উষারানি মণ্ডল। অন্য দিকে মিথ্যে মামলায় তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয় বিরোধী দলের বিমল ভাণ্ডারীকে। মাঝ রাতে তলবের নোটিস পাঠানো হয় প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের বাড়ি। কোনও অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচক নাট্যকর্মী সুমন মুখোপাধ্যায়কে বার বার ডেকে পাঠায় পুলিশ। এক টানা ২৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে থানায়। নিরপেক্ষ অবস্থান নিলে তাপসের ক্ষেত্রে কী করা উচিত ছিল পুলিশের?
প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘সাংসদ যা বলেছেন তা প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া এবং আতঙ্ক ছড়ানো। এ ক্ষেত্রে পুলিশ তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে পারে। দেশের আইনের শাসনকে তিনি যে ভাবে পদদলিত করলেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে গণতন্ত্রের কোনও অর্থ থাকবে না।’
ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য সমর্থন করেছেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এমন কোনও মন্তব্য বা কাজ করেন যাতে আইনশৃঙ্খলা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তা হলে পুলিশ আইনের ২৩ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে তাঁকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রেফতার করার অধিকার পুলিশের আছে। এ ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট জারি করারও প্রয়োজন হয় না।’ পুলিশ এবং প্রশাসন কিন্তু এ প্রসঙ্গে নীরব। তাপস-কাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন।
তৃণমূল কী বলছে?
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের জবাব, ‘এই রকম অসংবেদনশীল মন্তব্য আমাদের দল কখনওই অনুমোদন করে না। স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের নীতি অনুযায়ী যে কোনও ব্যক্তিকেই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাংসদকেও লিখিতভাবে জবাবদিহি করতে হবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
তাপস পালের স্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা
এদিকে তৃণমূল এমপি তাপক পালের স্ত্রী তার স্বামীর অশালীন মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তাপক পালের ওই বিতর্কিত মন্তব্যের একদিন পর তার স্ত্রী নন্দিনী পাল বলেন, এ কাহিনীর আরেকটি অধ্যায় রয়েছে। তাপক পালের স্ত্রী বলেন, তাঁর মন্তব্যের জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। তিনি বলেন, এই মন্তব্য সমর্থন করার কোন প্রশ্নই আসে না। নন্দিনী বলেন, তার পক্ষ থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। -আজকাল, টাইমস অব ইন্ডিয়া, টেলিগ্রাম অনলাইন
No comments:
Post a Comment