Tuesday, July 1, 2014

পশ্চিম ভারতে খরা, লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি ঘুম কেড়েছে মোদীর

পশ্চিম ভারতে খরা, লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি ঘুম কেড়েছে মোদীর

narendra-modi
এই সময়, নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রয়াসে আপাতত ফল হল না, দেশজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে৷ তার ওপর কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিং স্বীকার করেছেন, পশ্চিম ভারত, বিশেষ করে মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাংশে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে৷ গোটা জুন মাস ধরে বৃষ্টি একেবারেই না হওয়ায় মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশের অবস্থা বেশ খারাপ৷ রেলের পণ্যমাসুল এক ধাক্কায় ছয় শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ায় পেট্রল ও ডিজেলের দামও বাড়িয়েছে সরকার৷ ভর্তুকি ছাড়া রান্নার গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে মঙ্গলবার৷ তার প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে৷ পাঁচ মাসের মধ্যে জিনিসের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে৷ বিশেষ করে বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম৷ এই অবস্থায় উদ্বিগ্ন সরকার সংসদের অধিবেশনের আগে আগামী ৪ তারিখ সব রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেছে৷ কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব রাজ্যগুলিকে চিঠি লিখে দু'টি ব্যবস্থা নিতে বলেছেন৷ এক, সব্জি, ফল ও খাদ্যশস্যের জোগান ঠিক রাখতে হবে৷ দুই, মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ইউপিএ আমলে মনমোহন-চিদম্বরমরা যে ভাবে মূল্যবৃদ্ধির দায় রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দিতেন, মোদী সরকারের আমলেও তার অন্যথা হচ্ছে না৷

অন্য দিকে, বিরোধী দলগুলি মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আন্দোলনে নেমেছে৷ মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ বিহারে নীতীশের দলের কর্মীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ নীতীশের বক্তব্য, 'এমনই তো হওয়ার কথা ছিল৷ আর এখনই কী হয়েছে, আর কিছুদিনের মধ্যে দেখুন দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়৷' বিষয়টি নিয়ে সংসদে প্রতিবাদ জানানোর পরিকল্পনা করেছে কংগ্রেস৷

বিজেপি আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে মূল্যবৃদ্ধির দায় ইউপিএ সরকারের ঘাড়েই চাপাতে চাইছে৷ মূল্যবৃদ্ধি কমানো নরেন্দ্র মোদীর প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল৷ তা মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, 'মজুতদার ও কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওদের কে বারণ করেছে? একটাও বিজেপি-শাসিত রাজ্যে তো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না! কী জবাব দেবে সরকার ও বিজেপি?'

গতিক যে সুবিধের নয় তা মাঝেমধ্যে শোনা যাচ্ছে বিজেপি নেতাদের মুখেও৷ মহারাষ্ট্র বিজেপির প্রতিনিধিদল এ দিন কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল৷ তাঁদের কাছে মন্ত্রী স্বীকার করেন, মহারাষ্ট্রে, বিশেষত পশ্চিম মহারাষ্ট্রে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে৷ তবে তাঁর আশ্বাস, সরকারও পরিকল্পনা করে ফেলেছে৷ কৃষকদের ভর্তুকির ডিজেল দেওয়া, ঋণ মকুবের কথা ভাবা হচ্ছে৷ কিন্ত্ত বিজেপির সমস্যা অন্যত্র৷ যে ভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, মানুষের ক্ষোভও যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে তা বেশ বুঝছেন মোদী৷ তার উপর পেট্রল-ডিজেলের দামবৃদ্ধি আগুনে ঘি ঢেলেছে৷ পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের দাবি, গরিব ও মধ্যবিত্তের কথা ভেবেই কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ায়নি সরকার৷ কিন্ত্ত ইরাক সমস্যার জন্য পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়াতেই হয়েছে৷
কিন্ত্ত কংগ্রেস এই যুক্তি মানতে রাজি নয়৷ ইউপিএ আমলে যখনই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার জন্য দেশে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, বিজেপি তার প্রতিবাদ করেছে৷ মোদী ক্ষমতায় আসার পরে যে ভাবে জিনিসের দাম বেড়েছে, কংগ্রেসের দাবি, সে সময় যা বলেছিলেন, এ বার তা করে দেখান মোদী৷ কংগ্রেসের মুখপাত্র শাকিল আহমেদের কথায়, 'মোদী তো বার বার মনমোহনকে মৌনী বলে বিদ্রুপ করতেন৷ এখন তিনি চুপ কেন? দাম কমানোর জন্য বৈঠক করাই যথেষ্ট নয়৷ মোদী বলেছিলেন, ৫৬ ইঞ্চি বুক চওড়া করে বিদেশের চোখে চোখ রেখে সবকিছু করবেন৷ উপ-রাষ্ট্রপতির বেজিং সফর চলাকালীন চিন ম্যাপ প্রকাশ করে দেখিয়েছে, অরুণাচলপ্রদেশ তাদের অংশ৷ পাকিস্তান বার বার অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ করছে৷ এখন মোদী কী করছেন?'

No comments:

Post a Comment