Tuesday, July 1, 2014

বাড়িপালানো ছেলেকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল ফেসবুক

বাড়িপালানো ছেলেকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল ফেসবুক

facebook
এই সময়: ফেসবুকে প্রেম-প্রতারণা-বিচ্ছেদ-ব্ল্যাক মেলিংয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়৷ ফেসবুকে অশ্লীল মেসেজের জন্য কিছুদিন আগে আত্মঘাতীও হয়েছে এক তরুণী৷ এ বার বিচ্ছেদ নয়৷ ছ'বছর আগে বাড়ি ছেড়ে পালানো ছেলেকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল ফেসবুক৷ এই ছ'বছরে ছেলের খোঁজ পেতে পুলিশের কাছে গিয়েছেন বাবা-মা৷ নিয়ম করে ছেলের ছবিসহ বিজ্ঞাপন দিয়েছেন খবরের কাগজে৷ কিন্ত্ত ফেরেনি ছেলে৷ একমাত্র সন্তানের দুঃখে একরকম শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন মা৷ শেষমেশ ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেরার আর্তি জানিয়েছিলেন বাবা৷ একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়াও মিলেছিল, 'আই উইল কাম ব্যাক'৷ তা যে ছেলেরই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, তা জানতেন না বাবা৷ একটি মেসেজের পর অবশ্য আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না অ্যাকাউন্টটিতে৷ কিন্ত্ত বাবার মন বলছিল, এটি তাঁর ছেলের না হয়ে যায় না! ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে নতুন করে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা৷ ছ'বছর পর অমৃতসর থেকে ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে এল পুলিশ৷

বাগুইআটির বাগুইপাড়ার অঙ্কিত চতুর্বেদি ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে যখন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, তখন তার বয়স ছিল পনেরো৷ ক্যালকাটা পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র৷ বাবা অমরেশ চতুর্বেদি সেলস ট্যাক্সের আইনজীবী৷ বাড়ি থেকেই হঠাত্‍ একদিন 'গায়েব' অঙ্কিত৷ বাগুইআটি থানায় মিসিং ডায়েরি করেছিলেন বাবা৷ সব জায়গায় ছোটাছুটি করেও অঙ্কিতের খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিল চতুর্বেদি পরিবার৷ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন অঙ্কিতের মা মাধুরী চতুর্বেদি৷ এমন সময় এক দাদার পরামর্শে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে ছেলের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠান অমরেশবাবু, 'তুমি যেখানেই থাকো, ফিরে এস৷' ওই 'ফেসবুক স্টেটাস'টি সব পরিচিতজনকে 'লাইক' ও 'শেয়ার' করার আর্জিও জানান যাতে কোনও সূত্র ধরে ওই বার্তা তাঁর ছেলের কাছে পৌঁছায়৷

অমরেশবাবু মঙ্গলবার বলেন, 'এ বছরের মার্চ মাসে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একটা উত্তর এলও৷ কিন্ত্ত তারপর থেকেই অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেওয়া হয়৷ ছেলের খোঁজ পেতে ফেসবুকের বিষয়টি জানাই পুলিশকে৷' এ বার বাগুইআটি থানার সঙ্গে তদন্তে নামে সাইবার ক্রাইম বিভাগও৷

বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি (ডিডি) ঋতু ধর বলেন, 'আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানতে চাই কোথা থেকে ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মেসেজ পাঠানো হয়েছে৷ প্রথমবার একটি দায়সারা উত্তর দেয় তারা৷ ফের গোটা বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত তথ্য দেয়৷' পুলিশ জানতে পারে, মোবাইল এবং ইন্টারনেট টার্মিনাল ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করা হয়েছে৷ মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন এবং ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস থেকে জানা যায়, অমৃতসরেরই বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার হয়েছে৷ এরপরই বাগুইআটি থানার তদন্তকারী অফিসার মণিশঙ্কর দাসের নেতৃত্বে তিনজনের একটি টিম অমরেশবাবুকে নিয়ে রওনা দেয় অমৃতসরের উদ্দেশে৷ সোমবার অঙ্কিতকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ এসিপি (ডিডি) বলেন, 'বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল৷ আমরা তাই সেভাবেই অঙ্কিতের খোঁজ চালিয়েছি৷'

কিন্ত্ত এতদিন অমৃতসরে কী করছিল অঙ্কিত? পুলিশ জানায়, বাড়ি থেকে পালিয়ে কিছুদিন এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করেছে সে৷ ২০০৯ থেকে সে অমৃতসরেই ছিল৷ সেখানে একটি ভোগ্যপণ্য সংস্থার আউটলেটে কাজ করছিল অঙ্কিত৷ পাশাপাশি পড়াশোনাও চালাচ্ছিল৷ অমরেশবাবু বলেন, 'এখন আর কিছু চাই না৷ ছেলে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরে এসেছে, এটাই ঢের৷' ছেলেকে ফিরে পেয়ে বিছানা ছেড়ে সুস্থ হয়ে উঠে দাঁড়াতে চান মাধুরীদেবীও৷

No comments:

Post a Comment