বছরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আসছে হাজার কোটি টাকার অস্ত্র
শংকর কুমার দে ॥ দেশে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রবেশ করছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাচ্ছে এ সব অস্ত্র। ভারত, ইতালি, চেকোস্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, আর্মেনিয়া, ইউএসএ ও জার্মানির তৈরি এ সব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সীমান্ত পথ দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ার পর খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির মতো ভয়ঙ্কর অপরাধী কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডে বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ঝনঝনানি। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সূত্র জানান, আন্ডারওয়ার্ল্ডে এখন সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে সাত দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল। এ ছাড়া টুটু বোর, সাত দশমিক ৬২ বোর, নাইন এমএম পিস্তলের মজুদও রয়েছে অনেক। সাত দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তলের সাত ইঞ্চি ও পাঁচ ইঞ্চি নামে দুটি ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ ইঞ্চির ক্ষুদ্রাস্ত্রটির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এটি শরীরের সঙ্গে সহজেই বহন করা যায় বলে আন্ডারওয়ার্ল্ডেও এর চাহিদা ব্যাপক। এ সব আগ্নেয়াস্ত্র হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন গ্রুপের কাছে। অস্ত্রের বাজারের দামও এখন চড়া। সামনে ঈদ উপলক্ষে ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে ছিনতাইকারীরাও এখন অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে। যেসব অস্ত্র আগে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, সেসব অস্ত্র এখন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্যাডারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। বেড়ে গেছে গুলির দামও। একটি অস্ত্রের সঙ্গে দুটি ম্যাগাজিনে ১০ রাউন্ড গুলি দেয়া হয়। এর বাইরে প্রতি পিস গুলি (বিভিন্ন ধরনের) এখন ৫শ’ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবু অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা ও বাজার এখন তুঙ্গে ও রমরমা।
সূত্র জানান, দেশের চিহ্নিহ্নত সীমান্ত পয়েন্ট দিয়েই ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র। এ সব আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশস্থল ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড। আর এ সব আগ্নেয়াস্ত্র কোনটি ভাড়ায় ছিনতাই, ডাকাতি অথবা কিলিং মিশনে ব্যবহার হচ্ছে। আগ্নেয়াস্ত্রের নিয়ন্ত্রকদের কেউ কেউ দেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের বাইরে অবস্থানরত নিয়ন্ত্রকরা সিগন্যাল দিলেই ভাড়ায় আগ্নেয়াস্ত্রের সাময়িক হাত বদল হয়। আরেকটি গ্রুপ দেশেই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে ফেরারি সন্ত্রাসীরাই নিয়ন্ত্রণ করছে এ সব আগ্নেয়াস্ত্র। রাজধানীতে সম্প্রতি খুন, হত্যা চেষ্টা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আন্ডারওয়ার্ল্ড আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ধানম-িতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এনামুল হক শামীমকে তিনজন আগ্নেয়াস্ত্রধারী প্রকাশ্যে গুলি করে। গত এপ্রিলে রাজধানীতে ১৮টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। মে মাসে ২৪টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ গত জানুয়ারিতে রাজধানী থেকে উদ্ধার করে ১১টি পিস্তলসহ ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র। ফেব্রয়ারিতে উদ্ধার করে ৮টি পিস্তলসহ ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র। মার্চে ১৪টি পিস্তলসহ ২৬টি আগ্নেয়াস্ত্র। এপ্রিল মাসে উদ্ধার করা হয় ১১টি পিস্তলসহ ৩২টি আগ্নেয়াস্ত্র। মে মাসে ১০টি পিস্তলসহ ৩৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডে ব্যাপক অস্ত্র মজুদ রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্র আসছে ঢাকায়। ভারত, ইতালি, চেকোসেøাভাকিয়া, ব্রাজিল, আর্মেনীয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির তৈরি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯ মে খিলগাঁও এলাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জহির আহমেদ। ২০ মে দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে আহত হন বিকাশ এজেন্ট সানাউল্লাহ। ২৩ মে সকালে মতিঝিলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার সুলতান আহমেদ। ২৭ মে মিরপুর দক্ষিণ মনিপুর এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে আহত হয় চার জন। পুলিশ ঘটনার পর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে ২টি পিস্তল ও ২১ রাউন্ড গুলি। ২৮ মে গুলিস্তান এলাকায় গুলি করে ও ককটেল ফাটিয়ে ছিনতাইকারীরা ফল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়ে যায় ৩ লাখ টাকা। ৩ জুন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মিরপুর মনিপুর এলাকা থেকে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করে জালাল শেখ নামে এক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীকে। ৫ জুন রামপুরায় বিকাশ এজেন্ট কাজী রমজান আহত হন ছিনতাইকারীদের গুলিতে। ৭ জুন রায়েরবাগে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হয় মোবাইল রিচার্জ দোকানের কর্মচারী রাসেল। গত ১৭ জুন রাজধানীর মুগদা এলাকায় ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী রুবেল হককে গুলি করে নিয়ে যায় ৬ লাখ টাকা। একই দিন শ্যামপুরের ধোলাইখাল এলাকায় দোকান মালিক জাকির হোসেনকে গুলি করে ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায় ৫০ হাজার টাকা।
এ সব আগ্নেয়াস্ত্র দেশের সীমান্ত এলাকার নির্দিষ্ট পয়েন্ট দিয়ে অবাধে ঢুকছে। সম্প্রতি র্যাব যশোরের বেনাপোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত পয়েন্ট থেকে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৪ জন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও যশোর সীমান্ত এলাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের ঘটনা ধরা পড়েছে। এ ছাড়া দেশের আরও কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের খবর রয়েছে। মেহেরপুরের গাংনী থানার সীমান্তবর্তী সর্দারপাড়া গ্রাম ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বিলগাথুয়া, জামালপুর, পাকুড়িয়া ভাঙ্গাপাড়া, মুন্সীগঞ্জ, চর মোহাম্মদপুর, চল্লিশপাড়া, ছলিমেরচর, গোড়েরচর, মরারচর, বাংলাবাজার এলাকা দিয়ে শতাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, বিনোদপুর, পোল্লাডাঙ্গা, বকচর, হাকিমপুর, বাখর আলী, বাগডাঙ্গা, মাসদুপুর, শিং নগর, মনোহরপুর, রঘুনাথপুর, কিরণগঞ্জ ও চৌকা এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের একটি অন্যতম রুট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার বিবিরবাজার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর বিলোনিয়া ও আমতলী এলাকা, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ, বিরল, ফুলবাড়ী ও নওগাঁর ধামুরহাটের সীমান্তবর্তী ৩টি গ্রাম দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করে। এ সব ঘটনায় র্যাব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীদের ধরার অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতরের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায় আড়াই হাজার বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে গত জানুয়ারিতে ১৭২টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৬০টি, মার্চে ১৭১টি, এপ্রিলে ১৮১টি ও মে মাসে ১৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের কয়েকগুণ বেশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আসছে।
ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ছিনতাই ও গুলি করে হত্যার ঘটনাগুলো পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে ডিএমপির প্রতিটি থানাকে পৃথকভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে। পুলিশ নির্দেশনা অনুযায়ী গত দুই মাসে কয়েকটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে। পবিত্র রমজান মাসেও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দুর্ধর্ষ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সূত্র জানান, আন্ডারওয়ার্ল্ডে এখন সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে সাত দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল। এ ছাড়া টুটু বোর, সাত দশমিক ৬২ বোর, নাইন এমএম পিস্তলের মজুদও রয়েছে অনেক। সাত দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তলের সাত ইঞ্চি ও পাঁচ ইঞ্চি নামে দুটি ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ ইঞ্চির ক্ষুদ্রাস্ত্রটির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এটি শরীরের সঙ্গে সহজেই বহন করা যায় বলে আন্ডারওয়ার্ল্ডেও এর চাহিদা ব্যাপক। এ সব আগ্নেয়াস্ত্র হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন গ্রুপের কাছে। অস্ত্রের বাজারের দামও এখন চড়া। সামনে ঈদ উপলক্ষে ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে ছিনতাইকারীরাও এখন অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে। যেসব অস্ত্র আগে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, সেসব অস্ত্র এখন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্যাডারদের কাছে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। বেড়ে গেছে গুলির দামও। একটি অস্ত্রের সঙ্গে দুটি ম্যাগাজিনে ১০ রাউন্ড গুলি দেয়া হয়। এর বাইরে প্রতি পিস গুলি (বিভিন্ন ধরনের) এখন ৫শ’ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবু অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা ও বাজার এখন তুঙ্গে ও রমরমা।
সূত্র জানান, দেশের চিহ্নিহ্নত সীমান্ত পয়েন্ট দিয়েই ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র। এ সব আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশস্থল ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড। আর এ সব আগ্নেয়াস্ত্র কোনটি ভাড়ায় ছিনতাই, ডাকাতি অথবা কিলিং মিশনে ব্যবহার হচ্ছে। আগ্নেয়াস্ত্রের নিয়ন্ত্রকদের কেউ কেউ দেশের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের বাইরে অবস্থানরত নিয়ন্ত্রকরা সিগন্যাল দিলেই ভাড়ায় আগ্নেয়াস্ত্রের সাময়িক হাত বদল হয়। আরেকটি গ্রুপ দেশেই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে ফেরারি সন্ত্রাসীরাই নিয়ন্ত্রণ করছে এ সব আগ্নেয়াস্ত্র। রাজধানীতে সম্প্রতি খুন, হত্যা চেষ্টা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আন্ডারওয়ার্ল্ড আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ধানম-িতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এনামুল হক শামীমকে তিনজন আগ্নেয়াস্ত্রধারী প্রকাশ্যে গুলি করে। গত এপ্রিলে রাজধানীতে ১৮টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। মে মাসে ২৪টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ গত জানুয়ারিতে রাজধানী থেকে উদ্ধার করে ১১টি পিস্তলসহ ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র। ফেব্রয়ারিতে উদ্ধার করে ৮টি পিস্তলসহ ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র। মার্চে ১৪টি পিস্তলসহ ২৬টি আগ্নেয়াস্ত্র। এপ্রিল মাসে উদ্ধার করা হয় ১১টি পিস্তলসহ ৩২টি আগ্নেয়াস্ত্র। মে মাসে ১০টি পিস্তলসহ ৩৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডে ব্যাপক অস্ত্র মজুদ রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্র আসছে ঢাকায়। ভারত, ইতালি, চেকোসেøাভাকিয়া, ব্রাজিল, আর্মেনীয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির তৈরি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯ মে খিলগাঁও এলাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জহির আহমেদ। ২০ মে দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে আহত হন বিকাশ এজেন্ট সানাউল্লাহ। ২৩ মে সকালে মতিঝিলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার সুলতান আহমেদ। ২৭ মে মিরপুর দক্ষিণ মনিপুর এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে আহত হয় চার জন। পুলিশ ঘটনার পর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে ২টি পিস্তল ও ২১ রাউন্ড গুলি। ২৮ মে গুলিস্তান এলাকায় গুলি করে ও ককটেল ফাটিয়ে ছিনতাইকারীরা ফল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়ে যায় ৩ লাখ টাকা। ৩ জুন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মিরপুর মনিপুর এলাকা থেকে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করে জালাল শেখ নামে এক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীকে। ৫ জুন রামপুরায় বিকাশ এজেন্ট কাজী রমজান আহত হন ছিনতাইকারীদের গুলিতে। ৭ জুন রায়েরবাগে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হয় মোবাইল রিচার্জ দোকানের কর্মচারী রাসেল। গত ১৭ জুন রাজধানীর মুগদা এলাকায় ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী রুবেল হককে গুলি করে নিয়ে যায় ৬ লাখ টাকা। একই দিন শ্যামপুরের ধোলাইখাল এলাকায় দোকান মালিক জাকির হোসেনকে গুলি করে ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায় ৫০ হাজার টাকা।
এ সব আগ্নেয়াস্ত্র দেশের সীমান্ত এলাকার নির্দিষ্ট পয়েন্ট দিয়ে অবাধে ঢুকছে। সম্প্রতি র্যাব যশোরের বেনাপোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্ত পয়েন্ট থেকে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৪ জন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও যশোর সীমান্ত এলাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের ঘটনা ধরা পড়েছে। এ ছাড়া দেশের আরও কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের খবর রয়েছে। মেহেরপুরের গাংনী থানার সীমান্তবর্তী সর্দারপাড়া গ্রাম ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বিলগাথুয়া, জামালপুর, পাকুড়িয়া ভাঙ্গাপাড়া, মুন্সীগঞ্জ, চর মোহাম্মদপুর, চল্লিশপাড়া, ছলিমেরচর, গোড়েরচর, মরারচর, বাংলাবাজার এলাকা দিয়ে শতাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, বিনোদপুর, পোল্লাডাঙ্গা, বকচর, হাকিমপুর, বাখর আলী, বাগডাঙ্গা, মাসদুপুর, শিং নগর, মনোহরপুর, রঘুনাথপুর, কিরণগঞ্জ ও চৌকা এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশের একটি অন্যতম রুট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার বিবিরবাজার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর বিলোনিয়া ও আমতলী এলাকা, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ, বিরল, ফুলবাড়ী ও নওগাঁর ধামুরহাটের সীমান্তবর্তী ৩টি গ্রাম দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করে। এ সব ঘটনায় র্যাব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীদের ধরার অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতরের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায় আড়াই হাজার বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে গত জানুয়ারিতে ১৭২টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৬০টি, মার্চে ১৭১টি, এপ্রিলে ১৮১টি ও মে মাসে ১৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের কয়েকগুণ বেশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আসছে।
ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ছিনতাই ও গুলি করে হত্যার ঘটনাগুলো পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে ডিএমপির প্রতিটি থানাকে পৃথকভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে। পুলিশ নির্দেশনা অনুযায়ী গত দুই মাসে কয়েকটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে। পবিত্র রমজান মাসেও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দুর্ধর্ষ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment