সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশী ব্যক্তিদের টাকা বেড়েছে ॥ আটঘাট বেঁধেই ফেরাতে নামছে সরকার
এম শাহজাহান ॥ অবৈধভাবে টাকা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যাশনাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট তৈরি ও আর্থিক খাতের প্রায় সব সংস্থাকে জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব গ্রাহক সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। কেন, কি উদ্দেশ্যে কারা এই টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে তা জানতে চায় সরকার। এ ছাড়া এই টাকার উৎস কি, বৈধ না অবৈধভাবে আয় করা হয়েছে সে বিষয়েও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সুইস ব্যাংকের টাকার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। মূলত এরপর থেকে এ বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় আঁটঘাট বেঁধে কাজ শুরু করেছে। শীঘ্রই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সভাপতিত্বে সমন্বয় কমিটির বৈঠক করা হবে। এ ছাড়া বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ আরও দ্রুত কার্যকর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং করে যেসব অর্থ দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে তা দ্রুত ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে সমন্বয় কমিটির বৈঠকে।
ওই বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, এ্যাটর্নি জেনারেল অব বাংলাদেশ, গবর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক, সিনিয়র সচিব স্বরাষ্ট, সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়, চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সরকারী অন্যান্য সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। দেশে সরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সুইস ব্যাংকের এ ঘটনায় প্রমাণ হচ্ছে দেশের টাকা বাইরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে টাকা পাচার, মানিল্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে বরাবরই কঠোর অবস্থানে সরকার।
এ কারণে দেশ থেকে যাতে কোন টাকা পাচার না হতে পারে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। শীঘ্রই সমন্বয় কমিটি বৈঠকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদ- নির্ধারণকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) বাংলাদেশকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি প্যারিসে অনুষ্ঠিত সভায় এফএটিএফের ধূসর তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের লেনদেন আর এফএটিএফের পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে না। এর ফলে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ হবে।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশ থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছিল ২০০৬ সালে। যার পরিমাণ ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ২১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। তার পর ২০০৭ সালে যার পরিমাণ ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ২০ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা।
সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ থেকে পাচারের প্রবণতা বাড়ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সম্প্রতি বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে গত এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মতে, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে। এর ফলে বিশ্বের যে ১৫০টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জিএফআই তথ্য দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০০২-১১ সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে রাশিয়া ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি ডলার। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো ৪৬ হাজার কোটি ডলার ও মালয়েশিয়া ৩৭ হাজার কোটি ডলার। পাচার হওয়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান পঞ্চম। ১০ বছরে ভারত থেকে ৩৪ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এই অভিযানে নামে। এ ছাড়া এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিশন কাজও শুরু করছে। যদিও এ ব্যাপারে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোক নিয়োগ থেকে শুরু করে হিসাব খোলা, করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা তদারকি করা, পিইপিদের (বিদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তি) সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পলিসি তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করা, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং গ্রাহকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কঠোর ও আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া জঙ্গী অর্থায়ন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
দেশ থেকে কেন টাকা পাচার হচ্ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক নীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ও আর্থিক তদারকি-ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে টাকা পাচার হয়ে থাকে। ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা অনেক সময়ই দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন যে হঠাৎ কোন নীতি পরিবর্তন হলে তাঁদের কী হবে। ফলে অনেকে অর্জিত মুনাফা বিভিন্নভাবে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের টাকা পাচাররোধ করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগের নিরাপত্তা থাকলে টাকা পাচার কমে আসবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে কিংবা অবৈধ পথে অর্থ সংগ্রহ করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের অর্থ দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের লভ্যাংশ দিয়ে সংগঠনের খরচ বহন করছে। বিষয়টি সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে যাতে বৈধ-অবৈধ পথে জঙ্গী অর্থায়ন আসতে না পারে সে জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
টাকা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ॥ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার পর টাকা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের এত বড় অর্জন কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোপূর্বে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদ- নির্ধারণকারী সংস্থা এফএটিএফ বাংলাদেশকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে এফএটিএফের ধূসর তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। এই স্বীকৃতির পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের লেনদেন আর এফএটিএফের পর্যবেক্ষণের আওতায় নেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসলাম আলম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নকে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের তফসিলভুক্ত করা, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যাশনাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট শেষ করা, আর্থিক খাতের প্রায় সব সংস্থাকে জবাবদিহির আওতায় আনাসহ বিভিন্ন পদেক্ষপ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন বিভিন্ন তৎপরতার মাধ্যমে বর্তমানে আমরা ধূসর তালিকা থেকেই বেরিয়ে এসেছি। এটা আমাদের জন্য বিশাল অর্জন। এই অর্জন ধরে রাখতে টাকা পাচার, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সূত্র মতে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সুইস ব্যাংকের টাকার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। মূলত এরপর থেকে এ বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় আঁটঘাট বেঁধে কাজ শুরু করেছে। শীঘ্রই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সভাপতিত্বে সমন্বয় কমিটির বৈঠক করা হবে। এ ছাড়া বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ আরও দ্রুত কার্যকর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং করে যেসব অর্থ দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে তা দ্রুত ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে সমন্বয় কমিটির বৈঠকে।
ওই বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, এ্যাটর্নি জেনারেল অব বাংলাদেশ, গবর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক, সিনিয়র সচিব স্বরাষ্ট, সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়, চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সরকারী অন্যান্য সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। দেশে সরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সুইস ব্যাংকের এ ঘটনায় প্রমাণ হচ্ছে দেশের টাকা বাইরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে টাকা পাচার, মানিল্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে বরাবরই কঠোর অবস্থানে সরকার।
এ কারণে দেশ থেকে যাতে কোন টাকা পাচার না হতে পারে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। শীঘ্রই সমন্বয় কমিটি বৈঠকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদ- নির্ধারণকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) বাংলাদেশকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি প্যারিসে অনুষ্ঠিত সভায় এফএটিএফের ধূসর তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের লেনদেন আর এফএটিএফের পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে না। এর ফলে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ হবে।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশ থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছিল ২০০৬ সালে। যার পরিমাণ ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ২১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। তার পর ২০০৭ সালে যার পরিমাণ ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ২০ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা।
সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ থেকে পাচারের প্রবণতা বাড়ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সম্প্রতি বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে গত এক দশকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে, তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মতে, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে বাইরে চলে গেছে। এর ফলে বিশ্বের যে ১৫০টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জিএফআই তথ্য দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০০২-১১ সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছে রাশিয়া ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি ডলার। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো ৪৬ হাজার কোটি ডলার ও মালয়েশিয়া ৩৭ হাজার কোটি ডলার। পাচার হওয়া শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান পঞ্চম। ১০ বছরে ভারত থেকে ৩৪ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এই অভিযানে নামে। এ ছাড়া এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিশন কাজও শুরু করছে। যদিও এ ব্যাপারে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লোক নিয়োগ থেকে শুরু করে হিসাব খোলা, করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা তদারকি করা, পিইপিদের (বিদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তি) সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পলিসি তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করা, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং গ্রাহকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কঠোর ও আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া জঙ্গী অর্থায়ন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
দেশ থেকে কেন টাকা পাচার হচ্ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক নীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ও আর্থিক তদারকি-ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে টাকা পাচার হয়ে থাকে। ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা অনেক সময়ই দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন যে হঠাৎ কোন নীতি পরিবর্তন হলে তাঁদের কী হবে। ফলে অনেকে অর্জিত মুনাফা বিভিন্নভাবে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের টাকা পাচাররোধ করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগের নিরাপত্তা থাকলে টাকা পাচার কমে আসবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে কিংবা অবৈধ পথে অর্থ সংগ্রহ করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের অর্থ দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের লভ্যাংশ দিয়ে সংগঠনের খরচ বহন করছে। বিষয়টি সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে যাতে বৈধ-অবৈধ পথে জঙ্গী অর্থায়ন আসতে না পারে সে জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
টাকা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ॥ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার পর টাকা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের এত বড় অর্জন কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোপূর্বে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত প্রতিরোধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদ- নির্ধারণকারী সংস্থা এফএটিএফ বাংলাদেশকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে এফএটিএফের ধূসর তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে। এই স্বীকৃতির পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের লেনদেন আর এফএটিএফের পর্যবেক্ষণের আওতায় নেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসলাম আলম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নকে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের তফসিলভুক্ত করা, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যাশনাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট শেষ করা, আর্থিক খাতের প্রায় সব সংস্থাকে জবাবদিহির আওতায় আনাসহ বিভিন্ন পদেক্ষপ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন বিভিন্ন তৎপরতার মাধ্যমে বর্তমানে আমরা ধূসর তালিকা থেকেই বেরিয়ে এসেছি। এটা আমাদের জন্য বিশাল অর্জন। এই অর্জন ধরে রাখতে টাকা পাচার, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment