বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
প্রকাশ : ০২ জুলাই, ২০১৪
বিপুল উদ্দীপনা আর দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উচ্চশিক্ষা’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে প্রশাসনিক ভবন সামনের মল চত্বরে। সেখানে জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে উত্তোলিত হয় জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা ও হলগুলোর পতাকা। এ সময় উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ।
পরে ক্যাম্পাসে বের হয় এক বর্ণাঢ্য র্যালি। এর অগ্রভাগে ছিলেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক। র্যালিটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গিয়ে শেষ হয়।
দিনটি বরণ করতে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাজে এক রঙিন সাজে। সর্বত্রই চোখে পড়ে লাল-নীল মরিচ বাতির ঝলক। বিভিন্ন স্থানে টাঙানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্যানার ও ফেস্টুন। আকর্ষণ তৈরি করেছে কার্জন হলের দৃষ্টিনন্দন সাজ। এছাড়া কলাভবন, সিনেট ভবন, রেজিস্ট্রার ভবন, ভিসির বাস ভবন, আইবিএ ভবন, শিক্ষা ইন্সটিটিউট, বাণিজ্য অনুষদও সেজেছে রঙিন সাজে।
বেলা ১১টায় হয় এক আলোচনা সভা। এতে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বক্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়টি গভীরভাবে জড়িত। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে গেলে এই দু’য়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেশের সামাজিক উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে পারে না। এক্ষেত্রে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু ও নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসন করতে হবে। উন্নয়নের মূল ধারায় সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ভিসি অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সমাজ ও জাতি গঠন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মুক্ত চিন্তা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই ধারা অব্যাহত রাখবেন। মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ১৯৭২ সালের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বেড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। তাই উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও টেকসই মানবসম্পদ সৃষ্টিতে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
অন্যান্য কর্মসূচি : সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনী। বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে। বিকালে সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে হয়েছে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ। সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কার্জন হল ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব বারান্দায় বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি/গবেষণার প্রদর্শনী। সকাল সাড়ে ১০টায় চারুকলা অনুষদে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। দুপুর সাড়ে বারোটায় টিএসসিতে প্রদর্শিত হয় সৈয়দ রেজাউর রহমানের পরিচালনায় নির্মিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডল মিলনায়তনে ৫ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগ। রাত আটটার দিকে ‘হ্যামলেট’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়।
No comments:
Post a Comment