ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি ॥ সিডিউল বিপর্যয় ট্রেন, লঞ্চে
০ সদরঘাটে যাত্রী হয়রানি
০ বিলাসবহুল বাসের টিকেট নেই
০ বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
০ নিরাপদ মহাসড়ক, যানজট নেই
০ বিলাসবহুল বাসের টিকেট নেই
০ বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
০ নিরাপদ মহাসড়ক, যানজট নেই
রাজন ভট্টাচার্য ॥ বদলে গেছে রাজধানী ঢাকার চিত্র। অনেকটাই ফাঁকা যানজটের এই মহানগরী। শুরু হয়ে গেছে ঈদের আমেজ। মার্কেট আর বিপণিবিতানে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। এদিকে ট্রেন-বাস ও লঞ্চে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের পথে মানুষ। শনিবার সড়ক-নৌ ও রেলপথে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি ও সময়মতো না আসায় রেলপথে সিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। বিলম্বে ছাড়ে লঞ্চ। যাত্রী হয়রানির অভিযোগ ছিল বেশ। মহাসড়কে ভোগান্তি নেই। বিলাসবহুল বাসের জন্য টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষা ছিল দীর্ঘ সময়। বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় ॥ সকালে একঘণ্টা দেরি করে স্টেশন ছাড়ে চট্টলা এক্সপ্রেস। দুপুর ১টায় সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। কিন্তু বেলা ২টায়ও প্লাটফর্ম ছাড়তে পারেনি ট্রেনটি। ঘণ্টাখানেক ধরে মাইকে কেবল ‘অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ছাড়বে’ এমন ঘোষণা আসছিল। কিন্তু আসলেই কখন ছাড়বে জয়ন্তিকা, তা জানেন না যাত্রীরা। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের মতো সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঈশা খাঁ, কুমিল্লা কমিউটার ট্রেন সিডিউল অনুযায়ী ছাড়তে পারেনি কমলাপুর রেলস্টেশন। এরপর আর কোন ট্রেনই সিডিউল ঠিক রাখতে পারেনি। রাজশাহী এক্সপ্রেস, জয়দেবপুর কমিউটার এবং সুবর্ণ এক্সপ্রেস যাত্রীরা প্লাটফর্মে বসে যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ার অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন।
এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার বলেন, ‘সকালে ঠিক ছিল সিডিউল। কিন্তু দুপুর থেকে সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তবে বেশি দেরি হচ্ছে না। ঘণ্টা দেড়েকের ব্যবধানে ট্রেন ছাড়ছে।’ এই দেরিকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করেন তিনি। সকালে রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে সিডিউল ঠিক আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন রেলের মহাপরিচালক তফাজ্জল হোসেন। কিন্তু তারপরই ভেঙ্গে পড়ে সিডিউল। ঠিক সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় দুপুরের দিকে ৬/৭টি ট্রেনের জট তৈরি হয়। এ সময় স্টেশনের ৭টি প্লাটফর্মে যাত্রীরা বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। অনেক যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েন ট্রেনের অপেক্ষায়। প্লাটফর্মে অসহ্য গরমের মধ্যে দুর্ভোগে পড়া যাত্রী কবির হোসেন জানান, কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়া নিয়ে উদাসীন। তারা যাত্রীদের কোন তথ্য দিচ্ছেন না। মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে যাবে কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যাচ্ছে ট্রেন আসেও না, ছাড়েও না। বিকেলে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সকালে যথাসময়ে বাড়ি যাওয়ার যে আনন্দ যাত্রীদের চোখেমুখে ছিল দুপুরের পর অনেকের চেহারা মলিন হয়ে গেছে।
রেলের মহাপরিচালক তফাজ্জল রেলের সিডিউল বিপর্যয় সম্পর্কে বলেন, সারা দেশে ৩৬৬টি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু বগি যোগ করা হয়েছে ১৬৬টি। গতবারের তুলনায় বগি সংযোজন বৃদ্ধি পেলেও এটা কাক্সিক্ষত সংখ্যায় নয়। তিনি বলেন, শুক্রবার কমলাপুর থেকে ৬৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এসবের মধ্যে মাত্র ৩টি ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে।
অন্যবারের মতো কমলাপুর রেলস্টেশনে শনিবার সকালে যাত্রীদের তেমন একটা ভিড় চোখে পড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজনের আনাগোনা বাড়ছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ১৭টি ট্রেন। এর মধ্যে শুধু খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা পর ছাড়ে। শনিবার বেলা ২টা ৪০ মিনিটে সিল্কসিটি ট্রেনটি (ট্রেন নং ৭৫৩) রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে ট্রেনটি আসে বলে জানা গেছে। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে জয়ন্তিকা ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক ঘণ্টা পরে কমলাপুর ছাড়ে। সিল্কসিটির যাত্রী পাভেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রেন এখনও প্লাটফর্মে আসেনি। কখন আসবে তাও জানতে পারছি না।
বিলম্বে লঞ্চ যাত্রা- যাত্রী হয়রানির অভিযোগ ॥ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে মুখর। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষ সদরঘাট লঞ্চটার্মিনালে আসতে শুরু করেন। তবে নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও পন্টুন ছাড়েনি অনেক লঞ্চ। যাত্রী হয়রানির অভিযোগ করেন অনেকে। ঝুঁকি নিয়ে নৌপথের যাত্রা তো আছেই। কোন কোন লঞ্চে তিল ধারণের কোন ঠাঁই ছিল না। ভোর থেকেই লঞ্চগুলোকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকে ঘোষণা দিয়েই দায় সাড়ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময় পর লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার জন্য তাদের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোন তৎপরতা ছিল না।
বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শক শাহাবুদ্দিন বলেন, দুই একটি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে কিছুটা সময় নিয়েছে। এছাড়া আর কিছু না। ঘরমুখো যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত ও নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ চলাচলের ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোঃ সাইফুল হক খান জানান, অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। যাত্রীদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে না পারে সেজন্য মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই বাড়ানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সংখ্যা।
ঈদ সামনে রেখে যাত্রীদের মালামাল পরিবহনে কুলিদের দৌরাত্ম্য চরমে পৌঁছে গেছে। যাত্রীদের মালামাল পরিবহন ইজারামুক্ত হলেও ইচ্ছে মতো টোল আদায় করছে ইজারাদারের নিয়োজিত লোকেরা। এর ফলে হয়রানি বন্ধে বর্তমান সরকার পদক্ষেপ নিলেও এতে উপকৃত হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। একই ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন লঞ্চে বাণিজ্য পণ্য নিতে আসা ব্যবসায়ীরা। ঢাকা নদী বন্দরের বন্দর কর্মকর্তা যুগ্ম-পরিচালক সাইফুল ইসলাম কুলিদের হাতে যাত্রী হয়রানির কথা স্বীকার করে বলেন, মাঝে মাঝে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু হয়রানির শিকার হলেও যাত্রীরা বেশিরভাগ সময় অভিযোগ করে না বলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তবে যতদূর সম্ভব শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমাদের তদারকি বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ইজারাদারের সদিচ্ছা থাকলে মালামাল পরিবহনে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব।
জানা গেছে, ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০১০ সালের ১ জুলাই ঢাকা নদী বন্দরের অধীন সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি বন্ধে ইজারা প্রথা বাতিল করে। পটুয়াখালী থেকে আসা যাত্রী মনোয়ার হোসেনের (৪৫) কাছ থেকে একটি লাগেজের জন্য দেড় শ’ টাকা দাবি করে এক কুলি। পরে এক শ’ টাকায় দফারফা হয়। আমতলী থেকে আসা সেরাজুল ইসলাম (৭০) নামের এক যাত্রী ২৫ কেজি চালের বস্তা এবং একটি ব্যাগ নিয়ে টার্মিনালে নামেন। কিন্তু কুলিরা তাকে ঘিরে ধরে ঘাট দিয়ে বস্তা বহন করার জন্য এক শ’ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে বস্তা যাবে না বলে টেনেহিঁচড়ে সেরাজুলের মাথা থেকে চালের বস্তা নামিয়ে ফেলে কুলিরা। শেষ পর্যন্ত যাত্রীর কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ প্রতিটি মোটরসাইকেল লঞ্চে তোলা কিংবা ঘাটে নামানোর জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ইজারাদারের লোকজন জোর করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। এছাড়া স্টিলের আলমারি টার্মিনাল ভবনের গেট থেকে লঞ্চে তোলা কিংবা ঘাটে নামানোর জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৫০০ টাকার নিচে নেয়া হয় না। একইভাবে স্টিল বা কাঠের খাটের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও ৫০০ টাকা, সব আয়তনের ফ্রিজে ৫০ টাকার স্থলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেলিভিশন ২০ টাকার স্থলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, ২০ কেজি ওজনের ব্যাগ বা বস্তা ২০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা, ৩০ কেজি ওজনের দুটি ব্যাগ ৫০ টাকার স্থলে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পরিবহন মজুরি বাবদ আদায় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া টার্মিনাল ও পন্টুনে রয়েছে হকার, ছিনতাইকারি, টানা পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও ভাসমান মানুষের দৌরাত্ম্য। যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার থাকে ভাসমান ও অপরাধীদের দখলে। হকার বসিয়ে ইজারাদার বাণিজ্য চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন লঞ্চ মালিকরা। ইজারাদারের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে লঞ্চ মালিক সমিতি ২০১০ সালের ২৮ নবেম্বর বিকেলে কিছু সময়ের জন্য প্রতীকী নৌ ধর্মঘটও পালন করেছিল। বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এক শ’ কুলি এবং তাদের আকাশি রঙের পোশাক ও পরিচিতি নম্বর দেয়ার কথা ছিল। প্রথমে কয়েকজনকে দেয়ার কথা শোনা গেলেও তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সদরঘাট বন্দরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন এখানে কুলির কোন হিসাব নেই। ইজারাদার ইচ্ছে মতো টার্মিনালে কুলি দিয়েছেন। ইজারাদার মন্ত্রীর লোক যে কারণে ভয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাহস পায় না। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সাবেক সহ-সভাপতি সাহাবউদ্দিন মিলন বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে যাত্রী হয়রানির। আর ঈদ কোরবানির সময় হয়রানির মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। টার্মিনালে হয়রানি বন্ধ ও সুষ্ঠু যাত্রী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বন্দর কর্মকর্তা এবং ইজারাদারকে বার বার বলা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গাবতলীতে বিলাসবহুল বাসের অপেক্ষা ॥ রাজধানীর গাবতলীতে যাত্রী বেশি থাকলেও টিকেট বিক্রি সে তুলনায় অনেক কম। অনেক কাউন্টারে পর্যাপ্ত টিকেট থাকলেও যাত্রী নেই। গাবতলী বাসটার্মিনাল কাউন্টার ঘুরে জানা গেছে, এবার দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় ১৫ রমজানের পর থেকে ঢাকা ছেড়েছে মানুষ। যার কারণে চাপ কম। অনেকের আগের টিকেট কেনা থাকায় কাউন্টারে তেমন ঝামেলা হচ্ছে না। ভাড়া বিষয়ে যাত্রীদের পুরনো সেই অভিযোগ। ঈদের আগে বিআরটিসি নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হয় না। ঈদকে পুঁজি করে সারা বছরের ভাড়া পুষিয়ে নিচ্ছে তারা। এতে ভাড়া নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে গাড়ি নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য তো আছেই।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রুবেল জানান, গত বছর যাত্রীর প্রচুর চাপ ছিল। টিকেট দিতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়েছে। এবার যাত্রীও নেই, চাপও নেই। ১৪-২৩ জুলাই অনেক যাত্রী অগ্রিম টিকেট নেয়াতে চাপ কম। তিনি বলেন, এবার দীর্ঘ ছুটির কারণে অনেকে পরিবারের লোকদের আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাড়তি ভাড়া বিষয়ে রুবেল বলেন, ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত জেলাগুলোতে ৫২০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। ঈদ না হলে ৪৫০-৫০০ টাকা নেয়া হতো। সারাবছর আমরা লোকসান দেই, ঈদের সময় একটু বেশি নিলে দোষ কি? রাস্তায় রাস্তায় কাউন্টার হওয়াতে টার্মিনালে চাপ নেই বলে জানালেন গাবতলী শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নুরুল আমিন। তিনি বলেন, টেকনিক্যাল, রজব আলী ও কল্যাণপুরে রাস্তার ওপর কাউন্টার হওয়াতে গাবতলী টার্মিনালে যাত্রী কম। এ বছর যাত্রীরা যেন বাড়ি যাচ্ছে না। এসব কাউন্টারের কারণে আমরা মার খাচ্ছি। এ ছাড়া অনেক লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির কারণেও আমাদের বিক্রি কম। গাবতলী বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনর অর্থ সম্পাদক কামাল উদ্দিন জাসদ বলেন, যাত্রী হয়রানির বিষয়ে আমাদের লোকজনও কাজ করছে। যদি কোন বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মহাখালীতে শুক্রবারের চেয়ে শনিবার যাত্রী চাপ বেশ ছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল রুটে বাস সঙ্কট দেখা গেছে। সায়েদাবাদের চিত্র ঠিক একই রকমের। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বারের মতো বাসটার্মিনালগুলোতে এখন পর্যন্ত জনস্রোত তৈরি হয়নি। গার্মেন্টস ছুটির পর অর্থাৎ আজ থেকে জনস্রোত বাড়বে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল-সিলেট গুরুত্বপূর্ণ এই চার মহাসড়কে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটের কোন খবর পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ নিরাপদেই বাড়ি ফিরতে পেরেছেন ঘরমুখো মানুষ। এদিকে ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মার্কেট ছাড়া কোথাও যানজটের দৃশ্য নেই। নগরজুড়ে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। বাস-লঞ্চ-ট্রেন টার্মিনালমুখী মানুষের গন্তব্য। সবাই যে যার মতো করে ছুটছেন বাড়ির দিকে।
ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় ॥ সকালে একঘণ্টা দেরি করে স্টেশন ছাড়ে চট্টলা এক্সপ্রেস। দুপুর ১টায় সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। কিন্তু বেলা ২টায়ও প্লাটফর্ম ছাড়তে পারেনি ট্রেনটি। ঘণ্টাখানেক ধরে মাইকে কেবল ‘অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ছাড়বে’ এমন ঘোষণা আসছিল। কিন্তু আসলেই কখন ছাড়বে জয়ন্তিকা, তা জানেন না যাত্রীরা। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের মতো সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঈশা খাঁ, কুমিল্লা কমিউটার ট্রেন সিডিউল অনুযায়ী ছাড়তে পারেনি কমলাপুর রেলস্টেশন। এরপর আর কোন ট্রেনই সিডিউল ঠিক রাখতে পারেনি। রাজশাহী এক্সপ্রেস, জয়দেবপুর কমিউটার এবং সুবর্ণ এক্সপ্রেস যাত্রীরা প্লাটফর্মে বসে যথাসময়ে ট্রেন ছাড়ার অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন।
এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার বলেন, ‘সকালে ঠিক ছিল সিডিউল। কিন্তু দুপুর থেকে সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তবে বেশি দেরি হচ্ছে না। ঘণ্টা দেড়েকের ব্যবধানে ট্রেন ছাড়ছে।’ এই দেরিকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করেন তিনি। সকালে রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে সিডিউল ঠিক আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন রেলের মহাপরিচালক তফাজ্জল হোসেন। কিন্তু তারপরই ভেঙ্গে পড়ে সিডিউল। ঠিক সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় দুপুরের দিকে ৬/৭টি ট্রেনের জট তৈরি হয়। এ সময় স্টেশনের ৭টি প্লাটফর্মে যাত্রীরা বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। অনেক যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েন ট্রেনের অপেক্ষায়। প্লাটফর্মে অসহ্য গরমের মধ্যে দুর্ভোগে পড়া যাত্রী কবির হোসেন জানান, কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়া নিয়ে উদাসীন। তারা যাত্রীদের কোন তথ্য দিচ্ছেন না। মাইকে ঘোষণা দেয়া হয় কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে যাবে কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যাচ্ছে ট্রেন আসেও না, ছাড়েও না। বিকেলে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সকালে যথাসময়ে বাড়ি যাওয়ার যে আনন্দ যাত্রীদের চোখেমুখে ছিল দুপুরের পর অনেকের চেহারা মলিন হয়ে গেছে।
রেলের মহাপরিচালক তফাজ্জল রেলের সিডিউল বিপর্যয় সম্পর্কে বলেন, সারা দেশে ৩৬৬টি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু বগি যোগ করা হয়েছে ১৬৬টি। গতবারের তুলনায় বগি সংযোজন বৃদ্ধি পেলেও এটা কাক্সিক্ষত সংখ্যায় নয়। তিনি বলেন, শুক্রবার কমলাপুর থেকে ৬৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এসবের মধ্যে মাত্র ৩টি ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে।
অন্যবারের মতো কমলাপুর রেলস্টেশনে শনিবার সকালে যাত্রীদের তেমন একটা ভিড় চোখে পড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজনের আনাগোনা বাড়ছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ১৭টি ট্রেন। এর মধ্যে শুধু খুলনাগামী সুন্দরবন ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা পর ছাড়ে। শনিবার বেলা ২টা ৪০ মিনিটে সিল্কসিটি ট্রেনটি (ট্রেন নং ৭৫৩) রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে ট্রেনটি আসে বলে জানা গেছে। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে জয়ন্তিকা ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক ঘণ্টা পরে কমলাপুর ছাড়ে। সিল্কসিটির যাত্রী পাভেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রেন এখনও প্লাটফর্মে আসেনি। কখন আসবে তাও জানতে পারছি না।
বিলম্বে লঞ্চ যাত্রা- যাত্রী হয়রানির অভিযোগ ॥ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে মুখর। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষ সদরঘাট লঞ্চটার্মিনালে আসতে শুরু করেন। তবে নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও পন্টুন ছাড়েনি অনেক লঞ্চ। যাত্রী হয়রানির অভিযোগ করেন অনেকে। ঝুঁকি নিয়ে নৌপথের যাত্রা তো আছেই। কোন কোন লঞ্চে তিল ধারণের কোন ঠাঁই ছিল না। ভোর থেকেই লঞ্চগুলোকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকে ঘোষণা দিয়েই দায় সাড়ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময় পর লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার জন্য তাদের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোন তৎপরতা ছিল না।
বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শক শাহাবুদ্দিন বলেন, দুই একটি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে কিছুটা সময় নিয়েছে। এছাড়া আর কিছু না। ঘরমুখো যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত ও নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ চলাচলের ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোঃ সাইফুল হক খান জানান, অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। যাত্রীদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে না পারে সেজন্য মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই বাড়ানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সংখ্যা।
ঈদ সামনে রেখে যাত্রীদের মালামাল পরিবহনে কুলিদের দৌরাত্ম্য চরমে পৌঁছে গেছে। যাত্রীদের মালামাল পরিবহন ইজারামুক্ত হলেও ইচ্ছে মতো টোল আদায় করছে ইজারাদারের নিয়োজিত লোকেরা। এর ফলে হয়রানি বন্ধে বর্তমান সরকার পদক্ষেপ নিলেও এতে উপকৃত হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। একই ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন লঞ্চে বাণিজ্য পণ্য নিতে আসা ব্যবসায়ীরা। ঢাকা নদী বন্দরের বন্দর কর্মকর্তা যুগ্ম-পরিচালক সাইফুল ইসলাম কুলিদের হাতে যাত্রী হয়রানির কথা স্বীকার করে বলেন, মাঝে মাঝে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু হয়রানির শিকার হলেও যাত্রীরা বেশিরভাগ সময় অভিযোগ করে না বলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। তবে যতদূর সম্ভব শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমাদের তদারকি বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ইজারাদারের সদিচ্ছা থাকলে মালামাল পরিবহনে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করা সম্ভব।
জানা গেছে, ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০১০ সালের ১ জুলাই ঢাকা নদী বন্দরের অধীন সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি বন্ধে ইজারা প্রথা বাতিল করে। পটুয়াখালী থেকে আসা যাত্রী মনোয়ার হোসেনের (৪৫) কাছ থেকে একটি লাগেজের জন্য দেড় শ’ টাকা দাবি করে এক কুলি। পরে এক শ’ টাকায় দফারফা হয়। আমতলী থেকে আসা সেরাজুল ইসলাম (৭০) নামের এক যাত্রী ২৫ কেজি চালের বস্তা এবং একটি ব্যাগ নিয়ে টার্মিনালে নামেন। কিন্তু কুলিরা তাকে ঘিরে ধরে ঘাট দিয়ে বস্তা বহন করার জন্য এক শ’ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে বস্তা যাবে না বলে টেনেহিঁচড়ে সেরাজুলের মাথা থেকে চালের বস্তা নামিয়ে ফেলে কুলিরা। শেষ পর্যন্ত যাত্রীর কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ প্রতিটি মোটরসাইকেল লঞ্চে তোলা কিংবা ঘাটে নামানোর জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ইজারাদারের লোকজন জোর করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। এছাড়া স্টিলের আলমারি টার্মিনাল ভবনের গেট থেকে লঞ্চে তোলা কিংবা ঘাটে নামানোর জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৫০০ টাকার নিচে নেয়া হয় না। একইভাবে স্টিল বা কাঠের খাটের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও ৫০০ টাকা, সব আয়তনের ফ্রিজে ৫০ টাকার স্থলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেলিভিশন ২০ টাকার স্থলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, ২০ কেজি ওজনের ব্যাগ বা বস্তা ২০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা, ৩০ কেজি ওজনের দুটি ব্যাগ ৫০ টাকার স্থলে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পরিবহন মজুরি বাবদ আদায় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া টার্মিনাল ও পন্টুনে রয়েছে হকার, ছিনতাইকারি, টানা পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও ভাসমান মানুষের দৌরাত্ম্য। যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার থাকে ভাসমান ও অপরাধীদের দখলে। হকার বসিয়ে ইজারাদার বাণিজ্য চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন লঞ্চ মালিকরা। ইজারাদারের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে লঞ্চ মালিক সমিতি ২০১০ সালের ২৮ নবেম্বর বিকেলে কিছু সময়ের জন্য প্রতীকী নৌ ধর্মঘটও পালন করেছিল। বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এক শ’ কুলি এবং তাদের আকাশি রঙের পোশাক ও পরিচিতি নম্বর দেয়ার কথা ছিল। প্রথমে কয়েকজনকে দেয়ার কথা শোনা গেলেও তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সদরঘাট বন্দরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন এখানে কুলির কোন হিসাব নেই। ইজারাদার ইচ্ছে মতো টার্মিনালে কুলি দিয়েছেন। ইজারাদার মন্ত্রীর লোক যে কারণে ভয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাহস পায় না। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সাবেক সহ-সভাপতি সাহাবউদ্দিন মিলন বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে যাত্রী হয়রানির। আর ঈদ কোরবানির সময় হয়রানির মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। টার্মিনালে হয়রানি বন্ধ ও সুষ্ঠু যাত্রী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বন্দর কর্মকর্তা এবং ইজারাদারকে বার বার বলা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গাবতলীতে বিলাসবহুল বাসের অপেক্ষা ॥ রাজধানীর গাবতলীতে যাত্রী বেশি থাকলেও টিকেট বিক্রি সে তুলনায় অনেক কম। অনেক কাউন্টারে পর্যাপ্ত টিকেট থাকলেও যাত্রী নেই। গাবতলী বাসটার্মিনাল কাউন্টার ঘুরে জানা গেছে, এবার দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় ১৫ রমজানের পর থেকে ঢাকা ছেড়েছে মানুষ। যার কারণে চাপ কম। অনেকের আগের টিকেট কেনা থাকায় কাউন্টারে তেমন ঝামেলা হচ্ছে না। ভাড়া বিষয়ে যাত্রীদের পুরনো সেই অভিযোগ। ঈদের আগে বিআরটিসি নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হয় না। ঈদকে পুঁজি করে সারা বছরের ভাড়া পুষিয়ে নিচ্ছে তারা। এতে ভাড়া নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে গাড়ি নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য তো আছেই।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রুবেল জানান, গত বছর যাত্রীর প্রচুর চাপ ছিল। টিকেট দিতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়েছে। এবার যাত্রীও নেই, চাপও নেই। ১৪-২৩ জুলাই অনেক যাত্রী অগ্রিম টিকেট নেয়াতে চাপ কম। তিনি বলেন, এবার দীর্ঘ ছুটির কারণে অনেকে পরিবারের লোকদের আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাড়তি ভাড়া বিষয়ে রুবেল বলেন, ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত জেলাগুলোতে ৫২০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। ঈদ না হলে ৪৫০-৫০০ টাকা নেয়া হতো। সারাবছর আমরা লোকসান দেই, ঈদের সময় একটু বেশি নিলে দোষ কি? রাস্তায় রাস্তায় কাউন্টার হওয়াতে টার্মিনালে চাপ নেই বলে জানালেন গাবতলী শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নুরুল আমিন। তিনি বলেন, টেকনিক্যাল, রজব আলী ও কল্যাণপুরে রাস্তার ওপর কাউন্টার হওয়াতে গাবতলী টার্মিনালে যাত্রী কম। এ বছর যাত্রীরা যেন বাড়ি যাচ্ছে না। এসব কাউন্টারের কারণে আমরা মার খাচ্ছি। এ ছাড়া অনেক লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির কারণেও আমাদের বিক্রি কম। গাবতলী বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনর অর্থ সম্পাদক কামাল উদ্দিন জাসদ বলেন, যাত্রী হয়রানির বিষয়ে আমাদের লোকজনও কাজ করছে। যদি কোন বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মহাখালীতে শুক্রবারের চেয়ে শনিবার যাত্রী চাপ বেশ ছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল রুটে বাস সঙ্কট দেখা গেছে। সায়েদাবাদের চিত্র ঠিক একই রকমের। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বারের মতো বাসটার্মিনালগুলোতে এখন পর্যন্ত জনস্রোত তৈরি হয়নি। গার্মেন্টস ছুটির পর অর্থাৎ আজ থেকে জনস্রোত বাড়বে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল-সিলেট গুরুত্বপূর্ণ এই চার মহাসড়কে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটের কোন খবর পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ নিরাপদেই বাড়ি ফিরতে পেরেছেন ঘরমুখো মানুষ। এদিকে ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মার্কেট ছাড়া কোথাও যানজটের দৃশ্য নেই। নগরজুড়ে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। বাস-লঞ্চ-ট্রেন টার্মিনালমুখী মানুষের গন্তব্য। সবাই যে যার মতো করে ছুটছেন বাড়ির দিকে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment