Friday, July 25, 2014

এবার টার্গেট হিন্দু সম্প্রদায়

ফটিকছড়িতে গুজব ছড়িয়ে রামু ঘটনার পুনরাবৃত্তির চেষ্টা!
এবার টার্গেট হিন্দু সম্প্রদায়
নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি ॥ মক্কা শরীফ অবমাননা করার একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করার গুজবে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতেও ঘটতে যাচ্ছিল কক্সবাজারের রামুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বেশি দূর গড়াতে পারেনি। ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগরে শুক্রবার ভোর রাতে গ্রামবাসী সুজন কুমার দের বাড়িতে হামলা চালায় এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতির খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্রুত অকুস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রশাসনের হেফাজতে নেয়া হয় ঐ পরিবারের সদস্যদের।
এলাকার বিভিন্ন অভিযোগের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের পশ্চিম কাঞ্চনগর বৃন্দাবনপাড়ার সত্যরঞ্জন দের ছেলে সুজন কুমার দে (২২) পবিত্র মক্কা শরীফ অবমাননা করতে আপত্তিকর একটি ছবি তার ফেসবুকে আপলোড করে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ছবিটি আপলোড করা হয়। এমন একটি গুজবের খবর এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু উত্তেজিত লোক শুক্রবার সকালে মিছিলসহকারে সুজনদের বাড়িতে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এবং উপজেলা প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ দ্রুত অকুস্থলে ছুটে যান। তাঁরা পরিস্থিতি শান্ত করেন। পুলিশ সুজনকে না পেয়ে সুজনের মা-বাবাসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে আটক করে।
থানা সূত্রে জানা যায়, পরিবারের যে চারজনকে আটক করা হয়েছে তাঁরা হলেন- সুজনের পিতা সত্যরঞ্জন কুমার দে (৬৫), মা কল্পনা রানী দে (৫০), পরিবারের সদস্য প্রিয়াঙ্কা দে (৩০) ও সীমা দে (২৮)। তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তবে পালিয়েছে ফেসবুকে ছবি আপলোড করার অভিযোগে অভিযুক্ত সুজন দে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, রাতে এ ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টির আলামত পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অকুস্থলে ছুটে গেছে পুলিশ, র‌্যাব ও নিরাপত্তা বাহিনী। দ্রুত হস্তক্ষেপ করায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সুজনের পরিবারের চার সদস্য আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করেই তাদেরকে হেফাজতে আনা হয়েছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সুজন কুমার দে দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বসবাস করে আসছে। তবে সে নাজিরহাট কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্র। বিকেল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি থমথমে হলেও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দীন চৌধুরী কাতেব জানান, বেশ দ্রুত তৎপর হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারেনি।
এদিকে ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরে শুক্রবার সকালে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কক্সবাজারের রামুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুকে ট্যাগ করা একটি ছবি নিয়ে সে সময় ব্যাপক তাণ্ডব চলেছিল রামুতে। একের পর এক বৌদ্ধ বিহার ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ফটিকছড়ির ঘটনাটিও দুর্বৃত্তদের পরিকল্পিত কারসাজি কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে আপলোড করা একটি ছবি এলাকার মানুষের মধ্যে এত দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে তা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। ফেসবুকের আপত্তিজর কোন ছবি খুব অল্পসংখ্যক ফেসবুকারেরই জানার কথা। এ জন্য অনেকেরই সন্দেহ যে, এলাকার সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার নেপথ্যে অসৎ কোন চক্রের খারাপ উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
http://allbanglanewspapers.com/janakantha/

No comments:

Post a Comment