Saturday, July 26, 2014

গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৪ ঘণ্টা বাড়ল

গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৪ ঘণ্টা বাড়ল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ জুলাই, ২০১৪

গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও ৪ ঘণ্টা বাড়িয়েছে ইসরাইল। এর আগে শনিবার ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি বলবৎ হয়। এখন স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে। তবে হামাস এখনও জানায়নি যে তারা যুদ্ধবিরতির সময় বাড়াবে কিনা। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়াতে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরাইলের মন্ত্রিসভার বৈঠক বসার কথা রয়েছে। শনিবার যুদ্ধবিরতি চলাকালে মিলেছে সারি সারি লাশ। বাড়ি-ঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকর্মীরা এদিন প্রায় ১০০ লাশ বের করে আনেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইসরাইলের অনবরত বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে এর আগে এসব ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। স্বজনদের খোঁজে এবং নিজেদের বাড়িঘরের অবস্থা দেখতে সেখানে ভিড় করেন বহু গাজাবাসী। এ সময় আপনজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ ও কূটনীতিকদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে এর ঠিক আগ মুহূর্তেও বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোসে ইয়ালুন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির সময় পার হলে গাজায় স্থল হামলা আরও বাড়ানো হবে। এদিকে দীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতির লক্ষ্যে প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন। আলজাজিরা, বিবিসি ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য দিয়েছে। গাজার মেডিকেল সূত্র জানায়, শনিবার যুদ্ধবিরতির ঠিক আগমুহূর্তে গাজার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় ইসরাইলি বিমান বাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি হতাহত হন। এর আগে শুক্রবার রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলায় ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চলাকালে উদ্ধারকর্মীরা পুরনো ধ্বংসস্তূপগুলোতে উদ্ধার অভিযান চালান। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ভবন থেকে প্রায় ১০০টি লাশ উদ্ধার করেন। গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত হানুনে একটি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছিল ইসরাইলি সেনারা। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের এক বাসিন্দা জানান, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও তারা তাদের ভাঙা বাড়িঘর দেখতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ যুদ্ধবিরতির কিছুক্ষণ আগেও ইসরাইলের ভয়াবহ বোমা হামলায় কেঁপে ওঠে এসব এলাকা। তবুও অনেক স্বজন সেখানে ভিড় করেন। লাশ দেখে আহাজারি করেন তারা। এছাড়া নিজেদের বাড়ি-ঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আসেন অনেকে। তাদের সাজানো-গোছানো অট্টালিকা এখন ইট-বালু আর সুরকির স্তূপ। এসব দেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে ওঠেন বাসিন্দারা। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। গাজার জরুরি উদ্ধার বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদার বলেন, তারা শেজাইয়া থেকে ২৫টি, দেইর আল বালাহ ও নুসেইরাত থেকে ১৩টি, উত্তর গাজা থেকে ২৫টি এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে ১৩টি লাশ উদ্ধার করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি স্থানে লাশ পাওয়া যায়। এ নিয়ে ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। আহত হয়েছেন প্রায় ছয় হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু। এছাড়া দেড় লাখ ফিলিস্তিনি এ সময় বাড়িঘর হারিয়ে শরণার্থী শিবির বা আÍীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অপরদিকে এ সংঘর্ষে হামাসের হামলায় এ পর্যন্ত ৩৮ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। গাজার বিবিসি প্রতিনিধি জানান, যুদ্ধবিরতির স্বল্প সময়ে সেখানকার লোকজন জরুরি কেনাকাটার জন্য রাস্তায় নামেন। কিছু দোকানপাট ও ব্যাংক খুলেছে। ইসরাইলি গোলাবর্ষণে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোয় জরুরি সেবা পাঠানো হয়েছে। বিবিসির ইয়ান প্যানেল জানায়, গাজায় ধ্বংসলীলার যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে তা বিস্ময়কর। শেজাইয়া এলাকায় সব ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৬০ ফুট পর্যন্ত উঁচু ধ্বংসস্তূপের ওপর গাড়ি উল্টে পড়ে আছে এমন দৃশ্যও দেখা গেছে সেখানে। মানবিক দিক বিবেচনায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। পরে আরও ৪ ঘণ্টার যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হন তিনি। পাশাপাশি বলা হয়, অস্ত্রবিরতির সময় গাজায় সন্দেহের মধ্যে থাকা সুড়ঙ্গপথে তল্লাশি চালানো হবে। এ সময় হামাসের পক্ষ থেকে হামলা হলে তার জবাব দেবে তেলআবিব।
- See more at: http://www.jugantor.com/last-page/2014/07/27/128017#sthash.HEqpNpze.dpuf

No comments:

Post a Comment