শত বিড়ম্বনা তবুও বাড়ি ফেরা
তোহুর আহমদ/ শিপন হাবীব/ কাজী জেবেল
প্রকাশ : ২৬ জুলাই, ২০১৪
পথে পথে বিড়ম্বনায় পড়ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষগুলো। বিশৃংখল ট্রাফিক ব্যবস্থা। রাজধানী থেকে বের হতেই দীর্ঘ যানজট। এর শুরু আরও আগে। মূলত বাসা থেকে বের হওয়ার পরই যানজটের কবলে মানুষ। এছাড়া খান্দখন্দে ভরা সড়ক-মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহন। অনেক জায়গায় বাহন আটকে যাওয়ায় তৈরি হচ্ছে যাত্রীবোঝাই যন্ত্রযানের দীর্ঘ সারি। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যেন ভোগান্তির শেষ নেই।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বরাবরের মতো এবারও দীর্ঘ যানজটে আটকে হাঁসফাঁস অবস্থা তাদের। রাজধানী থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথগুলোতে অসহনীয় যানজটের নতুন অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে। এর সঙ্গে আছে ফিরতি পথে যাত্রী না পাওয়ার দোহাই দিয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য। সড়ক সংস্কারের নামে যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন করতে যোগাযোগমন্ত্রী নিরলসভাবে ছুটে চলেছেন। কিন্তু সেই সড়কে যানবাহন চলাচলে সুশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে ছুটতে দেখা যায়নি। ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে ঢাকার প্রবেশমুখসহ বাস টার্মিনালগুলোর আশপাশে এবং সড়ক-মহাসড়কে এলোমেলোভাবে যানবাহন রাখায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঘরমুখো মানুষগুলো বাড়ি থেকে বের হয়েই যানজটের কবলে পড়ছে। শুরু হচ্ছে তাদের ভোগান্তির। এটা দেখার কেউ নেই। ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন তবে যানজটের কারণে ভোগান্তি অনেক কম হতো বলে মনে করছেন সড়ক পথে ঘরে ফেরা মানুষগুলো।
যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিনিধিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক-মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের খবর পাঠিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ ও বহির্গমন পয়েন্টে সরেজমিন ঘুরেও তীব্র যানজট দেখা গেছে। আর ভাড়া নৈরাজ্য চলছে প্রকাশ্যেই। কিন্তু পরিবহন নেতারা ভাড়া নৈরাজ্য স্বীকার করতে রাজি নন। সরকারদলীয় বলে পরিচিত অনেক পরিবহন নেতা দাবি করছেন সড়কে এবার যানজটও নেই। আর ঈদযাত্রার ভোগান্তি লাঘবে পুলিশের পদক্ষেপ যথাযথ নয়- এমনটা মনে করেন নাগরিকরা। রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত যানবাহন আটকে থাকছে রাস্তায়। সন্ধ্যার পর এসব এলাকায় যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কল্যাণপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত যেতেই সময় লেগেছে দু’ঘণ্টারও বেশি। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ঈদের এই সময়টাতে ঢাকার বাইরে থেকে প্রচুর যানবাহন যাত্রী পরিবহনের জন্য ঢাকায় আসে। এসব যানবাহন রাস্তার দু’ধারে পার্কিং করে রাখার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। অথচ এটা হওয়ার কথা নয়। সড়ক পথের সার্বিক যান চলাচলের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে উপপরিচালক এসকে বিশ্বাস বলেন, বৃহস্পতিবার যানজটের কারণে শুক্রবার অনেক বাস এক ঘণ্টা দেরিতে ঢাকায় ঢুকেছে। তবে সার্বিকভাবে সারা দেশে যান চলাচল পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো আছে।
এদিকে ঈদের বাড়তি যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে হাইওয়েতে পচনশীল ও জরুরি পণ্য বহন ছাড়া ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ফিটনেসবিহীন বাসে যাত্রী পরিবহন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে তিনি বলেন, গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক পথের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে নৌপথের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে আজ থেকে বিআইডব্লিউটিএর দুটি হেলিকপ্টার টহল দেবে। এ দুটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নদীবন্দর এলাকা পর্যবেক্ষণ করবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় : ওদিকে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেকটাই অপর্যাপ্ত। ঈদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের আলাদা কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। রাজধানীর বহির্গমন পথগুলোতে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বেআইনি হলেও সন্ধ্যা নামতেই রাজধানীতে ট্রাক ও লরি ঢুকে পড়ছে। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই অকার্যকর। পুলিশ হাত উঁচিয়ে সনাতনী পদ্ধতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করায় ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্যের অবহেলার কারণে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। এছাড়া ভিআইপিতে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর কারণেই রাস্তায় বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শহর থেকে যাতে নির্বিঘ্নে যানবাহন বেরিয়ে যেতে পারে সেজন্য ২৪ ঘণ্টা রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
মহাসড়কগুলো পুলিশি দুর্বলতার কারণেই মূলত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশের কাজ করার কথা থাকলে মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানেই তাদের দেখা যায় না। ফলে যানবাহনগুলো চলে নিজেদের মর্জিমতো। ওভারটেক করতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে। এসব কারণে অনেক ক্ষেত্রে ঘটছে দুর্ঘটনাও। কিন্তু দেখার কেউ নেই। হাইওয়ে পুলিশের দেখাও মেলে না। এমনকি সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের সাক্ষাৎও পাওয়া যায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাফিক হাইওয়ে পুলিশ বা জেলা পুলিশ তৎপর হলে প্রথমে আটকাতে হবে আনফিট যানবাহন। এরা কেউ তা করতে পারবে না। কারণ অসাধু মালিকরা দুর্নীতিবাজ পুলিশদের টাকা দিয়েই এ ধরনের যানবাহন রাস্তায় নামিয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি আয়ের নেশায় অসাধু পরিবহন মালিক আর দুর্নীতিবাজ পুলিশের কারণে মূলত ঘরে ফেরা মানুষগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক-মহাসড়কে আটকাপড়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত মহাসড়কের সার্বিক অবস্থা ভালো। পুলিশের সহায়তায় কিছু সড়কে মেরামতের কাজ চলছে। এগুলো শেষ হলে মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে।
বাস : শুক্রবার দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন, ব্যাগ, লাগেজ নিয়ে কাক্সিক্ষত বাসের আশায় অপেক্ষা করছেন অসংখ্য যাত্রী। একের পর এক বাস আসছে আর আগাম টিকিট সংগ্রহকারীরা উঠে যাচ্ছেন। এ টার্মিনাল থেকে শুক্রবার বেশ কয়েকটি বাস কোম্পানিকে টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগাম টিকিট বিক্রি অনেক আগেই শেষ হলেও এখন কোথা থেকে টিকিট আসছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ঈগল, হানিফ, সার্বিকসহ কয়েকটি বাস কোম্পানির টিকিট বিক্রেতারা জানান, বেশিরভাগ গাড়ির পেছনের দিকের দু-চারটি করে সিট ফাঁকা রয়েছে। ওই সব টিকিট তখন বিক্রি হয়নি। এছাড়া রিজার্ভে থাকা গাড়ির টিকিট তাৎক্ষণিক বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বাস গন্তব্যে পৌঁছতে এবং ঢাকায় ফিরতে পারছে না। ঈগল পরিবহনের কর্মকর্তারা জানান, গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস সকাল ৬টায় রওয়ানা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় ফরিদপুরের ভাঙা পৌঁছেছে। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল যেতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ বেলা ১টার মধ্যে ওই বাসটি বরিশালে পৌঁছার কথা ছিল। একই পরিবহনের আরেকটি বাস বরিশাল থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় ছেড়ে দুপুর ১২টায় ফেরিতে অবস্থান করছিল। ঢাকা থেকে যশোর যেতে সময় লাগে ৭ ঘণ্টা। হানিফ পরিবহনের একটি বাস সকাল সাড়ে ৭টায় গাবতলী থেকে যশোর রওয়ানা হয়ে ৫ ঘণ্টায় ফরিদপুর পর্যন্ত যেতে পেরেছে। ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা যেতে সাধারণত ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। সোহাগ পরিবহনের একটি বাস সকাল ৭টায় গাবতলী থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে ৬ ঘণ্টায় ফেরিতে উঠতে পেরেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, সাভার, বাইপাইল, মানিকগঞ্জে যানজট থাকায় বাস চলাচলে সময় বেশি লাগছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলাগুলোতে বাস চলাচল করে। এ বাস কাউন্টারে আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়নি। এ কারণে শুক্রবার টিকিট পেতে ভোররাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন যাত্রীরা। সকালে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। যে পরিমাণ গাড়ির টিকিট বিক্রি করা হয় সে সংখ্যক গাড়ি না থাকায় যাত্রীরা হৈচৈ করেন। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, সকাল ৯টায় বিভিন্ন রুটের ৩২টি গাড়ির টিকিট বিক্রি করা হলেও ২৬টি গাড়ি ছেড়ে গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে খানাখন্দে যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে গাড়ি আসতে পারেনি বলে দাবি করেন তারা।
ট্রেন : শুক্রবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭টি আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গছে। ২৫ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা শুক্রবার ভ্রমণ করেছেন। মহানগর প্রভাতি, সুবর্ণা, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন কিছুটা বিলম্বে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ত্যাগ করেছে। শুক্রবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ২৭টি আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। লোকাল ও মেইলসহ প্রতিদিন ১৩২টি ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের ভিড় ছিল। বিনা টিকিটের যাত্রীরা বিভিন্ন ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে, দরজা ও জানালা ধরে বাড়ির উদ্দেশে পাড়ি দিতে দেখা গেছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার খায়রুল বশির জানান, ঈদ উপলক্ষে গত ২ দিন প্রতিটি ট্রেনই সিডিউল অনুযায়ী চলাচল করছে। ২-৩টি ট্রেন ১৫-২০ মিনিট বিলম্বে চলাচল করেছে মাত্র। তিনি বলেন, যেসব যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে পারেননি তাদের অনুরোধে শুধু মাত্র যাত্রার দিন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট দেয়া হচ্ছে। রেলওয়ে থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের উঠতে দেয়া না হলেও ট্রেন কমলাপুর থেকে ছাড়ার পর চলন্ত অবস্থায় দরজা-জানালা দিয়ে যাত্রীরা ছাদে উঠে পড়ছেন। ঢাকা রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, ঈদ উপলক্ষে চলাচলকারী প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে অতিরিক্ত ২-৩টি বগি লাগানো হয়েছে। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের দুই বগির সংযোগস্থলে বসে থাকা আরিফুল ইসলাম, রফিক মিয়া, কামাল হোসেন ও তাকমিনা আক্তার বলেন, অনেক চেষ্টা করেও তারা টিকিট কাটতে পারেননি।
লঞ্চ : ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো যাত্রীরা কাক্সিক্ষত লঞ্চের ছাদেও চড়েছেন। শুক্রবার বিকালে সদরঘাটে থেমে থাকা ঢাকা থেকে হুলারহাটগামী (পিরোজপুর) লঞ্চ শুভরাজ-২ ও রাজদূত-৭, ঝালকাঠিগামী লঞ্চ ফারহান-৭, বরিশালগামী পারাবত-১০, কীর্তনখোলা-২, দ্বীপরাজ, পটুয়াখালীগামী পূবালী-৭সহ অন্যান্য লঞ্চের ভেতরে যাত্রী টইটুম্বর। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও টিপু লঞ্চের মালিক গোলাম কিবরিয়া টিপু যুগান্তরকে বলেছেন, ভেতরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও কৌতূহলবশত যাত্রীরা ছাদে উঠেছেন। তাদের নামানো যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক (বন্দর) মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে ২৪টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে এবং রাত ১২টা পর্যন্ত সব মিলে অর্ধশতাধিক লঞ্চ সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ভোগ : মিরসরাই প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রতিটি বাজারে পুলিশ নামিয়ে দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করা হচ্ছে। মহাসড়কের এই রুটে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত মিরসরাই উপজেলা সদর, নিজামপুর, বারইয়াহাট, সীতাকুণ্ড, বাড়বকুণ্ড বাজারগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই রুটে যত্রতত্র সিএনজি অটোরিকশা পার্কিং, ফুটপাত দখল, লোকাল বাসে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানামা, ট্রাক থামিয়ে রেখে চালকের ঘুমিয়ে পড়ার কারণে এ পয়েন্টগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় : মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই এ রুট দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ চলাচল করে। ওদিকে ভাঙ্গাসহ লোকাল বাসগুলো রুট পরিবর্তন করে বরিশাল ও খুলনা রুটে চলায় যাত্রীদের মহাবিপাকে পড়তে হচ্ছে। এ রুটের প্রতিটি বাস বরিশালের যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা, খুলনায় ৪০০ টাকা আদায় করছে। মাওয়া-আরিচা-কাওড়াকান্দি রুটে শুক্রবার থেকে নৌ-পুলিশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। ঢাকা নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোখলেসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, যেসব জায়গায় নৌ-রুট রয়েছে সেসব জায়গায় জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে মানুষের ঘরে ফেরা নির্বিঘ্ন করতে একশ’ জনের একটি নৌ-পুলিশের টিম মাঠে নেমেছে।
সিলেটে ট্রেন ও বাসের সিডিউল বিপর্যয় : শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা সিলেটে পৌঁছায়। পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছাড়তেও দেরি হয়েছে। ফলে সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়িকা সিলেট থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও সিলেট ছেড়ে যায় বেলা ১টা ৩০ মিনিটে। এছাড়া কালনী সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে, জয়ন্তিকা ৮টা ২০ মিনিটে, পারাবত ২টা ৩০ মিনিটে সিলেট ছেড়ে গেছে। এদিকে সড়কপথে চলাচলকারী সোহাগ, গ্রিনলাইন, শ্যামলী, হানিফ, এনা, ইউনিকসহ সব বাস সার্ভিস যথাসময়ে চলাচল করেনি। ঈদের ছুটি এর সঙ্গে শুক্রবার যাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল। ফলে সিডিউলে বিপর্যয় ঘটেছে বলে জানালেন সিলেট বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টার ম্যানেজার আবুল হোসেন।
নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বাস-ট্রেন পৌঁছাচ্ছে : যুগান্তরের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, মহাদুর্ভোগের সড়কে পরিণত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। আধা ঘণ্টার পথ পেরুতে লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। মহাসড়কে খানা-খন্দের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার এ মহাসড়কে প্রায় ১০০ কিমি পর্যন্ত যানজট ছিল। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ের ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে ট্রেন। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে গতি কমিয়ে চলাচল করায় এবং রেললাইনের সংস্কারের কারণে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
No comments:
Post a Comment