ভোটে জিততে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক নয়
মোদির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে খালেদা জিয়া
স্টাফ রিপোর্টার ॥ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর নিষ্পত্তিতে ব্যর্থতার জন্য ভারত নয়, আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে তাঁর দলের আদর্শগত কোন মিল নেই। মঙ্গলবার ভারতীয় দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি কথা বলেছেন। এবারের ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে জেতার জন্য অনেক কিছু বলতে হয়, বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক নয়।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত কোন মিল নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা মধ্যপন্থী। আমরা উগ্র ডানপন্থী নই, উগ্র বামপন্থীও নই। আপনি যদি ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন, আওয়ামী লীগই জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল- ১৯৮৬ সালে এরশাদ যখন নির্বাচন করতে গিয়েছিল। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্বাচনকালীন একটা বন্দোবস্ত। ওরা কিছু জায়গা থেকে নির্বাচন করেছিল, আমরা কিছু জায়গা থেকে। এর বাইরে কিছু না। ওরা ওদের আদর্শ অনুসরণ করে, আমরা আমাদের।
প্রায়ই ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকলেও ভারতীয় পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাতকারে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আন্তরিকভাবেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তিনি বলেছেন, ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দুই দফায় চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁকে ফোনও করেছেন তিনি। ভারতের বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারকে আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে নয়, দুই দেশের জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে এ সম্পর্ক হওয়া উচিত। এর জন্য আমি কাউকে দায়ী করছি না, তবে আওয়ামী লীগ এটা করতে তাদের বাধ্য করেছে এবং ভারত সরকার তাদের সমর্থন দিয়েছে।
নির্বাচনের সময় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বিএনপিকে সমর্থন না দেয়ায় তিনি হতাশ হয়েছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমি জানি না কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের নির্বাচনে কোন ভূমিকা রেখেছিল কিনা। তবে অনেকেরই বিশ্বাস- এর একটা ভূমিকা ছিল। এরশাদকে উদ্ধৃত করে সুজাতা সিং (ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) নির্বাচন নিয়ে কী কী বলেছিলেন তা-ও উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদ এখনও বলছেন যে, তিনি নির্বাচনে যাননি। তাঁকে জোর করে নির্বাচনে রাখা হয়েছে। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন, যা গ্রহণ করা হয়নি। তাই জনমনে ধারণা রয়েছে, ভারত সরকারের একটি ভূমিকা ছিল (৫ জানুয়ারির নির্বাচনে)। নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকা সফরের কথাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি এইচএম এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, অন্যথায় নির্বাচন হবে না এবং মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আসবে। আমরা কেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিলাম না, তা আমরা তাঁকে বলেছিলাম। আমরা একটি রাজনৈতিক দল, কোন গোপন সংগঠন নই। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে তাতে অংশ নেয়ার কোন কারণ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে নতুন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতিতে কোন তফাত আছে কিনা- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে আসার মতো সময় এখনও হয়নি বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপর্সন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাতকারে খালেদা জিয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের ভূমিকাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিবদমান কিছু অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি পরিবারের প্রভাব প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, দুটিই সম্মানিত পরিবার। শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা আছে, জিয়াউর রহমানেরও ভূমিকা আছে। এ দুটি পরিবারের ওপর মানুষের বিশ্বাস জন্মেছে। মানুষ না চাইলে পরিবার দুটি রাজনীতি থেকে সরে যাবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাঁদের বলছে, প্রথমে সরকারকে বৈধতা দিতে তারপর সংলাপে বসতে। এতেই বোঝা যায় সরকার অবৈধ। নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের বিষয়টি খালেদা জিয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলে সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেন।
বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা চলা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ আছে বলে উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ভারতকে আশ্বস্ত করতে বিএনপি কী করতে পারে, জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের প্রচার চালানো হয় বিএনপি সম্পর্কে একটি মিথ্যে ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত ও প্রতিবেশী কোন দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করতে না দেয়ার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের এ প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষরও রেখেছি।
সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেই তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন বেশি হয়। তিনি বলেন, বাবরি মসজিদ যখন ভাঙ্গা হয় তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশে যারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল, তখন তাদের কঠোর হাতে দমন করেছেন। যে সব চ্যানেলে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ছবি দেখাচ্ছিল, সে সব চ্যানেলের প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
খালেদা জিয়া বলেছেন, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটি ছিল খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ। বৈঠকে সুষমা সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, নরেন্দ্র মোদি তাঁকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়ায় এখনই তিনি যাচ্ছেন না। তবে মোদি সরকার কেমন সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এখনই কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদি যে সব মন্তব্য করেছেন, সেটি তাঁকে উদ্বিগ্ন করেছে কিনা, জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনে জেতার জন্য অনেক কিছুই বলা হয়। তার অর্থ এই নয় যে, এগুলো বাস্তবায়ন হবে। খালেদা জিয়া অনুপ্রবেশের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশীরা ভারতে অনুপ্রবেশ করে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয় বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি না অনেক বাংলাদেশী সেখানে যাচ্ছে। কারণ দেশেই বাংলাদেশীরা অনেক ভাল করছে।
সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আমাদের বৈঠক হয়েছে। উনি খুবই চমৎকার মানুষ। আমরা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। যেমন সীমান্ত হত্যা। সীমান্ত হত্যা বন্ধে তিনি প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি নিয়েও আমরা কথা বলেছি। শুকনো মৌসুমে পানিপ্রবাহ অনেক কমে যায়। তখন ভারত আমাদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় লোকজন বিরক্ত হয়। ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমাদের দুই দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। কাজেই কিছু সমস্যা তো থাকতেই পারে। তাই বলে মানুষ হত্যার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এতে এ দেশের মানুষ ভারতের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের উদ্বেগকে সম্মান জানিয়েছেন। তিনি আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নেতা হিসেবে মোদিকে আপনি কেমন মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, এটা বিবেচনা করবে ভারতের জনগণ। তিনি সুশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়েছেন এবং ভারতের মানুষ তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে বলেই আমি মনে করছি। আপনার ভারত সফরের কোন পরিকল্পনা আছে কি, এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দেশের পরিস্থিতি এখন ভাল না। দেশে কোন গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন এবং তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইছে।
আপনি কি মনে করেন কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের প্রতি দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি- এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এমনটিই মনে করে থাকে। আসলে ব্যর্থতা বা সদিচ্ছার অভাব যাই বলি না কেন, এতে বাংলাদেশ সরকারেরও দায় রয়েছে। কেননা দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করাটাই আমাদের সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিত।
আপনি কি মনে করেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেস সরকারের ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং এ কারণেই বাংলাদেশীরা উপকৃত হয়নি? জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, এটিও কিন্তু এ দেশের সাধারণ মানুষের ধারণা। বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। দুই দেশের জনগণের স্বার্থকে ঘিরেই সেই সম্পর্ক গড়ে উঠা উচিত, কোন ব্যক্তি বা কোন একটি নির্দিষ্ট রাজৈনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে নয়।
বাংলাদেশের প্রতি নরেন্দ্র মোদির মনোভাব কেমন হবে বলে আপনি মনে করছেন? জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আশা করছি ভারতের নতুন সরকার সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নেবে। মোদি তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আজ থেকে তিন দশক আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সার্কের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমরা মনে করি এটি এ অঞ্চলের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত কোন মিল নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা মধ্যপন্থী। আমরা উগ্র ডানপন্থী নই, উগ্র বামপন্থীও নই। আপনি যদি ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন, আওয়ামী লীগই জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল- ১৯৮৬ সালে এরশাদ যখন নির্বাচন করতে গিয়েছিল। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্বাচনকালীন একটা বন্দোবস্ত। ওরা কিছু জায়গা থেকে নির্বাচন করেছিল, আমরা কিছু জায়গা থেকে। এর বাইরে কিছু না। ওরা ওদের আদর্শ অনুসরণ করে, আমরা আমাদের।
প্রায়ই ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকলেও ভারতীয় পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাতকারে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আন্তরিকভাবেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তিনি বলেছেন, ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দুই দফায় চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁকে ফোনও করেছেন তিনি। ভারতের বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারকে আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে নয়, দুই দেশের জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে এ সম্পর্ক হওয়া উচিত। এর জন্য আমি কাউকে দায়ী করছি না, তবে আওয়ামী লীগ এটা করতে তাদের বাধ্য করেছে এবং ভারত সরকার তাদের সমর্থন দিয়েছে।
নির্বাচনের সময় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বিএনপিকে সমর্থন না দেয়ায় তিনি হতাশ হয়েছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমি জানি না কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের নির্বাচনে কোন ভূমিকা রেখেছিল কিনা। তবে অনেকেরই বিশ্বাস- এর একটা ভূমিকা ছিল। এরশাদকে উদ্ধৃত করে সুজাতা সিং (ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) নির্বাচন নিয়ে কী কী বলেছিলেন তা-ও উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদ এখনও বলছেন যে, তিনি নির্বাচনে যাননি। তাঁকে জোর করে নির্বাচনে রাখা হয়েছে। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন, যা গ্রহণ করা হয়নি। তাই জনমনে ধারণা রয়েছে, ভারত সরকারের একটি ভূমিকা ছিল (৫ জানুয়ারির নির্বাচনে)। নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকা সফরের কথাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি এইচএম এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, অন্যথায় নির্বাচন হবে না এবং মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আসবে। আমরা কেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিলাম না, তা আমরা তাঁকে বলেছিলাম। আমরা একটি রাজনৈতিক দল, কোন গোপন সংগঠন নই। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে তাতে অংশ নেয়ার কোন কারণ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে নতুন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতিতে কোন তফাত আছে কিনা- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে আসার মতো সময় এখনও হয়নি বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপর্সন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাতকারে খালেদা জিয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারতের ভূমিকাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিবদমান কিছু অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি পরিবারের প্রভাব প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, দুটিই সম্মানিত পরিবার। শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা আছে, জিয়াউর রহমানেরও ভূমিকা আছে। এ দুটি পরিবারের ওপর মানুষের বিশ্বাস জন্মেছে। মানুষ না চাইলে পরিবার দুটি রাজনীতি থেকে সরে যাবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাঁদের বলছে, প্রথমে সরকারকে বৈধতা দিতে তারপর সংলাপে বসতে। এতেই বোঝা যায় সরকার অবৈধ। নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের বিষয়টি খালেদা জিয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলে সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেন।
বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা চলা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ আছে বলে উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ভারতকে আশ্বস্ত করতে বিএনপি কী করতে পারে, জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের প্রচার চালানো হয় বিএনপি সম্পর্কে একটি মিথ্যে ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত ও প্রতিবেশী কোন দেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করতে না দেয়ার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের এ প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষরও রেখেছি।
সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেই তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন বেশি হয়। তিনি বলেন, বাবরি মসজিদ যখন ভাঙ্গা হয় তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশে যারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল, তখন তাদের কঠোর হাতে দমন করেছেন। যে সব চ্যানেলে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ছবি দেখাচ্ছিল, সে সব চ্যানেলের প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
খালেদা জিয়া বলেছেন, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটি ছিল খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ। বৈঠকে সুষমা সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, নরেন্দ্র মোদি তাঁকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়ায় এখনই তিনি যাচ্ছেন না। তবে মোদি সরকার কেমন সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এখনই কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদি যে সব মন্তব্য করেছেন, সেটি তাঁকে উদ্বিগ্ন করেছে কিনা, জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনে জেতার জন্য অনেক কিছুই বলা হয়। তার অর্থ এই নয় যে, এগুলো বাস্তবায়ন হবে। খালেদা জিয়া অনুপ্রবেশের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশীরা ভারতে অনুপ্রবেশ করে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয় বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি না অনেক বাংলাদেশী সেখানে যাচ্ছে। কারণ দেশেই বাংলাদেশীরা অনেক ভাল করছে।
সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আমাদের বৈঠক হয়েছে। উনি খুবই চমৎকার মানুষ। আমরা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। যেমন সীমান্ত হত্যা। সীমান্ত হত্যা বন্ধে তিনি প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি নিয়েও আমরা কথা বলেছি। শুকনো মৌসুমে পানিপ্রবাহ অনেক কমে যায়। তখন ভারত আমাদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় লোকজন বিরক্ত হয়। ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমাদের দুই দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। কাজেই কিছু সমস্যা তো থাকতেই পারে। তাই বলে মানুষ হত্যার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এতে এ দেশের মানুষ ভারতের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের উদ্বেগকে সম্মান জানিয়েছেন। তিনি আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নেতা হিসেবে মোদিকে আপনি কেমন মনে করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, এটা বিবেচনা করবে ভারতের জনগণ। তিনি সুশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়েছেন এবং ভারতের মানুষ তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে বলেই আমি মনে করছি। আপনার ভারত সফরের কোন পরিকল্পনা আছে কি, এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দেশের পরিস্থিতি এখন ভাল না। দেশে কোন গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন এবং তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইছে।
আপনি কি মনে করেন কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের প্রতি দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি- এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এমনটিই মনে করে থাকে। আসলে ব্যর্থতা বা সদিচ্ছার অভাব যাই বলি না কেন, এতে বাংলাদেশ সরকারেরও দায় রয়েছে। কেননা দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করাটাই আমাদের সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিত।
আপনি কি মনে করেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেস সরকারের ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং এ কারণেই বাংলাদেশীরা উপকৃত হয়নি? জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, এটিও কিন্তু এ দেশের সাধারণ মানুষের ধারণা। বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। দুই দেশের জনগণের স্বার্থকে ঘিরেই সেই সম্পর্ক গড়ে উঠা উচিত, কোন ব্যক্তি বা কোন একটি নির্দিষ্ট রাজৈনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে নয়।
বাংলাদেশের প্রতি নরেন্দ্র মোদির মনোভাব কেমন হবে বলে আপনি মনে করছেন? জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আশা করছি ভারতের নতুন সরকার সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নেবে। মোদি তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আজ থেকে তিন দশক আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সার্কের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমরা মনে করি এটি এ অঞ্চলের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
http://www.allbanglanewspapers.com/janakantha.html
No comments:
Post a Comment