জোহানেসবার্গে বৃষ্টি
জানালার কাঁচ বেয়ে বৃষ্টির জল ঝরে পড়ছে। গত রাত থেকেই আকাশ ছাপিয়ে বৃষ্টির তান্ডব। মনে হচ্ছে আজও সারাদিন তা-ই চলতে থাকবে। এরকম ক্লান্তিহীন বৃষ্টি অনেকের অনেক পরিকল্পনা নষ্ট করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। তবে এলিয়ার তা মনে হচ্ছে না। আজ এ বৃষ্টি যেন কোনো বার্তা বাজিয়ে চলেছে। বিছানায় আর একটু এপাশ-ওপাশ করে নিয়ে ঘুমের শেষ রেশটুকু আজকের মতো বিদায় জানানোর কসরত করে নেয় খানিক। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিতে চায়, ক’টা বাজে? ডোরবেল বেজে ওঠে, জেনিফার এসেছে। দরজা খুলেই হাত বাড়িয়ে দেয়, লিমা চেরনি- সুপ্রভাত! দুজনে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে চুম্বনে মিলিত হয়। বৃষ্টির এই স্নিগ্ধতাটুকুরই অপেক্ষা ছিলো যেনো এতক্ষণ। বাকি সারাদিন যাই হোক, সবই চমৎকার হতেই হবে। ঝরে যাক বৃষ্টি অবিরাম।
কেটলিতে কফির জল দিয়ে সুইচটা অন করে খবরের কাগজ নিয়ে সোফায় এসে বসলো স্বর্ণকেশী জেনিফার। আজ কাগজে একটা খবরই গুরুত্ব পেয়েছে। মাদিবার বিদায় অনুষ্ঠান। কালো মান্ডেলা আজ সারা পৃথিবীর কেন্দ্র বিন্দু, ফোকাল পয়েন্ট। আর জেনিফারের? এলিয়া। তানজানিয়ার জাঞ্জিবারে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সফ্টওয়ার কর্মী এলিয়া। ফেইসবুক বন্ধু থেকে এখন বেটার হাফ হতে চলেছে জেনিফারের। এবারের আগে আরও দেখা হয়েছে দুজনের, কখনও জাঞ্জিবারে, কখনও জোহানেসবার্গে।গুনগুন করে গান গেয়ে চলেছে এলিয়া। আয়নায় মুখ দেখে ঠিকমতো শেভ হলো কিনা। কুঞ্চিত কালো চুল ঘিরে আছে কালো মুখখানা। হরিণের পিছনে ধাবমান সিংহের ক্ষিপ্রতা অবয়বে। ভালোবাসে গিটার, ভালোবাসে গান আর হৃদয় জুড়ে জেনিফার।
সিটি বেজে ওঠে কেটলির, পানি গরম হয়ে গেছে। এলিয়ার ফ্রেস হওয়া সারা। জেনিফার কাপে গরম পানি ঢালে, এলিয়া টোস্টে জ্যাম লাগায়। ধোঁয়া ওঠা কফি আর টোস্ট নিয়ে বসে দুজনে পাশাপাশি সিডোরোতে। এই অন্তরঙ্গ দুজনের একসাথে বসে চা পান আর টুকটাক অনাবশ্যক বাক্যবিনিময় অনেকের কাছেই একদম অর্থহীন মনে হতে পারে। কারণ কথা তেমন হচ্ছে না, এরকম প্রায় হয়ে থাকে ওদের মধ্যে। যখন দেখা হয় না, দুজন দুই দেশে ব্যস্ত থাকে কাজের জায়গায় আর দৈনিক জীবন যাপনে, তখন সারা মন জুড়ে থাকে দুজন দুজনের, মনে জমতে থাকে কথার পাহাড়, দেখা হলে এবার নিশ্চয়ই অনেক কথা হবে! আশ্চর্য বিষয় হলো, যখন এমন কাঙ্খিত সময়টি আসে, সব কথামালা তার সুতো ছিঁড়ে ছড়িয়ে পরে। কেটে যায় নিঃশব্দ আবেগের দীর্ঘ সময়। অর্থহীন অনেক কথা হয়তো হয় যা আসলে দুজনের কোনো একান্ত বিষয়ই নয়। প্রেমিকেরা বুঝি এভাবেই মূল্যবান ক্ষণগুলো পার করে। এর মাঝেই অনুভ’তির তীব্রতা পরস্পরকে উদ্দীপিত করতে থাকে নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘূর্নায়মান ইলেক্ট্রনের মতো।
জেনিফার নিচে গাড়ি পার্ক করে এসেছে। দুজনে একসঙ্গে নেমে আসে, রিসেপ্শনে চাবি জমা দিয়ে গাড়ির দিকে এগোয় ওরা। চালকের আসনে জেনিফার বসে স্টার্ট নেয়, এলিয়া পাশে উঠে বসে। দক্ষতার সাথে বেড়িয়ে যায় গাড়ি হোটেল কার পার্কিং-এর দেয়াল ঘেঁষে। আজ ছুটি, সিটি স্টেডিয়ামে মাদিবার শেষ বিদায় অনুষ্ঠান হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাধারণ- অসাধারণ মানুষে জনাকীর্ণ জোহানেসবার্গ। হোটেল-মোটেল সব ভর্তি হয়ে গেছে, ঠাঁই দেয়া যাবে না হঠাৎ কোনো অতিথিকে। এলিয়ার এখানে অফিসিয়াল কাজ পড়েছে আরও একদিন পরে, কিন্তু জেনিফার আর মাদিবা দুই কারণে একদিন আগে চলে আসাটা আড়াল করার কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না! হোটেল কক্ষটি জেনিফার আগেই বুক করে রেখেছিলো।
গ্লাস ওঠানো আছে। বাইরে তখনো বৃষ্টি। জেনিফার সাবধানে স্টিয়ারিং ধরে আছে। এলিয়া একটা সিডি চালু করে দিলো নিচু শব্দে। গানের কথাগুলো মন দিয়ে শোনা গেলে এরকম দাঁড়ায়, ‘ …আমি তোমাকে সবসময় ভালোবাসবো/ আমি কামনা করি জীবন তোমার প্রতি সহৃদয় হবে/ এবং আমি আশা করি তুমি সব পাবে যা সবই তুমি স্বপ্ন দেখেছিলে/ এবং আমি চাই তোমার আনন্দ আর সুখ…।’
: কাল সন্ধ্যায় খুব মিস্ করেছি তোমাকে জেনিফার। তোমার শহরে এসে গেলাম অথচ তোমাকে ছাড়াই একটা পুরো সন্ধ্যা কেটে গেলো। প্রায় ১৪ ঘন্টা পরে আমার ভালোবাসার দেখা পাওয়া গেলো!
: কী করি বলো, আজ ছুটি নেবো বলে কাল সন্ধ্যার শিফটে কাজ করলাম। বুঝতে পারছো এসময়ে স্টোরে কত কাস্টমার, ক্যাশে সাংঘাতিক চাপ। তোমার সঙ্গে আজকের দিনটা কাটাবো বলেই কাল সন্ধ্যাটা স্যাক্রিফাইস করলাম।
হাতটা বাড়িয়ে দিলো জেনিফার এলিয়ার দিকে। একে অপরের হাত ধরে ভালো লাগার অনুভ’তি বিনিময় করলো। সোনালী চুলে আলতো হাতে নাড়া দিয়ে আদর করলো এলিয়া ওর জেনিকে।
স্টেডিয়ামের কাছাকাছি এসে গাড়িটা পার্কিং-এর দিকে টার্ন করলো জেনিফার। তখনো বৃষ্টি ঝরছে অবিরাম। গাড়িতে রাখা ছাতাটা এলিয়ার হাতে তুলে দিয়ে স্টার্ট লক্ করে নেমে যায় জেনিফার, দরোজা লক করে দ্রুত ছুটে পৌঁছে যায় উল্টো পাশে দাঁড়ানো ছাতা হাতে এলিয়ার কাছে। এক ছাতার নিচে পরস্পরকে বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচাতে বাঁচাতে এগিয়ে যায় ওরা। হাজার, হাজার লোক সমাবেশ হয়েছে এই সকার সিটি স্টেডিয়ামে। বিশ্বনেতারা এসেছে মাদিবাকে বিদায় জানাতে। মূল অনুষ্ঠান দেখার জন্যে বড় স্ক্রিন সেট করা আছে আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায়। ওভাবেই দেখতে হবে ওদেরকেও।
একই ছাতার নিচে কালো চুলের এলিয়া আর স্বর্ণকেশী শ্বেতাঙ্গিনী জেনিফার দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় রঙধনু দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা নেলসন মান্ডেলাকে। দৃশ্যটি নজরে আসে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার শোভনের। ঝটপট ছবি তুলে নেয় ও পেশাদারি পারদর্শীতায়। বেশ দূর থেকে ছবিটা নিয়েছে, ওদের না জানিয়েই। ছবিটা হতে পারে অনেক দামী তার প্রতীকি তাৎপর্যের কারণে। ছবি তোলা শোভনের নেশা, ছবির খোঁজে দেশে-বিদেশে ঘুরতেও হয় ওকে। শীতল তুন্দ্রা-বনভ’মি, ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অথবা নিরক্ষীয় সবুজ অরণ্য ধরা দেয় তার ক্যামেরায় বিচিত্র রূপে। বিচিত্র প্রকৃতির পাশাপাশি বিচিত্র মানবীয়তাও এড়িয়ে যায় না ওর ক্যামেরার চোখ। আজকের এই বৃষ্টি-মুখর দিনে এক ছাতার নিচে সাদা-কালো জুটিটি বেশ অভিনব মনে হলো শোভনের।
ওয়াটার-প্রুফ জ্যাকেট গায়ে থাকলেও অল্প-বিস্তর ভিজতে হয়েছে অনেক দর্শককে, যেমন ভিজেছে শোভনও। এসময় একটু কফি পান করলে মন্দ হয় না। কাছাকাছি কোনো রেস্তোরাঁর দিকে রওয়ানা হয় শোভন। রেস্তোরাঁর এককোনায় উঁচু টুলে বসে একটা নর্মাল কফি অর্ডার দেয়। কফি আসছে, জানালার কাঁচ দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃষ্টির ধারা একদৃষ্টে দেখতে থাকে শোভন। কফি পরিবেশন করে গেল মিষ্টি হেসে কালো মেয়েটি, অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে গরম কফির জন্যে! বললো শোভন। মেয়েটিও পেশাদারী ভঙ্গিতে স্বাগত জানালো। হোক পেশাদারী, তবু শোভনকে রোমাঞ্চিত করলো কালো মেয়েটির আরও স্বচ্ছ কালো চোখ। সুগার-ফ্রি কফির কাপে চুমুক দেয় শোভন, কেমন যেন নিঃসঙ্গ মনে হয় নিজেকে, আসলে একা একা চা বা কফি পান করতে হলে এমনই ভাব আসে। একজোড়া নারী-পুরুষ রেস্তোরাঁয় ঢুকল। ওরা তো সেই এক ছাতার নিচে দুজন, স্টেডিয়ামে শোভন যাদের ছবি তুলেছিল । সাদা-কালো যুগল সামনের একটা টেবিলে বসলো। ওরাও কফির অর্ডার দিলো।
: বৃষ্টি তো পড়ছেই, থামার কোন লক্ষণ দেখছি না। জেনিফার হালকা হেসে মন্তব্য করে।
না কথা, না বৃষ্টির অবিরাম ধারা, এলিয়ার চোখে কেবর জেনিফারের হাসির ছটা! এ হাসি যে ওকে জাঞ্জিবার থেকে জোহানেসবার্গে আকর্ষণ করে। কতদূর নিয়ে যেতে পারে জেনি ওকে? ভিক্টোরিয়ার জলরাশির উষ্ণ গভীরতায় নাকি পিরামিডের অখন্ড শীতলতায়! জীবনের চেয়ে দামী এ ভালোবাসা বুকে কাঁপন ধরায়, অজান্তে হারানোর ভয় উঁকি দেয়।
:কী ভাবছো এলিয়া? তোমাকে আনমনা দেখাচ্ছে…
: তোমাকে দেখছি জেনি আর ভাবছি তুমি আমার জীবনে কখনো অতীত হবেনা তো!
: বেশ অদ্ভুত ভাবনা তো! জলজ্যান্ত আমি সামনে বসে আছি, আর তুমি কিনা আমাকে অতীত বলে ভাবছো?
: তোমাকে যে প্রচন্ড ভালোবাসি, আমার হৃদয়ের একটি অংশে তোমার মজবুত মালিকানা, সে অধিকার একমাত্র তুমিই হস্তান্তর করতে পারো জেন!
: আমার ভালোবাসায় কি কোন দূর্বলতা অনুমান করছ এলিয়া?
: সে স্পর্ধা আমার নেই জেন।
: এখানে স্পর্ধার কথা এলো কেন?
: তোমার হাতটা দেবে একটু?
সাদা হাতটি বাড়িয়ে দেয় জেনিফার এলিয়ার দিকে। এলিয়া ওর ঘোর কৃষ্ণবর্ণ হাতে তুলে নেয় ভালোবাসার চেনা হাতদুটো। খানিক নিঃশব্দতা, শুধু নিঃশ্বাসে হৃদয়ের উষ্ণতা বিনিময়।
: আমি তোমাকে ভালোবাসি!
: আমিও!
: কিন্তু দেখ, এ কালো হাত কি তোমার সাদা হাতদুটো চিরকাল ধারণ করতে পারবে?
: দেখো এলিয়া, চিরকালের ভাবনা তোমার-আমার এ সুন্দর ক্ষণগুলো কি ধূসর করে দেবে? তোমার কালো হাত তো আমি দেখিনি, একটু একটু করে অনুভব করেছি তোমার হৃদয়ের উষ্ণতা, এল্! এখন আমি ঐ উষ্ণতায় উদ্যাম! আর কিছু ভাবতে চাই না তো।
: জেন, তোমার জন্যে আমিও যেন এক টুকরো জল ভরা মেঘ!
গরম কফি এসে গেছে, কফির কাপে আয়েসে চুমুক দেয় জেনিফার আর এলিয়া। বাইরে তখনো বৃষ্টি, জোহানেসবার্গ আজ বৃষ্টিতে ভেসে যাবে।
মাদিবা মানে নেলসন মান্ডেলার স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে। শোভনের ছবিও আছে বেশ কটি। দর্শক আসছে- যাচ্ছে সারি বেঁধে, বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতার জীবন ও দর্শনের সাথে পরিচিত হচ্ছে আলোকচিত্রে। ওদিকে শোভনকে ঘিরে ছোটখাটো জটলা- অনুসন্ধানী ক্যামেরা আর প্রশ্নের টার্গেট আজ ও!
: আপনি কবে থেকে ছবি তুলছেন?
: পনের বছর বয়সে এস এস সি পরীক্ষা দেয়ার পর থেকে।
: ছবি তোলায় আগ্রহের শুরু কীভাবে?
: পরীক্ষার পরে নানার বাড়ি নড়াইল যাওয়ার প্ল্যান করি খালাতো ভাই শিশিরকে নিয়ে। চিত্রা নদীর ধার দিয়ে সন্ধ্যা নামার আগে প্রায় হাঁটতে যাওয়া হতো। দুজনে একই বয়সের, তাই ভাই হলেও ছিলাম বন্ধু। পারে বসে গল্প করতাম, একটা সময়ে নিঃশব্দে নদীর ওপারে সূর্য ডোবার প্রস্তুতি দেখতাম। খুব ভালো লাগতো, একদম মন ছুঁয়ে যেতো। ভাবতাম এই ভালো লাগাটুকু কীভাবে ধরে রাখবো! ছবি আঁকতে পারি না, কবিতা লিখতে পারি না। শিশিরকে অবস্থাটা শেয়ার করলাম। ও বললো, ছবি তোলা যায়তো। আইডিয়াটা পছন্দ হলো। কিন্তু ছবি তোলার জন্যে ক্যামেরা লাগবে তো, ওটা পাবো কোথায়? ছোট মামা পড়া শেষ করে ব্যবসা ধরেছেন, রোজগার ভাল হচ্ছে। মামাকেই ক্যামেরার জন্যে আবদার করলাম। ভাগনেকে প্রথম ক্যামেরাটা মামাই কিনে দিলেন। আমার ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ শুরু চিত্রা নদীর পারে আর প্রথম ক্যামেরা ছোটমামার দেয়া।
: সেই চিত্রার পারে যার শুরু আজকের প্রাপ্তির সাথে তা মেলাবেন কি করে?
:ভাবতে পারেন জলভরা ভাসমান মেঘের খন্ড আর ভ’পৃষ্ঠে বহমান নদীর যে সম্পর্ক!
: একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
: আসলে মেঘ তো একদিন নদীতে ভেঙে পরবেই, যেমন নদীর জলেই তার এই পূর্ণতা। নড়াইলের চিত্রা বয়ে চলে সাগরের দিকে আর আফ্রিকার অরেঞ্জকে পূর্ণতা দেয় জোহানেসবার্গের ঝর্ণা। নানা বৈচিত্রের মাঝেই মানুষ ও প্রকৃতির এ মেলবন্ধন, কী বলেন?
: সুন্দর বলেছেন শোভন ভাইয়া। আজকের অর্জনের জন্যে আপনাকে অভিনন্দন! আপনার পুরস্কার পাওয়া ছবিটার নামটিও চমকদার, জোহানেসবার্গে বৃষ্টি!
: হ্যাঁ, ঐদিনটিতে জোহানেসবার্গে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা সবাই ভিজেছিলাম।
: আপনি কবে থেকে ছবি তুলছেন?
: পনের বছর বয়সে এস এস সি পরীক্ষা দেয়ার পর থেকে।
: ছবি তোলায় আগ্রহের শুরু কীভাবে?
: পরীক্ষার পরে নানার বাড়ি নড়াইল যাওয়ার প্ল্যান করি খালাতো ভাই শিশিরকে নিয়ে। চিত্রা নদীর ধার দিয়ে সন্ধ্যা নামার আগে প্রায় হাঁটতে যাওয়া হতো। দুজনে একই বয়সের, তাই ভাই হলেও ছিলাম বন্ধু। পারে বসে গল্প করতাম, একটা সময়ে নিঃশব্দে নদীর ওপারে সূর্য ডোবার প্রস্তুতি দেখতাম। খুব ভালো লাগতো, একদম মন ছুঁয়ে যেতো। ভাবতাম এই ভালো লাগাটুকু কীভাবে ধরে রাখবো! ছবি আঁকতে পারি না, কবিতা লিখতে পারি না। শিশিরকে অবস্থাটা শেয়ার করলাম। ও বললো, ছবি তোলা যায়তো। আইডিয়াটা পছন্দ হলো। কিন্তু ছবি তোলার জন্যে ক্যামেরা লাগবে তো, ওটা পাবো কোথায়? ছোট মামা পড়া শেষ করে ব্যবসা ধরেছেন, রোজগার ভাল হচ্ছে। মামাকেই ক্যামেরার জন্যে আবদার করলাম। ভাগনেকে প্রথম ক্যামেরাটা মামাই কিনে দিলেন। আমার ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ শুরু চিত্রা নদীর পারে আর প্রথম ক্যামেরা ছোটমামার দেয়া।
: সেই চিত্রার পারে যার শুরু আজকের প্রাপ্তির সাথে তা মেলাবেন কি করে?
:ভাবতে পারেন জলভরা ভাসমান মেঘের খন্ড আর ভ’পৃষ্ঠে বহমান নদীর যে সম্পর্ক!
: একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
: আসলে মেঘ তো একদিন নদীতে ভেঙে পরবেই, যেমন নদীর জলেই তার এই পূর্ণতা। নড়াইলের চিত্রা বয়ে চলে সাগরের দিকে আর আফ্রিকার অরেঞ্জকে পূর্ণতা দেয় জোহানেসবার্গের ঝর্ণা। নানা বৈচিত্রের মাঝেই মানুষ ও প্রকৃতির এ মেলবন্ধন, কী বলেন?
: সুন্দর বলেছেন শোভন ভাইয়া। আজকের অর্জনের জন্যে আপনাকে অভিনন্দন! আপনার পুরস্কার পাওয়া ছবিটার নামটিও চমকদার, জোহানেসবার্গে বৃষ্টি!
: হ্যাঁ, ঐদিনটিতে জোহানেসবার্গে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা সবাই ভিজেছিলাম।
http://allbanglanewspapers.com/bdnews24-bangla/
No comments:
Post a Comment