Tuesday, July 1, 2014

বর্ষাকে ভরসা দিতে সাগরে বাড়ছে নিম্নচাপ

বর্ষাকে ভরসা দিতে সাগরে বাড়ছে নিম্নচাপ

p1_rain
রাখলে নিম্নচাপ, বর্ষার নেই মার! ব্রাজিল আর বাংলার বর্ষা-- গোটা জুনে দুয়ের গ্রাফ প্রায় এক৷ নেইমার দুরন্ত হলে ঝলমলিয়ে উঠছে সাম্বা৷ নয়তো মেক্সিকো, চিলির মতো বামনরাও প্রায় রুখে দিচ্ছে৷ বর্ষাও তেমন৷ মৌসুমি বায়ু যে দিন বাংলায় সফর শুরু করল, সেই ১৮ জুন দক্ষিণবঙ্গের ঘাটতি ছিল ৫৩ শতাংশ৷ নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে চার দিন পরেই তা নেমে আসে ১৬ শতাংশে৷ অর্থাত্‍, বর্ষা 'স্বাভাবিক'৷ কিন্ত্ত নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে যেতেই আবার ঊর্ধ্বমুখী ঘাটতি৷ যা জুনের শেষ দিনে দাঁড়িয়ে ২৫ শতাংশে৷ আমন ধান বোনার কাজ চলছে, একপক্ষ পরেই শুরু হয়ে যাবে রোপণ-পর্ব৷ এমন মোক্ষম সময়েও কি ছন্দে ফিরবে না বর্ষা? ফিরবে৷ এবং নিম্নচাপের আশীর্বাদেই৷

সোমবার সুখবর দিয়ে হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত৷ আজ, মঙ্গলবারের মধ্যেই তা নিম্নচাপের চেহারা নেবে৷ তার পর ক্রমে ঢুকে আসবে বাংলার অন্দরে৷ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা৷ দু'দিন পর উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে৷ শুধু বাংলা নয়, ঘাটতিদীর্ণ বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওডিশাতেও বৃষ্টি দেবে নিম্নচাপ৷ এমনিতেই পাঞ্জাব থেকে বাংলা হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত৷ চরিত্রে যা কতকটা মৌসুমি অক্ষরেখাই৷ দুয়ের জোগানো জলীয় বাষ্পে পুবের তল্লাটে মৌসুমি বায়ুই রাজত্ব করবে চলতি সপ্তাহে৷ আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথায়, 'নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী ক'দিন ভালো বৃষ্টির পরিস্থিতি অনুকূল৷'

ঠিক এমন অনুকূল পরিস্থিতি না-পেয়েই ১৯ জুন থেকে মধ্য ভারতে ঠায় দাঁড়িয়ে বর্ষা৷ দেশের ঘাটতি যে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে, তার জন্য দায়ী বর্ষার বিলম্বই৷ গত বছর তাড়াহুড়ো করে বর্ষা ঢুকে পড়ায় জুনে স্বাভাবিকের তিন গুণ বৃষ্টি হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে৷ মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে হয়েছিল দু'গুণেরও বেশি৷ এ বার সেখানে স্বাভাবিকের অর্ধেক বৃষ্টিও জোটেনি৷ ফলে চাষ মার খাচ্ছে, কমছে জলবিদ্যুত্‍ উত্‍পাদন৷ আম-আদমির নাভিশ্বাস চড়িয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে গরম৷ এ দিনও রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে তাপপ্রবাহ চলেছে৷ আবহবিদরা অবশ্য বলছেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ায় লাভ ওঠাবে উত্তর ভারতও৷ নয়াদিল্লি মৌসম ভবনের আবহবিদ ব্রহ্মপ্রকাশ যাদব বলেন, '২-৩ জুলাইয়ের মধ্যে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে বর্ষা ঢুকে পড়বে৷ বাকি থাকবে শুধু রাজস্থান, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশের কিছুটা অংশ৷ তার জন্য জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷'

জুলাইয়ের শুরুতে বর্ষা গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠার বার্তায় খুশি রাজ্যের কৃষি দপ্তর৷ এ বছর ৪২.৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ কৃষি দপ্তরের সহ অধিকর্তা শরদিন্দু পালের কথায়, 'উত্তরবঙ্গে ভালো বৃষ্টি হওয়ায় বীজতলার কাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে৷ দক্ষিণবঙ্গে এখনও পর্যন্ত চিন্তার কিছু নেই৷ নিম্নচাপ ভালো বৃষ্টি দিলে আশা করা যায় ঠিক সময়েই রোপণ শুরু করা যাবে৷' এমনিতে ১৫ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত রোয়ার কাজ চলে বাংলায়৷ মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বলছে, জুলাইয়ের তুলনায় অগস্টে ভালো বৃষ্টির সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বেশি৷ অস্ট্রেলীয় আবহাওয়া দপ্তরও সুখবর দিয়ে জানাচ্ছে, 'এল নিনো'র 'রূপ' আশঙ্কামতো 'রুদ্র' না-ও হতে পারে৷ কিংবা হলেও, তত দিনে এ দেশে চার মাস কাটিয়ে ফেলবে বর্ষা৷ আপাতত তাই নিম্নচাপ সহায়৷ 

No comments:

Post a Comment