টাকা পাচারকারীদের তালিকা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
দেলোয়ার হুসেন
প্রকাশ : ০২ জুলাই, ২০১৪
সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের যেসব ব্যক্তি আমানত হিসেবে টাকা জমা রেখেছেন তাদের তালিকা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ তালিকা চাওয়া হয়েছে। ওই চিঠি পাঠানোর পর ইতিমধ্যে ৭ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাদের জবাব পাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই এখন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন কার্যকর রয়েছে। প্রচলিত নিয়মে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগাম অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিদেশে কোনো ব্যক্তির পক্ষে টাকা নেয়া সম্ভব নয়। বিদেশের কোনো ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তিকে অনুমোদনও দেয়া হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনো ব্যক্তি সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে কোনো টাকা জমা রেখে থাকলে তা বেআইনিভাবে রেখেছে। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনের পরিপন্থী।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের সে দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৭ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ আমানত হিসেবে জমা রাখা আছে। এই টাকা নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েই জমা রাখা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, এই কারণে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে তাদের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দিলে সেটা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে টাকা যাওয়ার কথা নয়। সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছে তারাই এই টাকা রাখতে পারেন। তবে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
তিনি বলেন, যেখানে মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের সন্ধান পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেখানেই হানা দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কোনো আপস নয়। এগুলো আমরা নিজ দায়িত্বেই করে থাকি।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে যেসব বাংলাদেশীর টাকা রয়েছে তাদের তালিকা সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চেয়ে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি তিনি সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। তবে তিনি বলেছেন, বিষয়টি অতি গোপনীয়। এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
তিনি আবারও দৃঢতার সঙ্গে বলেন, এই মুহূর্তে আপনাদের এটুকু বলতে পারি যে, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
এর আগে গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুইস ব্যাংকে কারা টাকা পাচার করেছে, আমরা তাদের তালিকা চেয়েছি। ওই টাকা ফেরত এনে দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো হবে।
সূত্র জানায়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশী নাগরিকদের টাকা থাকার ঘটনাটি জানার পর এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনার সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়েছে সুইস ব্যাংকে কাদের টাকা রয়েছে তাদের তালিকা চাওয়ার জন্য। এর ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচলিত আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে ওই তালিকা চেয়ে সুইস ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৪ জুন সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠির ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তির ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে)। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
ওই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রায় দেশের নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে রাখা আমানতের পরিমাণ কমেছে। কেবল বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যান্য অনেক দেশ থেকে বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও বাংলাদেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো টাকা বিদেশে নেয়া মানেই তা হচ্ছে পাচার।
সূত্র জানায়, সুইস ব্যাংকে যারা নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা রেখেছে তাদের টাকা দেশ ভিত্তিক হিসেবে আসেনি। একই সঙ্গে ওই হিসাবে নগদ টাকা ছাড়া সোনার অলংকার, মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে থাকলেও সেগুলোও ধরা হয়নি। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা আশংকা করছেন, এই টাকার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। কেননা বিশ্বের এখন সঞ্চয়ী উপকরণ হিসেবে ডলার, পাউন্ড, ইউরোর চেয়ে সোনার অলংকার ও হীরা খচিত সোনার অলংকারের চাহিদা তুঙ্গে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চেয়ে ওইসব অলংকারও মজুদ হিসেবে থাকতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাপীই এখন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধে ব্যাপক তৎপরতা। সুইজারল্যান্ডও এখন আর অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত টাকা গোপন রাখতে চায় না। ফলে তারাও এগুলো প্রকাশ করতে চায়। এখন সরকারকে আন্তরিক হতে হবে এই টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে। যদিও আইনি প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘ।
বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করছে এগমন্ট গ্র“প। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের ১৪৭টি দেশ এর সদস্য। এগমন্ট গ্র“পের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্তির নাম-ঠিকানা দিয়ে তথ্য চাইতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। যে কারণে তারা এগমন্ট গ্র“পের মাধ্যমে তথ্য চাইতে পারছে না।
এখন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা স্মারক করার ব্যাপারে এগুচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে সরাসরি সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশী নাগরিক কাদের নামে টাকা জমা রয়েছে সেই তালিকা চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের স্বার্থে কঠোর আইন রয়েছে। ফলে কোনো আমানতকারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে দেশের ব্যাংকগুলো এই তালিকা প্রকাশ করতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশী কোন কোন নাগরিকের তাদের দেশে টাকা রয়েছে সে তালিকা দেবে কিনা তা আমরা জানি না। তবে চাইতে তো সমস্যা নেই।
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2014/07/02/117831#sthash.QtH87Ypk.dpufসূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই এখন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন কার্যকর রয়েছে। প্রচলিত নিয়মে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগাম অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিদেশে কোনো ব্যক্তির পক্ষে টাকা নেয়া সম্ভব নয়। বিদেশের কোনো ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তিকে অনুমোদনও দেয়া হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনো ব্যক্তি সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে কোনো টাকা জমা রেখে থাকলে তা বেআইনিভাবে রেখেছে। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনের পরিপন্থী।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের সে দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৭ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ আমানত হিসেবে জমা রাখা আছে। এই টাকা নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েই জমা রাখা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, এই কারণে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে তাদের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দিলে সেটা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে টাকা যাওয়ার কথা নয়। সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছে তারাই এই টাকা রাখতে পারেন। তবে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
তিনি বলেন, যেখানে মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের সন্ধান পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেখানেই হানা দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কোনো আপস নয়। এগুলো আমরা নিজ দায়িত্বেই করে থাকি।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে যেসব বাংলাদেশীর টাকা রয়েছে তাদের তালিকা সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চেয়ে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি তিনি সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। তবে তিনি বলেছেন, বিষয়টি অতি গোপনীয়। এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
তিনি আবারও দৃঢতার সঙ্গে বলেন, এই মুহূর্তে আপনাদের এটুকু বলতে পারি যে, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
এর আগে গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুইস ব্যাংকে কারা টাকা পাচার করেছে, আমরা তাদের তালিকা চেয়েছি। ওই টাকা ফেরত এনে দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো হবে।
সূত্র জানায়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশী নাগরিকদের টাকা থাকার ঘটনাটি জানার পর এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনার সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়েছে সুইস ব্যাংকে কাদের টাকা রয়েছে তাদের তালিকা চাওয়ার জন্য। এর ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচলিত আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে ওই তালিকা চেয়ে সুইস ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৪ জুন সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠির ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তির ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে)। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
ওই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রায় দেশের নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে রাখা আমানতের পরিমাণ কমেছে। কেবল বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যান্য অনেক দেশ থেকে বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও বাংলাদেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো টাকা বিদেশে নেয়া মানেই তা হচ্ছে পাচার।
সূত্র জানায়, সুইস ব্যাংকে যারা নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা রেখেছে তাদের টাকা দেশ ভিত্তিক হিসেবে আসেনি। একই সঙ্গে ওই হিসাবে নগদ টাকা ছাড়া সোনার অলংকার, মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে থাকলেও সেগুলোও ধরা হয়নি। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা আশংকা করছেন, এই টাকার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। কেননা বিশ্বের এখন সঞ্চয়ী উপকরণ হিসেবে ডলার, পাউন্ড, ইউরোর চেয়ে সোনার অলংকার ও হীরা খচিত সোনার অলংকারের চাহিদা তুঙ্গে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চেয়ে ওইসব অলংকারও মজুদ হিসেবে থাকতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাপীই এখন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধে ব্যাপক তৎপরতা। সুইজারল্যান্ডও এখন আর অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত টাকা গোপন রাখতে চায় না। ফলে তারাও এগুলো প্রকাশ করতে চায়। এখন সরকারকে আন্তরিক হতে হবে এই টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে। যদিও আইনি প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘ।
বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করছে এগমন্ট গ্র“প। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের ১৪৭টি দেশ এর সদস্য। এগমন্ট গ্র“পের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্তির নাম-ঠিকানা দিয়ে তথ্য চাইতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। যে কারণে তারা এগমন্ট গ্র“পের মাধ্যমে তথ্য চাইতে পারছে না।
এখন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা স্মারক করার ব্যাপারে এগুচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে সরাসরি সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশী নাগরিক কাদের নামে টাকা জমা রয়েছে সেই তালিকা চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের স্বার্থে কঠোর আইন রয়েছে। ফলে কোনো আমানতকারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে দেশের ব্যাংকগুলো এই তালিকা প্রকাশ করতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশী কোন কোন নাগরিকের তাদের দেশে টাকা রয়েছে সে তালিকা দেবে কিনা তা আমরা জানি না। তবে চাইতে তো সমস্যা নেই।
No comments:
Post a Comment